নিশানায় হিন্দুভোট! কেন রামমন্দিরে সাষ্টাঙ্গ প্রণাম মোদির?
Lok Sabha Elections 2024: রামমন্দির উদ্বোধন হয়ে গিয়েছে, ব্যস্ত মোদি আরও ব্যস্ত হয়েছেন লোকসভা ভোটের প্রচারে। সেসবের মধ্যে রামলালাকে প্রায় ভুলতেই বসেছিলেন ভক্ত মোদি। টনক নড়ল একশো তিন দিন পরে।
মন্দিরের উদ্বোধন হয়েছে গত জানুয়ারি মাসে। রামমন্দিরের উদ্বোধন উপলক্ষকে প্রায় জাতীয় উৎসবে পরিণত করেছিলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। রামমন্দির উদ্বোধন হয়ে গিয়েছে, ব্যস্ত মোদি আরও ব্যস্ত হয়েছেন লোকসভা ভোটের প্রচারে। সেসবের মধ্যে রামলালাকে প্রায় ভুলতেই বসেছিলেন তাঁর ভক্ত মোদি। তবে টনক নড়ল রামমন্দির উদ্বোধনের পর একশো তিন দিন পরে। দিন কয়েক আগেই অযোধ্যার রামমন্দিরে গিয়ে রামলালার দর্শন সারলেন নরেন্দ্র মোদি। প্রণাম সারলেন দণ্ডবৎ হয়ে। তা-ও আবার লোকসভা ভোটের তৃতীয় দফার ঠিক দু'দিন আগে। এখনও বাকি চার দফা ভোট। ভোটের তরী পার করতেই কি রামলালার কাছে আকুতি জানালেন মোদি? উস্কে উঠেছে জল্পনা।
১৯৯২ সালে বিজেপি ও আরএসএসের উদ্য়োগে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল অযোধ্যার ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ। সেই জায়গায় প্রায় ৩২ বছর পর তৈরি হল বিজেপির বহু প্রতীক্ষিত রামমন্দির। হিন্দু পকেটের ভোট পকেটে পুরতে বিজেপির সবচেয়ে বড় ঘুঁটি সঠিক ভাবে সঠিক সঠিক জায়গায় সঠিক চাল দেওয়া হল। হিন্দুত্ববাদী ভোট কুড়োতে রামমন্দিরকে মাস্টারস্ট্রোক হিসেবেই ব্যবহার করতে চেয়েছেন মোদি সবসময়ে। তৃতীয় দফায় ভোট ছিল উত্তরপ্রদেশের একটা বড় অংশে। ফলে সেই ভোটের আগে মোদিকে যে রামমন্দিরে যেতেই হত, তা একরকম পরিষ্কার ছিল। সেদিন রামলালার দর্শনের পরেই মোদি বিরাট রোড শো করেছিলেন অযোধ্যা জুড়ে। ফলে এই রামলালা দর্শনের নেপথ্যে যে ভোটের ভাবনা ছিল, তা বুঝতে অসুবিধা হয় না মোটেই।
আরও পড়ুন: অম্বানি, আদানি-আঁতাতের অভিযোগে এবার বিদ্ধ কংগ্রেস! ভোটবাজারে বারবার কেন বেফাঁস মোদি?
তার পরেই মোদি হিন্দুভোটকে নিজের দিকে টানতে বলে বসলেন, কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে নাকি বাবরি মসজিদের তালা এনে রামমন্দিরে লাগিয়ে দেবে। তবে কি ভিতরে ভিতরে কোথাও বাবরি ধ্বংসের অপরাধ বোধ তাড়া করে বেড়ায় আজও তাদের! অবশ্য যেভাবে গোটা লোকসভা ভোট পর্বে বারবার সংখ্যালঘুকে নিশানায় রেখে কুকথার পর কুকথা শানিয়েছেন মোদি, তাতে তেমনটা অন্তত মনে হয় না।
রামমন্দির উদ্বোধনের সময় নির্বাচিত ও বিশেষ কয়েকজন ব্যক্তিকেই উৎসবে শামিল করেছিলেন মোদি। আমন্ত্রণ পেয়েও উত্তরপ্রদেশের বহু নেতাই তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। উত্তরপ্রদেশের রায়বরেলি থেকে লড়ছেন এবার রাহুল গান্ধী। ভোটপর্বে একবার হলেও তিনি রামমন্দির পরিদর্শন করতে পারেন, এমন জল্পনা ছিল। কিন্তু শেষপর্যন্ত রামমন্দিরে যাননি রাহুল। এমনকী উত্তরপ্রদেশের সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদবও এখনও পর্যন্ত রামমন্দিরে পা রাখেননি। যদিও তিনি একাধিক বার জানিয়েছেন, তিনি রামমন্দির দর্শনে যাবেন। কিন্তু যাওয়া আর হয়নি। না রাহুল, না অখিলেশ- কেউ-ই পা রাখেননি অযোধ্যার রামমন্দিরে।
কিছুদিন আগেই সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব প্রচারে গিয়ে পুজো দেন কনৌজ আসন সংলগ্ন একটি মন্দিরে। অভিযোগ ওঠে পুজো দিয়ে অখিলেশরা বেরিয়ে যাওয়ার পর নাকি গোটা মন্দির ভালো করে ধুয়ে ফেলেন বিজেপি কর্মীরা। সেই ঘটনায় ছড়ায় বিতর্ক। সমাজবাদী পার্টির দাবি, যাদব নেতা অনগ্রসর শ্রেণির, সে কারণেই তাঁর সঙ্গে এই ব্যবহার করা হয়েছে। বিজেপি অবশ্য দাবি করেছে, অখিলেশের সঙ্গে কয়েকজন মুসলিম নেতা জুতো পরে মন্দিরে ঢুকেছিলেন। তাই মন্দির চত্বর ধুয়ে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: অখিলেশ যাদব পুজো দেওয়ার পর কেন গঙ্গাজল দিয়ে মন্দির সাফ করল বিজেপি?
লোকসভা ভোটের প্রচারে যেখানে যেখানে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, প্রায় সব জায়গাতেই মুসলিম-বিদ্বেষী কথা বলতে শোনা গিয়েছে তাঁকে। এ নিয়ে নির্বাচন কমিশনেও অভিযোগ জমা হয়েছে বিস্তর। তবে মোদি বা নির্বাচন কমিশন, দু'জনেই নির্বিকার। বরং কংগ্রেসকে আক্রমণ করার অছিলায় বারবার সংখ্যালঘুকে অপমান করে হিন্দুভোটকে টানতে চাইছেন মোদি। বিশেষজ্ঞেদের অনেকেই মনে করছেন, গোবলয়ের হিন্দুভোটই বিজেপির মূলধন। তাই সেই ভোটারদের বিজেপিমুখী করতে ফের রামমন্দির তৈরির স্মৃতি ফের খুঁচিয়ে তুলতে চাইছেন মোদি, গেঁথে দিতে চাইছেন ভোটারদের পকেটে। শুধু তৃতীয় দফার ভোটের মুখ চেয়েই নয়, চতুর্থ ও পঞ্চম দফায় উত্তরপ্রদেশের এখনও বেশ কিছু অংশের ভোট এখনও বাকি। সে দিকে তাকিয়েই মোদির রামমন্দিরে যাওয়া থেকে শুরু রামলালার সামনে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম, সবই ভোট প্রচারের কৌশল বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ।