মমতার ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশংসা! চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রীকে যা লিখলেন গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক
Gayatri Chakravorty Spivak Mamata Banerjee: ১৯৮৮ সালে পশ্চিমবঙ্গ খেড়িয়া শবর কল্যাণ সমিতির সমিতির কার্যকরী সভাপতি মহাশ্বেতা দেবীর সঙ্গে পুরুলিয়া জেলার কেন্দায় আসেন গায়ত্রী।
সদ্য বিশ্ববিখ্যাত হলবার্গ পুরস্কার পেয়েছেন গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক। নোবেলের সমতুল এই সম্মানজয়ী গায়ত্রী চিঠি লিখেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। পুরস্কারের খবরের পরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিনন্দন জানিয়েছিলেন গায়ত্রীকে। তবে গায়ত্রীর এই চিঠি শুধুই শুকনো সৌজন্যের চিঠি নয়। চিঠির প্রতি ছত্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি তাঁর আস্থা এবং কৃতজ্ঞতার ছাপ স্পষ্ট। বাংলার গ্রামে গ্রামে দীর্ঘ চার দশক ধরে প্রান্তিক মানুষদের জন্য যে কাজ করে চলেছেন গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক, তার বিশেষ উল্লেখ করায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন গায়ত্রী। ভূয়সী প্রশংসা করেছেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'ধর্মনিরপেক্ষ' অবস্থান নিয়েও! ধ্রুপদী বাংলা সাহিত্য অনুবাদ বিষয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রচেষ্টারও বিশেষ উল্লেখ করে প্রশংসা করেছেন গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক।
গত ৪০ বছর ধরে তথাকথিত 'অস্পৃশ্য' এবং ভারতের দরিদ্রতম অঞ্চলের উপজাতিদের মধ্যে স্ব-ভর্তুকিপ্রাপ্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে চলেছেন গায়ত্রী। বিভিন্ন দেশের প্রান্তিক গ্রামীণ সম্প্রদায়গুলিতে গণতান্ত্রিক শিক্ষার অনুপস্থিতির সমস্যা মোকাবিলার প্রচেষ্টা করে চলেছেন বর্তমান সময়ে, বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে অন্যতমা গায়ত্রী। তুলনামূলক সাহিত্য, অনুবাদ, উত্তর-ঔপনিবেশিক চর্চা, রাজনৈতিক দর্শন এবং নারীবাদী তত্ত্বে তার যুগান্তকারী গবেষণার জন্যই হলবার্গ পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। প্রেসিডেন্সি কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাকের এই সম্মানজয়ের পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর এক্স হ্যান্ডলে একটি পোস্ট করে গায়ত্রীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন।
I congratulate our Professor Gayatri Chakravorty Spivak on her attaining yet another top international recognition. She has been chosen this year for the Holberg Prize of Norway, which is considered to be a top prize in humanities and social sciences. She makes us proud by this…
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) March 17, 2025
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছিলেন, "আন্তর্জাতিক স্তরে এই সর্বোচ্চ সম্মান পাওয়ার জন্য আমি অধ্যাপিকা গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাককে শুভেচ্ছা জানাই। তিনি চলতি বছরের নরওয়ের হলবার্গ পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন। এই পুরস্কার আর্টস ও হিউম্যানিটিজের সর্বোচ্চ সম্মান নোবেল বলে পরিচিত। তাঁর এই সম্মান আমাদেরও গর্বিত করেছে। তত্ত্ব ও দর্শনে অনবদ্য অবদানের জন্য সুপরিচিত অধ্যাপিকা গায়ত্রী। বাংলার প্রত্যন্ত গ্রামে গরিব মানুষদের নিয়ে তাঁর স্বেচ্ছা পরিষেবা আমাকে মুগ্ধ করেছে। এছাড়া অধ্যাপিকা গায়ত্রীর ধ্রুপদী বাংলা সাহিত্যকে ইংরেজিতে অনুবাদ করার প্রচেষ্টা আমাকে অনুপ্রেরণা দেয়। এই স্বনামধন্য পণ্ডিতকে আরও একবার শুভেচ্ছা জানাই।"
আরও পড়ুন- কেন গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাকের হলবার্গ পুরস্কার প্রাপ্তি এত গুরুত্বপূর্ণ?
