জিতেও মুখ্যমন্ত্রী হতে পারছেন না রেবন্ত রেড্ডি! তেলঙ্গানাতে কংগ্রেসের মধ্যেই ফের সংঘাত কেন?
Revanth Reddy Telangana Election : বিজেপির ছাত্র সংগঠন ABVP-এর হাত ধরেই রাজনীতিতে আসা রেবন্ত রেড্ডির। তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে ঘুষের অভিযোগে, জেলও খেটেছেন।
পাঁচ রাজ্যের মধ্যে একমাত্র সবেধন নীলমণি তেলঙ্গানা। ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থানে হেরে একমাত্র তেলঙ্গানাই নিজেদের দখলে আনতে পেরেছে কংগ্রেস। কিন্তু জিতেও শপথ নিতে পারছেন না রেবন্ত রেড্ডি! মুখ্যমন্ত্রীর পদে কে বসবেন, এই নিয়ে দলের ৬৪ জন বিধায়কের মধ্যে ঐকমত্যের বিপুল অভাব! সেই কারণেই সোমবার তেলঙ্গানায় নবনির্বাচিত কংগ্রেস সরকারের শপথ গ্রহণ স্থগিত হয়ে যায়। রাজভবনে, একজন উপমুখ্যমন্ত্রী সহ অন্যান্য মন্ত্রীদের সঙ্গে কংগ্রেসের রাজ্য শাখার প্রধান এ রেবন্ত রেড্ডির মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু জিতেও কাঁটা দলেরই অন্দরে!
দলের বর্ষীয়ান নেতাদের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দেয় মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচন ঘিরে। মল্লু ভাট্টি বিক্রমার্ক, উত্তম কুমার রেড্ডি, শ্রীধর বাবু এবং কোমাতিরেড্ডি ভাইরা রেবন্ত রেড্ডির মুখ্যমন্ত্রিত্ব নিয়ে বিরোধিতা করেন। বল চলে যায় শীর্ষ কমিটির কোর্টে। কংগ্রেস জানায়, সরকার গঠনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে এবং বিশেষ পর্যবেক্ষকরা। দিল্লিতে আলোচনার পর মঙ্গলবার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হবে যে আদৌ রেবন্ত মুখ্যমন্ত্রী হবেন কিনা।
কর্ণাটকের উপমুখ্যমন্ত্রী ডি কে শিবকুমার এবং তেলঙ্গানা কংগ্রেসের ভারপ্রাপ্ত মানিকরাও ঠাকরে সহ অন্যান্য পর্যবেক্ষকরা দলের হাইকমান্ডের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আরও আলোচনা করার জন্য দিল্লিতে যান। এই পর্যবেক্ষকদের নিযুক্ত করা হয়েছিল কংগ্রেস বিধায়ক দলের সভা আয়োজন এবং সুষ্ঠুভাবে সরকার গঠন নিশ্চিত করার জন্য।
কিন্তু কেন মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে রেবন্ত রেড্ডিকে চাইছেন না সকলে? কেন দলের বর্ষীয়ান নেতারাই বিরোধিতা করছেন তেলঙ্গানার একমাত্র মুখরক্ষাকারীর? অনেক বিধায়কই ভাট্টি, উত্তম কুমার রেড্ডি এবং শ্রীধর বাবুর নাম সম্ভাব্য মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে প্রস্তাব করেন। আবার অধিকাংশজনই রেবন্তকেই সমর্থন করেন। তবে এআইসিসি যে রেবন্তকেই মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে চূড়ান্ত করেছে তা বেশিরভাগ বরিষ্ঠ নেতারাই মানতে অস্বীকার করেন। কিন্তু কেন এই বিরোধিতা?
আরও পড়ুন- দেশের রং সত্যিই গেরুয়া? ২০২৪ সালের আগে ঠিক কী অবস্থায় আছে বিজেপি?
