বিশ্বের সবচেয়ে অভিশপ্ত পুতুল! ১১৭ বছরের রবার্ট দ্য ডল ঘিরে কেন তোলপাড়?
Robert The Doll Story : রবার্ট পুতুলটির বয়স কিন্তু এখন ১১৭। বাসা ফ্লোরিডার কী ওয়েস্টের ফোর্ট ইস্ট মার্টেলো মিউজিয়াম।
সোশ্যাল মিডিয়াতে নিশ্চয়ই এতক্ষণে দেখে ফেলেছেন পুতুলটিকে। দেখতে আদুরে। নাবিকের মতো পোশাক পরনে, ছোট্ট এক ছেলে। মুখটি মানুষের মতোই, তবু যেন ঠিক মানুষ নয়। নাকের জায়গায় ছোট্ট গর্ত। বাদামী মুখে পুঁতির মতো কালো দুই চোখ। মুখে হাসি কিনা বোঝা দায়। কোলে আঁকড়ে ধরে রয়েছে আরেকটি পুতুল। একটি কুকুর, চকচকে চোখ, খুব বড় জিভ বেরিয়ে আসছে মুখ থেকে। পুতুলটির নাম রবার্ট দ্য ডল। রবার্ট নাকি বিশ্বের সবচেয়ে অভিশপ্ত পুতুল। ভুতুড়ে পুতুল রবার্ট নাকি গাড়ি দুর্ঘটনা, হাড় ভাঙা, চাকরি হারানো, বিবাহবিচ্ছেদ এবং অন্যান্য দুর্ভাগ্যের নেপথ্যে এক ভৌতিক রহস্য।
রবার্ট পুতুলটির বয়স কিন্তু এখন ১১৭। বাসা ফ্লোরিডার কী ওয়েস্টের ফোর্ট ইস্ট মার্টেলো মিউজিয়াম। সম্প্রতি রবার্টের একজন 'ভক্ত' নতুন একটি শোকেস উপহার দিয়েছেন রবার্টকে। জাদুঘরের কিউরেটর কোরি কনভার্টিটো বলেছেন, জাদুঘরে এখনও এই পুতুলের করা কুকীর্তির কথা এসে পৌঁছয়।
১৯৯৪ সালে রবার্ট এই জাদুঘরে আসে। তার আগে রবার্ট ইউজিন অটো ছিলেন এই রবার্টের মালিক। রবার্ট ইউজিন ছিলেন একজন অদ্ভুত শিল্পী। বিশিষ্ট কী ওয়েস্ট পরিবারের সদস্য ছিলেন তিনি। পুতুলের নামটি তারই মালিকের নামে। রবার্ট ইউজিন অটোর ঠাকুরদা তাঁকে ছোটবেলায় জন্মদিনের উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন এই পুতুলটি। জার্মানি ঘুরতে গিয়ে পুতুলটি কিনেছিলেন তিনি। পুতুলের সঙ্গে বেশ বড়বেলা পর্যন্ত সম্পর্ক ছিল তাঁর। রবার্ট নামে পুতুলটি তৈরি করেছিল স্টিফ কোম্পানি। মনে করা হয়, জানলায় শোকেসে প্রদর্শনের জন্য গড়া অনেকগুলো পুতুলের মধ্যে একটি ছিল রবার্ট।
খোঁজ করে জানা যায়, এই স্টিফ কোম্পানিই প্রথম থিওডোর রুজভেল্টের সম্মানে একটি টেডি বিয়ার তৈরি করেছিল। রবার্টকে সম্ভবত খেলনা হিসাবে বিক্রি করার ইচ্ছা ছিলও না। রবার্টের ছোট্ট এই নাবিকের পোশাক কিন্তু কোম্পানি থেকে দেওয়া হয়নি বা পরানো হয়নি। সম্ভবত রবার্ট ইউজিন অটোর নিজের এমন একটি পোশাক ছিল যা তিনি ছোটবেলায় পরতেন।
আরও পড়ুন- এই ছবির জন্য পুড়ে গিয়েছিল বাড়ির পর বাড়ি! অভিশপ্ত ‘ক্রাইং বয়’-র কাহিনি ভয় পাওয়াতে বাধ্য
