রাহুলের যাত্রায় বিহারে কংগ্রেসের ভোটভাগ্য ফিরবে?

Voter Adhikar Yatra: এই যাত্রায় ভোট জালিয়াতির বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে, মানুষের ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। এক কংগ্রেস নেতা বলেন, "বছরের পর বছর কংগ্রেস বিহারে নিষ্ক্রিয় ছিল। রাহুল গান্ধীর যাত্রা এটিকে জাগিয়েছে।"

১৭ অগাস্ট সাসারাম থেকে ভোটাধিকার যাত্রা শুরু করেন রাহুল গান্ধী। ২৮টি জেলা অতিক্রম করে এই যাত্রা ৩১ অগাস্ট গান্ধী ময়দানে পৌঁছায়। পাটনার বেইলি রোডে অবস্থিত আম্বেদকরের মূর্তির পাদদেশে ১ সেপ্টেম্বর এই পদযাত্রা প্রতীকীভাবে শেষ হয়। প্রায় ১২০০ কিলোমিটারের এই যাত্রা ৪০টি বিধানসভা কেন্দ্র ছুঁয়েছে। প্রথমবার রাহুল গান্ধী বিহারে দুই সপ্তাহের বেশি সময় কাটিয়েছেন। গত আট মাসে এটি তাঁর সপ্তম বিহার সফর। এই ঘন ঘন সফরে পাটনার সদাকত আশ্রমে কংগ্রেসের কার্যালয়ের পরিবেশ বদলেছে। এককথায় পার্টি অফিস সেখানে সরগরম। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে এই জনপ্রিয়তা কি ভোটবাক্সে প্রভাব ফেলবে?

বিহারে সাধারণত ৮-৯ শতাংশ ভোট পেতে হিমশিম খাওয়া কংগ্রেস এবার রাস্তার রাজনীতিতে রীতিমতো দাপট দেখিয়েছে একথা মানছে সকলেই । মহাজোটের শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতি সত্ত্বেও এই পদযাত্রায় কংগ্রেসের পতাকাই প্রাধান্য পেয়েছে। ঠিক যেমন প্রাধান্য় পেয়েছে রাহুলের ফেসভ্যালু। এক রাজনৈতিক নেতার কথায়, এই পদযাত্রা বিহারে কংগ্রেসকে পুনরুজ্জীবিত করেছে। জোটের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে যে সমন্বয় দেখা গেছে, তা তৃণমূল স্তরেও কর্মীদের মধ্যে প্রতিফলিত হচ্ছে। কংগ্রেসের তৃণমূল কর্মীরা, যারা বছরের পর বছর নিষ্ক্রিয় ছিলেন, তারা এখন জেগে উঠেছেন, বলেন তিনি।

রাহুলের যাত্রার সময় জেলাগুলিতে মানুষের উপস্থিতি ছিল অভূতপূর্ব। শিশু, বৃদ্ধ, মহিলা, যুবকসবাই রাহুলকে দেখতে ভিড় করেছেন। দলীয় পতাকা নিয়ে রাস্তার ধারে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়েছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় রাহুল ও তেজস্বী যাদবের বুলেট মোটরসাইকেলে চড়ার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এক যুবক নিরাপত্তা ভেঙে রাহুলের গালে চুমু খান, আবার কোথাও বিজেপি কর্মীরা কালো পতাকা দেখান, রাহুল তাদের ডেকে চকোলেট উপহার দেন। অর্থাৎ নাটকীয়তার কোনো অভাব ছিল না।

যাত্রায় ভোট জালিয়াতির বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে, মানুষের ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। গান্ধী ময়দানে পৌঁছলে ৫০,০০০ কর্মীর জন্য তাঁবুর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এক কংগ্রেস নেতা বলেন, “বছরের পর বছর কংগ্রেস বিহারে নিষ্ক্রিয় ছিল। রাহুল গান্ধীর যাত্রা এটিকে জাগিয়েছে। আমরা এখন পূর্ণ শক্তিতে বিহার বিধানসভা নির্বাচনে লড়ব। রাহুল প্রমাণ দিয়েছেন কীভাবে বিজেপি ভোট জালিয়াতি করছে এবং বিহারে এসআইআর (স্টেট আইডেন্টিটি রেজিস্টার) দিয়ে তাই করতে চায়।” পাটনার রাস্তায় কংগ্রেস, আরজেডি ও সিপিআই (এমএল) পতাকা উড়ছে। পোস্টার, ব্যানারে ঢেকে গেছে শহর। কিন্তু পাটনায় জনসাধারণের চেয়ে মহাজোটের নিবেদিত কর্মীদের ভিড়ই বেশি ছিল। অর্থাৎ দলের অন্দরে প্রাণসঞ্চার সম্ভব হয়েছে।

