শুকোচ্ছে আমাজন, চিরতরে বন্ধ হতে চলেছে চকলেটের জোগান?

Amazon Cocoa Cultivation: কোকোয়া ফলের গাছ অর্থাৎ কাকাও-এর বেড়ে ওঠা, কোকোয়ার ফলন আর তার পরিণত হওয়ার জন্য আদর্শ হল পৃথিবীর বৃষ্টিঅরণ্য

জলবায়ু পরিবর্তনের সর্বগ্রাসী প্রভাব কেবল আমাদের চারপাশের জলে, বাতাস কিংবা মাটিতেই সীমাবদ্ধ নেই আর। এর প্রভাব এবার ধীরে ধীরে আমাদের রোজকার খাবারেও পড়ছে। প্রকৃতির যে দশা আমরা বছরের পর বছর ধরে করেছি, তার প্রভাব আমাদের অলক্ষ্যেই সমগ্র জীব-জগতের উপর পড়েছে, পড়ছে। গাছপালা, শস্য ও ফলের প্রভূত ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। প্রতি বছর গড় তাপমাত্রা বাড়ার কারণে আমরা হারাতে বসেছি নলেন গুড়ের উৎপাদন, যে নলেনগুড় বাঙালিদের অহংকার ছিল। বাংলায় ধান উৎপাদন কমছে প্রতি বছর। নানা রকম ধানের জাত আমাদের অগোচরেই আমরা হারিয়েছি অনেক আগেই। ভারতের শস্যসুফলা রাজ্যগুলিতে শস্য উৎপাদনের হার কমেছে। শুধু ভারত কেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বের কোনও না কোনও প্রান্তে এই মুহূর্তে কোনও না কোনও শস্য বা ফলের ফলনের হার কমছে। ফলে সেই শস্য বা ফলকে যে খাবারের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়, তাদেরও উৎপাদন মার খাচ্ছে। সেই রকমই একটি খাবার, প্রায় সবারই পছন্দের চকলেট, যার মূল কাঁচামাল কোকোয়া।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সারা বিশ্বজুড়ে কোকোয়া উৎপাদনকারী দেশগুলিতে কমছে কোকোয়া ফলের উৎপাদন। কোকোয়া ফলের গাছ অর্থাৎ কাকাও-এর বেড়ে ওঠা, কোকোয়ার ফলন আর তার পরিণত হওয়ার জন্য আদর্শ হল পৃথিবীর বৃষ্টিঅরণ্য বা রেইন ফরেস্টগুলি। ফলত, নিরক্ষরেখা বিস্তৃত হয়েছে যে দেশগুলির উপর দিয়ে, অর্থাৎ যেখানে বেড়ে উঠেছে নিশ্ছিদ্র, ঘন সবুজ বৃষ্টিঅরণ্য, সেই দেশ ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চল জুড়ে বেড়ে ওঠে কাকাও গাছ ও তার ফল কোকোয়া। সেই কারণেই মেক্সিকো, ব্রাজিল, পেরু, ক্যামেরুন, ইক্যুয়েডর, ইন্দোনেশিয়ার বৃষ্টিঅরণ্যে চাষ করা হয় কোকোয়া। একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, পৃথিবীর এক-তৃতীয়াংশ কোকোয়া জন্মায় আফ্রিকা মহাদেশের ঘানা, আইভরি কোস্ট, নাইজেরিয়া এবং ক্যামেরুনে।

আরও পড়ুন- শুকিয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর বৃহত্তম নদী! যে ভয়াবহ বিপদের মুখে আমাজন নদী

কোকোয়া ফলের বেড়ে ওঠার আদর্শ পরিবেশ

ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ এগ্রিকালচারাল রিসার্চ, সেন্ট্রাল প্ল্যান্টেশন ক্রপস রিসার্চ ইনস্টিটউটের মতে কোকোয়া চাষের জন্য প্রয়োজন ১৮ থেকে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। তবে আদর্শ তাপমাত্রা কিন্তু ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তার সঙ্গে অবশ্যই প্রয়োজন উচ্চ আপেক্ষিক আর্দ্রতা। অঙ্কুরিত হওয়ার পর, যতদিন না প্রাপ্তবয়স্ক হচ্ছে, কোকোয়া গাছের প্রয়োজন অন্তত ৫০ শতাংশ ছায়া। তাই রেইন ফরেস্টে কোকোয়া গাছ বেড়ে ওঠে অন্য গাছের ছায়ায়। কিন্তু আমাজন থেকে শুরু করে পশ্চিম আফ্রিকার বৃষ্টিঅরণ্য, সব জায়গাতেই লাগামহীন ভাবে গাছ কাটা হয়েছে, বিশেষ করে বিগত দশকে। এর ফলে কোকোয়া গাছের যেমন ছায়ার অভাব ঘটেছে, তেমনই কমেছে বৃষ্টির হার।

