সুযোগের সদ্ব্যবহার, মূল্যবৃদ্ধির মরসুমে টমেটো বেচে কোটিপতি কৃষক
Tomato Price Hike: শাপে বর! মূল্যবৃদ্ধির বাজারে টমেটো বেচে কোটি কোটি টাকা কামালেন কৃষক।
খুব বেশি দিন আগের কথা নয়। পিয়াঁজের অস্বাভাবিক রকম মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে যখন তুলকালাম সংসদ, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি পিঁয়াজ খান না। ফলে পিঁয়াজের দাম নিয়ে তিনি বা আর মাথা ঘামাবেন কেন! তা কথাটি খাঁটি, জাহাজের ব্যাপারি কবেই বা আদা থুড়ি পিঁয়াজের দাম নিয়ে ভেবেছেন। তাঁদের ভাবার জন্য কতশত তস্য কঠিন ব্যাপার রয়েছে, এসব ঠুনকো পিঁয়াজ, লেবু বা টমেটোর দাম নিয়ে মাথা ঘামানো কি আর তাঁদের সাজে।
আরও পড়ুন: নিঃশব্দে কোটি কোটি কৃষকের কাঁধে যে জোয়াল চাপিয়ে দেওয়া হল
বছর খানেক আগে আকাশ ছুঁয়েছিল পাতি লেবুর দাম। গরিবগুর্বো বোকাসোকা মানুষ হন্যে হয়েছিল, যেমনটা হয়ে থাকে। কোথাও আবার ধুমধাম করে শুরু হয়ে গিয়েছিল লেবুপুজো। যদি 'লেবু দেবতা' খুশি হয়ে সহায় হন। দিন আনা দিন খাওয়া মানুষের পাতে ওঠে একটা দুটো লেবু। তা এ দেশে মূল্যবৃদ্ধি আর কবেই বা বড় কোনও ব্যাপার। মানুষের দাম যত কমছে, ততই বাড়ছে জিনিসপত্রের দাম। হাতে না-মেরে মানুষকে পাতে মারো, এ-ও এক হাতিয়ার, এ-ও এক কৌশল। এ বছর বাজারে মাত্রা ছাড়িয়েছে টমেটোর দাম। রোজের খাবারদাবারে থাকা এই আনাজ এখন মধ্যবিত্তের কাছে 'লাক্সারি' ছাড়া কিছুই নয়। টমেটোয় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং অন্যান্য পুষ্টিকর উপাদান থাকায় অনেকেই রোজের খাবারে এই ফল তথা সবজিটিকে রাখতে পছন্দ করেন। তবে এই বাজারে সেই টমেটোয় হাত ছোঁয়ানোও বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে।

তবে কথাতেই তো আছে। কারওর সর্বনাশ তো কারও কারও তো পৌষমাস বটেই। আমজনতা টমেটো কিনতে হাতে যতই ছ্যাঁকা খাক না কেন, এই টমেটো-সঙ্কট কিন্তু আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিয়েছেন অনেকের জীবনেই। মহারাষ্ট্রের বহু কৃষকেরই হয়তো কমবেশি লাভ হয়েছে। তবে সবচেয়ে মুনাফা করেছেন মহারাষ্ট্রের পুনের এক কৃষক। না, একটুআধটু মুনাফা নয়, রীতিমতো কোটিপতি হয়ে গিয়েছেন তিনি। এই মরসুমে টমেটো বিক্রি করে কম করে হলেও প্রায় ৩ কোটি টাকা কামিয়ে ফেলেছেন তিনি।

ব্যাপারটা অবিশ্বাস্যই। লোকে কোটিপতি হওয়ার জন্য কত কী-ই না করে! কেউ লটারির টিকিট কাটে, কেউ ঋণখেলাপ করে পালিয়ে যায় বিদেশবিভুঁইয়ে। তবে এই কৃষককে সেসব কিছুই করতে হয়নি। বরং সময় সুযোগ বুঝে নিজের ক্ষেতে ফলানো টমেটো বাজারে বিক্রি করেছেন শুধু। আর তাতেই তাঁর বাণিজ্যে এসে বসেছেন লক্ষ্মী।

