CAA-র জন্য প্রয়োজনীয় নথি না থাকলে কী হবে? যা জানালেন শাহ

CAA Implementation: কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, যাদের কাছে সেই প্রয়োজনীয় নথি নেই, অথচ তাঁরা বছরের পর বছর ধরে ভারতে রয়েছেন, তাঁদের কী হবে!

দেশ জুড়ে ভোটের আগেই চালু হয়ে গেল সিটিজেনশিপ অ্যামেন্টমেন্ট অ্যাক্ট (CAA)। সেই সিএএ কার্যকর করা নিয়ে তোলপার দেশ। সোমবার বিজ্ঞপ্তি জারি করে কেন্দ্র সরকার জানিয়েছে, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান থেকে আসা অমুসলিম অর্থাৎ হিন্দু, শিখ, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি সম্প্রদায়ের মানুষ যারা ধর্মীয় অত্যাচারের কারণে এ দেশে আশ্রয় নিয়েছেন, তাঁদের নির্দিষ্ট নথি ও শর্ত মিলিয়ে নাগরিকত্বের শংসাপত্র দেবে ভারত।

কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, যাদের কাছে সেই প্রয়োজনীয় নথি নেই, অথচ তাঁরা বছরের পর বছর ধরে ভারতে রয়েছেন, তাঁদের কী হবে! অনেকেই বন্যায়, ঝড়ে ঘর হারিয়েছেন। ঘরের সঙ্গে ভেসে গিয়েছে সমস্ত নথিপত্র। কারওর ঘর পুড়েছে। কেউ বা যত্ন করে রাখেননি নথিপত্র। মোদ্দা কথা, তাঁদের কাছে প্রয়োজনীয় নথি নেই, যা দিয়ে তাঁরা উর্ত্তীর্ণ হতে পারে এই সিএএ পরীক্ষায়। দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ অবশ্য বলেছেন, যেসব উদ্বাস্তুর কাছে প্রয়োজনীয় নথি নেই, তাদের জন্য শীঘ্রই কোনও একটা উপায় বের করবে বিজেপি সরকার। কিন্তু কবে? ততদিন কী হবে সেই সব মানুষগুলোর। একটা দেশ হারিয়ে আরেকটা দেশে এসে শূন্য থেকে শুরু করেছিলেন যাঁরা বহু কষ্ট করে, কোথায় যাবেন তাঁরা?

এই সিএএ অগ্নিপরীক্ষায় পাশ করতে গেলে কোনও একজনকে দুটি নথি দিতে হবে। তাঁকে এমন কাগজ দেখাতে হবে, যাতে প্রমাণ হয় যে কোনও ভাবেই ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে ভারতে এসেছিলেন উক্ত ব্যক্তি। পাশাপাশি যে তিন দেশের নাম করা হয়েছে আইনে, ওই তিন দেশ থেকেই যে তাঁরা এসেছেন, সেই প্রমাণও দিতে হবে উদ্বাস্তুদের।

আরও পড়ুন: CAA-তে কেন বাদ মুসলমানরা? বিতর্কিত প্রশ্নের বিস্ফোরক উত্তর দিলেন অমিত শাহ

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দাবি করেছেন, সরকারি তথ্য বলছে, এই প্রকল্পের অধীনে যাঁরা আবেদন করতে চাইছেন, তাঁদের মধ্যে ৮৫ শতাংশ মানুষের কাছেই প্রয়োজনীয় নথি রয়েছে। যে ১৫ শতাংশ মানুষের কাছে সেই নথি নেই, সরকার তাঁদের কথাও ভাবছে। শীঘ্রই তাঁদের জন্য কোনও না কোনও পথ খুঁজে বের করবেন তাঁরা। আবেদনকারীদের কাছে এখনও সময় রয়েছে বলেও জানিয়ে দেন শাহ। সূত্রের খবর, নির্দিষ্ট পোর্টাল ও ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদনের পর ভারত সরকারের তরফ থেকে সেই ব্যক্তিকে একটি ইন্টারভিউতে ডাকা হবে। আবেদনকারীর সময়ানুযায়ী সেই ইন্টারভিউ রাখার নির্দেশ দেওয়া রয়েছে। এরপর আবেদনকারীর জমা করা সমস্ত নথিপত্র অডিট করবে। এবং এরপর আরও একটি মুখোমুখি সাক্ষাৎকার। তার পরেই নাগরিকত্বের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে।