আরও পড়ুন- ভোটার অধিকার যাত্রা বুঝিয়ে দিল মোদি বিরোধিতার প্রধান মুখ রাহুলই

রাহুল গান্ধীই এই অক্সিজেন সঞ্চার করেছেন। কংগ্রেস তৃণমূল কর্মীদের উজ্জীবিত করতে এই জনপ্রিয়তা কাজে লাগাচ্ছে। কিন্তু শুধু একজন নেতার জনপ্রিয়তায় নির্বাচন জেতা যায় না। পঞ্চায়েত ও বুথ স্তরে দলকে শক্তিশালী করা সমান জরুরি। কংগ্রেস কি পারবে? কংগ্রেস নেতা সন্তোষ মিশ্র বলেন, “পুরো রাজ্যে জেলা সভাপতি নির্বাচিত হয়েছে। নতুন ব্লক সভাপতি নিয়োগ করা হয়েছে। শক্তিশালী এলাকায় প্রতি বুথে দুজন কর্মী রাখা হয়েছে, তাদের তালিকা নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হয়েছে।” যদিও একটা অংশ মনে করে কংগ্রেসের ভিতর অভ্যন্তরীণ দলাদলি এখনও বিদ্যমান। রাহুল গান্ধী চলে গেলেও সেই সমস্যা রয়েই যাবে।

তবে কংগ্রেস সূত্র জানাচ্ছে, রাহুল গান্ধীর সক্রিয়তা যাত্রার পরেও চলবে। মণ্ডলীয় সমাবেশ ও গান্ধী ময়দানে বড় সমাবেশ হবে। কংগ্রেস যেসব কেন্দ্রে আগে জিতেছে, সেখানে কর্মী সম্মেলন হবে। ফলে তার ছাপ ভোটবাক্সে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাংবাদিক রামাকান্ত চন্দন এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, এই যাত্রা কংগ্রেসকে তিনটি সুবিধা দেবে। “রাহুল গান্ধী যখন দক্ষিণ ভারতে ভারত জোড়ো যাত্রা করেছিলেন, তখন তিনি নির্বাচনী ফল পেয়েছিলেন। একই ভাবনা নিয়ে তিনি বিহারে এই যাত্রা করেছেন, এই যাত্রা কর্মীদের উজ্জীবিত করেছে। দ্বিতীয়ত, আরজেডি ও অন্যান্য জোটের দলগুলি কংগ্রেসের এই উদ্যোগ গ্রহণ করে পদযাত্রায় যোগ দিয়েছে। তৃতীয়ত, কংগ্রেস আরজেডির শত্রু এই তমকাও ফিকে হয়েছে।

বিহারে কংগ্রেসের সমর্থন ঐতিহাসিকভাবে মুসলিম, দলিত ও প্রভাবশালী উচ্চবর্ণদের থেকে এসেছে। কিন্তু সময়ের সাথে মুসলিমরা আরজেডির দিকে, উচ্চবর্ণরা বিজেপির দিকে এবং দলিতরা আরজেডি ও জেডিইউ-এর মধ্যে ভাগ হয়ে গেছে। এখন রাহুল গান্ধী সামাজিক ন্যায়বিচারের উপর জোর দিচ্ছেন। জেলা ও ব্লক সভাপতি নিয়োগে সামাজিক ন্যায়বিচারের কথা মনে করা হচ্ছে। অনেক জেলায় উচ্চবর্ণ নেতাদের বদলে ওবিসি ও দলিত নেতারা নিযুক্ত হয়েছেন।

আরও পড়ুন- রাহুল গান্ধী, ক্রমেই ভরসাযোগ্য হয়ে উঠছেন যেভাবে

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইন্ডিয়া জোটের অংশ হিসেবে কংগ্রেস বা সিপিআইএমএল আরজেডি-র উপকারই করবে। কংগ্রেস ও বামপন্থীরা সামাজিক ন্যায়বিচারের কথা বলায় আরজেডি-বিরোধী, লালু-বিরোধী ও যাদব-বিরোধী ভোট বিজেপির ঘরে যাওয়া কমবে। পিছিয়ে পড়া ও দলিত সম্প্রদায় মহাজোটের পক্ষে একত্রিত হবে।”

উল্লেখ্য, কংগ্রেস ৫০টি আসনে লড়তে চায়, যা গত নির্বাচনের তুলনায় ২০টি কম। তবে এবার তারা আরও সতর্ক ভাবে কেন্দ্র বাছতে চাইছে।

More Articles