পুণের জুন্নার তালুকার বাসিন্দা ঈশ্বর গায়কর। তিনি এবং তাঁর স্ত্রী মিলে সারা বছর ধরে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফলিয়েছেন টমেটো। হঠাৎ করেই বাজারে অগ্নিমূল্য হয়ে পড়েছে টমেটো। সেই সুযোগটারই সদ্ব্যবহার করেছেন ঈশ্বর। না, সাফল্য মোটেও দুম করে আসেনি। নিজের বারো একর জমিতে ছ-সাত বছর ধরে চাষ করে চলেছেন তিনি। বাকি সমস্ত কৃষকদের মতোই দারিদ্র অভাব সবটাই দেখতে হয়েছে তাঁকেও। ২০২১ সালেই প্রায় ১৮ থেকে ২০ লক্ষ টাকার মতো লোকসানের মুখে পড়েন ঈশ্বর। কিন্তু তার পরেও হাল ছাড়েননি। বরং একদিন সব কিছু ঠিক হবেই, এই আশা বুকে চাষাবাদ চালিয়ে গিয়েছেন। ইতিমধ্যেই ১৭০০০ ক্রেট টমেটো বাজারে বিক্রি করেছেন ঈশ্বর। ক্রেট প্রতি দাম পেয়েছেন ৭৭০ টাকা থেকে ২,৩১১ টাকার কাছাকাছি। যেখানে থেকে ইতিমধ্যেই ২ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা ইতিমধ্যেই কামিয়ে ফেলেছেন তিনি। এই মরসুমে সেই অঙ্কটা ৩.৫ কোটির কাছাকাছি পৌঁছবে, তেমনটাই আশা করছেন ঈশ্বর। এখনও তাঁর ভাঁড়ারে তিন থেকে চার হাজার ক্রেট টমেটো মজুত রয়েছে। সেখান থেকে আরও কিছু লাভের গুড় ঘরে তুলতে পারবেন বলেই মনে করেছেন ঈশ্বর।
এমন লক্ষ্মীলাভের নেপথ্যে রয়েছে আদতে বাবা-মা ও দাদু-ঠাকুমার আশীর্বাদ। আর তার সঙ্গেই রয়েছে তাঁর স্ত্রীর অক্লান্ত পরিশ্রম। সংসারের পাশাপাশি চাষের কাজেও বরাবর স্ত্রীর সাহায্য় পেয়েছেন ঈশ্বর।
আরও পড়ুন: ফসল ফলিয়েও অপুষ্টিতে ভুগছে কৃষকদের সন্তানরাই! যেভাবে লড়ছে অসমের জনজাতিরা
একটা সময় ভেবেছিলেন কিলোপ্রতি ৩০ টাকাতেই বেচেই দেবেন সমস্ত টমেটো। তবে কী যেন ভেবে কিছুদিন সময় নেন। আর সেই মোড়েই যেন অপেক্ষা করছিলেন ভাগ্যলক্ষী। চট করে ঘুরে যায় ভাগ্যের চাকা। দিন আনা দিন খাওয়া চাষী থেকে এক লহমায় কোটিপতি। এমনটা যে হতে পারে, তা কি স্বপ্নেও ভেবেছিলেন নাকি ঈশ্বর। একটা সময় নিজের এক একর জমিতে টমেটো ফলিয়ে কোনও ক্রমে পেট চালিয়েছেন। তার পর জমিও বাড়ে, বাড়ে ফলন। টমেটো ছাড়াও মরসুমে পিঁয়াজ চাষ করেন ঈশ্বর। তবে টমেটোই যে তার জীবনে সত্যিকারের 'অচ্ছে দিন' এনে দিতে পারে, তা আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপের চেয়েও কিছু কম আশ্চর্য নয়।

Whatsapp
