অপরাধ সিপিআইএম করা, তাই বাবা-মাকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে: দীপঙ্কর দাস
Interview of Dipankar Das: ভোট-হিংসায় হারিয়েছেন বাবা-মাকে, এই প্রথম ইনস্ক্রিপ্ট-এ মুখ খুললেন কলকাতা হাই কোর্টের শিক্ষানবিশ আইনজীবী দীপঙ্কর দাস।
তখন গাঢ় অন্ধকারে ঢেকেছে চারিদিক। গ্রামের ফাঁকা রাস্তায় শুধুই নিশির ডাক! মা-মা করে সেদিনও চিৎকার করছিল কলেজ-পড়ুয়া একমাত্র ছেলে। রাতে বাড়ি ফেরার সময় বড্ড ভয় লাগত ওঁর! কিন্তু কোথায় মা! ডাকের উত্তর পাওয়া যায়নি সেদিন। বাড়ি গিয়ে দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকা ঘরের সামনেই হন্যে হয়ে খুঁজছিল বাবা-মাকে। হ্যাঁ, খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু মৃত! কয়েক ঘণ্টা আগেও মায়ের স্পর্শ, বাবার আদর পাওয়া ছেলেটা হঠাৎ দেখেছিল দেবু (দেবু দাস) এবং ঊষার (ঊষা দাস) ঝলসানো কালো শরীর। ভোটের দিন সকালে প্রকাশিত সেই মর্মান্তি ছবি দেখে শিউরে উঠেছিল গোটা দেশ!
২০১৮ সাল। কাকদ্বীপের বুধাখালির ২১৩ নম্বর বুথ এলাকা। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগের দিনের ভয়াবহ এক ঘটনায় তোলপাড় হয়েছিল রাজ্য। সেদিন, এক দম্পতিকে সিপিআইএম করার অপরাধে কাকদ্বীপে জীবন্ত জ্বালিয়ে মারার অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূল-আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে।
দিন বদলেছে। কেটে গিয়েছে ৪ বছরের বেশি সময়। এখন সেই বাবা-মা হারানো ছেলে, কাকদ্বীপের দীপঙ্কর দাস আইনজীবী। গত সেপ্টেম্বরেই সদ্য আইন পড়া শেষ হয়েছে তাঁর। জীবনের কঠিন স্মৃতি আর লড়াইকে সঙ্গী করে আজ ওঁ লড়ছেন নতুন লড়াই।
আরও পড়ুন: আর্তের পাশে দাঁড়ানোই ধর্ম: একান্তে মালবাজার বিপর্যয়ের ‘হিরো’ মহম্মদ মানিক
কিন্তু তারপর! কেমন আছেন সেই ছেলে? ঠিক কী হয়েছিল সেদিন রাতে? কোথায় এখনও আটকে মামলার বিচার? কী হয়েছিল তারপর? কী দাবি সদ্য আইন পাশ করা দীপঙ্করের? সেই দিনের সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা-রাজনীতি, পরবর্তী জীবন-লড়াই, দাবি নিয়ে, এই প্রথম ইনস্ক্রিপ্ট-এ মুখ খুললেন কলকাতা হাই কোর্টের শিক্ষানবিশ আইনজীবী দীপঙ্কর দাস।
কেমন আছেন?
দীপঙ্কর দাস: ভালো নেই। সবাই সবটা জানেন। আমার তো যেটুকু সর্বোচ্চ হারানোর সব হারিয়েছি। কীভাবে ভালো থাকি বলুন তো!
আমরা সবটাই সবাই জানি! কিন্তু এমন অনেক কিছু যা শুধু আপনি জানেন। সেদিন ঠিক কী ঘটেছিল, যেটা এখনও জানেন না অনেকেই?
দীপঙ্কর দাস: আমি কলেজে পড়াকালীন কাজ করতাম। সংসারের জন্য, বাবাকে সাহায্যের জন্য ক্যাটারিং সার্ভিস করতাম। সেদিন ছিল পঞ্চায়েত ভোটের আগের দিন। বিয়ে বাড়িতে কাজ করার কথা ছিল কাকদ্বীপ এলাকায়। আমাদের গ্রাম থেকে অনেকটা দূরে। কাজ শেষ করে অনেকে মিলেই একসঙ্গে ফিরি রাতে। সেদিনও রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ ফিরছিলাম।
তারপর?
