শতবর্ষ ছুঁই ছুঁই হাওড়া স্টেশনের বড় ঘড়ি! কিংবদন্তির যে ইতিহাস আজও অজানাই

Howrah Station Boro Ghori: এই দুই মুখের ঘড়ির ডায়ালের ব্যাস ৪৫ ইঞ্চি এবং এর ঘণ্টার কাঁটার ধৈর্ঘ্য ১৮ ইঞ্চি। মিনিটের কাঁটাটি ২৪ ইঞ্চি লম্বা।

"তাহলে বড় ঘড়িটার নীচে দাঁড়িও", “ট্রেন থেকে নেমেই দেখবি বড় ঘড়ি, কাউকে জিজ্ঞেস করে ওইখানেই দাঁড়াবি!" বিগত কতকাল ধরে হাওড়া স্টেশনের সবচেয়ে বিশ্বস্ত 'ল্যান্ডমার্ক' বড় ঘড়ি। প্রতিদিন লাখে লাখে মানুষ এই স্টেশনে নামেন। তারপর দৌড় লাগান নিজস্ব গন্তব্যে। অবিরাম মানুষের দল হাঁটাচলা করে, অনেক মানুষ বসে, শুয়ে অপেক্ষা করেন। অচেনা অজানা মানুষ হোক বা নিত্য যাত্রী, হাওড়া স্টেশনের বড় ঘড়ি সকলের জন্য সদাই দাঁড়িয়ে, এক নির্ভরযোগ্য ঠিকানা হয়ে। প্রায় এক শতাব্দী ধরে এই ঘড়ি সময় বাতলে চলেছে, ল্যান্ডমার্ক হয়ে উঠেছে। ঔপনিবেশিক যুগ থেকে শুরু করে হালফিলের জমানার ছোটখাটো পরিবর্তন সবই টিক টিক করে দেখে চলেছে, লিখে চলেছে বড় ঘড়ি। তার কোথাও যাওয়ার নেই, সে শুধুই এক স্থবির অথচ ঘটমান আলেখ্য। হাওড়া স্টেশনের বিখ্যাত এই বড় ঘড়ির বয়স ৯৬ বছর। প্রায় লন্ডনের বিগ বেনের মতোই সুখ্যাতি তার। ১৯২৬ সাল থেকে কাঠের ভারী ফ্রেমে লাগানো রয়েছে এই ঘড়ি।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে শুরু করে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম, দেশের প্রধানমন্ত্রীদের মৃত্যু, দ্রুতগামী ট্রেনের যাত্রা শুরু- ইতিহাসের বহু বহু অধ্যায়ের বড় ঘড়িকে সাক্ষী রেখেই ঘটেছে। বড় ঘড়ির যখন জন্ম, তখন তো বাষ্পীয় ইঞ্জিন দিয়েই চলতো রেলগাড়ি। শতবর্ষ প্রাচীন হাওড়া স্টেশনের এই ঘড়ির ইতিহাস তবু কত কত মানুষের কাছেই অজানা। বিশাল, লাল ইটের তৈরি এই স্টেশন দেশের দ্বিতীয় প্রাচীনতম স্টেশন এবং ভারতের বৃহত্তম রেলওয়ে চত্বরের অন্যতম একটি। ১৯০৫ সালের ১ ডিসেম্বর ছয়টি প্ল্যাটফর্ম নিয়ে চালু হয় হাওড়া স্টেশন।

আরও পড়ুন- বাংলায় লেখা একমাত্র ঘড়ি! ভীম নাগের এই ঘড়ির সঙ্গে জড়িত দীর্ঘ ইতিহাস অনেকেরই অজানা

বর্তমানে, সমগ্র পূর্ব ভারতের লাইফলাইন বলা যায় এই স্টেশনকে। প্রতিদিন প্রায় ৩০০ টিরও বেশি ট্রেন আসে এবং ছেড়ে যায়। পড়াশোনা, চাকরি, ব্যবসা, বাড়ি, কতকিছুর টানে প্রতিদিন এই স্টেশনে নামে মানুষ। প্রতিদিন ১০ লক্ষেরও বেশি মানুষের পা পড়ে হাওড়া স্টেশনে। আর তাঁদের অনেকেরই অপেক্ষার ঠিকানা হয়ে ওঠে বড় ঘড়ির নীচের জমিটি। ১৯০০ সালে বেঙ্গল-নাগপুর রেলওয়ে হাওড়া পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয় এবং হাওড়া একটি গুরুত্বপূর্ণ রেল কেন্দ্রে পরিণত হয়। তখন লাল ইঁটের বাড়ির মাথায় ঢেউ খেলানো লোহার চাদর এবং একটা মাত্র প্ল্যাটফর্ম নিয়েই চলত স্টেশন। এখন ভারতের দ্বিতীয় প্রাচীনতম স্টেশন হাওড়া। ক্লান্ত মানুষ, অপেক্ষমান মানুষ, আগেভাগে স্টেশনে এসে পড়া আগন্তুক, প্রিয়জনের সঙ্গপ্রার্থী মানুষ আজও আকুলভাবে অপেক্ষা করে বড় ঘড়ির নীচে। দূর থেকে পরিচিত মানুষের দেখা পেলে চোখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে তাদের।

ঐতিহাসিক হাওড়া স্টেশনের পূর্ব দিকের দেওয়ালে এই ঘড়িটি অবস্থিত। বিশ্বযুদ্ধের সময় জীবন দেওয়া রেলকর্মীদের জন্য উৎসর্গ করা শহিদ স্মৃতিসৌধের দিকে এই ঘড়িটির স্থান। হাওড়া স্টেশনে অগুনতি রেলকর্মীদের অবসর হলেও, শিফটিং হলেও, ১৯২৬ সাল থেকে নিরবিচ্ছিন্নভাবে, কোনও বিরতি ছাড়াই কাজ করে চলেছে বড় ঘড়ি৷

এই দুই মুখের ঘড়ির ডায়ালের ব্যাস ৪৫ ইঞ্চি এবং এর ঘণ্টার কাঁটার ধৈর্ঘ্য ১৮ ইঞ্চি। মিনিটের কাঁটাটি ২৪ ইঞ্চি লম্বা। একটি ডায়াল ১ থেকে ৮ নম্বর প্ল্যাটফর্মের দিকে মুখ করা। অন্যটি ৯ থেকে ১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মের দিকে করা। ৯৬ বছর আগে ব্রিটিশ যুক্তরাজ্যের জেন্টস কোম্পানি এইই কিংবদন্তি ঘড়িটি তৈরি করে!

More Articles