কোকোয়া ফুলের নিষেক হয়ে, শক্ত হয়ে ফলে পরিণত হওয়ার জন্য দরকার যথেষ্ট বৃষ্টিপাতের। প্রতি মাসে ৯০ থেকে ১০০ মিলিমিটার এবং বছরে গড়ে ১৫০০ থেকে ২০০০ মিলিমিটার বৃষ্টির প্রয়োজন কোকোয়া ফল পরিপক্ব হয়ে ওঠার জন্য। কিন্তু বৃষ্টির অভাব হলে নিষিক্ত ফুল আর শক্ত হয়ে ফলে পরিণত হবে না। যেহেতু নিরক্ষরেখা জুড়ে সূর্যের আলো একদম সরাসরি পড়ে, একটা ভ্যাপসা গরম দিনের শেষে ঝেঁপে বৃষ্টি আসে। গাছগুলোও তরতরিয়ে বেড়ে ছাতার মতো ‘ক্যানোপি’ তৈরি করে। যার ছায়াতে বেড়ে ওঠে কোকোয়া।

বছরের পর বছর ধরে দক্ষিণ মেক্সিকোর লাকাডোন অঞ্চলে কোকোয়া চাষ করছেন এডিলবার্টো মোরেলস। কিছু বছর আগেও তিনি গড়ে এক হাজার কেজি করে কোকোয়া ফল উৎপাদন করেছেন প্রতি বছর (সূত্র- ‘দ্য গার্ডিয়ান’; ৩রা সেপ্টেম্বর, ২০২৪)। কিন্তু গত বছর কোকোয়ার ফলন কমে ১০০০ থেকে ৫০০ কেজিতে এসে দাঁড়িয়েছে স্রেফ বৃষ্টির অভাবে। বৃষ্টির অভাবে মেক্সিকো, ব্রাজিল, বলিভিয়ায় খরার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ফলে এডিলবার্টোর মতো হাজার হাজার কোকোয়া চাষির মাথায় হাত।

এদিকে পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলিতেও কমেছে কোকোয়া চাষের হার। তবে ব্রাজিল বা মেক্সিকোর মতো শুষ্কতার জন্য নয়। বরং ঠিক উল্টো। এল নিনোর প্রভাব সাম্প্রতিককালে ক্রমশই প্রকট হচ্ছে। ফলে আফ্রিকার রেইন ফরেস্টে বৃষ্টিপাতের হার বেড়েছে অস্বাভাবিক ভাবে। আপেক্ষিক আর্দ্রতা এখানে মাত্রাছাড়া। অস্বাভাবিক বেশি বৃষ্টিপাত আর আর্দ্রতা কোকোয়া ফলন ও তার বেড়ে ওঠার পক্ষে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সব মিলিয়ে সারা বিশ্বজুড়ে যেভাবে কোকোয়ার ফলন নিম্নগামী, তাতে কেবল যে চকলেট শিল্পেরই লোকসান হচ্ছে এমনটা নয়। এর আঁচ পড়েছে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে।

আরও পড়ুন- সেলিব্রিটিদের পছন্দ, মল থেকে তৈরি এই কফির নেপথ্য ইতিহাস জানলে শিউরে উঠবেন

সারা পৃথিবীজুড়ে বৃক্ষহীন হচ্ছে বৃষ্টিঅরণ্য

সাম্প্রতিক কয়েক বছর ধরে প্রকৃতির খামখেয়ালি আবহাওয়ার সাক্ষী থেকেছে সারা বিশ্ব। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের দিকে আঙুল তোলার আগে, আমাদের কয়েক ধাপ পেছনে যেতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের অনেকগুলো কারণের মধ্যে একটি হল দেদার গাছকাটা।

