লোকসভা থেকে হোয়াটসঅ্যাপ- ঘৃণার বারুদ ঘরে ঘরে, বাংলা যা ভাবছে...

Hate speech on floor on Bangla Ja Vabchhe: সুপ্রিম আদালত বলছে, ঘৃণাভাষণ মোকাবিলায় সরকারের নিজ উদ্যোগে পদক্ষেপ করা উচিত। কোনও মামলা দায়ের না হলেও সুয়োমোটো পদক্ষেপের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

রাজধানী দিল্লিতে একটি বিশেষ শব্দের বিপুল চল আছে। শব্দটি অবশ্যই একটি খিস্তি, ভড়ওয়া। ভড়ওয়া অর্থাৎ ইংরেজিতে যাকে বলে পিম্প। বাংলা করলে অর্থ দাঁড়ায় যৌনকর্মীর দালাল। কিন্তু দিল্লিতে যে এই শব্দের 'চল' যে আছে তার প্রমাণ কী? এই ভড়ওয়া শব্দের সঙ্গে ভারতের নতুন করে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন দুইজন মানুষ, দুইজনই রাজনৈতিক নেতা। একজন হলেন বিজেপি নেতা, দক্ষিণ দিল্লির সাংসদ রমেশ বিধুরি। শ্রীবিধুরির আক্রমণের লক্ষ্য কার দিকে? তিনিও এক সাংসদ। বহুজন সমাজবাদী পার্টির। উত্তর প্রদেশের আমরোহা থেকে তিনি নির্বাচিত। নাম কুঁওর দানিশ আলি।

ইসলামোফোবিয়ার যে ঘৃণাপ্রচার আমরা হোয়াটাসঅ্যাপ ইউনিভার্সিটি, হালের এক্স একদা টুইটার ট্রোলবাহিনী বা টিভি স্টুডিওর প্রাইমটাইম চিৎকারে দেখতে পাই, রমেশ বিধুরির উচ্চারণ তা পৌঁছে দিল ভারতীয় গণতন্ত্রের পীঠস্থানে। নতুন সংসদ ভবনে। ভড়ওয়া, কাটুয়া (সুন্নত করা হয়েছে এমন ব্যক্তি), মুল্লা শব্দেরা হয়ে উঠল গণতন্ত্রের জরুরি আলোচনার বিষয়। সংসদ না কি বাজার? নাকি কোঠাবাড়ি? নাকি কোট আন কোট গোদি মিডিয়ার প্রাইম টাইম শো! 'ইস মুল্লা কো ম্যায় বহার দেখ লুঙ্গা'! দালাল, মুসলিম সন্ত্রাসবাদী বলেই ক্ষান্ত থাকেননি। সংসদ ভবনের বাইরে দেখে নেবেন বলে পাড়ার মস্তানের মতো হুমকিও দেন সাংসদ শ্রীবিধুরি।

এই অপমানে দানিশ আলি তাঁর আবেগ চেপে রাখতে পারেননি। কতটা অপমানিত বোধ করেছেন বোঝাই যায়। বোঝা যায় মানুষটির আত্মায় ঘা লেগেছে। অবশ্য এ নতুন কিছু না। বিধুরি তো তাঁর দলের 'মন কি বাত' থুড়ি মনের কথা বলেছেন। যারা মনে করে থাকেন, এ দেশের প্রথম নাগরিক হিন্দুরা। সংখ্যালঘু বিশেষ করে মুসলিমরা দ্বিতীয় শ্রেণির। তবে সংসদীয় ইতিহাসে এ ঘটনা বেনজির।

আরও পড়ুন: ইন্ডিয়া জোটের ভবিষ্যৎ কী? বাংলা যা ভাবছে…

রমেশ বিধুরি যখন এসব বলছেন, ঠিক পিছনেই আছেন বিজেপি সাংসদ রবিশঙ্কর প্রসাদ। রমেশ বিধুরি যখন তাঁর সুভাষিত উচ্চারণ করেন, তখন কি আপত্তি জানান হর্ষবর্ধন বা রবিশঙ্কর প্রসাদ?
না জানাননি। যেমন রমেশ বিধুরিকে সতর্ক করেননি স্পিকারের আসনে থাকা কোডিকুন্নিল সুরেশ। পরে অবশ্য টুইটারে নিজের নাম ট্রেন্ড হতে দেখে সাফাই দেন হর্ষবর্ধন। চাঁদনি চকের গলিতে তিনি কীভাবে মুসলিম বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে খেলতে বড় হয়েছেন তা মনে করিয়ে দেন। কিন্তু ছবি মিথ্যে বলে না। আহত, অপমানিত কুঁওর দানিশ আলি চিঠি লিখেছেন স্পিকার ওম বিড়লাকে। বিজেপি নোটিস পাঠিয়ে পনেরো দিনের মধ্যে উত্তর দিতে বলেছে শ্রীবিদুরিকে।