দীপঙ্কর দাস: বড় রাস্তা ছাড়তেই বন্ধুরা চলে গেলে, আমি একা ফিরি খানিকটা। ফাঁকা শুনশান রাস্তা। আমাদের বাড়িটা একটু ফাঁকা জায়গায়। আমার ছোটবেলায় খুব ভয় ছিল। রোজ মা মা করে চিৎকার করতাম ফাঁকা রাস্তায়। খানিকটা আসার পরে, মা আমার ডাক শুনতে পেলেই এগিয়ে আসতেন। বাবাও মাঝে মাঝে আসতেন আমায় নিতে। ভয় কমত। বাড়ি ফিরতাম আনন্দে। (খানিকক্ষণ চুপ করে থাকার পর, আবার বলতে শুরু করলেন দীপঙ্কর) সেদিনও ডাকছিলাম মা-কে। মা সাড়া দিল না আর। ভাবলাম ঘুমিয়ে গিয়েছেন হয়তো!... জানেন তো! (চুপ করে গেলেন ফের)
কী হয়েছিল? কী জানার কথা বলছেন?
দীপঙ্কর দাস: সেদিন, মানে যেদিন এই ঘটনা ঘটল, মা রাত ৮টা নাগাদ ফোন করে বললেন, সাবধানে বাড়ি আসিস। তাড়াতাড়ি ফিরে আয়। কাল আবার ভোট।
তারপর কী হলো?
দীপঙ্কর দাস: এভাবেই এগিয়ে গেলাম। আমি বাড়ির কাছে যেতেই দেখছি, ধোঁয়া উঠছে আমাদের বাড়ি থেকে। কেমন যেন খটকা লাগল! দৌড়ে গেলাম। আমাদের বাড়ি জ্বলছে তখনও। আমি শুধু ভাবছিলাম, আগুন লাগার পরে হয়ত মা, বাবা অন্য কোথাও সরে গিয়েছেন বাঁচতে। চিৎকার করে ডাকছি ওঁদের। উত্তর নেই! আমি ওই অবস্থায় ভেতরের দিকে এগিয়ে গেছি। ফিরতেই পায়ে কিছু একটা লাগল। ভালো করে তাকিয়ে দেখি, আমার বাবা...! তখন সব শেষ!
প্রতিবেশীরা কেউ টের পাননি? পুলিশ ডাকলেন না?
দীপঙ্কর দাস: হ্যাঁ। চিৎকার করতে থাকলাম। ছুটে গেলাম যেদিকে বাড়ি রয়েছে অন্যদের। আমাদের বাড়ি একটু দূরে আর ফাঁকা এলাকায়। তাঁরা এলেন তারপর। কয়েক ঘণ্টা পরে পুলিশ এল। এসেই বলল...
কী বলল পুলিশ?
দীপঙ্কর দাস: তখনই বাবা-মায়ের পোড়া দেহ নিয়ে চলে যাবে। আমি ভাবলাম, যা যাওয়ার গিয়েছে আর নয়! রুখে দাঁড়ালাম। দেহ সকালে নিতে হবে, এতরাতে নয়; বললাম পুলিশকে। পাড়ার লোক কেউ কেউ আমাকে সমর্থন করলেন।
তারপর?
দীপঙ্কর দাস: একটু পরেই একাধিক গাড়ি নিয়ে পুলিশ এল আবার। বড় বড় অফিসার এলেন। গ্রামের লোকের সাহায্যে আমি প্রতিবাদ করলাম। দেহ ওই রাতে নিতে পারেনি পুলিশ।
পরের দিন কী ঘটল?
দীপঙ্কর দাস: সকালে ভোট শুরু হলো। আমার বাবা-মায়ের মৃতদেহ তখনও বাড়িতে পড়ে। আগুন সবে নিভেছে। তখনও ধোঁয়া উঠছে বাড়ি থেকে। তারপর থানায় গেলাম।
পুলিশে অভিযোগ করার পর নাকি পুলিশ সেই অভিযোগ প্রথমে নেয়নি?
