হাসিনার পর সাজা ঘোষণা জয় পুতুলের! কী অভিযোগ, কী শাস্তি?

Purbachal plot corruption case: রায়ে ঘোষণার সময় বিচারক উল্লেখ করেন, কোনো আবেদনপত্র ছাড়াই এবং এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে প্লট বরাদ্দ করা হয়েছিল। সরকারি সম্পত্তি নিজের নামে নিয়ে ‘রাষ্ট্রের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা’ করেছেন শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে করা তিনটি মামলায়ও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মোট ২১ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন। অভিযোগ, ক্ষমতার অপব্যবহার করে আবেদনপত্র ছাড়াই রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্লট বরাদ্দ নেওয়া হয়েছিল শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে। একই মামলায় শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল এবং ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে পৃথক দুই মামলায় পাঁচ বছর করে কারাদণ্ড এবং প্রত্যেককে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। 

বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) সকাল থেকেই ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত এলাকায় পুলিশ, বিজিবি ও অন্যান্য বাহিনীর বিপুল সদস্য মোতায়েন করা হয়। নিরাপত্তাবেষ্টনী ঘিরে বিচারক দুপুরে এ রায় ঘোষণা করেন। মামলায় পলাতক থাকায় শেখ হাসিনা, জয় ও পুতুল কেউই আদালতে হাজির ছিলেন না।

রায়ে ঘোষণার সময় বিচারক উল্লেখ করেন, কোনো আবেদনপত্র ছাড়াই এবং এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে প্লট বরাদ্দ করা হয়েছিল। সরকারি সম্পত্তি নিজের নামে নিয়ে ‘রাষ্ট্রের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা’ করেছেন শেখ হাসিনা। বিচারক আরও বলেন, “চারবারের প্রধানমন্ত্রী কীভাবে মিথ্যা তথ্য গোপন করে ও জাল হলফনামা দিয়ে প্লট নিজেদের সুবিধামতো নেন, এটি আদালতের কাছে অবিশ্বাস্য।” এই দিন ২৩ আসামির মধ্যে ২১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে। আত্মসমর্পণ করেছিলেন রাজউকের কর্মকর্তা খুরশিদ আলম, তিনি তিন মামলায় এক বছর করে মোট তিন বছরের সাজা পেয়েছেন এবং একমাত্র তিনিই কারাগারে আছেন।

আরও পড়ুন

ঠিক কোন কোন অভিযোগে শেখ হাসিনা মৃত্যুদণ্ড পেলেন

প্রধান আসামিদের সাজা:

শেখ হাসিনা: তিন মামলায় ৭ বছর করে মোট ২১ বছরের কারাদণ্ড, তিন লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ১৮ মাস কারাবাস।

সায়মা ওয়াজেদ পুতুল: এক মামলায় ৫ বছরের কারাদণ্ড, এক লাখ টাকা জরিমানা।

সজীব ওয়াজেদ জয়: এক মামলায় ৫ বছরের কারাদণ্ড, এক লাখ টাকা জরিমানা।

অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা যাদের সাজা হয়েছে:

• সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ– মোট ১৮ বছর সাজা

• সাবেক সচিব শহীদ উল্লাহ খন্দকার– মোট ১৮ বছর সাজা

• অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াসি উদ্দিন– মোট ১৮ বছর সাজা

• রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান মিঞা– মোট ১৫ বছর সাজা

• রাজউকের সদস্য নাসির উদ্দিন– মোট ৯ বছর সাজা

• সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার– মোট ৩ বছর সাজা

• রাজউক কর্মকর্তা খুরশিদ আলম– মোট ৩ বছর সাজা

• প্রধানমন্ত্রীর সাবেক প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন– মোট ১২ বছর সাজা

একজনকে আগেই চার্জশিট থেকে বাদ দেওয়া হয়, আর বাংলাদেশের গৃহায়ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম সরকার তিন মামলাতেই খালাস পান।

রায়ের পর দুদকের আইনজীবী খান মো. মইনুল হাসান জানান,

“শেখ হাসিনা তিন মামলারই প্রধান আসামি। ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্লট বরাদ্দ দিয়েছেন। যাদের একাধিক মামলায় সাজা হয়েছে, তারা প্রতিটি মামলার সাজা পৃথকভাবে খাটবেন।”


তিনি আরও বলেন,

“রায়টি ভবিষ্যতের রাষ্ট্রনায়কদের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়।”

আরও পড়ুন

শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাবে ভারত?

রায়ে রাজউক ও বাংলাদেশের গৃহায়ন মন্ত্রণালয়ের জন্য একাধিক সুপারিশ করা হয়েছে:

• অবৈধ প্লট বরাদ্দে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অবিলম্বে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পদ থেকে অপসারণ।

• প্লট বরাদ্দে ডিজিটাল লটারি সিস্টেম বাধ্যতামূলক করতে হবে।

• বরাদ্দ প্রক্রিয়ায় সিভিল সোসাইটি, নগর পরিকল্পনাবিদ ও দুর্নীতি দমন সংস্থার প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করে স্বাধীন কমিটি গঠন।

• অবৈধ বরাদ্দে জড়িত কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুতি ও ফৌজদারি বিচার নিশ্চিত করা।

• ‘স্পেশাল ক্যাটাগরি’তে প্লট বরাদ্দের সুপারিশ বা নির্দেশনা দেওয়া বন্ধ করতে বাংলাদেশে গৃহায়ন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা।

রায় ঘোষণার আগে বিবিসি বাংলা-কে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন,

আমাদের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলা সাজানো হয়েছে যাতে আমরা নির্বাচন করতে না পারি।

তিনি দাবি করেন, তাঁরা আইন লঙ্ঘন করেননি, বাংলাদেশে তাঁদের সম্পত্তি নেই। পৈত্রিক সম্পত্তি ছাড়া তাঁরা প্রথমবার নিজস্ব অর্থে প্লট কিনেছিলেন। আর ‘যাদের জমি নেই তারা প্লট পেতে পারে’ এই আইনি বিধানের ভিত্তিতেই তারা সুযোগ পান। তবে দুদক আদালতে স্পষ্ট বলেছে, ঢাকায় শেখ হাসিনা ও পরিবারের সদস্যদের নামে একাধিক বাড়ি, প্লট ও সম্পত্তির তথ্য তাঁদের হাতে রয়েছে।

উল্লেখ্য, গণ-অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর ২০২৩ সালের ডিসেম্বর থেকে পূর্বাচল প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ নিয়ে অনিয়মের অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। জানুয়ারি ২০২৪-এ ছয়টি মামলা হলে সেগুলোর তিনটিতে শেখ হাসিনা, জয় ও পুতুলকে আসামি করা হয়। অনিয়ম করা মোট জমি ৩০ কাঠা। মামলার সাক্ষী ৯১ জন, পলাতক আসামি ২০-এরও বেশি। শেখ রেহানা, টিউলিপ সিদ্দিক ও রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকদের বিরুদ্ধে করা পৃথক তিন মামলার রায় আগামী ১ ডিসেম্বর ঘোষণা হবে।

More Articles