ইরানে ইজরায়েলি হামলা! নিন্দা থেকে কেন সরে দাঁড়াল ভারত?
Shanghai Cooperation Organisation: ইরানের ওপর ইসরায়েলের হামলার নিন্দা জানিয়েছে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা (এসসিও)। এ সংস্থার সদস্য হলেও ইসরায়েলকে নিন্দা জানানোর আলোচনা থেকে ভারত নিজেদের দূরে রেখেছে।
ইরানের ওপর ইসরায়েলের হামলার নিন্দা জানিয়েছে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা (এসসিও)। এ সংস্থার সদস্য হলেও ইসরায়েলকে নিন্দা জানানোর আলোচনা থেকে ভারত নিজেদের দূরে রেখেছে। নিন্দা জানানোর সিদ্ধান্তেও সমর্থন দেয়নি বলে জানানো হয়েছে। ভারত কেন আলোচনায় অংশ নিতে বা ইজরায়েলের আক্রমণের বিষয়ে এসসিওর অবস্থানকে সমর্থন করতে অস্বীকৃতি জানাল? ভারত কি ইজরায়েলকে সমর্থন করছে?
ইরান-ইজরায়েল সংঘর্ষে বিশ্ব নেতারা বারবার মধ্যস্থতা করার কথা বলছেন। ১৩ জুন ভোররাতে ইজরায়েল এক নজিরবিহীন সামরিক অভিযানে ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনাগুলিতে ধারাবাহিক হামলা চালিয়েছে। শুধু পারমাণবিক স্থাপনাই নয়, বরং ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যাটারি, দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি, অস্ত্রাগার, পরীক্ষাগার এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বাসভবনও টার্গেট ছিল। ইজরায়েলের হামলার ফলে ইরানের তেল শোধনাগার, বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং তেলের মজুদে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তেহরান পাল্টা জবাব দিতে ইজরায়েলি শহর তেল আবিব এবং হাইফায় শত শত ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন ছুঁড়েছে। তেহরান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারমাণবিক আলোচনাও স্থগিত করেছে। এই পরিস্থিতিতে ইজরায়েল হামলার নিন্দা করেছে এসসিও।
এসসিও-র নিন্দা
এসসিও হলো ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা জোট। এসসিও-তে চিন, বেলারুশ, ভারত, ইরান, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, পাকিস্তান, রাশিয়া, তাজিকিস্তান এবং উজবেকিস্তান রয়েছে। ২০২৩ সালে ইরান এসসিও-তে যোগদান করে। বর্তমানে এসসিও-র সভাপতিত্ব করছে চিন।
১৪ জুন শনিবার, এসসিও একটি বিবৃতি জারি করে এসসিও-র সদস্য রাষ্ট্রগুলি ইরান-ইজরায়েলের সংঘর্ষের তীব্রতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং ইরানের ভূখণ্ডে ইজরায়েল সামরিক হামলার নিন্দা জানাচ্ছে। এসসিও-র বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ইজরায়েলের "বিদ্যুৎ ও পরিবহন-সহ বেসামরিক এলাকাগুলিকে টার্গেট করায়, বেসামরিক নাগরিকদের প্রাণ গিয়েছে। এটি আন্তর্জাতিক আইন এবং জাতিসংঘ সনদের চরম লঙ্ঘন"। বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, "এসসিও সদস্য দেশগুলি কেবলমাত্র শান্তিপূর্ণ, রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক উপায়ে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে।"
ভারত দুই দেশের সাথেই সম্পর্ক ভালো রাখার চেষ্টা করছে
ভারতের উভয় দেশের সঙ্গেই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। তেহরানে ইজরায়েলের হামলার পর, ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ইরানের বিদেশমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচির সাথে ফোনে কথা বলেন। জয়শঙ্কর সংঘর্ষের তীব্রতাকে "আন্তর্জাতিক স্তরে গভীর উদ্বেগের" বলে জানান। জয়শঙ্কর "দ্রুত মধ্যস্থতার আহ্বান" করেছেন।
ম্যাসাচুসেটস-আমহার্স্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সিনিয়র রিসার্চ ফেলো শান্তি ডি'সুজা আল-জাজিরাকে বলেন, "অন্যান্য এসসিও-র সদস্য দেশগুলির থেকে ভারত ভিন্ন অবস্থানে রয়েছে। কারণ, ইজরায়েলের সাথে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক এবং ইরানের সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।"
ভারত ইজরায়েলের বৃহত্তম অস্ত্র ক্রেতা। ২০২৪ সালে গাজা যুদ্ধের সময়, ভারতের অস্ত্র সংস্থাগুলি ইজরায়েলের কাছে রকেট এবং বিস্ফোরক বিক্রি করেছিল। আল-জাজিরার একটি তদন্তমূলক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, একই সময়ে, ভারত মধ্য এশিয়া এবং আফগানিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য করার জন্য ইরানের চাবাহার বন্দরে প্রবেশদ্বার বানিয়েছে। এটি তৈরি করতে প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করেছে কেন্দ্র।
ইরানে ইজরায়েলের হামলার নিন্দা জানিয়ে এসসিও যে বিবৃতিটি প্রকাশ করেছে, নয়াদিল্লির কথায় তারা এই বিবৃতি নিয়ে কোনো রকম আলোচনায় অংশ নেয়নি।
ভারত কি ইজরায়েলকে সমর্থন করছে?
ভারত ইজরায়েল-ইরান সংঘর্ষে এসসিও-র অবস্থানে একমত না হয়ে, এসসিও-র নিন্দার বিবৃতিকে খানিক দুর্বল করেছে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এসসিও-র বিবৃতি প্রকাশের আগের দিন, ভারত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গাজায় "নিঃশর্ত এবং স্থায়ী" যুদ্ধবিরতির দাবির খসড়া প্রস্তাবেও ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিল।
নয়াদিল্লি-ভিত্তিক অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের ডেপুটি ডিরেক্টর কবির তানেজার আল-জাজিরা কে বলেছেন, আমেরিকার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে ভারত হয়তো এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন যে ভারতের ওয়াশিংটনের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তি করার সম্ভবনা রয়েছে। জুলাইয়ের শুরুতে আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারতীয় পণ্যের উপর ২৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি কার্যকর হওয়ার আগে এই চুক্তি স্বাক্ষর করার চেষ্টা করছে ভারত। তানেজা বলেন, যদিও চিন এবং রাশিয়া ইরানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। সেই মতো ভারতের আমেরিকা এবং ইজরায়েলের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে "এসসিওর বিবৃতি মেনে নেওয়া ভারতের পক্ষে সম্ভব ছিল না"। তিনি আরও বলেন, ভারত প্রতিদ্বন্দ্বী এবং প্রতিপক্ষ দুজনের সঙ্গেই সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে পারদর্শী- তা সে আমেরিকা এবং রাশিয়া, ইজরায়েল এবং ফিলিস্তিন অথবা সৌদি আরব এবং ইরান যেই হোক না কেন।
উল্লেখ্য, ইরান-ইজরায়েল সংঘাতের জেরে ভবিষ্যতে ভারতের অবস্থান বদলায় কিনা সেটাই এখন দেখার।