দীপঙ্কর দাস: হ্যাঁ, আমি পরের দিন সকাল ১০টা নাগাদ কাকদ্বীপ থানায় গেলাম। আমার অভিযোগ নিল না ওরা। আমি কিছু মানুষের সাহায্যে দেহ নিয়ে কলকাতায় আসতে চাইলাম। পুলিশ আটকে দিল। বড় বড় কর্তারা বাধা দিলেন। থামিনি সেদিন। অবশেষে কলকাতা এলাম। কলকাতা পুলিশ মর্গে রাখা হলো দেহ।
বাবা-মায়ের দেহের সৎকার নিয়েও অসুবিধায় পড়েন আপনি, তখন?
দীপঙ্কর দাস: দেশে বোধহয় প্রথম কোনও সন্তান তাঁর বাবা মায়ের দেহ সৎকার করবেন বলে আদালতে গেলেন। ময়নাতদন্ত হলো, কিন্তু কলকাতা পুলিশও দেহ দিল না আমাকে। আমি আদালতে মামলা করলাম। কলকাতা হাই কোর্টের মহামান্য বিচারপতি দিলেন তখনই আমার বাবা-মায়ের দেহ, আমার হাতে তুলে দেওয়ার জন্য। পেলাম। সৎকার হল কলকাতায়।
তারপর কী করলেন? একা সন্তান। বাবা,-মা নেই। কীভাবে বাঁচালেন নিজেকে?
দীপঙ্কর দাস: বাবা, মায়ের দেহের সঙ্গে সেদিন কলকাতা আসি। তারপর আর নিজের গ্রামেও যাইনি। কাকদ্বীপ ছাড়ি। কলকাতার এক আত্মীয়ের বাড়ি থাকি। কাউকে ঠিকানা বলতাম না। এরকম যেন কারওর জীবনে না হয়!
কেন? হুমকি পেতেন?
দীপঙ্কর দাস: কেউ সরাসরি হুমকি দেয়নি কোনও দিন। কিন্তু লোকমুখে বহুবার শুনেছি আমাকেও মেরে ফেলতে পারে। আসলে আমি যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলাম ওরা তো এখনও বাইরে। দিব্যি গ্রামে, এলাকায় ঘুরে বেড়ায়। বহাল তবিয়তে এখনও আছে। ওদের তো বিনাশ নেই। বাবা, মায়ের খুনের পর বহুদিন ঘুমোতে পারিনি! এখনও!
পড়াশোনার কী হলো তারপর?
দীপঙ্কর দাস: জানেন তো, আমি আসলে সুন্দরবন মহাবিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতক। সেই সময় সবেমাত্র ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা শেষ হয়েছে আমার। তারপরই এসব।
তাহলে আইনজীবী হলেন কেন? কীভাবে এই ভাবনা এল? শিক্ষক বা অন্য পেশা না ভেবে?
দীপঙ্কর দাস: অন্য কিছু করতেই পারতাম। কিন্তু বাবা, মায়ের খুনের পর লড়াই করেছি রোজ। বিচার চেয়েছি। ভাবতে থেকেছি আমি যে অভাব রোজ বোধ করি। তা যেন আর কেউ না করেন! অসহায়দের পাশে দাঁড়াব। বাবা, মায়ের খুনের বিচার চাইব। আসল অপরাধীদের শাস্তির ব্যবস্থা করব। তাই আইনের দিকে বেশি করে যাওয়া। নিজেই আইনজীবি হয়ে এগিয়ে যাব, এমনটাও ভাবতাম।
তবুও তো এতগুলো বছর হয়ে গেল, বিচার পেলেন না এখনও!
দীপঙ্কর দাস: এখানেই তো আমার লড়াই। আমি আজ আইনজীবী। কাজ শিখছি রোজ। সেই লড়াই লড়ব বলে।
কীভাবে লড়বেন আবার?
দীপঙ্কর দাস: আমি আপনাদেরই প্রথম বলছি, ২০১৮ সালের ওই ঘটনায় এবার আদালতে আবেদন করব, সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার জন্য।
কেন, এতদিন পরে আবেদন কেন?