অনুমুলা রেবন্ত রেড্ডির শিকড় রয়েছে বিজেপিতেই। বিজেপির ছাত্র সংগঠন ABVP-এর হাত ধরেই রাজনীতিতে আসা তাঁর। তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে ঘুষের অভিযোগে, জেলও খেটেছেন। বিআরএস প্রধান কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের কড়া সমালোচক, তেলেঙ্গানা কংগ্রেসের প্রধান রেবন্ত রেড্ডিকে হামেশাই নিশানায় রাখে বিআরএস এবং এআইএমআইএম। ২০১৫ সালের টাকার বিনিময়ে ভোট মামলার বিষয়ে এবং টিডিপি প্রধান এন চন্দ্রবাবু নাইডুর 'এজেন্ট' হওয়ার অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে।
রেবন্ত রেড্ডি নিজে কিছুকাল বিআরএস দলে (তৎকালীন টিআরএস) ছিলেন। ২০০৬ সালে প্রথম তিনি একটি জেলা পরিষদ নির্বাচনে সফল হন। নির্দল হিসেবে জেলা পরিষদ টেরিটোরিয়াল কনস্টিটিউয়েন্সি (জেডপিটিসি) সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। ২০০৭ সালে অবিভক্ত অন্ধ্রপ্রদেশের বিধানসভায় নির্দল হিসেবেই নির্বাচিত হন। রেবন্ত রেড্ডি টিডিপিতে যোগ দেন এবং দলের প্রধান ও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডুর আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন। ২০১৪ সালে যখন তেলঙ্গানা অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে আলাদা হয়ে যায় তখন তিনি টিডিপির টিকিটেই বিধানসভায় নির্বাচিত হন।
আরও পড়ুন- বিজেপিকেই বেছে নিলেন রাজস্থানের মেয়েরা, কেন ভোটে মুখ পুড়ল কংগ্রেসের?
২০১৫ সালে নিজের রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন রেবন্ত। আইন পরিষদ নির্বাচনে টিডিপিকে ভোট দেওয়ার জন্য মনোনীত বিধায়ককে ঘুষ দেওয়ার চেষ্টা করার অভিযোগ ওঠে। ক্যামেরায় ধরা পড়ে সমস্ত ঘটনা। হায়দরাবাদের জেলে পাঠানো হলেও জামিন পাওয়ার পর তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
রেবন্ত রেড্ডি ২০১৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিআরএস প্রার্থীর কাছে হেরে যান। তারপর দিল্লিতে রাহুল গান্ধীর উপস্থিতিতে টিডিপি ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দেন। কংগ্রেসে নবীন হওয়া সত্ত্বেও রেবন্ত রেড্ডিকে ২০২১ সালে পিসিসি সভাপতি নিযুক্ত করা হয় যা রাজ্য কংগ্রেসের অনেকের অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
২০১৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনে দুর্দান্ত ভোটে জয়ী হয় বিআরএস এবং ২০১৯ সালে ১২ জন কংগ্রেস বিধায়ক শাসক দলে যোগ দেয়। এইখান থেকেই কংগ্রেসের হাল ধরেন রেবন্ত। নিঃশব্দে লড়াই চালিয়ে যান যার ফল ২০২৩ সালের বিধানসভা নির্বাচনে পেল কংগ্রেস। কিন্তু দলের অন্দরে 'দলবদলু' নেতাকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মেনে নেওয়াটা এখনও সহজ হয়নি।
ভাট্টিকে কংগ্রেসের দলিত মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে। তিনি একাধিক উপমুখ্যমন্ত্রী থাকার পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছেন। তিনি চাইছেন একজনই মুখ্যমন্ত্রী হবেন এবং একজনই উপমুখ্যমন্ত্রী। স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার এবং তেলঙ্গানা পিসিসি সভাপতির বিষয়েও কোনও ঐকমত্য হয়নি। রেবন্ত সিএলপি নেতা নির্বাচিত হলে, পিসিসি প্রধানের পদটি একজন বর্ষীয়ান নেতাকে দেওয়া হতে পারে।