ঘূর্ণিঝড় 'ডানা'-র দাপটে বন্ধ ট্রেন, উড়ান, ফেরি! বিপদে পড়লে কোথায় ফোন?

Cyclone Dana: দুর্যোগের কারণে কলকাতা, হাওড়া-সহ একাধিক পুরসভায় জরুরি বিভাগকে আগেভাগে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। খোলা হয়েছে একাধিক কন্ট্রোল রুম।

ডানা-র ভয়ে কাঁপছে দুই রাজ্য। ক্রমশই ভয়াল আকার ধারণ করেছে ঘূর্ণিঝড় ডানা। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সকালের মধ্যেই তা স্থলভাগে আছড়ে পড়তে পারে, তেমনটাই জানিয়েছে হাওয়া অফিস। ওড়িশার ভিতরকণিকা এবং ধামারের মাঝে ঘূর্ণিঝড়ের ‘ল্যান্ডফল’ হতে পারে বলে জানিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। বুধবার মধ্যরাতেই শক্তি বাড়িয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে সেটি। যা জানা যাচ্ছে, তাতে গত কয়েক ঘণ্টায় উপকূলের দিকে আরও এগিয়েছে ‘ডানা’। উপগ্রহ চিত্র বিশ্লেষণ করে আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, এই মুহূর্তে সাগরদ্বীপ থেকে ৩৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছে ঘূর্ণিঝড়টি। এবং ওড়িশার পারাদ্বীপ থেকে আর মাত্র ২৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে এবং ধামারা থেকে ২৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে রয়েছে ‘ডানা’। ‘ডানা’-র ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কায় গোড়া থেকেই কোমর বেঁধেছে প্রশাসন।

তাণ্ডবের আশঙ্কায় কাঁপছে বাংলা-ওড়িশা দুই রাজ্যই। এ রাজ্যেও জারি করা হয়েছে সতর্কতা। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে কলকাতা-সহ পশ্চিমবঙ্গের উপকূল সংলগ্ন জেলাগুলিতে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। দুর্যোগের কারণে প্রশাসন থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের একাধিক কর্মসূচি এলোমেলো হয়ে গিয়েছে। বৃহস্পতিবারের মন্ত্রিসভার বৈঠকে চার মন্ত্রীকে যোগ দিতে নিষেধ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁদের ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় জোর দিতে বলা হয়েছে। ঝড়ের কারণে বাতিল হয়ে গিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সফরও।

আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, বুধবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত ঝড়বৃষ্টি চলবে বাংলার উপকূলে। প্রবল বৃষ্টির লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনা এবং ঝাড়গ্রামে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে শুক্রবার পর্যন্ত। এই জেলাগুলিতে জারি করা হয়েছে কমলা সতর্কতা। দুর্যোগের কারণে কলকাতা, হাওড়া-সহ একাধিক পুরসভায় জরুরি বিভাগকে আগেভাগে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। খোলা হয়েছে একাধিক কন্ট্রোল রুম। রাজ্যের চার মন্ত্রীকে ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি তদারকির বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মন্ত্রিসভার বৈঠকে তাঁদের যোগ দিতে নিষেধ করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়তে পারে পূর্ব মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার উপকূল সংলগ্ন এলাকায়। ওই দুই জেলাতেও আলাদা করে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। প্রস্তুত রয়েছে প্রশাসন।

আরও পড়ুন: আয়লা, আমফান, ফণির পর ডানা! গত দু’দশকে কেন একের পর এক ঘূর্ণিঝড় বাংলায়?

