মহাকুম্ভে মহাবিপর্যয়! ১০ কোটির পূণ্যস্নানে পদপিষ্ট মানুষ! দায় কার?

Maha Kumbh stampede 2025:মহাকুম্ভে কর্মরত সাফাই কর্মচারীদের অনেকেই বলেছেন, অস্থায়ী সেতুগুলো এত ভিড় সামলাতে অভ্যস্ত না হওয়ায় ভিড় নিয়ন্ত্রণের অযোগ্য হয়ে পড়েছিল।

মহাকুম্ভে মহাবিপর্যয়ের আশঙ্কা! প্রয়াগরাজে একমাসব্যাপী মহাকুম্ভে বুধবার ভোররাতে পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনায় উত্তরপ্রদেশ প্রশাসন উদ্বিগ্ন। ৪৫০ মিলিয়ন মানুষের আগমনের পূর্বাভাস রয়েছে প্রশাসনের কাছে। তার মাঝে রয়েছে একাধিক 'পূণ্যতিথি', একাধিক বিশেষ স্নানের তিথি। ফলে দিন বিশেষে ভিড় লাগামহীন হবে সেই আশঙ্কাও ছিল। আশঙ্কা সত্য হলো মৌনী অমাবস্যায়। পবিত্র স্নানের জন্য প্রচুর তীর্থযাত্রী জড়ো হওয়ার পরে পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা ঘটল মহাকুম্ভে। আহতদের উদ্ধার করে মেলা এলাকায় স্থাপিত কেন্দ্রীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বুধবার রাত্রি দুটো নাগাদ এই ঘটনা ঘটে। ঠিক কতজন আহত তা এখনও গুনেও উঠতে পারেনি প্রশাসন। যোগী প্রশাসন বলছে, পরিস্থিতি গুরুতর নয়। আর বিভিন্ন হাসপাতালের গোপন সূত্র জানাচ্ছে, এখনও অবধি অন্তত ১৫ জনের মৃত্যু ঘটেছে। তবে কেউই প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না প্রশাসনের ভয়ে।

মেলার একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “ভিড় ব্যবস্থাপনায় ব্যারিকেডিং ব্যবস্থা খুব একটা কার্যকর ছিল না। ব্যারিকেড ধরে ধরে দীর্ঘ দূরত্ব হাঁটতে হচ্ছিল ভক্তদের। অনেকেই গত বেশ কিছুদিন ধরেই এই বিষয়টি নিয়ে অভিযোগও করছিলেন। এই ব্যারিকেডের কারণে কিছু জায়গায় অস্বাভাবিক ভিড় উপচে পড়ছিল। এর আগে শাহী স্নানের সময়ও কিছু বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছিল। সাধুদের সঙ্গে স্নান করার বাসনা পূর্ণ করতে আসা ভিড় সামলাতে পুলিশকে জলে নামতে হয়েছিল।

আরও পড়ুন- ৪৫০ মিলিয়ন মানুষের বর্জ্য! কুম্ভমেলা সামলাচ্ছেন সেই ‘অস্পৃশ্য’ সাফাইকর্মীরাই

পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনাস্থলের চারপাশে ছড়িয়ে থাকা কাপড়, কম্বল, ব্যাগ চটি প্রমাণ করে দিচ্ছে কী পরিমাণ অস্থিরতা ছিল ওই অঞ্চলে। যদিও এই ঘটনার পরে অনেক তীর্থযাত্রীই উৎসব থেকে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্তও নিয়েছে, তবু, স্নানের উত্তেজনা এখনও প্রবল। তীর্থযাত্রীদের অনেকে বলছেন ব্যারিকেড ধরে হাঁটতে হাঁটতে নদীতে স্নান করতে যাচ্ছিলেন তাঁরা। তখনই পদপিষ্ট হওয়া শুরু হয়। হঠাৎই বিশাল ধাক্কা আসতে শুরু করে এবং অনেক লোক মাটিতে পড়ে যায়। সেই মানুষদের মাড়িয়েই ছুটে চলেন অন্য পূণ্যার্থীরা। পদপিষ্ট হয়ে যান বহুজন।

