রইল পড়ে বড়া, ঝোল! সবজি দিয়ে বাড়িতেই বানান মেদিনীপুরের মাছের ডিমের টক

Fish Egg Recipe: মাছের ডিমের সঙ্গে সবজি যোগ করায় পুষ্টিগুণও কিন্তু অনেকাংশেই বৃদ্ধি পেয়েছে এই টকের।

কথাতেই রয়েছে, মাছে-ভাতে বাঙালি। তাই তো মাছের সর্বস্বটুকু ভোগ না করা অবধি বাঙালির রসনা তৃপ্তি যেন পূরণ হতে চায় না। মাছের একখানি মাথা দিয়েই তৈরি করা হয়ে থেকে মুড়িঘণ্ট কিম্বা পুঁইশাকের চচ্চড়ির মতো লোভনীয় খাবারগুলি। বাঙালিদের মাছ এতই প্রিয় যে, মাছের সামান্য কাঁটাটুকুও ছাড়তে নারাজ অনেকেই। তাই কাঁটা দিয়েই আবার তৈরি হয় কাঁটা বা বাটি চচ্চড়ি। আর মাছের ডিমের বিকল্প কোনও উপাদানের তো জুড়ি মেলা ভার। তাই তো বাড়ির কচিকাঁচা থেকে শুরু করে বয়স্ক, সবার মধ্যেই মাছের ডিমের ‘হাই ডিমান্ড’।

মাছের মাথা বা কাঁটা দিয়ে আর বিশেষ কিছু পদ বানানো না গেলেও, মাছের ডিম দিয়ে কিন্তু আরও অনেক কিছুই বানানো যায়। ঝুরো ঝুরো করে মাছের ডিম ভাজা, ডিমের বড়া কিম্বা বড়া দিয়ে ঝোল তো অনেক খাওয়া হল, চলুন মাছের ডিম দিয়ে এবার নতুন একটা পদ বানানো যাক।

মেদিনীপুরের বেশ কিছু জায়গায় মাছের ডিম আর সবজি দিয়ে একপ্রকার টক বানানোর চল ছিল। এখনও কিছু জায়গায় গেলে হয়তো দেখা মিললেও মিলতে পারে এই টকের। মাছের ডিমের সঙ্গে সবজি যোগ করায় পুষ্টিগুণও কিন্তু অনেকাংশেই বৃদ্ধি পেয়েছে এই টকের। মাছের ডিমের এই টক তৈরি করা যায় দুইভাবে। গরম কালে যদি আপনার ঘরে কাঁচা আমের জোগান থাকে তবে, এই টক বানাতে পারেন কাঁচা আম দিয়ে। যদিও এখন প্রায় সারা বছরই কাঁচা আম যে কোনও দোকানেই পাওয়া যায়, তবুও অনেকেই সময়ের জিনিস সময়ে খেতে পছন্দ করেন। তাই গরমকাল পেরিয়ে গেলে এই টক বানানোর জন্য আমের পরিবর্তে আপনি ব্যবহার করতে পারেন আমসির।

আরও পড়ুন- Karim’s vs Kareem’s: এ বলে আমায় দেখ, ও বলে আমায়! পুজোয় কোথায় কোন বিরিয়ানি সেরা?

উপকরণ-

১। মাছের ডিম

২। ঢ্যাঁড়স

৩। কুমড়ো

৪। বেগুন (চাইলে অন্যান্য সবজিও এক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারেন)

