নিজের টিকিট নিজে কাটার নির্দেশ! যে দুঃসহ ভোগান্তির মুখে নির্বাসিত ভারতীয়রা
Indian Immigrants in US: তিনজন ভারতীয় রয়েছেন। রয়েছেন চিন, আফগানিস্তান এবং অন্যান্য দেশের অবৈধ অভিবাসীরাও। দিনে দু'বেলা রুটি এবং জল— এটুকুই জুটছে তাঁদের
আমেরিকায় তাঁরা ঢুকেছিলেন অবৈধ উপায়ে। ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে প্রথমেই অবৈধ অভিবাসীদের নিজেদের দেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সিদ্ধান্ত মোতাবেক কাজও হয়েছে। নির্বাসিত ভারতীয়দের হাতে-পায়ে শিকল পরিয়ে বিমানে চাপিয়ে নিজের দেশে পাঠানোর ছবি এখনও দগদগে। এর পরে ট্রাম্প আর মোদির বৈঠকও হয়েছে। তবে এই নির্বাসিত অভিবাসীদের ভবিষ্যৎ থেকে গিয়েছে আঁধারেই। একদল নির্বাসিত ভারতীয়কে ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে মধ্য আমেরিকার দেশ কোস্টারিকার একটি অস্থায়ী আটক কেন্দ্রে রাখা হয়েছিল। এবার বলা হয়েছে, ভারতে ফেরার টিকিটের ব্যবস্থা নিজেদেরই করতে হবে, টিকিটের টাকাও তাঁদেরই দিতে বলা হয়েছে।
আমেরিকা থেকে বিতাড়িত এই ভারতীয়রা ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে কোস্টারিকার পুন্টারেনাস প্রদেশের কোরেডোরেসে সেন্টার ফর টেম্পোরারি অ্যাটেনশন অফ মাইগ্রেন্টস স্থাপিত অস্থায়ী আটক কেন্দ্রে রয়েছেন। এই দলে তিনজন ভারতীয় রয়েছেন। রয়েছেন চিন, আফগানিস্তান এবং অন্যান্য দেশের অবৈধ অভিবাসীরাও। দিনে দু'বেলা রুটি এবং জল— এটুকুই জুটছে তাঁদের। এর আগে যে অভিবাসীদের ভারতে নির্বাসিত করা হয়েছিল, তাদের পানামা পাঠানো হয়েছিল। সেখান থেকে একটি বিমানে করে তাঁদের ভারতে পাঠানো হয়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে মোট ৩৪৪ জন ভারতীয়কে নির্বাসিত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন- ট্রাম্পের পরিবারই ‘অনুপ্রবেশকারী’! কেন অভিবাসীদের নিয়ে কড়া আমেরিকা?
প্রথমদিকে, অভিবাসনবিরোধী কট্টরপন্থী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন মার্কিন সামরিক বিমানে অবৈধ অভিবাসীদের সরাসরি নিজের দেশে পাঠিয়েছিল। সেই বিমানেই, শিকল পরিয়ে নির্বাসনের ছবি ভাইরাল হয়। গত ফেব্রুয়ারিতে অমৃতসরের শ্রী গুরু রামদাসজি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এই জাতীয় তিনটি বিমান অবতরণ করে। মেক্সিকো, কলম্বিয়া এবং নিকারাগুয়াতেও এমনই বিমানে নির্বাসিতদের ফেরত পাঠানো হয়। তিনটি সামরিক বিমান পাঠানোর পরে মার্কিন সরকার ভারতীয় নির্বাসিতদের মধ্য আমেরিকার দেশগুলিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আল জাজিরার একটি প্রতিবেদন অনুসারে, পানামা এবং কোস্টারিকার মতো দেশগুলি ট্রাম্প প্রশাসনের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপের মুখে এশিয়ার অন্যান্য দেশের অবৈধ অভিবাসীদের নিজেদের দেশে রাখতে সম্মত হয়েছে। দেশে ফেরানোর বন্দোবস্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তৃতীয় দেশেই এই অভিবাসীদের আটকে রাখা হবে বলে জানা গেছে।
পানামায় যে নির্বাসিতদের পাঠানো হয়েছিল তাঁদের ডেকাপোলিস হোটেলে রাখা হয়েছিল। যারা দেশে ফিরে যেতে অস্বীকার করেছিল তাদের পানামার দারিয়েন প্রদেশের দারিয়েন গ্যাপের একটি প্রত্যন্ত শিবিরে পাঠানো হয়। কোস্টারিকাতে যে ব্যক্তিদের রাখা হয়েছে তাদের নিজেদের ফেরার ব্যবস্থা নিজেকেই করতে বলা হয়েছে। ভারতের নির্বাসিত অভিবাসী নভদীপ সিং দ্য ওয়্যারকে জানিয়েছেন,
১৫ ফেব্রুয়ারি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে দ্বিতীয় সামরিক নির্বাসন বিমানে অমৃতসর পৌঁছনোর কথা ছিল তাঁর। নভদীপের জ্বর চলে আসে এবং তাঁকে বিমান থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়।
