উত্তরবঙ্গ জুড়ে বীভৎস বন্যা, দায় এড়াতে মোদী-মমতার দড়ি টানাটানি
Modi-Mamata Debate: উত্তরবঙ্গে ত্রাণ দিতে গিয়ে আক্রান্ত বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু। এই নিয়ে এক্স হ্যান্ডেলে খণ্ডযুদ্ধ ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে। সোমবারের ঘটনার নিন্দা করে এক্স হ্যান্ডেলে তৃণমূ...
শনিবার রাতের বৃষ্টিতে ভেসে গিয়েছে উত্তরবঙ্গ। সোমবার রাত পর্যন্ত ৩৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। এখনও অনেকে নিখোঁজ। পাহাড় জুড়ে স্বজনহারা মানুষের হাহাকার। দার্জিলিং, মিরিকে ধস নেমেছে। ভেঙে গিয়েছে দুধিয়া ব্রিজের মতো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সেতু। উত্তরবঙ্গে পাহাড় থেকে সমতল— সর্বত্র ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এক রাতের বৃষ্টিতে ফুলেফেঁপে ওঠে তিস্তা, তোর্সা, বালাসন, রায়ডাক, জলঢাকা নদী। বন্ধ হয়ে যায় জাতীয় সড়ক ১০। জলের তোড়ে ভেসে যায় বহু ঘর-বাড়ি। জলদাপাড়া অভয়ারণ্য থেকে ভেসে আসে গণ্ডার। এক রাতের বৃষ্টিতেই অবরুদ্ধ হয়ে যায় উত্তরের জনজীবন, আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে বন্যপ্রাণ।
পুজোর আগেই সতর্ক করেছিল আবহাওয়া দফতর। কিন্তু প্রশাসন কেন সেই মতো প্রস্তুতি নেয়নি? প্রশ্ন উঠছে। বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গের পরিস্থিতি নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজাও। রাজ্য-কেন্দ্র এক অপরকে দোষারোপ করা তো চলছেই, আবার রাজ্য ও কেন্দ্রকে একই আসনে বসিয়ে কেউই দায় অস্বীকার করতে পারে না বলে তোপ দাগছে কংগ্রেস-সিপিএম। তারই সঙ্গে সমালোচিত হচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন রবিবারই উত্তরবঙ্গে না গিয়ে কলকাতায় কার্নিভালে মেতে রইলেন মুখ্যমন্ত্রী? প্রশ্ন তুলছেন রাজ্যবাসীর একাংশ।
আরও পড়ুন- ১৯৬৮ থেকে ২০২৫: যেভাবে বারবার বন্যায় লণ্ডভণ্ড উত্তরবঙ্গ
সব হারিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছে উওরবঙ্গবাসী। সোমবার জলপাইগুড়ির নাগরাকাটা এলাকায় ত্রাণ দিতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ ও সাংসদ খগেন মুর্মু। উত্তেজিত জনতার রোষের মুখে পড়ে রক্তাক্ত হয়েছেন বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু। শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষের অভিযোগ, ‘দিদির সৈনিক’ বলে কয়েকজন তাঁদের আক্রমণ করেন। নদী থেকে পাথর তুলে গাড়িতে ছুঁড়ে মারে। গাড়ির সিটের তলায় শুয়ে না পড়লে তাঁকেও রক্তাক্ত হতে হতো বলে দাবি শঙ্কর ঘোষের।
আরও পড়ুন- বন্যার মাঝে কার্নিভালে মুখ্যমন্ত্রী! অমানবিক রাজনীতির কৈফিয়ত কী?
এই ঘটনার পর এক্স হ্যান্ডেলে খণ্ডযুদ্ধ বেঁধে যায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে। সোমবারের ঘটনার নিন্দা করে এক্স হ্যান্ডেলে তৃণমূল কংগ্রেসের দিকে অভিযোগের আঙুল তোলেন নরেন্দ্র মোদী। তিনি লিখেছেন, “পশ্চিমবঙ্গে বন্যা ও ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সেবা করতে গিয়ে যেভাবে আমাদের দলের সাংসদ-বিধায়করা আক্রান্ত হয়েছেন, তা নিন্দনীয়। এটি তৃণমূল কংগ্রেসের সংবেদনশীলতা এবং রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলার করুন রূপের স্পষ্ট প্রতিফলন।”
যেভাবে আমাদের দলের সহকর্মীরা—যাদের মধ্যে একজন বর্তমান সাংসদ ও বিধায়কও রয়েছেন—পশ্চিমবঙ্গে বন্যা ও ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সেবা করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এটি তৃণমূল কংগ্রেসের অসংবেদনশীলতা এবং রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলার করুণ রূপের স্পষ্ট প্রতিফলন।
— Narendra Modi (@narendramodi) October 6, 2025
আমার…
তিনি আরও লিখেছেন, “আমার একান্ত কামনা পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও তৃণমূল কংগ্রেস এই কঠিন পরিস্থিতিতে এই কঠিন পরিস্থিতিতে হিংসায় লিপ্ত না হয়ে মানুষের সাহায্যে আরও মনোযোগী হোক। আমি বিজেপি কর্মকর্তাদের আহ্বান জানাই, তারা যেন জনগণের পাশে থেকে চলতি উদ্ধার কাজে সহায়তা করে যান।”
এরপরই এক্স হ্যান্ডেলে পাল্টা লেখেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি লিখেছেন, “অত্যন্ত দুঃখজনক এবং দুর্ভাগ্যজনক এবং দুর্ভাগ্যজনক, প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে সামনে রেখে রাজনীতিকরণ করছেন প্রধানমন্ত্রী প্রমাণিত তথ্য, তদন্ত বা প্রশাসনিক রিপোর্ট ছাড়া সরাসরি তৃণমূল ও রাজ্য সরকারকে দোষারোপ করেছেন। এটা শুধু রাজনৈতিক শালীনতার নয়, বরং সাংবিধানিক নীতিরও লঙ্ঘন।”
এটা খুবই দুর্ভাগ্যের এবং গভীর উদ্বেগের বিষয় যে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী একটি প্রাকৃতিক বিপর্যয় নিয়ে রাজনীতি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, কোনো উপযুক্ত অনুসন্ধানের জন্য অপেক্ষা না করেই – তা-ও আবার যখন উত্তরবঙ্গের মানুষ ভয়াবহ বন্যা ও ধসের সঙ্গে যুঝছেন।
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) October 6, 2025
যখন সমগ্র স্থানীয় প্রশাসন ও…
সোমবারই উত্তরবঙ্গে পৌঁছন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। মৃতদের পরিবার পিছু পাঁচ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ এবং পরিবারের একজনকে হোমগার্ডের চাকরি দেওয়ার ঘোষণা করেন তিনি। এরই সঙ্গে এটিকে ‘ম্যান মেড’ বন্যা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, সিকিম ও ভুটানের জলে ভেসেছে উত্তরবঙ্গ। এরই সঙ্গে কেন্দ্রের দিকেও আঙুল তোলেন তিনি। তাঁর কথায়, ডিভিসির জলে ভাসে দক্ষিণবঙ্গ। উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড— কত রাজ্যের জল সামলাবে বাংলা?
পশ্চিমবঙ্গে বন্যা পরিস্থিতির জন্য কেন্দ্রের বঞ্চনার কথাও তুলে ধরেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, “বন্যা ব্যবস্থাপনার জন্য কেন্দ্র কোনও অর্থ দেয় না। গঙ্গা পরিষ্কারের জন্য ‘গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান’-ও বন্ধ করে দিয়েছে। এটা বাংলার প্রতি বৈষম্য এবং বঞ্চনা।”

Whatsapp
