রাষ্ট্রপুঞ্জের কালো তালিকায় ইজরায়েল! যে যে অভিযোগে এই সিদ্ধান্ত
UN : এই তালিকায় এমন কিছু দেশের নাম রয়েছে, যারা সশস্ত্র সংঘর্ষে শিশুদের ওপর গুরুতর নির্যাতন চালিয়েছে। এমন এক সময় ইজরায়েলকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে যখন গাজায় প্রায় ২০ মাস ধরে নৃশংস হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইজরায়েল।
রাষ্ট্রপুঞ্জ দ্বিতীয়বারের মতো ইজরায়েলকে ‘কালো তালিকাভুক্ত’ করল। এই তালিকায় এমন কিছু দেশের নাম রয়েছে, যারা সশস্ত্র সংঘর্ষে শিশুদের ওপর গুরুতর নির্যাতন চালিয়েছে। এমন এক সময় ইজরায়েলকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে যখন গাজায় প্রায় ২০ মাস ধরে নৃশংস হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইজরায়েল।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন)প্রকাশিত প্রতিবেদনে রাষ্ট্রপুঞ্জ বলেছে, ২০২৪ সালে সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে শিশুদের উপর সহিংসতা ‘নজিরবিহীন মাত্রায়’ পৌঁছেছে। তার মধ্যে শিশুদের অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে গাজায়। এর জন্য ইজরায়েলি বাহিনীকেই দায়ী করা হয়েছে।
‘চিলড্রেন ইন আর্মড কনফ্লিক্ট’ শীর্ষক বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে বিশ্ব জুড়ে শিশুদের উপর সহিংসতা ২৫ শতাংশ বেড়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে, ১৮ বছরের কম বয়সি শিশুদের বিরুদ্ধে ৪১ হাজার ৩৭০টি গুরুতর সহিংসতার তথ্য যাচাই করা হয়েছে। এখানে রয়েছে হত্যা ও অঙ্গহানি, যৌন সহিংসতা, স্কুল ও হাসপাতালের উপর হামলার মতো ঘটনা।
উল্লেখিত ঘটনাগুলির মধ্যে শুধু অধিকৃত প্যালেস্তাইন ভূখণ্ড ও ইজরায়েলের মধ্যে ২ হাজার ৯৫৯ শিশুর সঙ্গে ৮ হাজার ৫৫৪টি গুরুতর সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। তার মধ্যে শুধু প্যালেস্তাইনেই ২ হাজার ৯৪৪টি শিশু। ইজরায়েলের ১৫টি শিশু। প্রকাশিত ওই রিপোর্ট জানাচ্ছে, গত এক বছরে ইজরায়েলের বিরুদ্ধে মোট ৪১,৩৭০টি অভিযোগের সত্যতা সম্পর্কে নিঃসংশয় হয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জ।
প্রতিবেদনটিতে লেবাননে ইজরায়েলের হামলার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে গত বছর পাঁচ শতাধিক শিশু নিহত বা আহত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। রাষ্ট্রপুঞ্জ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘অধিকৃত প্যালেস্তাইন ভূখণ্ড ও ইজরায়েলে শিশুদের ওপর এত মাত্রায় গুরুতর সহিংসতার ঘটনায় আমি মর্মাহত।’ তিনি বলেন, জনবহুল এলাকায় বিস্ফোরক অস্ত্রের ব্যাপক ব্যবহার ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ছিল। গুতেরেস ইজরায়েলকে আবারও আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার আহ্বান জানান।
প্যালেস্তাইনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের সশস্ত্র শাখা আল-কাসেম ব্রিগেডস এবং ইসলামিক জিহাদের আল-কুদস ব্রিগেডসকেও দ্বিতীয়বারের মতো এই কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। ২০২৪ সালে গাজা ছাড়াও কঙ্গো প্রজাতন্ত্র (প্রায় ৪ হাজার), সোমালিয়া (প্রায় ২ হাজার ৫০০), নাইজেরিয়া (প্রায় ২ হাজার ৫০০), হাইতি (প্রায় ২ হাজার ২০০)-তে শিশুদের উপর সবচেয়ে বেশি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। সহিংসতা বেড়েছে—লেবাননে (৫৪৫ শতাংশ), মোজাম্বিকে (৫২৫ শতাংশ), হাইতিতে (৪৯০ শতাংশ), ইথিওপিয়ায় (২৩৫ শতাংশ) ও ইউক্রেনে (১০৫ শতাংশ)।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইজরায়েলে হামাসের হামলার পর এই সংঘর্ষ শুরু হয়। ওই দিন থেকে ইজরায়েল গাজায় নির্বিচার বোমা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এখনও পর্যন্ত ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী প্যালেস্তাইন ভূখণ্ডে ৫৫ হাজারেরও বেশি সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে প্রায় এক-চতুর্থাংশই শিশু। ইজরায়েলি সেনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে শিশুদের উপর সরাসরি হামলার পাশাপাশি খাদ্য ও চিকিৎসা পরিষেবায় বাধা দেওয়ার প্রমাণও পেয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। এর আগে ২০২৪ সালে ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, গাজার প্রতি ১০ প্যালেস্তাইন শিশুর ৯ জনই ‘ভয়াবহ খাদ্য সঙ্কটে’ রয়েছে। ক্ষুধা, পিপাসা এবং মারাত্মক অপুষ্টির কারণে অনেক প্যালেস্তাইনি শিশু মারা গেছে। ওই বছরই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছিল, গাজার প্রতি ৫ শিশুর ৪ জনই প্রতি তিন দিনে অন্তত এক দিন পুরো দিন না খেয়ে থাকে। আর কত দিন চলবে এই নিসংসতা? সেই প্রশ্ন থাকছেই।