দীপঙ্কর দাস: বিচার কই! অনেক অপেক্ষা করেছি। কিন্তু পুলিশ তো দূর! রাজ্যের এক মন্ত্রী, প্রশাসনের আধিকারিকরা প্রথম থেকেই প্রমাণের চেষ্টা করেছেন ওটা খুন নয়, শটসার্কিট থেকে আগুনের ফলে মৃত্যু! পুলিশ আমার অভিযোগ প্রথমে নেয়নি। তারপর, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট, ফরেন্সিক রিপোর্ট যা বলেছে বিপরীত, সেটা জেনে তদন্তে গতি এসেছে। কিন্তু ঘটেছে সব উল্টো! আসল অপরাধীরা এখনও বাইরে।
তাহলে এই শটসার্কিট তত্ত্ব কেন দেওয়া হচ্ছিল! এর দায় কাদের?
দীপঙ্কর দাস: আমার বাবা, মা শান্ত প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। আমরা শুধু বামপন্থী পরিবার ছিলাম। সেইভাবে কাউকে কিছু করিনি বা বলিনি কোনও দিন। তাতেই এই নৃশংস হত্যা! এটা খুন। এসব তত্ত্বের কোনও ভিত্তি ছিল না। আজও তা মিথ্যা।
আপনার গ্রামে তো এখনও নাকি অভিযুক্তরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন, যাঁদের নাম আপনি অভিযোগপত্রে লিখেছিলেন, অমিত মণ্ডল-সহ কয়েকজন?
দীপঙ্কর দাস: একদম ঠিক। আমি যাদের নাম মূল অভিযুক্ত-খুনি হিসেবে উল্লেখ করলাম, আজ তারাই বাইরে। পুলিশ ফরেনসিক রিপোর্ট আসার পর তেলঙ্গানা থেকে ১ জনকে গ্রেফতার করল। উল্টোপাল্টা লোকজনকে ধরেছে। যাদের সঙ্গে এই মামলার যোগ আছে কিনা ঠিক নেই! কিন্তু আসল অভিযুক্ত, খুনি যারা। যে লোকগুলো আমার সব কেড়ে নিল। রাজনীতির জন্য পুড়িয়ে মারল আমার মা, বাবা-কে। আজও তারা বাইরে!
আপনার বাবা-মায়ের দলের সাহায্য পাচ্ছেন না? সিপিআইএম? আপনি আইনজীবী হয়ে গেলেন। তা-ও!
দীপঙ্কর দাস: হ্যাঁ, তাঁরা আমাকে সাহায্য করেছেন। ওঁরা কেউ কেউ পাশে দাঁড়িয়েছেন বলেই অনেকটা এগিয়েছি। আমি তো সেদিনও কোনও রাজনৈতিক দল বুঝতাম না। বলিনি কিছুই। কিন্তু পুলিশ, প্রশাসনের যা করা উচিৎ ছিল, সেটা তারা করেনি বলেই তো বিরোধীদের সাহায্য আমাকে আরও বেশি করে নিতে হয়েছে। সেটাই স্বাভাবিক।
এই মামলা চালালেন কীভাবে, একাই আইনের লড়াই লড়লেন?
দীপঙ্কর দাস: সবটা আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় স্যর, আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য স্যর দেখছেন। তাঁরা ছিলেন বলেই আমিও এই আইনি লড়াইয়ে অনেক এগিয়ে যেতে পেরেছি। এখনও লড়ছি। বিচার পাওয়ার তাগিদে। এর শেষ দেখতেই হবে আমাকে।
পড়াশোনা চালালেন কীভাবে? বেঁচে থাকার জন্য খরচ!
দীপঙ্কর দাস: বাবা-মা না থাকলে এক অনাথ সন্তানের যা হয় আর কী! তবুও বলব, সেদিন আমাকে আমার কলকাতার পরম-আত্মীয় থাকার জায়গা দিয়েছিলেন বলে আমি ভেসে যাইনি। বেঁচে ছিলাম তাঁদের জন্য। বাকি অনেকেই সাহায্য করেছেন। কিন্তু বেসরকারি একটি ব্যাঙ্কের শ্রমিক সংগঠনের সাহায্য ছাড়া পড়াশোনা করতে পারতাম না হয়তো!
কেন?
