দেশের প্রথম কোয়ান্টাম কম্পিউটার ইন্দাস কীভাবে পালটে দিতে পারে ইন্টারনেট ব্যবস্থাকেও!

Indus Quantum Computer : ওষুধ তৈরির ক্ষেত্রে একটি নতুন রাসায়নিক যৌগ পরীক্ষা করতে সাধারণ কম্পিউটারে যেখানে কয়েক মাস লেগে যায়, ইন্দাস সেই একই কাজ করে ফেলতে পারে মাত্র কয়েক মিনিটেই।

ইন্দাস, ভারতের পূর্ণাঙ্গ কোয়ান্টাম কম্পিউটার। ভারতীয় প্রযুক্তির জগতে এ এক অভিনব সংবাদ। কারণ এই কম্পিউটার পালটে দিতে চলেছে তথ্যপ্রযুক্তি ও গননার সমস্ত পূর্বতন ধরন। আমরা প্রতিদিন যে কম্পিউটার ব্যবহার করে থাকি, তা কাজ প্রধানত কাজ করে ‘বিট’ নামক একক দিয়ে— এই বিট 'শূন্য' (০) অথবা 'এক' (১) যে কোনও একটি অবস্থানে থাকে। নিত্যদিন যে কম্পিউটার ব্যবহার করি তার সঙ্গে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের একটা বড়ো পার্থক্য রয়েছে। কারণ, কোয়ান্টাম কম্পিউটারের ভিত্তি হল ‘কিউবিট’ (qubit)। এই কিউবিট একসঙ্গে 'শূন্য' (০) এবং এক (১)— দুই অবস্থাতেই থাকতে পারে। এই অবস্থানকে বলা হয় ‘সুপার পজিশন’। ফলে, একটি কোয়ান্টাম কম্পিউটার একই সঙ্গে একাধিক গণনা করতে পারে, যা আজকের সাধারণ কম্পিউটারের পক্ষে কল্পনাতীত। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ওষুধ আবিষ্কার, সাইবার নিরাপত্তা, জলবায়ু পূর্বাভাস এমনকি মৌলিক পদার্থবিদ্যার গবেষণাতেও বিপুলভাবে কাজে লাগতে পারে এই কোয়ান্টাম কম্পিউটার।

আরও পড়ুন-

আহত ঘাস কীভাবে বিপদ থেকে বাঁচায় অন্যান্য গাছেদের?

উল্লেখ্য, ইন্দাস সম্পূর্ণভাবেই ভারতের নিজস্ব নির্মাণ। ভারতের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের তত্ত্বাবধানে এবং মেইটি-এর (Ministry of Electronics and Information Technology) সহযোগিতায় এই কম্পিউটারটি তৈরি করেছে পুনের সি-ডাক কোম্পানি (Centre for Development of Advanced Computing)। দশ কিউবিটের ক্ষমতা সম্পন্ন এই কম্পিউটারটির বেশ অনেকগুলি তাৎপর্য রয়েছে। যেমন, 

১. প্রযুক্তির দুনিয়ায় এখনও পর্যন্ত কোয়ান্টাম কম্পিউটারের ক্ষেত্রে প্রধানত নেতৃত্বের ভূমিকায় ছিল আমেরিকা, চিন, জার্মানি এবং কানাডা। সেখানে ‘ইন্দাস’ ভারতের অবস্থান কিছুটা হলেও দৃঢ় করল।

২. এই কম্পিটারটির একটি অভিনব দিক হল এর ক্লাউড প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে দেশের যে-কোনও প্রান্তে বসেই গবেষক বা ছাত্রছাত্রীরা কোয়ান্টাম প্রোগ্রামিং শিখতে এবং ব্যবহার করতে পারবে।

৩. ভারতের ‘ন্যাশনাল কোয়ান্টাম মিশন’-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হল ইন্দাস, এর লক্ষ্য আগামী দিনে ৫০-১০০ কিউবিট ক্ষমতাসম্পন্ন কম্পিউটার তৈরি করা।

এর বাইরেও, ইন্দাসের অজস্র উপকারিতা রয়েছে। যেমন, ওষুধ তৈরির ক্ষেত্রে একটি নতুন রাসায়নিক যৌগ পরীক্ষা করতে সাধারণ কম্পিউটারে যেখানে কয়েক মাস লেগে যায়, ইন্দাস সেই একই কাজ করে ফেলতে পারে মাত্র কয়েক মিনিটেই। এমনকি, তথ্য বা ডেটার ক্ষেত্রে এই কম্পিউটার জটিল থেকে জটিলতর এনক্রিপশন ভাঙতে সক্ষম, যা বর্তমান ইন্টারনেট নিরাপত্তার পুরো কাঠামোকেই সম্পূর্ণ পালটে দিতে পারে। শুধু ভারত নয়, কোয়ান্টাম কম্পিউটারের এই ইতিবাচক দিকগুলির কথা মাথায় রেখেই ইতিমধ্যেই বিভিন্ন দেশ কোয়ান্টাম গবেষণায় আরও তৎপর হয়েছে। ভারতের ক্ষেত্রে ইন্দাস সেই অর্থে এক বড়ো সাফল্য। 

ইন্দাস কোয়ান্টাম কম্পিউটার

‘ইন্দাস’ নামকরণের পেছনে রয়েছে ভারতের প্রাচীন সিন্ধু সভ্যতার ইতিহাসসূত্র। নির্মাতাদের বক্তব্য, 'ইন্দাস' নামটির মধ্যে দিয়ে তাঁরা সিন্ধু সভ্যতার ইতিহাসকে স্মরণ করে সারা পৃথিবীকে বলতে চেয়েছেন, প্রাচীন কালে সিন্ধু সভ্যতাই 'শূন্য' আবিষ্কার করেছিল, আর সেই সিন্ধু সভ্যতার উত্তরসূরি 'ইন্দাস' ভারতে নিয়ে এল প্রথম কোয়ান্টাম কম্পিউটার।  

আরও পড়ুন-

সৌরজগতে ঢুকে এসেছে অচেনা ধূমকেতু, ‘অ্যাটলাস’ সম্পর্কে কী বলছেন বিজ্ঞানীরা?

বলা বাহুল্য, কোয়ান্টাম কম্পিউটার চালানো সহজ কাজ নয়।  অত্যন্ত নিম্ন তাপমাত্রায় এবং বিশেষজ্ঞদের দ্বারাই এই কোয়ান্টাম কম্পিউটার চালানো সম্ভব। যদিও সি-ডাক-এর গবেষকরা জানিয়েছেন, তাঁরা একটি সম্পূর্ণ স্থিতিশীল ও তীব্র শীতল পরিবেশ তৈরি করেছেন ‘ইন্দাস’-এর জন্য। ভবিষ্যতে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং গবেষণাগার যাতে এই কোয়ান্টাম কম্পিউটারের সদ্ব্যবহার করতে পারে, তার জন্য প্রশিক্ষণ এবং ইকোসিস্টেম গড়ে তোলার পরিকল্পনাও নেওয়া হচ্ছে।

More Articles