বুধবার দুপুর থেকে শনিবার পর্যন্ত কলকাতা পুরসভায় জরুরি বিভাগে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। নিকাশি, বিদ্যুৎ, আলো, উদ্যান, স্বাস্থ্য, নাগরিক সুরক্ষা এবং জঞ্জাল অপসারণ বিভাগকে বাড়তি সতর্ক থাকতে বলেছেন পুর কর্তৃপক্ষ। খোলা হয়েছে বিশেষ কন্ট্রোল রুমও। এই কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে নবান্ন এবং লালবাজারও সংযুক্ত থাকছে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে কোথাও কোনও বিপত্তি ঘটলে কন্ট্রোল রুমের নম্বরে যোগাযোগ করতে পারবেন সাধারণ মানুষ। ৯৪৩২৬১০৪৫৫, ৯৪৩২৬১০৪৫৬, ৯৪৩২৬১০৪৩০, ৬২৯৯৬৩৪৪০- এই চারটে নম্বরে ফোন করতে পারবেন তাঁরা।  পুরসভার কন্ট্রোল রুমের যোগাযোগের নম্বর— ২২৮৬১২১২, ২২৮৬১৩১৩ এবং ২২৮৬১৪১৪। ঘূর্ণিঝড়ের জন্য বিশেষ সহায়তা নম্বর ১১২। পূর্ত দপ্তরের হেল্পলাইন নম্বর ০৩৩-২২১৪-১৮৫৮ এবং ০৩৩-২২১৪-১৮৫৫।  বৃষ্টির কারণে শহরে নিকাশি ব্যবস্থায় যাতে খুব বেশি সমস্যা না হয়, আগে থেকে তার জন্য প্রস্তুত পুরসভা। তৈরি রাখা হয়েছে ২৮১টি নিকাশি যন্ত্র। এ ছাড়া শহরের বিভিন্ন এলাকায় ৪৫২টি পাম্প সক্রিয় রাখা হয়েছে। হাইড্রোলিক ল্যাডার-সহ একাধিক যন্ত্রপাতিও প্রস্তুত রয়েছে। বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীও প্রস্তুত রয়েছে শহরে। ঘূর্ণিঝড়ের মোকাবিলার জন্য সমস্ত দফতরের কর্মীদের ছুটি বাতিল করেছে হাওড়া পুরসভা। হাওড়ার মুখ্য পুর প্রশাসক সুজয় চক্রবর্তী জানিয়েছেন, তিনটি বড় পাম্প-সহ ৭০টি পাম্প তৈরি রাখা হয়েছে তাঁর পুরসভায়। এ ছাড়া, জেলার আটটি স্কুলবাড়ি ফাঁকা করে রাখা হয়েছে। ভারী বৃষ্টির কারণে জলমগ্ন এলাকা থেকে স্থানীয়দের সরাতে হলে ওই স্কুলবাড়িতে আশ্রয় নেবেন তাঁরা। মজুত করে রাখা হয়েছে প্রচুর জলের পাউচ এবং শুকনো খাবার। হাওড়া পুরসভার কন্ট্রোল রুমের নম্বর— ৬২৯২২৩২৮৭০। হাওড়া ডিভিশনের হেল্পলাইন নম্বর ০৩৩-২৬৪০-২২৪১ এবং ০৩৩-২৬৪০-২২৪২।  শিয়ালদহ ডিভিশনের হেল্পলাইন নম্বর ০৩৩-২৩৫১-৬৯৬৭ ও ১০৭২৫।

ঘূর্ণিঝড় নিয়ে মঙ্গলবার বিদ্যুৎ উন্নয়ন ভবনে বিদ্যুৎ দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক এবং বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থা সিইএসসির আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। বিদ্যুৎসচিব শান্তনু বসুও বৈঠকে ছিলেন। আধিকারিকদের সতর্ক থাকতে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছেন মন্ত্রী। ঝড়ের ফলে কোথাও বিদ্যুৎ পরিষেবা সংক্রান্ত কোনও সমস্যা তৈরি হলে তা দ্রুত স্বাভাবিক করতে হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। জেলাগুলিতেও পর্যাপ্ত বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম মজুত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। জেলার বিদ্যুৎ আধিকারিকদের সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে কথা বলেছেন তিনি। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে কোথাও বিদ্যুৎ পরিষেবা সংক্রান্ত সমস্যা হলে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থা (ডব্লিউবিএসইডিসিএল) এবং সিইএসসির কন্ট্রোল রুমের হেল্পলাইন নম্বরে যোগাযোগ করতে হবে। ডব্লিউবিএসইডিসিএল-এর হেল্পলাইন নম্বর— ৮৯০০৭৯৩৫০৩ এবং ৮৯০০৭৯৩৫০৪। এ ছাড়াও, টোল ফ্রি নম্বর ১৯২২১ এবং হোয়াট্‌সঅ্যাপ নম্বর ৮৪৩৩৭১৯১২১। সিইএসসি-র হেল্পলাইন নম্বর— ৩৫০১১৯১২, ৪৪০৩১৯১২, ১৯১২। হোয়াট্‌সঅ্যাপ নম্বর ৭৪৩৯০০১৯১২। বিশেষ হেল্পলাইন নম্বর— ৯৮৩১০৭৯৬৬৬, ৯৮৩১০৮৩৭০০।

