মহাশূন্যে বিলীনও হয়ে যেতে পারেন সুনীতারা! কেন জানেন?
Sunita Williams: প্রাক্তন মার্কিন সামরিক স্পেস সিস্টেম কমান্ডার রুডি রিলডফি জানাচ্ছেন, যান্ত্রিক ত্রুটিযুক্ত মহাকাশযানে সুনীতাদের ফেরানোর ব্যবস্থা করার ক্ষেত্র যথেষ্ট ঝুঁকি রয়েছে।
জুন পেরিয়েছে, জুলাই পেরিয়ে অগস্ট মাসও শেষের পথে। এখনও ফেরা হল না স্টারলাইন দুর্বিপাকে স্পেস স্টেশনে আটকা পড়া মহাকাশচারী সুনীতা উইলিয়ামস ও বুচ উইলমোরদের। দিন কয়েক আগে নাসার তরফে জানানো হয়েছিল, স্পেস এক্সের মহাকাশযানে করে পৃথিবীতে ফিরতে পারবেন সুনীতারা। তবে সেই বাহনে চেপে স্পেস স্টেশন থেকে ফিরতে ফিরতে অন্তত আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি তো হবেই। গত ৫ জুন স্টারলাইনের মহাকাশযানে চেপে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন সুনীতারা। তারপর স্টারলাইন-বিপত্তির জেরে মহাকাশেই আটকে রয়েছেন তাঁরা। দিন যায়, মাস গড়ায়, অথচ সুনীতাদের পৃথিবীতে ফেরা এখনও সেই তিমিরেই। যান্ত্রিক ত্রুটিতে জর্জরিত স্টারলাইন মহাকাশযানে চাপিয়েই কি ফেরানো যেতে পারে তাঁদের? নাকি সেই পথও বিছানো কাঁটাতেই? কী হবে সুনীতাদের শেষমেশ? শেষপর্যন্ত কি আর এক ভারতীয় মহাকাশচারী কল্পনা চাওলার মতো হতে চলেছে তাঁদের পরিণতিও?
সফর হওয়ার কথা ছিল ৯ দিনের। ৫ জুন নাসার একটি মিশনে অংশ নিয়ে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের উদ্দেশে রওনা হন সুনীতা উইলিয়ামস, বুচ উইলমোর-সহব ৯ নভোশ্চর। স্পেস স্টেশনে পৌঁছনো পর্যন্ত সব কিছুই ঠিক ছিল। কিন্তু বিপত্তি বাঁধে সেখানে পৌঁছেই। রাশিয়ার পাঠানো একটি কৃত্রিম উপগ্রহ ফেটে যায় কাছেই, যার টুকরো ছড়িয়ে পড়ে স্পেস স্টেশনের চারপাশে। এর পরেই একের পর এক স্টারলাইন মহাকাশযানে যান্ত্রিক বিপত্তি ধরা পড়ে। হিলিয়াম গ্যাস লিক হতে শুরু করে। রিঅ্যাকশন কন্ট্রোল প্যানেলের একের পর এক থ্রাস্টার ফেটে যায়। ২৬ জুন পৃথিবীর উদ্দেশে আর রওনা হওয়া হয়নি তাঁদের। সুনীতাদের বাড়ি ফেরার রাস্তায় অনির্দিষ্টকালের জন্য কাঁটা বিছিয়ে দেয় একের পর এক সমস্যা।
আরও পড়ুন: সুনীতাদের ফেরাতে ফেরাতে আগামী বছর! যে দুঃসংবাদ দিল নাসা
এই পরিস্থিতিতে নাসা এবং বোয়িং ইঞ্জিনিয়ারেরা বিভিন্ন পরীক্ষানিরিক্ষা করেছেন। খতিয়ে দেখেছেন স্টারলাইন মহাকাশযানের অবস্থা। এই পরিস্থিতিতে বোয়িং স্টারলাইনারে চাপিয়েই ফেরত আনা হবে সুনীতাদের, নাকি স্পেস এক্স রেসকিউ মিশনের জন্যই অপেক্ষা করবে নাসা, এ নিয়ে বেশ দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছে খোদ মার্কিন গবেষণা সংস্থা। বোয়িং ইঞ্জিনিয়ারেরা ভরসা রাখছেন স্টারলাইনারেই। কিন্তু সেই পরিকল্পনায় কিছুতেই বিশ্বাস রাখতে পারছে না নাসা। তাই স্টারলাইনারে করে সুনীতাদের ফেরাতে সাহস হচ্ছে না নাসার। কল্পনা চাওলাদের সেই ফেরার কথা ভোলেনি মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা। তা-ই সেই পথে ভরসা করতে পারছে না তারা।