বিগত কয়েক বছরজুড়ে ব্যাপকহারে গাছ কাটা হয়েছে বৃষ্টিঅরণ্য জুড়ে, বিশেষ করে ব্রাজিল, পেরু, বলিভিয়ার অন্তর্গত আমাজনের জঙ্গলে। এই লাগামহীন গাছকাটার কারণ ছিল বেআইনিভাবে সোনাসহ নানা খনিজ সম্পদ উত্তোলন। ব্রাজিলের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট
জেয়ার্ড বলসেনারো ক্ষমতায় থাকাকালীন, তাঁর আস্কারাতেই বিধিনিষেধের তোয়াক্কা না করে ব্রাজিলের আমাজনের জঙ্গলে চলেছে বেআইনি লাগামহীন খনিজ সম্পদ উত্তোলন। ঠিক একই সমস্যা দেখা দিয়েছে পশ্চিম আফ্রিকার কোকোয়া চাষ করা দেশগুলিতেও। সেখানেও বেআইনিভাবে সোনার আকরিক উত্তোলনের জন্য ক্রমাগত ধ্বংস হচ্ছে রেইন ফরেস্ট।

আমাজন-সহ পৃথিবীর অন্যান্য বৃষ্টিঅরণ্যে এল নিনোর প্রভাব

আমাজনের জলচক্র নিয়ন্ত্রণে অর্থাৎ বৃষ্টি হওয়া, সেই বৃষ্টির মাটিতে নেমে আসা, গাছের সেই জল শোষণ করে আবার সালোকসংশ্লেষ করে তা প্রকৃতিতে ফিরিয়ে দেওয়া — গাছের ভূমিকা অপরিসীম। আমাজনের রেইন ফরেস্ট শুধু স্থানীয় জলবায়ুকেই নিয়ন্ত্রণ করে না। এই একদা সুবৃহৎ, নিশ্ছিদ্র অরণ্য নিয়ন্ত্রণ করে সারা বিশ্বের জলবায়ুকে। আর তাই এই জঙ্গলকে পৃথিবীর ফুসফুস বলা হয়। বিশ্বের বহু নদীতে জল থাকা বা না থাকা, তাদের বয়ে চলাকেও প্রভাবিত করে আমাজনের জঙ্গলের গাছ। প্রভাবিত করে সমুদ্রের ঢেউকে, সমুদ্রের বুকে পাকিয়ে ওঠা ঝড়-ঝঞ্ঝাকে। আবার সেই ঝড়-ঝঞ্ঝা, বৃষ্টিপাতের উপর নির্ভর করে আমাজনের জঙ্গলে কতটা বৃষ্টি হবে কিংবা বিশ্বের
নানা অংশে তাপমাত্রার পারদ কোথায় থাকবে। এটা একদম চক্রের মতো চলে, একটি বিষয় আরেকটি বিষয়ের উপর ভীষণভাবে নির্ভরশীল।

কিন্তু বিগত দশকে বিজ্ঞানীরা দেখছেন, কী যেন একটা বদলে গেছে আমাজনের জঙ্গলে। এই একই বদল এসেছে পৃথিবীর অন্যান্য
রেইন ফরেস্টেও। আসলে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্রীভাবে তালগোল পাকিয়েছে রেইন ফরেস্টের জলচক্র, বিশেষ করে আমাজনের রেনফরেস্টে। এখানে কাজ করছে দু’টি বিষয়। প্রথম বিষয়টি হলো এল নিনো সাদার্ন অসসিলেশন বা এনসো। এনসোর প্রভাব ভীষণভাবে পড়ে ল্যাটিন আমেরিকার জলবায়ুর উপর। তবে এনসো খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয়। কিন্তু অস্বাভাবিক হল ধীরে ধীরে,
প্রতি বছর এনসোর প্রভাব ক্রমাগত বেড়ে চলা। আর এনসোর এই অপ্রীতিকর প্রভাবের জন্য দায়ী মানুষের কারণে ঘটা জলবায়ু পরিবর্তন। বর্তমানে উত্তর-পূর্ব ব্রাজিল, পেরু ও বলিভিয়ার অল্টিপ্লেনো অঞ্চল, মধ্য আমেরিকার প্রশান্ত মহাসাগর উপকূলজুড়ে যে মাত্রাতিরিক্ত শুষ্কতা দেখা যাচ্ছে, যে অস্বাভাবিক শুষ্কতার কারণে খুব সাম্প্রতিক ব্রাজিলের আমাজনে দাবানল শুরু হয়, তার কারণ কিন্তু এনসো। আবার এই এনসোর কারণেই, দক্ষিণ ব্রাজিল, পেরুর উত্তর-পশ্চিমভাগে অস্বাভাবিক আর্দ্রতা আর মাত্রাতিরিক্ত বৃষ্টি হচ্ছে।