২০১৪ সাল। ভারতীয় জনতা পার্টি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ইসলামোফোবিয়ার প্যাটার্ন একেবারে বদলে গিয়েছে। একের পর এক কত নাম। আখলক। পহেলু খান। জুনেইদ। কত জায়গা, হাথরস। কাঠুয়া। উন্নাও। স্বঘোষিত গোরক্ষকবাহিনীর স্বঘোষিত আইন। বিলকিস বানোর ধর্ষকদের গলায় মালা। এ সব দেখতেই দেশ যেন অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। উল্টো উদাহরণও আছে। আছে মিমের মতো রাজনৈতিক দল। লাগাতার ঘৃণাভাষণ আর ধর্মীয় উস্কানির বিষ আজ ঘিনঘিনে নর্দমার ঢুকে পড়েছে, এমনকী গণতন্ত্রের পীঠস্থানেও। স্বাধীন ভারতে এ ঘটনা নজিরবিহীন। ভয়ঙ্কর বিপদের।

এখন প্রশ্ন, বিজেপি সাংসদ রমেশ বিদুরির বিরুদ্ধে স্পিকার ওম বিড়লা কী ব্যবস্থা নেবেন? শাস্তি দেবেন? মনে রাখা দরকার সংসদের এই বিশেষ অধিবেশন বসে নতুন ভবনে। যেখানে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সংসদীয় রাজনীতিতে এক নতুন সংস্কৃতি শুরুর কথা বলেন। যেখানে নতুন আশা থাকবে। নতুন সম্ভাবনা থাকবে। ঘৃণাভাষণ থাকবে না।

এবার দেখা যাক, ভারতীয় সংবিধানের ১০৫ এবং ১৯৪ ধারায় কী কী বলা আছে? এই দুই ধারা সাংসদ এবং বিধায়কদের এই মর্যাদা দিয়েছে যে, তাঁরা সংসদে বা বিধানসভায় দাঁড়িয়ে পছন্দমত, প্রয়োজন যে কোনও বক্তব্য রাখতে পারবেন। সংসদভবন দাঁড়িয়ে কোনও বক্তব্যের জন্য কোনও সাংসদকে আদালতে জবাবদিহি করতে হবে না। একজন সাংসদ সহযোগী সাংসদের প্রতি যখন ঘৃণাভাষণ করছেন, তখন তিনি কি সাংসদ হওয়ার বিশেষ অধিকার বলে তিনি সংবিধানের রক্ষাকবচ পেতে পারেন? প্রশ্ন উঠছেই।

আরও পড়ুন:প্রশ্ন করার সংস্কৃতি সাংবাদিকতা থেকে যে ভাবে হারাল…

সুপ্রিম আদালত বলছে, ঘৃণাভাষণ মোকাবিলায় সরকারের নিজ উদ্যোগে পদক্ষেপ করা উচিত। কোনও মামলা দায়ের না হলেও সুয়োমোটো পদক্ষেপের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। দেশের ধর্ম নিরপেক্ষ চরিত্র রক্ষা করা জরুরি বলেও মনে করিয়ে দিয়েছে শীর্ষ আদালত। আদালতের কথা কি মেনে চলবে হোয়াটসঅ্যাপ বিশ্ববিদ্যালয়গুচ্ছ? মেনে চলবেন এইসব সাংসদ, বিধায়করা? মেনে চলবেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা? নাকি হেটস্পিচই হবে দেশের স্বাভাবিক বচন, সহিষ্ণুতার দেশে ঘৃণাই হবে একমাত্র বয়ান! বাংলা কী ভাবছে? দেখুন আজ সন্ধ্যায়। সাংবাদিক, বিশ্লেষকরা কী বলছেন?

আজকের পর্ব, লোকসভা থেকে হোয়াটসঅ্যাপ ঘৃণার বারুদ ঘরে ঘরে। প্রতি সোম, বুধ, শুক্র সন্ধে ৭ টা থেকে - কলকাতা ২৪*৭ এর ইউটিউব চ্যানেল এবং inscript.me এর ফেসবুক পেজে চোখ রাখুন।

 

More Articles