মৌনী অমাবস্যায় অমৃত স্নান বা মহাকুম্ভের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য আচার হিসাবে বিবেচিত হয়। আশঙ্কা ছিল প্রায় ১০ কোটি তীর্থযাত্রী ওই একটি দিনে স্নান করতে আসবেন। এবারের মেলা 'ত্রিবেণী যোগ' নামে বিরল যোগ। ১৪৪ বছর পর এমন বিরল মুহূর্ত এসেছে। ফলে পূণ্যার্থী মানুষের স্নান করে পাপস্খলনের বাসনাও তীব্র হয়ে উঠেছে। পাপস্খলন করতে গিয়ে পদদলনের আশঙ্কাও তাই সমানুপাতিক হারে বেড়েছে। মেলা কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবারই ভক্তদের নিরাপত্তা এবং সুবিধার জন্য একটি নির্দেশিকা জারি করেছিল। ওই নির্দেশিকা অনুসারে, তীর্থযাত্রীদের সঙ্গম ঘাটে নির্দিষ্ট লেন ব্যবহার করার এবং স্নানের জায়গার কাছে যাওয়ার সময় লাইন মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। অপ্রীতিকর ঘটনা আটকাতে দর্শনার্থীদের ধৈর্য ধরে থাকার এবং ব্যারিকেড এবং সেতুতে ভিড় এড়াতেও অনুরোধ করা হয়েছিল। ডুব দেওয়ার পরে ঘাটে এমনিই ঘুরে বেড়াতেও মানা করা হয়েছিল। অবিলম্বে পার্কিং এলাকায় বা তাদের নিজস্ব গন্তব্যে ফিরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু ভক্তমন তো স্বাধীন। ১৪৪ বছরে এমন একটি দিন, কে বাঁচিতে চায় স্বাধীনতাহীনতায়?

মহাকুম্ভে কর্মরত সাফাই কর্মচারীদের অনেকেই বলেছেন, অস্থায়ী সেতুগুলো এত ভিড় সামলাতে অভ্যস্ত না হওয়ায় ভিড় নিয়ন্ত্রণের অযোগ্য হয়ে পড়েছিল। এর মধ্যে কয়েকটি বন্ধ থাকায় সেখানে ছিল উপচে পড়া ভিড়। সুতরাং হুড়োহুড়িতে পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা স্বাভাবিক। এই মর্মান্তিক ঘটনার পর একাধিকবার যোগী আদিত্যনাথকে ফোন করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। মহাকুম্ভ নিয়ে প্রচারের কোনও কসুর করেনি যোগী প্রশাসন। সারাদেশে উন্মাদনা প্রসারে সফলও তারা। তবু ঘটল বিপর্যয়।

আরও পড়ুন-যে সঙ্গমে ডুব দিচ্ছেন ভক্তরা, সেই গঙ্গার জল কতটা দূষিত? চমকে দেবে এই তথ্য

উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বলেছেন, প্রয়াগরাজের পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে ভিড় এখনও বিশাল। "প্রায় ৮-১০ কোটি ভক্ত আজ প্রয়াগরাজে উপস্থিত রয়েছেন। সঙ্গমের দিকে ভক্তদের চলাচলের কারণে চাপ ক্রমে বাড়ছে।” যোগী জানিয়েছেন, "ভক্তদের কোনও গুজবে কান না দেওয়ার জন্য আবেদন করছি। আমরা আহত ব্যক্তিদের যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করছি। ভক্তদের তাঁদের নিজ নিজ গন্তব্যে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য রেল প্রয়াগরাজ অঞ্চলের বিভিন্ন স্টেশন থেকে বিশেষ ট্রেনের আয়োজন করেছে।”

কিন্তু ১০ কোটি মানুষ একদিনে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় জড়ো হবে জেনেও এত অপ্রতুল ব্যবস্থা কেন? এই ব্যাপক ভিড়কে যোগী প্রশাসন নিজস্ব রাজনৈতিক লাভ হিসেবে দেখতে চেয়েছে একথা তো সকলেরই জানা। তাহলে এই ভিড়ের নিরাপত্তার দায় কীভাবে এড়িয়ে গেল প্রশাসন? ধর্মান্ধ ভিড়কে নিয়ন্ত্রণ না করতে পারা কি বিজেপি সরকারের গাফিলতি নয়? এই জরুরি অবস্থার পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে, আখড়াগুলি তাদের ঐতিহ্যবাহী 'অমৃত স্নান' বন্ধ করে দেয়। ঐতিহ্য অনুসারে, সন্ন্যাসী, বৈরাগী এবং উদাসীন এই তিনটি সম্প্রদায়ের আখড়াগুলি মহাকুম্ভের সময় সঙ্গম ঘাটে একটি বিশাল শোভাযাত্রার পরে একে একে ডুব দেয় জলে। উল্লেখ্য, ১৯৫৪ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি কুম্ভমেলার মূল স্নানের দিন কুম্ভনগরে পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনায় কমপক্ষে ৩০০ জন নিহত হন এবং ১০০০-এরও বেশি মানুষ আহত হন।

More Articles