দীপঙ্কর দাস: ওই সংগঠনের তরফে মেধাবী-অসহায় দু'জনকে প্রতি বছর ডাক্তারি এবং আইন নিয়ে পড়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়। তাঁরা না থাকলে এমন হত না। আমি আইন নিয়ে পড়তে পারতাম না, পারলেও কষ্ট বেড়ে যেত।
আপনার কী মনে হয়, ভয় লাগে, আপনারও?
দীপঙ্কর দাস: না। এখন আর ভয় লাগে না। আগে পেতাম। আর আমার বাবা সিপিআইএম কর্মী ছিলেন। আমরা বামপন্থী পরিবার। আমি সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। বাবা, মায়ের অপরাধ সিপিআইএম করা, এটা তো সত্যি। তাই তাদের পুড়িয়ে মারা হয়েছে! আর যারা মেরেছে, তারা শাসক দলের। বুক ফুলিয়ে এখনও ঘুরছে। এটাও সত্যি।
আর সাহায্যের কথা বলছেন! হ্যাঁ, অবশ্যই পাশে ছিল দল। অনেকেই খোঁজ নেন। পাশে দাঁড়ান এখনও। কিন্তু কলকাতা হাই কোর্টের আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় স্যর, আমাকে আজীবন সাহায্য করেছেন।
আইন পাশ করেছেন এবার। আইনজীবী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবেন শীঘ্রই। এবার তো আদালত। তারপর?
দীপঙ্কর দাস: আমি মধ্যমগ্রামের ওই বেসরকারি আইন কলেজে পড়াকালীন শুধু বাবা-মায়ের খুনের মামলার শুনানি নয়, ফাঁকা থাকলেই আদালতে এসে বসে থাকতাম। দেখতাম সবটা। বুঝতাম নিজের মতো করে। লড়াই করার ইচ্ছা জাগত রোজ। এখন আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় স্যরের কাছে কাজ শিখছি। প্র্যাকটিস করছি। তিনিই শেখাচ্ছেন হাতে ধরে সবটা।
পরের লক্ষ্য?
দীপঙ্কর দাস: সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই। বিচারের ক্ষেত্রে বঞ্চিতদের পাশে দাঁড়াতে চাই। আমার বাবা-মায়ের খুনের বিচার পেতেই হবে আমাকে। খুনিদের বিনাশ করতে চাই, তবে অবশ্যই আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে। আর সাধারণ মানুষকে যে দুর্দশার শিকার হতে হয়, বিচার পেতে দেরি হয় অনেক। একাধিক টানাপড়েনের শিকার হন বহু মানুষ। তার নিরসনে, আমি যদি আইনজীবি হয়ে বিচারের পথে খানিকটা সাহায্য করতে পারি তাঁদের, সেটাই আমার কাছে অনেক।
ভোট এলেই অত্যাচার। ভোট-পরবর্তী হিংসা। বিজেপি-র অভিযোগ। যা নিয়ে একাধিক আইনজীবীর লড়াই দেখা যায় বারবার। আপনাকেও কি এবার দেখা যাবে একই লড়াইয়ে?
দীপঙ্কর দাস: আমার তো হারানো হয়ে গিয়েছে সব। প্রিয় মানুষরা আজ আর নেই। খুন হয়েছেন ওঁরা। যেকোনও আর্তের জন্য আছি। সুযোগ এলে অবশ্যই মানুষের পাশে দাঁড়াব।
নিজের বাবা-মা হারিয়েছেন রাজনীতির জন্য। দাবি, শাসক-বিরোধী হওয়ার 'শাস্তি' পেয়েছেন ওঁরা! আপনি কি শুধুই আইনজীবী হয়ে থাকবেন, না কি এবার রাজনীতিতেও আসবেন?
দীপঙ্কর দাস: শাসক যদি আর্তের পাশে না দাঁড়ায়, নিজেদের দায়িত্ব পালন না করে, তাহলে তো বিরোধী সরব হবেই। এমন কোনও প্রস্তাব বা ভাবনা আপাতত নেই যে, রাজনীতিতে আসব কি না, তা নিয়ে এখনই ভাবিনি কিছু। পরে ভেবে দেখব। এখন লক্ষ্য আমার অকালে হারানো বাবা-মায়ের খুনের বিচার পাওয়া।