চাকরি গেছে লাখ লাখ শিক্ষকের! কেন এমন বেহাল দশা ভারতের শিক্ষাব‍্যবস্থার

Education : রাতারাতি গায়েব দেশের প্রায় ২০ হাজার স্কুল, আর তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমে গিয়েছে শিক্ষক সংখ্যাও।

স্রেফ একটা বছর, তাতেই বেহাল দশা। ২০২০-২১ অর্থবর্ষে ভারতে যেখানে স্কুলের সংখ্যা ছিল ১৫.০৯ লক্ষ সেখানে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শেষে স্কুলের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১৪.৮৯ লক্ষে। অর্থাৎ রাতারাতি গায়েব দেশের প্রায় ২০ হাজার স্কুল। আর তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমে গিয়েছে শিক্ষক সংখ্যাও। গোটা দেশ জুড়ে এই ছবিটা দেখে মনে পড়ে যায়, ‘হীরক রাজার দেশে’ ছবির সেই বিখ্যাত সংলাপ, ‘ওরা যত বেশি পড়ে, তত বেশি জানে, তত কম মানে…’। অর্থাৎ বেশি জানলেই তো মহা বিপদ! কিন্তু ব্যঙ্গাত্মক এই সংলাপের আড়ালে রয়েছে সমাজের আসল চিত্রটাই। একটা শিশুর বেড়ে ওঠার শুরুটা যে শিক্ষা , তাতেই যদি গলদ ভরে দেওয়া যায়, তাহলে তো সহজেই বশ মানে সমাজ। আর সুবিধা হয় কুচক্রীদের।

আজকের উদ্বেগের ছবিটা দেখতে দেখতে একথা অবিশ্বাস্য লাগতে পারে ঠিকই তবে একটা সময় পর্যন্ত ভারতীয় স্কুল শিক্ষা ব্যবস্থা ছিল বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে অন্যতম।করোনা পরবর্তী সময় থেকেই দেশ জুড়ে টালমাটাল পরিস্থিতি শিক্ষার। লক ডাউনের ধাক্কা সামলাতে সামলাতে বছর ঘুরে গেল। আর এই সুযোগে ‘ওয়ার্ক ফর্ম হোম’- এর মতো ‘স্কুল ফর্ম হোম’ও ঢুকে পড়ল জীবনে। তারপর নিয়ম খানিক শিথিল হলেও পুরনো রেশ ধরেই চলতে লাগলো স্কুল ছুটের হিড়িক।

কিন্তু এই যে স্কুল ছুট, এই যে চিরতরে বন্ধ হয়ে যাওয়া একের পর এক স্কুল, কী রয়েছে এসবের পিছনে? শুধুই কি করোনা একমাত্র কারণ নাকি তা ছাড়াও রয়েছে অন্য কিছু? রয়েছে তো বটেই। আমাদের দেশের সামগ্রিক শিক্ষা পরিস্থিতিতে ক্রমাগত বেসরকারি আধিপত্যকে তো উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বিভিন্ন সময়ে শিক্ষাবিদদের মুখেও শোনা গিয়েছে উদ্বেগের কথা। পাশাপাশি সরকারি স্কুলগুলির শিক্ষার মান, সদিচ্ছার অভাব, পড়ুয়া হ্রাস, শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাতের বৈষম্য নিয়েও অভিযোগ উঠেছে একাধিকবার।

আরও পড়ুন : কত শিশু ঘুরছে ভারতের রাস্তায়? পৃথিবীর বৃহত্তম শিক্ষাব্যবস্থায় অবাক করবে যে তথ্য

সারা দেশ জুড়ে এই যে বেসরকারিকরণ-এর খেলায় নেমেছে খোদ সরকার, তার প্রচ্ছন্ন প্রভাব এড়িয়ে হয় না শিক্ষাব্যবস্থাকেও। ফলে এক্ষেত্রেও সরকারি স্কুলের মান পড়লে মানুষ বাধ্য হয়ে ছুটবেন বেসরকারি স্কুলের দরজার, ব্যাস তাতেই ভিতরে ভিতরে বেসরকারিকণের বীজ বপন শুরু হয়ে যাবে। তার ওপর নয়া নীতি তো আছেই, যেখানে বলা হয়েছে ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যা ২০-এর কম হলেই সে স্কুল বন্ধ করে দেবে সরকার। বিগত কয়েকমাসের ছবিটা ঘাঁটলে আমরা দেখতে পাবো সারা দেশ জুড়ে এমন হাজার হাজার স্কুলেই ঝুলেছে তালা।

উদ্বেগ শুধু এটুকুই নয়, পাশাপাশি রয়েছে চাকরিহীনতাও। কেন্দ্রের পেশ করা রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২০-২১ সালে শিক্ষক সংখ্যা ছিল ৯৭.৮৭ লক্ষ, ২০২১-২২ সালে সেই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৯৫.০৭ লক্ষ। অর্থাৎ একবছরে শিক্ষক সংখ্যা কমেছে ১.৯৫ শতাংশ। একদিকে বাংলায় শিক্ষক নিয়ে এই দুর্নীতি, এতদিনের অবস্থান বিক্ষোভ, লাগাতার আদালতের শুনানি অন্যদিকে দেশ জুড়ে সামগ্রিক এই সমীক্ষা, ভয়ংকর একটা ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দিচ্ছে আমাদের। শিক্ষা নিয়ে এই দোটানা যে কেবল মহামারীর দায় নয়, উপরন্তু মহামারীকে সামনে রেখে একটা গভীর ষড়যন্ত্র চলছে পুরো দেশ জুড়ে সেকথা বুঝতে আর বাকি থাকে না। এই আশঙ্কারই প্রতিফলন যেন উঠে এসেছে স্কুল শিক্ষা দফতরের অন্তর্গত ইউনাইটেড ডিস্ট্রিক্ট ইনফরমেশন সিস্টেম ফর এডুকেশনের তথ্যে।

More Articles