শুধু ক্রিকেট নয়, খেলা ঘুরছে ফুটবল মাঠেও, নেপথ্যে অভীষ্টারা

Rising Star of Indian Women’s Football: তাঁর চলনে যেন পাহাড়ি বাতাসের গতি, তাঁর খেলায় আছে মাটির গন্ধ আর স্বপ্নের আলো। যে মেয়ে একসময় ভাইয়ের পিছু দৌড়ত, সে আজ ভারতের মহিলা ফুটবলের ভবিষ্যত।

বিসকেকের ঘাসের উপর দিয়ে বইছে হালকা ঠান্ডা হাওয়া। ম্যাচের শেষ দশ মিনিট। বলটা গড়িয়ে যাচ্ছে একটু বেশি জোরে। পেছনে ছুটে আসছে উজবেক ফরওয়ার্ড। সামনে সহ-খেলোয়াড়দের চিৎকার,

“পাস অভিষ্টা, পাস!”

চোদ্দ বছরের মেয়েটি নিঃশ্বাস নিল। ডান পায়ে বল থামাল। হালকা মোচড়ে ঘুরে দাঁড়াল, দুই মিডফিল্ডারকে ফাঁকি দিয়ে নিখুঁত পাস ছুঁড়ে দিল। দেখলে কেউ ভাববে না, এটা তার মাত্র দ্বিতীয় ম্যাচ সেন্টার-ব্যাকে। সিকিমের পাকিয়ং শহরে ভোরে কুয়াশার ভেতর দিয়ে দৌড়ত এক ছোট মেয়ে। ভাইয়ের পিছু পিছু, পায়ের তলায় ঘাস, মনে স্বপ্ন। বাবা রিওয়াজ বসনেত, স্থানীয় লিগের ফুটবলার। মেয়ে ছোট থাকতেই বুঝেছিলেন  মেয়ের সঙ্গে বলের অদ্ভুত বোঝাপড়া আছে। “বল যখন ওর পায়ে থাকে, মনে হয় মাটিতে পড়ে না,” হেসে বলেছিলেন তিনি।

স্কুল টুর্নামেন্টে তিন সিনিয়রকে কাটিয়ে গোল করেছিল অভীষ্টা। সেই দিনই স্থানীয় কোচেরা বলেছিলেন, “এই মেয়েটা আলাদা।” তারপর একের পর এক উত্তরণ। ২০২৪ সালে নিমুচে সাব জুনিয়র ন্যাশনালে এক ম্যাচে চার গোল। সেখান থেকেই ডাক আসে ভারতীয় ট্রায়ালে। বছর ঘুরে ভারতের জার্সি গায়ে। ভুটানে এসএএফএফ অনূর্ধ্ব ১৭ চ্যাম্পিয়নশিপ। প্রথম ম্যাচেই নেপালের বিরুদ্ধে দু'টি গোল, এক অ্যাসিস্ট। দ্বিতীয় ম্যাচে আবার দু'টি গোল। তারপর ‘সর্বোত্তম খেলোয়াড়’ পুরস্কার। পুরস্কার নিতে গিয়ে হাত কাঁপছিল। আর পাশে থাকা সতীর্থরা তখন হাসছিল গর্বে।

আরও পড়ুন

ক্রিকেট শুধু ক্রিকেট নয়, জয়ের অন্তরালে আছে মেয়েদের পঞ্চাশ বছরের লড়াই

কোচ জোয়াকিম পারসন একদিন বলেছিলেন, অভীষ্টাকে সেন্টার-ব্যাকে খেলতে। তিনি ভয় পেয়েছিলেন। পরে বুঝতে পেরে নিজেই হেসে বলেছিলেন, “ডিফেন্স থেকেও খেলা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।” আজ সেই ভয়ই তাঁর শক্তি। শান্ত, স্থির, কিন্তু শিকারির মতো সচেতন। সহখেলোয়াড়রা বলে, “অভীষ্টা কথা কম বলে, কিন্তু ওর পাসেই খেলার ছন্দ বদলায়।”

তবু, এই পথটা সহজ ছিল না। কখনও স্কুল কামাই হয়েছে। কখনও বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো হয়নি। এইসব নিয়েই পড়াশুনা চালিয়ে গিয়েছেন। বন্ধুরা পড়ার নোটস দিতেন। রাত জেগে পড়াশোনা করে, সকালে প্র্যাকটিস। কারণ, তিনি মনে করেন ফুটবল সব সময় থাকবে না। শিক্ষা সারাজীবন থাকবে।

এই বয়সে এত সাফল্য, কিন্তু তাঁর চোখে অহংকার নেই। মাঠে নামলে যেন পুরো পৃথিবী থেমে যায়। তাঁর চলনে যেন পাহাড়ি বাতাসের গতি, তাঁর খেলায় আছে মাটির গন্ধ আর স্বপ্নের আলো। যে মেয়ে একসময় ভাইয়ের পিছু দৌড়ত, সে আজ ভারতের মহিলা ফুটবলের ভবিষ্যত। বিশ্ব-ফুটবলের মানচিত্রে তাঁর বা তাঁদের দৌলতেই ভারত নিজেদের জায়গা বানাচ্ছে।

More Articles