ডানা-র আতঙ্কে আগে থেকেই বন্ধ করা হয়েছে রেল পরিষেবা। লোকাল ও দূরপাল্লা মিলিয়ে বাতিল করা হয়েছে দু'শোর বেশি ট্রেন। হাওড়া থেকে বর্ধমান লোকাল (ভোর ৪টে), বর্ধমান লোকাল (ভোর ৪.১৫), গোঘাট লোকাল (ভোর ৪.২২), ব্যান্ডেল লোকাল (ভোর ৪.৪৭), তারকেশ্বর লোকাল (ভোর ৪.৫৫), গুরাপ লোকাল (ভোর ৫.০৫), ব্যান্ডেল লোকাল (ভোর ৫.১৪), সিঙ্গুর লোকাল (ভোর ৫.৩২), মসাগ্রাম লোকাল (ভোর ৫.৪৫), তারকেশ্বর লোকাল (ভোর ৫.৫৫), ব্যান্ডেল লোকাল (সকাল ৬.২৬), ব্যান্ডেল লোকাল (সকাল ৭.০৫), শ্যাওড়াফুলি লোকাল (সকাল সাড়ে৭টা), বেলুড়মঠ লোকাল (সকাল ৭.৪০), শ্রীরামপুর লোকাল (সকাল ৭.৪৫), শ্যাওড়াফুলি লোকাল (সকাল ৮.১২), ব্যান্ডেল লোকাল (সকাল ৮.২০), মেমারি লোকাল (সকাল ৮.৩৫), চন্দনপুর লোকাল (সকাল ৮.৪৯), শ্যাওড়াফুলি লোকাল (সকাল ৮.৫০), ব্যান্ডেল লোকাল (সকাল ৯.১০), শ্যাওড়াফুলি লোকাল (সকাল ৯.১৫), শ্রীরামপুর লোকাল (সকাল ৯.২০) এবং বারুইপাড়া লোকাল (সকাল ৯.৪০) শুক্রবার বাতিল থাকবে।

এ ছাড়া, ব্যান্ডেল থেকে হাওড়াগামী ভোর ৩টে ৭ মিনিট, ৩টে ৫০ মিনিট, ৪টে ৪৫ মিনিট, সকাল ৫টা ৪০ মিনিট, সাড়ে ৬টা এবং ৭টা ১৫ মিনিটের ট্রেনগুলি বাতিল করা হয়েছে। কাটোয়া, বর্ধমানগামী ভোরের কয়েকটি ট্রেনও বাতিল থাকবে শুক্রবার। বাতিল থাকবে বর্ধমান থেকে ব্যান্ডেলগামী কিছু ট্রেন। রেল জানিয়েছে, শুক্রবার সকাল ১০টা পর্যন্ত এই সমস্ত লাইনে যে ট্রেনগুলি বাতিল হয়নি, সেগুলি সব স্টেশনেই থামবে। পরবর্তী সময়ে পরিস্থিতি অনুযায়ী আরও ট্রেন বাতিল বা সময়ের পরিবর্তন করা হতে পারে। শিয়ালদহ শাখাতেও একাধিক ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শিয়ালদহ দক্ষিণ এবং হাসনাবাদ শাখায় ১৯০টি লোকাল ট্রেন বাতিল করেছে রেল। এমন অনেক স্টেশন রয়েছে যার আশে পাশে বেশ কিছু এলাকা ফাঁকা। ফলে সংশ্লিষ্ট এলাকায় ঝড়ের গতিবেগ যে তীব্রতর হবে তা বলাইবাহুল্য। যদি সেই ঝড়ের তীব্র গতিতে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেন ক্ষতিগ্রস্ত হয়! এমন আশঙ্কা থেকে এবার লোহার চেন দিয়ে বাধা হয়েছে বহু স্টেশনেই ট্রেনকে। শালিমার স্টেশনে ধরা পড়েছে তেমন ছবিই।