Seeking Citizenship Under CAA, But No Documents? Amit Shah's Reply

সিএএ কার্যকর করার বিজ্ঞপ্তি শুরু হওয়ার পর থেকেই দেশ জুড়ে হইচই শুরু হয়ে গিয়েছে। এর আগে এনআরসি-বিক্ষোভ দেখেছে দেশ। তত বড় রূপ না নিলেও জায়গায় জায়গায় সিএএ বিরোধী আন্দোলনও চলেছে। এমকে স্ট্যালিন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো বহু মুখ্যমন্ত্রীই এই আইনের সমালোচনা করেছেন। তারা নিজের রাজ্যে এই সিএএ কিছুতেই কার্যকর হতে দেবেন না বলেও দাবি করেন। অনেকেই মনে করছে, ভোটের আগে বিভাজনের রাজনীতিকে খুঁচিয়ে তোলার নয়া জিগির এই সিএএ। আর বিজেপি সেটাই চায়। বহু জায়গাতেই আশঙ্কা করা হচ্ছে, বহু মানুষ, বিশেষত মুসলিম সংখ্যালঘু অভিবাসীদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার চাল এই নয়া আইন।

যদিও অমিত শাহের বক্তব্য, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলিতে নিপীড়ত সংখ্যালঘুদের সাহায্য করার জন্য়ই এই আইনেক প্রয়োজন। তিনি এ-ও বলেন, ভারতীয় সংবিধান সমস্ত ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষকেই ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়ার অনুমতি দেন। তা-ই যদি হবে, তা হলে কী দোষ করলেন এ দেশে আশ্রয় নেওয়া মুসলিমরা। এতগুলো বছর ভারতের জলহাওয়ার বেঁচেবর্তে থাকার পর হঠাৎ করে কেন তাঁদের নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। অথচ এতদিন ধরে তাঁরা ভোট পর্যন্ত দিয়েছে। তাঁদের আয়করের টাকায় রাস্তাঘাট সেজেছে। ভোট হয়েছে। তবে তাঁরা কীকরে রাতারাতি অ-নাগরিক হয়ে গেলেন। যদিও শাহ বলেছেন, মুসলমানদেরও এ দেশে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করার অধিকার আছে। কারওর জন্যই দরজা বন্ধ করেনি ভারত সরকার।

আরও পড়ুন: CAA-র পর বিজেপির NRC-জিগির! বাংলা-বিহার-ঝাড়খণ্ডে যে সঙ্কটের মুখে মুসলিমরা

তবে মুখে যা-ই বলুন না কেন, হিন্দুরাষ্ট্র গড়ার কারিগরদের প্রধান নিশানা যে মুসলিমরাই, তা কার্যত স্পষ্ট। লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগেই রমজান শুরুর প্রথম দিনেই এই বিজ্ঞপ্তি আনার নেপথ্যে সেই কারণ খানিকটা হলেও কাজ করেছে বলে দাবি বিরোধীদের। যদিও বিরোধীদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রাজনৈতিক লাভের প্রশ্ন এখানে নেই। বিজেপির প্রধান লক্ষ্য পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে আসা নির্যাতিত সংখ্যালঘুদের হাতে অধিকার ও ন্যায়টুকু তুলে দেওয়া। ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী, রাষ্ট্র হিসেবে ভারতের প্রধান বৈশিষ্ট্যই তার ধর্মনিরপেক্ষতা। তবে নতুন এই আইন রাষ্ট্রের শরণার্থীদের আদতে ভাগ করছে ধর্মের ভিত্তিতেই। পরবর্তীতে এ দেশের সংখ্যালঘুদের জন্য সত্যিই কি কোনও পদক্ষেপ করবে বিজেপি সরকার! প্রশ্ন এবং সংশয় দু'টোই থেকে যায়।

More Articles