পঞ্জাবের ফিরোজপুর জেলার চক ঘুবায়া তারানওয়ালি গ্রামের বাসিন্দা নভদীপ কোস্টারিকার ওই ডিটেনশন সেন্টার থেকে দ্য ওয়্যারকে জানিয়েছেন, “আমরা কোস্টারিকায় প্রায় ১৫০ নির্বাসিতদের সঙ্গে খোলা ছাদের নীচে থাকছি। এই ডিটেনশন সেন্টারের সঠিক অবস্থান আমি জানি না তবে এটি কোনও একটা জঙ্গলের উপকণ্ঠে এবং বড় গুদামের মতো এলাকায়। শোয়ার জন্য পর্যাপ্ত খাট না থাকায় আমরা রাতে ঘুমাতে পারি না। অনেক সময়ই আমরা দিনে ঘুমাই কিন্তু রাতে জেগে থাকি। আমরা বসে বসে ভাবতে থাকি বাড়ি কীভাবে পৌঁছব। কোস্টারিকাতে এখানে বিশাল গরম এবং আমরা অসহায়।”
নভদীপ জানাচ্ছেন, এই নির্বাসিত ব্যক্তিদের নিজের পয়সায় টিকিট কিনে এক মাসের মধ্যে কোস্টারিকা ছেড়ে যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এখানেই শেষ না, এই অবৈধ অভিবাসীদের যথেচ্ছ অপমান করা, দুর্ব্যবহার করা এবং 'সন্ত্রাসবাদী' বলে দাগিয়ে দেওয়া তো আছেই।
আরও পড়ুন-মোদির নিজ রাজ্য এত উন্নত হলে কেন আমেরিকায় পালাচ্ছেন গুজরাতিরা?
ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (IOM) পানামা থেকে নির্বাসিত হওয়া অভিবাসীদের বিমানের ভাড়া দিয়েছিল। তবে এবার নির্বাসিতদের নিজস্ব বিমানের টিকিটের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। যদিও এটা স্পষ্ট নয় যে, সমস্ত অভিবাসীদেরই নিজেদের বিমানের টিকিটের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে না কি শুধুমাত্র ভারতীয়দের জন্যই এমন নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
“নিরাপত্তা কর্মীরা আমাদের বলেছিলেন যে যেহেতু আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দোকান এবং কারখানার মালিক এবং সেখানে অবৈধভাবে থাকছিলাম, তাই আমাদের নির্বাসিত করা হয়েছে। তাদের আরও দাবি যে আমাদের পরিবারগুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভালোভাবে দিন কাটাচ্ছে এবং তারাই আমাদের ফের যাওয়ার টিকিট কিনে নিতে সাহায্য করবে। আমরা এই অভিযোগগুলিতে হতবাক, কারণ এগুলি সম্পূর্ণ মিথ্যা,” বলেছেন নভদীপ। স্প্যানিশ সংবাদপত্র দারিও এক্সট্রার একটি প্রতিবেদনে জানা গেছে, কোস্টারিকার জননিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী মারিও জামোরা বলেছেন, বেশিরভাগ এশিয় অভিবাসী যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত হওয়ার পরে কোস্টারিকাতে এসেছিলেন তাদের নিজেদের মূল দেশে ফিরে যাওয়ার মতো অর্থনৈতিক অবস্থা রয়েছে। "এঁদের মধ্যে কেউ কেউ সুপারমার্কেট এবং দোকানের মালিকও কিন্তু তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকার আইনি কাগজপত্র মেনে চলেনি, সে কারণেই অভিবাসন কর্তৃপক্ষ তাদের গ্রেফতার করেছে এবং নির্বাসিত করেছে," বলেছেন মন্ত্রী।
নভদীপরা জানেন না কীভাবে বাড়ি ফিরবেন তাঁরা। কেউই তাঁদের কথায় কর্ণপাত করে না বলে অভিযোগ, নিরাপত্তা কর্মীরা স্প্যানিশ ভাষায় কথা বলেন। ফলে যোগাযোগ করে ভাবপ্রকাশ করাই দুরূহ। নভদীপরা আরও বলছেন, ভারতীয় দূতাবাস থেকে কেউ যোগাযোগ করেননি তাঁদের সঙ্গে। আর্থিকভাবে সাহায্য করার জন্য পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও আবেদন করেছে নভদীপের পরিবার। সমস্ত সম্পত্তি বিক্রি করে ছেলেকে আমেরিকা পাঠানোর জন্য ৫০ লক্ষ টাকা জোগাড় করেছিলেন নভদীপের বাবা। এখন ছেলে অসহায় অবস্থায় আটকে। সুন্দর, নিরাপদ জীবনের খোঁজে গিয়ে কোস্টারিকার ডিটেনশন ক্যাম্পের অনিশ্চয়তাই এখন যাঁর ভবিতব্য।