ঘূর্ণিঝড় ডানা নিয়ে সমস্ত পরিস্থিতি বিচার করে রেলপথের পাশাপাশি বিধিনিষেধ জারি হয়েছে বিমান পরিষেবাতেও। কলকাতা বিমানবন্দর সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ৬টা থেকে শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত বন্ধ থাকবে উড়ান ওঠানামা। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে আগাম সতর্কতা হিসেবে এই পদক্ষেপ নেওয়া হলো বলে জানিয়েছেন কলকাতা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। পরিস্থিতি বুঝে শুক্রবার সকাল ৯টার পর থেকে উড়ান পরিষেবা স্বাভাবিক করা হবে বলে জানা গিয়েছে। ঝড় তীব্র আকার নিলে কলকাতা বিমানবন্দরের রানওয়ে থেকে বিমানগুলিকে হ্যাঙ্গারে নিয়ে আসা হবে সুরক্ষার কারণে। উড়ান বাতিল হওয়ার কারণে যাত্রীদের সুবিধায় এয়ারলাইন্সগুলিকে বিকল্প ব্যবস্থা রাখার জন্য নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ঝড়ের পাশাপাশি ভারী বৃষ্টির কারণে বিমানবন্দরে জল জমলে অতিরিক্ত পাম্প প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সিআইএসএফ ও নিরাপত্তারক্ষীর সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে বিমানবন্দরে।

বাস-রাস্তা ঘিরেও কার্যত একই পরিস্থিতি। ধর্মতলায় পুরী, ভুবনেশ্বর যাওয়ার বাসগুলি দাঁড়িয়ে রয়েছে। পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে বলে জানা গিয়েছে। ডানা মোকাবিলায় একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে সরকারের তরফে।বন্ধ করা হয়েছে রাজ্যের সমস্ত স্কুলগুলি। মত্স্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি,সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকাগুলি থেকে পর্যটকদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

প্রশাসনের তরফে আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে ফেরি পরিষেবাও। স্ট্র্যান্ড রোডের ধারে চাঁদপাল ফেরিঘাট দুপুর থেকে বন্ধ রয়েছে। শুক্রবার পর্যন্ত বন্ধ থাকবে ফেরি পরিষেবা, আগেই সে কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। স্টিমারগুলিকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। প্রশাসনিক নির্দেশে শ্রীরামপুর থেকে ব্যারাকপুরে যাওয়ার ফেরিঘাট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। বুধবার অর্থাৎ ২৩ অক্টোবর বিকেলের পর থেকেই বন্ধ রাখা হয়েছ ফেরি পরিষেবা। ২৫ অক্টোবর অর্থাৎ শুক্রবার পর্যন্ত বন্ধ রাখা হবে ফেরিঘাট,এমনটাই খবর। হাওড়াতেও ফেরি সার্ভিস সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রাখা হয়েছে। হুগলি নদীর জলপথ পরিবহন সংস্থার পক্ষে থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করে ২৪-২৫অক্টোবর বন্ধ রাখা হয়েছে ফেরি সার্ভিস। উত্তরপাড়া-বলাগড় ফেরি পরিষেবাও বন্ধ। পুলিশের তরফে চলছে মাইকিংও। আগামী কাল কখন থেকে পরিষেবা পুনরায় শুরু হবে, তা পরিস্থিতি বুঝে ঠিক হবে।