এই পুরো বিষয়টাকে অত্যন্ত কুৎসিত আর ভয়ঙ্কর রূপ দিয়েছে বেলাগাম গাছকাটা। সব মিলিয়ে আমাজন ও পৃথিবীর অন্যান্য বৃষ্টি অরণ্যে নাটকীয়ভাবে বদলাচ্ছে বৃষ্টির ধরণ। এদিকে সিমিউলেশন মডেল বলছে, ২০২৫ সালের মধ্যে আমাজন রেইন ফরেস্টের তাপমাত্রা ২ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়বে। পাশাপাশি কমতে থাকবে বৃষ্টিপাত। ফলত, বছরের আপেক্ষিকভাবে শুষ্ক সময়গুলিতে এককালের ঘন সবুজ, নির্ভদ্য আমাজন ক্রমশ শুষ্ক জঙ্গলে পরিণত হবে। আশঙ্কার শেষ এখানেই নয়। সিমিউলেশন মডেল থেকে একথাও উঠে আসছে যে, এ ভাবে চললে ৩০ থেকে ৬০ শতাংশ আমাজনের জঙ্গল রুক্ষ-শুষ্ক সাভানা অঞ্চলে পরিণত হবে।

প্রকৃতির খামখেয়ালিপনা এবং গাছের অসুখ

আফ্রিকার রেইন ফরেস্টে এল নিনো ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে যে হারে আর্দ্রতা ও বৃষ্টিপাত বেড়েছে, তাতে কাকাও গাছে উৎপাত বেড়েছে নানারকম পরজীবী ও পোকামাকড়ের। সঙ্গে বেড়েছে ভাইরাস ও ছত্রাকঘটিত একাধিক রোগের। এর মধ্যে অন্যতম ‘ব্ল্যাক পড ডিজিজ’। যে রোগের জন্য মূলত দায়ী ফাইটোফথোরা নামের একটি পরজীবী ছত্রাকের প্রজাতি। ‘ব্ল্যাক পড ডিজিজ’ কীভাবে শনাক্ত করা যাবে? এই অসুখের মূল বৈশিষ্ট্য হল, কোকোয়া ফলের গায়ে কালো, ভেজা দাগ দেখা যাবে। যার ফলে ধীরে ধীরে পুরো ফলটাই পচে যাবে।

গোদের উপর বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে 'সোলেন শুট ভাইরাস’, যা ছড়ায় মিলিবাগসের মাধ্যমে। এই ভাইরাস পশ্চিম আফ্রিকার
আইভরি কোস্টের ২০ শতাংশ কোকোয়াই নষ্ট করেছে। অতিরিক্ত আর্দ্রতার সুযোগে মিলিবাগসের মতো ছোট ছোট পোকা আফ্রিকার রেইন ফরেস্টে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।

মিলিবাগস একবার কাকাও গাছকে আক্রমণ করলে, তার রসও শুষে নেয়। ‘সোলেন শুট ভাইরাস’- এর আক্রমণে ফুলে ওঠে গাছের কাণ্ড, ডালপালা। গাছের পাতা নষ্ট হয়ে যায়। রসশূন্য হয়ে ওঠে গাছের শিরা-উপশিরা। ফলে গাছের ডালপালা শুকোতে শুকোতে,
একটা সময় আসে যখন আস্ত কাকাও গাছটাই শুকিয়ে মরে যায়।

পরিশেষে

বিশেষজ্ঞদের মতে, চলতি বছরে কোকোয়া ফলন আরও ৩০ শতাংশ কমবে। তাঁদের আশঙ্কা, এর ফলে সারা বিশ্বে ২,৭৯,০০০ মেট্রিক টনের কাছাকাছি কোকোয়ার ঘাটতি দেখা দেবে। ইতিমধ্যেই ল্যাবরেটরিতে কোকোয়ার পরিপূরক তৈরির কাজ শুরু করে দিয়েছে একাধিক খাদ্য উৎপাদনকারী সংস্থা। আশার কথা, আমাজন রেইন ফরেস্টে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে, সেই অঞ্চলের আদিবাসীদের নিয়ে শুরু হয়েছে কোকোয়া উৎপাদন বাড়ানোর প্রয়াস। এই উদ্যোগকে কেন্দ্র করে কোকোয়া ছাড়াও নানা রকম আঞ্চলিক গাছের বেড়ে ওঠার দিকে নজর দেওয়া হবে। ফলে প্রাকৃতিক জীব-বৈচিত্রের পাশাপাশি, লাভবান হবে সেখানকার আদিবাসী ও আঞ্চলিক গোষ্ঠীর মানুষেরা।

More Articles