৫। আমসি বা কাঁচা আম

৬। গোটা শুকনো লঙ্কা– ২টি

৭। পাঁচ ফোড়ন

৮। সর্ষে

৯। রাই

১০। পোস্ত

১১। হলুদ

১২। পরিমাণ মতো নুন

১৩। স্বাদ অনুসারে মিষ্টি

১৪। সর্ষের তেল

পদ্ধতি

রান্নাটি করার জন্য কিছু কাজ আগের থেকে করে রাখতে হবে, যেমন

  • প্রথমেই মাছের ডিমগুলোকে ভালো করে ধুয়ে নুন ও হলুদ দিয়ে ফেটিয়ে নিতে হবে এবং আপনার সবজিগুলোকে ছোট ছোট করে কেটে রাখতে হবে। একইসঙ্গে রান্নাতে আপনি যদি কাঁচা আমের ব্যববহার করতে চান, তবে আমগুলোকে আগে থেকে খানিক ভাপিয়ে নিতে হবে আবার আমসির ব্যবহার করতে চাইলে আমসিগুলিকে জলে কিছুক্ষণের জন্য ভিজিয়ে রাখতে হবে।
  • সর্ষে এবং রাইকে চাইলে একসঙ্গে বা আলাদা আলাদা করে বেটে রাখতে হবে।
  • এরপর কড়াই গরম হলে তাতে ২ টেবিল চামচ সরষের তেল দিতে হবে। তেল গরম হলে, ফোড়ন হিসাবে দিতে হবে ২ টি শুকনো লঙ্কা, পাঁচ ফোড়ন এবং সর্ষে।
  • ফোড়ন ফুটতে শুরু করলে কেটে রাখা ছোট ছোট ঢ্যাঁড়স, কুমড়ো, বেগুনগুলি দিয়ে হতে হবে তার মধ্যে।
  • এরপর আঁচ কম করে জিনিসগুলিকে খানিক নেড়েচেড়ে রাখতে হবে ঢাকা দিয়ে। মিনিট ২ পর ঢাকা খুলে সবজিতে স্বাদ মতো নুন এবং হলুদ দিয়ে ভালো করা নেড়েচেড়ে সবজিগুলো নরম হওয়া না পর্যন্ত আবার ঢাকা দিয়ে রেখে দিতে হবে। এরপর ঢাকা খুলে আঁচ বাড়িয়ে সবজির মধ্যে পরিমাণ মতো জল দিতে হবে।
  • জল এবং ভাপিয়ে রাখা কাঁচা আমগুলিকে বা ভিজিয়ে রাখা আমসিগুলিকে খানিক চটকে দিয়ে দিতে হবে জলের মধ্যে। এরপর জল না ফোটা পর্যন্ত তা ঢেকে রাখতে হবে।
  • তারপর ফুটন্ত আম বা আমসি মিশ্রিত জলে নুন-হলুদ দিয়ে ফেটিয়ে রাখা ডিমগুলো ঢেলে দিতে হবে এবং মাছের ডিমগুলি যাতে জমাট না বাঁধে তাই ক্রমাগত খুন্তি দিয়ে তা নাড়াতে হবে।
  • ডিমগুলো জলে ভালোভাবে মিশে গেলে বেটে রাখা রাই এবং পোস্ত দিতে হবে মাছের ডিমের টকে। চাইলে সবজি কষানোর সময়েও বেটে রাখা পোস্ত এবং রাই তাতে দিতে পারেন।
  • এরপর আঁচ বাড়িয়ে কিছুক্ষণ মিশ্রণটিকে ভালো করে ফোটানোর পর তাতে দিতে হবে স্বাদ অনুসারে মিষ্টি এবং সবশেষে নামানোর আগে ১/২ টেবিল চামচ সরষের তেল দিতে হবে রান্নাটিতে। ব্যাস, এইখানেই রান্নার পদ্ধতি প্রায় শেষ বললেই চলে।

আরও পড়ুন-একা ‘দাদা-বৌদি’-ই বদলে দিয়েছে সোদপুরের ছবি! নামজাদা রেস্তোরাঁর ঠিকানা এখন মফসসল

মাছের ডিমের টক কিন্তু ইতিমধ্যেই তৈরি হয়ে গেছে। তবে এইসময় রান্নাটি নামিয়ে নিলে তাতে কাঁচা সরষের তেলের গন্ধ থেকে যাবে। তাই ২ মিনিট অল্প আঁচে টককে খানিক নাড়াচাড়া করতে হবে। এরপর গ্যাস বন্ধ করে, সেই গরম ওভেনের উপরেই রেখে দিতে হবে রান্নাখানি। গরম অবস্থাতেই একবার চেখে দেখতে পারেন মাছের ডিমের টক। কিছু বেশি বা কম হলে এই অবস্থাতেই তা দিয়ে দিতে হবে টকে। তাহলে এবার বাড়িতে মাছের ডিম এলে থোড়-বড়ি- খাড়া আর খাড়া-বড়ি-থোড়ের বদলে এই স্টাইলে টক বানিয়ে চমকে দিন সকলকে।

More Articles