দুর্যোগের কারণে কলকাতা, হাওড়া-সহ একাধিক পুরসভায় জরুরি বিভাগকে আগেভাগে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। খোলা হয়েছে একাধিক কন্ট্রোল রুম। রাজ্যের চার মন্ত্রীকে ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি তদারকির বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মন্ত্রিসভার বৈঠকে তাঁদের যোগ দিতে নিষেধ করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়তে পারে পূর্ব মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার উপকূল সংলগ্ন এলাকায়। ওই দুই জেলাতেও আলাদা করে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। প্রস্তুত রয়েছে প্রশাসন। বৃহস্পতিবার বিকেলে নবান্নে মন্ত্রিসভার বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। দুর্গাপুজোর পর এটাই মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠক। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ের কারণে রাজ্যের চার মন্ত্রীকে ওই বৈঠকে যোগ না দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া, বনমন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা, মৎস্যমন্ত্রী বিপ্লব রায়চৌধুরী এবং সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী বঙ্কিমচন্দ্র হাজরাকে বিশেষ নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। চারটি পৃথক জায়গায় পাঠিয়ে তাঁদের সেখানকার পরিস্থিতির উপর নজর রাখতে বলা হয়েছে। মানসকে মেদিনীপুরে, বিরবাহাকে ঝাড়গ্রামে, বিপ্লবকে দিঘায় এবং বঙ্কিমচন্দ্রকে সুন্দরবনে পরিস্থিতির মোকাবিলা করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

আরও পড়ুন:ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’ মোকাবিলায় কতটা তৈরি নবান্ন? যে যে প্রস্তুতির কথা শোনালেন মুখ্যমন্ত্রী

এদিকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের উপস্থিতিতে বৃহস্পতিবার সল্টলেকের পূর্বাঞ্চল সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে বিজেপির সদস্য সংগ্রহ অভিযানের আনুষ্ঠানিক সূচনা হওয়ার কথা ছিল। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবের কথা মাথায় রেখে সেই কর্মসূচি পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। আগামী শনিবার একই জায়গায় কর্মসূচি হওয়ার কথা। শাহের উপস্থিতিতে এই কর্মসূচিতে রাজ্যের সব জেলার নেতৃত্বকেও ডাকা হয়েছিল। কিন্তু সে সময়ে ঘূর্ণিঝড়ের কথা জানা ছিল না। পরে ডানার আশঙ্কায় শাহের সফর বাতিল করা হয়। শনিবারে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কর্মসূচি হওয়ার কথা। তবে সেখানে শাহ উপস্থিত থাকবেন কিনা, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

‘ডানা’-র সম্ভাব্য গতিপথ ইতিমধ্যই জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর। বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ সর্বোচ্চ গতিবেগে পৌঁছনোর কথা প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’-র। দমকা হাওয়ার বেগ পৌঁছবে ঘণ্টায় ১২৫ কিলোমিটারে। রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ উপকূল থেকে আর মাত্র কিছু দূরেই থাকবে ‘ডানা’। সে সময় ঝড়ের গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় ১০০-১১০ কিলোমিটার। শুক্রবার ভোর পর্যন্ত একই বেগে তাণ্ডব চালাবে ‘ডানা’। তার পর শক্তি হারিয়ে শুক্রবার বিকেলের মধ্যেই সাধারণ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। ঝোড়ো হাওয়ার গতিবেগ নেমে আসবে ঘণ্টায় ৭০-৮০ কিলোমিটারে। ইতিমধ্যেই ডানার প্রভাব বুঝতে শুরু করেছে কলকাতা-সহ রাজ্যের একাধিক জেলা। বৃষ্টিও লেগেই রয়েছে। ল্যান্ডফলের আগে ওড়িশার দিকে ধাবমান হওয়ার পথে কী খেল দেখায় ডানা, সেটাই এখন দুই রাজ্যের কাছে সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তার।

More Articles