কিংবদন্তি অনুযায়ী, কমবয়সে ইউজিন অটো দুর্ঘটনার জন্য পুতুলটিকে দায়ী করতে শুরু করেছিলেন। শিশুসুলভ বলে এড়িয়ে যাওয়াই যেত, কিন্তু বাড়ির প্রাপ্তবয়স্করাও কিছু অদ্ভুত ঘটনা লক্ষ্য করতে শুরু করেন, বিশেষ করে অটো এবং রবার্ট বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে। বড় হয়ে ইউজিন অটো একটি সুন্দর বাড়িতে থাকতেন। বাড়িটিকে 'দ্য আর্টিস্ট হাউস' বলে ডাকতেন তিনি। সেই বাড়িতে রবার্টকে উপরের দিকের একটি জানালায় রেখেছিলেন তিনি। পথচলতি স্কুলছাত্ররা ওই পুতুলটিকে দেখে ভয়ই পেত। মনে করত বারেবারে তাদের সামনে এসে হাজির হবে এই পুতুল। পারতপক্ষে বাড়িটিকে এড়িয়েই চলত তারা। ১৯৭৪ সালে ইউজিন অটোর মৃত্যুর পরে আর্টিস্ট হাউসটি কিনেছিলেন মার্টেল রয়টার এবং রবার্টও বাড়ির সঙ্গে সঙ্গে মার্টেলের সম্পত্তি হয়ে যান। তারপর থেকেই নাকি বাড়িতে অশরীরী কারও পায়ের আওয়াজ শোনা যেত, কারও হাসি শোনা যেত। অনেকে বলতেন, রবার্টের উপস্থিতিতে যদি কেউ ইউজিন অটোকে বাজে কথা বলতেন তাহলে রবার্ট পুতুলের অভিব্যক্তি বদলে যেত, রবার্ট নাকি নিজের বাড়ির চারপাশে ঘোরাফেরা করত। প্রায় ২০ বছর রবার্টের এমন ভৌতিক ঘটনা সহ্য করার পরে মার্টেল তাকে জাদুঘরে দান করে দেন।
আরও পড়ুন- নিজের বেডরুমেই ভৌতিক অভিজ্ঞতা হয়েছিল শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের!
রবার্টকে দেখতে জাদুঘরে ভিড় উপচে পড়ে। রবার্ট আসার পর থেকে, দর্শকরা অভিশপ্ত পুতুল দেখতে, পুতুলের সঙ্গে সেলফি নিতে ভিড় করেন। একটি হরর চলচ্চিত্রও হয়েছে তাকে নিয়ে। এমনকী রবার্টের নিজস্ব সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট রয়েছে। রবার্টের রেপ্লিকা, বই, কোস্টার এবং টি-শার্টের জনপ্রিয়তাও তুঙ্গে। প্রতিদিন এক থেকে তিনটি চিঠি আসে রবার্টের কাছে। সাধারণ ফ্যানদের লেখা নয়; ক্ষমা চেয়ে চিঠি লেখেন অনেকে। অনেক দর্শক হয়তো রবার্টকে গুরুত্ব দেননি, বা কখনও অসম্মান-অপমান করার জন্য দুর্ভোগে পড়েছেন বলে মনে করেন। তাঁরাই ক্ষমা চেয়ে চিঠি লেখেন। রবার্টকে ইমেলও লেখেন অনেকে।
সম্প্রতি, কালানি স্মিথ নামে একজন পেশাদার ঘোস্ট হান্টাএ এবং জোশ নামে একজন কানাডিয়ান ইউটিউবার এই ভুতুড়ে পুতুলটি সন্ধানে করার জন্য ইস্ট মার্টেলো মিউজিয়ামে যান। রবার্টকে স্পর্শ না করলেও বিনা অনুমতিতে তার ছবি তোলেন। তারপর থেকেই নাকি নানা সমস্যা শুরু হয়। নিজেদের ভয়েস রেকর্ডারে বেশ কয়েকটি কণ্ঠস্বর শুনতে পান তারা। দেহের তাপমাত্রা অস্বাভাবিক হারে বাড়তে থাকে। দু'জনেই বমি করতে শুরু করেন। শেষমেশ ওই চত্বর থেকে বেরিয়ে যান তারা। রবার্টের মধ্যে এমন কী আছে? রবার্ট কি সত্যিই 'ভৌতিক'? এর উত্তর যুক্তিবাদীরা নিশ্চয়ই জানেন। রবার্ট আপাতত একটি পুতুলই, শোকেসে বন্দি। হ্যাঁ, তার এক শতাব্দী প্রাচীন ইতিহাস আছে ঠিকই। সেই ইতিহাসই তাঁকে কিংবদন্তি করেছে, কোনও ভৌতিক ঘটনা নয়।