বিষাক্ত লাল পিঁপড়ে ছেয়ে ফেলেছে আস্ত এই গ্রাম! প্রাণ বাঁচাতে ঘর ছেড়ে পালাচ্ছেন মানুষ

বিজ্ঞানীদের প্রাথমিক লক্ষ্য এখন রানি পিঁপড়েদের খুঁজে বের করে মেরে ফেলা। এই রানি পিঁপড়েই মূলত এলাকায় বিষ পিঁপড়ের হামলার জন্য দায়ী।

ঝাঁকে ঝাঁকে লাল পিঁপড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে মাঠে ঘাটে, বাড়ির দেওয়ালে, শৌচাগারে, গাছে! পিঁপড়ের দল নেই এমন এক তিল জায়গাও খুঁজে পাওয়া মুশকিল। কল্পকাহিনির মতো শোনালেও এমন বাস্তবতার সঙ্গেই ঘর করতে হচ্ছে ওড়িশার ব্রাহ্মণসাহি গ্রামের মানুষদের। সম্প্রতি বন্যার জল কমে যাওয়ার পরে লক্ষ লক্ষ লাল পিঁপড়ে আক্রমণ করেছে ওড়িশার পুরী জেলার ব্রাহ্মণসাহি গ্রামকে। পিঁপড়ের জ্বালা ধরানো কামড় আর ফোলা ত্বক থেকে বাঁচতে গ্রাম ছেড়ে পালাতে বাধ্য হচ্ছেন মানুষ। মানুষের স্বাভাবিক জীবনকে ভেস্তে দিয়ে পিঁপড়ের ঝাঁক ঘরবাড়ি, রাস্তা, মাঠ, গাছ সহ গ্রামের প্রতিটি কোণে হানা দিয়েছে। শুধু মানুষ নয়, গৃহপালিত পশু এবং ঘরের টিকটিকি পর্যন্ত পিঁপড়ের আক্রমণের শিকার হয়েছে। পরিস্থিতি এমনই যে গ্রামবাসীরা যেখানে বসেন, দাঁড়ান বা ঘুমান সেখানেই কীটনাশক পাউডারের চক দিয়ে ‘লক্ষণরেখা’ টেনে দিয়েছেন।

পিঁপড়ের আতঙ্কে চন্দ্রদেইপুর পঞ্চায়েত এলাকার এই গ্রামের তিনটি পরিবার পালিয়ে গিয়ে দূরে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে ঠাঁই নিয়েছে বলেও জানা গিয়েছে। লোকনাথ দাশ নামে এক গ্রামবাসী জানান, এর আগেও গ্রামে বন্যা হয়েছে, বন্যার জলও নেমেছে। তবে এমন ভয়ানক ঘটনা দেখেননি তিনি। পিঁপড়ের ভয়ে বাচ্চারা লেখাপড়া করতে পারছে না বলেও জানান রেণুবালা দাশ। পরিবারসহ কাছাকাছি একটি গ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি।

আরও পড়ুন- রাজনাথকে উপহারে টাট্টু ঘোড়া! যুদ্ধবিমানের নামে নাম দিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রীই

এভাবে বাঁচা দুর্বিষহ! কিন্তু এভাবে লাখে লাখে পিঁপড়ে এল কোথা থেকে? ওড়িশা ইউনিভার্সিটি অফ এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি এবং জেলা প্রশাসন গ্রামবাসীদের পিঁপড়ের হামলা থেকে রক্ষা করতে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে। বিজ্ঞানী সঞ্জয় মোহান্তি জানান, ব্রাহ্মণসাহি গ্রামটি নদী এবং ঝোপ জঙ্গলে ঘেরা। নদীর বাঁধ ও ঝোপে বাসা বাঁধে পিঁপড়েরা। কিন্তু বন্যার জল তাদের বাসায় ঢুকে গেলে গ্রামের মধ্যে চলে গিয়েছে সমস্ত পিঁপড়ে। বিজ্ঞানীদের প্রাথমিক লক্ষ্য এখন রানি পিঁপড়েদের খুঁজে বের করে মেরে ফেলা। এই রানি পিঁপড়েই মূলত এলাকায় বিষ পিঁপড়ের হামলার জন্য দায়ী। সঞ্জয় মোহান্তি জানান, এই গ্রামে প্রায় ১০০ পরিবারের বাস। সকলের কাছেই এই ঘটনা নতুন। যে জায়গাগুলো থেকে পিঁপড়ে আসছে তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা। জায়গাগুলো বোঝা গেলে কীটনাশক স্প্রে করা যেতে পারে বলে জানান তিনি।

আরও পড়ুন- এক টাকার পাঠশালা! দুর্নীতির রাজ্যে আলো দেখাচ্ছে অভিনব এই স্কুল

সঞ্জয় মোহন্তি আরও জানান, এই বিষ পিঁপড়ের চরিত্র জানতে তাদের নমুনা পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। পিঁপড়ের কামড়ে ত্বকে জ্বালা এবং ফুলে যাওয়ার ঘটনা ঘটলেও এখনও পর্যন্ত কেউ হাসপাতালে ভর্তি হননি। আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য মেডিকেল টিম পাঠানো হয়েছে গ্রামে। ২০১৩ সালের ঘূর্ণিঝড়ের পরে, জেলার সদর ব্লকের ডান্ডা গ্রামেও খানিক এমনই ঘটনা ঘটেছিল বলেন জানান একজন বিজ্ঞানী। কীটনাশক দিয়ে পিঁপড়ের বংশ নাশ করে মানুষদের গৃহমুখী করাতেই সবটুকু মনোযোগ দিয়েছে প্রশাসনও।

More Articles