ইরানের পারমাণবিক ঘাঁটিগুলির কতটা ক্ষতি হয়েছে?
Nuclear: সেন্ট্রিফিউজ রটার তৈরির কেন্দ্র ও পরীক্ষা কেন্দ্রে টার্গেট করে হামলা করায় কারাজ ওয়ার্কশপে সেন্ট্রিফিউজ উৎপাদনের দুটি ভবন ধ্বংস হয়েছে।
ইরান এবং ইজরায়েলের সংঘাতের কারণে পশ্চিম এশিয়ায় উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। গত শুক্রবার ইরানে হামলা চালিয়েছিল ইজরায়েল, যেখান থেকে সংঘাতের সূত্রপাত। শনিবার সংঘাতের নবম দিন। ইরানের পারমাণবিক ঘাঁটিগুলিতে ইজরায়েলের হামলার বিভিন্ন ঘটনার তথ্য জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন)তিনি বলেন, মানবস্বাস্থ্য ও পরিবেশে এই সংঘর্ষের যা প্রভাব পড়তে পারে তা নিয়ে সংস্থাটি নিয়মিত প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। হামলা শুরুর প্রায় এক সপ্তাহের মধ্যে ইরানের আরাক, ইসফাহান, নাতাঞ্জ ও তেহরানের বিভিন্ন পারমাণবিক ঘাঁটিতে ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। এবার তারা নতুন প্রতিবেদনে ইরানের পারমাণবিক ঘাঁটিগুলির বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তথ্য সামনে এনেছে।
নাতাঞ্জ
গত ১৩ জুন নাতাঞ্জের জ্বালানি কেন্দ্রটি ইজরায়েলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ওই হামলায় "পরীক্ষামূলক কেন্দ্র” ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। এখানে ইরান প্রায় ৬০ শতাংশ পর্যন্ত (ইউ-২৩৫) ইউরেনিয়াম মজুত করতে পাড়তো। ওই হামলায় কেন্দ্রটির বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্র, প্রধান পাওয়ার বিল্ডিং, জরুরি বিদ্যুৎ সেবা ও ব্যাকআপ জেনারেটরও ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।
গত ১৬ জুন, রাফায়েল গ্রোসি আইএইএ বোর্ডকে জানান, যখন ভূগর্ভস্থ ক্যাসকেডে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হলে সেন্ট্রিফিউজগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। পরে স্যাটেলাইট চিত্র দেখে বিশ্লেষকরা জানান, ভূগর্ভস্থ ঘাঁটি সরাসরি ক্ষতি হয়েছে। তাঁর কথায়, কেন্দ্রটির পার্শ্ববর্তী এলাকায় এখনও পর্যন্ত কোনো বিকিরণের প্রভাব দেখা যায়নি। তবে তিনি এ কথাও জানিয়েছেন যে কেন্দ্রের ভিতরে কিছু “সীমিত রেডিওঅ্যাকটিভ ও রাসায়নিক দূষণ” হয়েছে। তিনি বলেন, “এই দূষণ কেবল কেন্দ্রের ভেতরেই হয়েছে, এর বাইরে বিকিরণের কোনো প্রভাব পড়েনি।”
ইসফাহান
১৩ জুনের হামলায় ইসফাহান পরমাণবিক ঘাঁটির চারটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কেন্দ্রীয় রাসায়নিক গবেষণাগার, ইউরেনিয়াম রূপান্তর কর্মশালা, তেহরান রিয়্যাক্টর জ্বালানি তৈরির কারখানা, এবং নির্মাণাধীন উচ্চ-সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম প্রক্রিয়াকরণ সুবিধা।
আইএইএ জানিয়েছে, ১৮ জুন ইজরায়েল কারাজ ওয়ার্কশপ (টিইিএসএ) এবং তেহরান গবেষণা কেন্দ্রের কুইন্টার-উৎপাদন কেন্দ্রগুলোকে টার্গেট করেছে। এই দুটো স্থাপনাই পরমাণু চুক্তির অধীনে আইএইএ-এর নজরে ছিল।
তেহরান গবেষণা কেন্দ্র
সেন্ট্রিফিউজ রটার তৈরির কেন্দ্র ও পরীক্ষা কেন্দ্রে টার্গেট করে হামলা করায় কারাজ ওয়ার্কশপে সেন্ট্রিফিউজ উৎপাদনের দুটি ভবন ধ্বংস হয়েছে।
খানদাব রিঅ্যাক্টর
১৯ জুন টার্গেট করা হয় আরাক বা খানদাব গবেষণা রিয়্যাক্টর কেন্দ্রকে। এই কেন্দ্রটি নির্মাণের কাজ এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। ফলত চালুও হয়নি।গ্রোসি বলেন, পারমাণবিক পদার্থ না থাকায় “ এই হামলায় কোনো তেজস্ক্রিয়তা ছড়ানোর আশঙ্কা নেই।”প্রথমে কোনো ক্ষয়ক্ষতির কথা না জানা গেলেও বর্তমানে জানা গিয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভবন, যেমন পরিশোধন ইউনিট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইরানের অন্যান্য পারমাণবিক ঘাঁটির ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পাওয়া যায়নি। এখনও পর্যন্ত বড় কোনো বিকিরণ হয়নি, তবে আইএইএ মহাপরিচালক সতর্ক করে বলেছেন, “ইরানে বিভিন্ন জায়গায় প্রচুর পারমাণবিক পদার্থ রয়েছে, যার ফলে বিকিরণ দুর্ঘটনায় তেজস্ক্রিয় পদার্থ বাতাসে ছড়িয়ে পড়ার একটি আশঙ্কা রয়েছে।”
২০জুন রাতে ইজরায়েল তেহরানের পাঁচটি হাসপাতালের পার্শ্ববর্তী এলাকায় হামলা করে। এতে হাসপাতাল কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন হাসপাতালের রোগীরাও।
ইরানের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির প্রধান পিরহোসেইন কোলিভান্দ দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে এ কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, "বিস্ফোরণের ধোঁয়ায় রোগীদের শ্বাসকষ্ট হচ্ছে।"
হাসপাতালে হামলার প্রমাণ এবং প্রভাব রেডক্রস-সহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোতে পাঠানো হবে বলেও দাবি করেন তিনি।
উল্লেখ্য, ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক ঘাঁটিতে ইজরায়েলের হামলা মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনাকে এক নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে। আলজাজিরা-র বিশ্লেষণমূলক একটি প্রতিবেদনে দাবি হয়েছে, এর ফলে তেহরান তাদের পারমাণবিক নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে। এরপর কী হতে পারে, তাই এখন দেখার।