ইতালিতে ভয়াবহ দূষণ ছড়ানো কারখানা এবার ভারতে?

India’s Silent Chemical Threat: বিজ্ঞানীরা বলছেন, দীর্ঘদিন পিএফএএস-এর সংস্পর্শে থাকলে ক্যানসার, লিভার-কিডনির সমস্যা, প্রজনন-জনিত জটিলতা এবং ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।

ইতালিতে একসময় দূষণ আর স্বাস্থ্যঝুঁকির অভিযোগে বন্ধ হয়েছিল একটি রাসায়নিক কারখানা নাম মিটেনি (Miteni)। আবার সেই একই প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে; তবে এবার স্থান, নাম ইতালি নয় ভারত।  মহারাষ্ট্রের লোটে পারশুরামে নতুন করে শুরু হয়েছে পিএফএএস (Per- and polyfluoroalkyl substances) নামে এক ধরনের রাসায়নিকের উৎপাদন। পরিবেশবিদদের মতে, এই রাসায়নিকের উৎপাদন নীরবে বিপদ ঠেকে আনবে। পিএফএএস কী? কেন ভয় পাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা?

পিএফএএস এক ধরনের কৃত্রিম রাসায়নিক পদার্থ। এটিকে 'ফরএভার কেমিক্যালস'ও বলা হয়— কারণ এগুলো খুব সহজে ভাঙে না। একবার শরীরে ঢুকলে অনেক বছর থেকে যায়। এই পদার্থ ব্যবহার করা হয় নানা দৈনন্দিন জিনিসে। যেমন রান্নার নন-স্টিক পাত্র, জলে ভেজে না এমন জামাকাপড়, ফাস্ট-ফুড প্যাকেট, টুথপেস্ট, এমনকি কিছু প্রসাধনীতেও ব্যবহৃত হয়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, দীর্ঘদিন পিএফএএস-এর সংস্পর্শে থাকলে ক্যানসার, লিভার-কিডনির সমস্যা, প্রজনন-জনিত জটিলতা এবং ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।

আরও পড়ুন

মাইক্রোপ্লাস্টিক: আকারে ক্ষুদ্র হলেও এর প্রভাব কতটা সুদূরপ্রসারী?

ইতালির ভিচেঞ্জা অঞ্চলেবি-তে ২০১৮ সালে মিটেনি-র কারখানা বন্ধ করা হয়। কারণ, আশপাশের এলাকার পানীয় জলে পিএফএএস-এর মাত্রা ভয়ঙ্করভাবে বেড়ে গিয়েছিল। প্রায় তিন-লক্ষ মানুষের রক্তে পিএফএএস পাওয়া যায়। তারপর ওই কোম্পানির যন্ত্রপাতি ও পেটেন্ট বিক্রি হয়ে যায় ভারতের কোম্পানি লক্ষ্মী অর্গানিকস ইন্ডাস্ট্রিজ (Laxmi Organics Industries)-এর কাছে। তারা এবার ভারতেই সেই উৎপাদন শুরু করেছে।

মহারাষ্ট্র-এর এই এলাকাটিতে আগে থেকেই রাসায়নিক শিল্পে ভরপুর। স্থানীয় মানুষদের বক্তব্য, এখানকার নিকাশিনালা ও নদীতে প্রচুর পরিমাণে বর্জ্য ফেলা হয়, এতে দূষণ বাড়ছে প্রতিদিন।পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ, এই ধরনের উৎপাদন ভারতে স্থানান্তর করা হচ্ছে কারণ পশ্চিমা দেশগুলো পিএফএএস নিষিদ্ধ করেছে বা উৎপাদন সীমিত করতে কঠোর আইন এনেছে। কিন্তু ভারত বা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে এখনও এই নিয়ে তেমন আইন নেই।

কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ (CPCB) একে 'নতুন পরিবেশদূষক উপাদান' বলে চিহ্নিত করেছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভারতের অনেক অঞ্চলের নদী ও ভূগর্ভস্থ জলে ইতোমধ্যেই পিএফএএস পাওয়া গিয়েছে। চেন্নাই, গুয়াহাটি ও দিল্লির কাছাকাছি কিছু এলাকায় পানীয় জলের নমুনায় পিএফএএস-এর উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছে।

আরও পড়ুন

গঙ্গার পবিত্র উৎসমুখে এবার মানববর্জ্য! গঙ্গোত্রীতে যে ভাবে ছড়াচ্ছে দূষণ

লোটে পারশুরাম অঞ্চলে স্থানীয় মৎস্যজীবীরা বলছেন, নদীর জল আর আগের মতো নেই। কারখানা থেকে নদীতে বর্জ্য ফেলা হয়, এতে মাছ আর তেমন নেই। পিএফএএস-এর প্রভাবে শুধু জল নয়, মাটি ও শস্যও দূষিত হতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করছেন। দীর্ঘমেয়াদে এর প্রভাব পড়বে মানুষের দেহে ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উপরও।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ধনী পশ্চিমা দেশগুলো পিএফএএস উৎপাদন বন্ধ করেছে কারণ সেখানে কঠোর পরিবেশ আইন আছে। কিন্তু তারা এখন তা পাঠাচ্ছে এমন দেশগুলোতে, যেখানে পরিবেশ আইন তেমন কঠোর নয়। অর্থাৎ, বিপজ্জনক এই রাসায়নিকের উৎপাদন উন্নয়নশীল দেশগুলির উপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

এখন ভারত সরকারকে পিএফএএস উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করতে আলাদা আইন আনা জরুরি।
পাশাপাশি পিএফএএস-এর মাত্রা মাপার জন্য দেশজুড়ে গবেষণা বাড়াতে হবে। স্থানীয় মানুষ ও শ্রমিকদেরও পিএফএএস-এর ঝুঁকি সম্পর্কে জানাতে হবে, বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।

More Articles