মুখ্যমন্ত্রীর এই পোস্টের পরেই তাঁকে একটি চিঠি লেখেন গায়ত্রী। ওই চিঠিতে গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক লিখেছেন, "আমার সম্পর্কে আপনার সাম্প্রতিক টুইট/এক্স পোস্টের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাতেই এই চিঠি লেখা। পোস্টে আপনি বার্গেন ইউনিভার্সিটি এবং নরওয়ে সরকার কর্তৃক আমাকে দেওয়া পুরস্কারটির বিষয়ে এত যত্ন করে উল্লেখ করেছেন। পশ্চিমবঙ্গের গ্রামীণ এলাকায় আমার দীর্ঘস্থায়ী কর্মকাণ্ডের বিষয়ে আপনার উল্লেখ দেখে আমি বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়েছি, কারণ আমি দারিদ্র্য দূরীকরণে আপনার নিজস্ব প্রচেষ্টার জন্য সবচেয়ে বেশি কৃতজ্ঞ। আসলে, গত চল্লিশ বছর ধরে বাংলার বিভিন্ন অনগ্রসর জেলায় অত্যন্ত দরিদ্রদের গণতান্ত্রিক শিক্ষার প্রতি আমার অঙ্গীকার নিয়ে কাজ করে চলেছি। আমি তাঁদের সাথে অনেক সময় কাটাই এবং ভাষা তথা জ্ঞানীয় ক্ষতি বিষয়ে কীভাবে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয় তা শেখার চেষ্টা করি। তারাও আমার পুরষ্কার বিষয়ে জানতে পেরে খুব আনন্দিত।"
চিঠিতে গায়ত্রী আরও বলছেন, “আমি আশা করি আপনি আমাদের প্রিয় বাংলায় বুদ্ধিবৃত্তিক শ্রমের দিগন্ত প্রসারিত করার প্রচেষ্টার দিকে নজর রাখবেন। আমি আনন্দিত যে আপনি আমাদের ১,০০০ বছরের বাংলা লেখার দ্বিভাষিক সংস্করণের প্রকল্পটি উল্লেখ করেছেন। বিশ্বের সেরা কিছু লেখক বাংলার এই ধ্রুপদী পাঠ্যগুলি বিশ্বের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য অনুবাদ করছেন। আমরা একটি তহবিল সংগ্রহের নৈশভোজে এবং বিভিন্ন উৎসাহী দাতাদের কাছ থেকে, দক্ষিণ এশিয় শিল্পীদের কাছ থেকে সাহায্য পেয়েছি। আপনার অনুমোদন নিঃসন্দেহে তহবিল সংগ্রহের কাজে অনেক সহায়ক হবে।" রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'ধর্মনিরপেক্ষতাকে' গভীর সমর্থন জানিয়েছেন গায়ত্রী।
উল্লেখ্য, ১৯৮৮ সালে পশ্চিমবঙ্গ খেড়িয়া শবর কল্যাণ সমিতির সমিতির কার্যকরী সভাপতি মহাশ্বেতা দেবীর সঙ্গে পুরুলিয়া জেলার কেন্দায় আসেন গায়ত্রী। শবরদের নিয়ে মহাশ্বেতা দেবীর কর্মকাণ্ড দেখেই তিনি শবর পড়ুয়াদের জন্য কাজ করতে আগ্রহী হন। গায়ত্রীর আর্থিক সহায়তায় শবর পড়ুয়াদের জন্য পুরুলিয়া জেলার কুদা, জনড়া, ব্যাঙথুপি ও অকড়বাদ গ্রামে চারটি পাঠভবন তৈরি করা হয়। এই চারটি স্কুলের পড়ুয়াদের জন্য দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করেছিলেন গায়ত্রী।