২০০৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। এমন এক মিশন থেকে পৃথিবীতে ফেরার পথে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল আর এক ভারতীয় নভোশ্চর কল্পনা চাওলাদের মহাকাশযানটি। পৃথিবী ছোঁয়ার কয়েক মিনিট আগে বিস্ফোরণে ছাই হয়ে গিয়েছিল সেটি। কল্পনা-সহ মোট ৭ মহাকাশাচারীর প্রাণ গিয়েছিল সেই ঘটনায়। টেক্সাসের বুকে আছড়ে পড়েছিল নাসার সেই কলম্বিয়া স্পেস শাটল। সেই মহাকাশযানের যান্ত্রিক ত্রুটির কারণেই এই দুর্ঘটনা বলে জানিয়েছিলেন বিশেষজ্ঞেরা। সুনীতাদের বেলা আর সেই ঝুঁকি নিতে চাইছে না নাসা। কোনও ভাবে যান্ত্রিক ত্রুটিপূর্ণ স্টারলাইনারে ভরসা রাখতে পারছে না তারা।
প্রাক্তন মার্কিন সামরিক স্পেস সিস্টেম কমান্ডার রুডি রিলডফি জানাচ্ছেন, যান্ত্রিক ত্রুটিযুক্ত মহাকাশযানে সুনীতাদের ফেরানোর ব্যবস্থা করার ক্ষেত্র যথেষ্ট ঝুঁকি রয়েছে। রুডি মনে করছেন, বোয়িং স্টারলাইনারতে নিরাপদে পৃথিবীতে ফেরানোর ক্ষেত্রে এর সার্ভিস মডিউলটিকে একটি বিশেষ কৌণিক অবস্থানে রাখতে হবে। সেখান থেকে একটু নড়চড় হলেই মহাকাশযানটি পুড়ে ছাই হয়ে যেতে পারে। আবার সেই বিশেষ কৌণিক অবস্থান বজায় রাখতে না পারলে সেটি পৃথিবীতে ঢোকার মুখে বায়ুমণ্ডলে ধাক্কা খেয়ে মহাশূন্যে হারিয়ে যেতে পারে। এমনকী একটু এদিক ওদিক হলেই মহাকাশে বাষ্পীভূত হয়ে যেতে পারেন সুনীতারা। নাসা যা জানাচ্ছে, তাতে ম্যানুভারিং এবং পৃথিবীতে পুনরায় প্রবেশের জন্য ঠিকঠাক পরিস্থিতিতে নেই স্টারলাইনারের থ্রাস্টারগুলি। ফলে তা যে নিরাপদে সুনীতাদের তাঁদের বাড়িতে ফিরিয়ে আনবেই, এ ব্যাপারে একশো শতাংশ নিশ্চিত হতে পারছেন না নাসার বিজ্ঞানীরা।
এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে সুনীতা-বুচদের সঙ্গেই বন্দি আরও সাত সদস্য। রয়েছেন ওলেগ কোননেঙ্কো, নিকোলাই চুব, ট্রেসি ক্যাল্ডওয়েল-ডাইসন, ম্যাথিউ ডমিনিক, মাইকেল ব্যারাট, জিনেট এপস এবং আলেকজান্ডার গ্রেবেনকিন নামে সাত মহাকাশচারী। স্পেস স্টেশনে আটকে থাকা অবস্থায় নানা কাজে নিজেদের ব্যস্ত রেখেছিলেন তাঁরা। ব্যাকটেরিয়ার ডিএনএ বের করে জিনোম বিশ্লেষণের মতো গুরুগম্ভীর গবেষণা তাঁরা করে চলেছেন নিয়মিত। যতদূর জানা গিয়েছে, এখনও সুনীতাদের কাছে প্রচুর খাবারদাবারের সরবরাহ রয়েছে। জল-অক্সিজেন সবই প্রয়োজনীয় পরিমাণে মজুত রয়েছে তাঁদের কাছে। এদিকে দীর্ঘদিন মহাকাশে আটকে থাকার কারণে সুনীতাদের শরীরে হাড় ক্ষইতে শুরু করেছে। শিথিল হচ্ছে পেশি। মহাকাশে যে প্রথম কোনও নভোশ্চর আটকে পড়েছেন, তা অবশ্য নয়। সুনীতা নিজেই এর আগে ৩২২ দিন টানা মহাকাশে কাটিয়েছেন। তার পরেও ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই মহাকাশচারী ও তাঁর সঙ্গীদের বাড়ি ফেরানো নিয়ে ক্রমশ উদ্বেগ বাড়ছে।
আরও পড়ুন: ক্ষয়ে যাচ্ছে মহাকাশচারীদের শরীরের হাড়! সুনীতাদের ফেরাতে নাসার হাতে আর মাত্র ১৯ দিন সময়
এই পরিস্থিতিতে স্পেস এক্স মিশনের উপরেই কি ভরসা রাখবে নাসা? আগামী মাসেই আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার কথা ইলন মাস্কের সংস্থার তৈরি মহাকাশযানটি। সব ঠিক থাকলে আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে ফিরবে সেই যানটি। ততদিনেও যদি স্টারলাইনারের ত্রুটিগুলো সারানো না যায়, তাহলে স্পেস এক্স মিশনকেই ব্যাকআপ প্ল্যান হিসেবে সামনে রাখছে নাসা। কিন্তু সমস্যা একটাই, নাসার ওই মহাকাশযানটিতে মাত্র দু'জন মহাকাশচারীর জন্যই জায়গা রয়েছে। যে জায়গাটি নেবেন বুচ ও সুনীতা। বাকি মহাকাশচারীদের ফেরাতে ঠিক কী পরিকল্পনা এঁটেছে নাসা, তা অবশ্য এখনও স্পষ্ট নয়।