Paris Olympics 2024: ছাই থেকে জেগে ওঠা এক আগুনের নাম সিমোন বাইলস

Simone Biles: আশ্চর্যের ব্যাপার, সেদিন টোকিও অলিম্পিকে যেখানে থেমেছিলেন সিমোন, প্যারিসে ঠিক সেইখান থেকেই সফর শুরু করলেন তিনি। বুঝিয়ে দিয়ে গেলেন, যেন একটাই খেলা গোটা জীবন ধরে খেলছেন তিনি।

আত্মবিশ্বাসকে যদি কোনও চেহারা দেওয়া হত, সম্ভবত তাঁকে দেখতে হত অনেকটা সিমোন বাইলসের মতো। অলিম্পিকের মঞ্চ ফের আরও একবার তিনি এসেছেন, দেখেছেন এবং জয় করেছেন। ২০২৪ অলিম্পিকেও একাধিক সোনা এবার ঝুলিতে পুরেছেন আমেরিকার এই জিমন্যাস্ট। দলগত বিভাগে আগেই সোনা জিতেছিলেন তিনি, তার পর ব্যক্তিগত ইভেন্টেও স্বর্ণপদক জিতলেন সিমোন। এই নিয়ে অলিম্পিক্সে নবম পদক ঝুলিতে ভরলেন সাতাশ বছরের এই কন্যা। 

প্যারিস অলিম্পিকসের শুরুটাই তিনি করেছিলেন সোনা দিয়ে। মঙ্গলবার রাতে আর্টিস্টিক জিমন্যাস্টিক্সের দলগত ইভেন্টে দলকে জেতান সিমোন। চারটি রোটেশনেই নেমেছিলেন তিনি। শেষ করলেন তাঁর বিখ্যাত ফ্লোর ইভেন্ট দিয়ে। গোটা ইভেন্টে এক বারও দেখে মনেই হল না কোনও ভাবে চাপে আছে আমেরিকা। বরং হাসতে হাসতেই সোনা ছিনিয়ে নিয়ে গেল তারা। খেলা শেষে নিজের দলের সদস্যদের জড়িয়ে ধরলেন সিমোন। চারদিক কাঁপল তাঁর নামে জয়ধ্বনিতে।

কিন্তু এতটা সহজ ছিল না তাঁর এই সফর। এই হাসিমুখের নেপথ্যে লুকিয়ে রয়েছে অনেক যন্ত্রণা, বহু হেরে যাওয়া, ডিপ্রেশনের আখ্যান। তবু মঞ্চে তাঁকে দেখে কেউ বলবে না, এই সেই সিমোন যাঁকে বছর তিনেক আগে টোকিও অলিম্পিকে মাঝরাস্তা থেকেই ছিটকে যেতে হয়েছিল। আশ্চর্যের ব্যাপার, সেদিন টোকিও অলিম্পিকে যেখানে থেমেছিলেন সিমোন, প্যারিসে ঠিক সেইখান থেকেই সফর শুরু করলেন তিনি। বুঝিয়ে দিয়ে গেলেন, যেন একটাই খেলা গোটা জীবন ধরে খেলছেন তিনি। তাতে থামা আছে, সাময়িক বিরতি কিন্তু কিন্তু লড়াই থেকে সরে আসা নেই কোনও মতেই।

আরও পড়ুন: ‘মঞ্চে আসলে তিন জন!’ অন্তঃসত্ত্বা নাদার তরোয়ালের লড়াইয়ে মুগ্ধ অলিম্পিকের আসর

আর্টিস্টিক জিমন্যাস্টিক্সের দলগত বিভাগে চারটি রোটেশন হয়। প্রতিটি রোটেশনে চারটি করে এক্সারসাইজ করতে হয় প্রতিযোগীদের। ভল্ট, আনইভেন বার, ব্যালান্স বিম ও ফ্লোর এক্সারসাইজ। ফাইনালের আটটি দলকে চারটি গ্রুপে ভাগ করা হয়। প্রতিটি গ্রুপে থাকে দু’টি করে দল। প্রতিটি দল থাকেন তিন জন করে প্রতিযোগী। একটি রোটেশনে দু’টি দলের তিন জন একটি এক্সারসাইজ করেন। এ ভাবে চারটি রোটেশন হওয়ার পরে সকলের স্কোর যোগ করে সোনা, রুপো ও ব্রোঞ্জ ঠিক করা হয়। চারটি রোটেশন শেষে আমেরিকার মহিলা দলের স্কোর ১৭১.২৯৬। তারা ভল্টে ৪৪.১০০, আনইভেন বারে ৪৩.৩৩২, ব্যালান্স বিমে ৪১.৬৯৯ ও ফ্লোর এক্সারসাইজে ৪২.১৬৫ স্কোর করেছে। আর ছিনিয়ে নিয়েছে প্রথম স্থান। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ইটালি এবং তৃতীয় হয়েছে ব্রাজিল।

সিমোনের পারর্ফমেন্স দেখতে সেদিন দর্শকাসন ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। দর্শকাসনে তাঁর বাবা রন বাইলস, মা নেলি বাইলস ও স্বামী জোনাথন ওয়েনস তো ছিলেনই। কন্যাকে নিয়ে খেলা দেখতে এসেছিলেন সেরিনা উইলিয়ামস। তাঁদের হতাশ করেননি সিমোন। তবে এই একটা সোনায় যে থামবার পাত্র নন সিমোন, তা বুঝিয়ে দিতে দেরি করেননি দুর্দান্ত এই জিমন্যাস্ট। দলগত ইভেন্টের পর ব্যক্তিগত ইভেন্টেও নিজের সাক্ষর বজায় রাখলেন তিনি।

আর্টিস্টিক জিমন্যাস্টিক্সে মেয়েদের অলরাউন্ড ইভেন্ট তিনি শুরু করেছিলেন ভল্ট দিয়ে। মেয়েদের ব্যক্তিগত এই ইভেন্টে আছে চারটি রাউন্ড, ভল্ট, আনইভেন বারস, ব্যালান্স বিম এবং ফ্লোর এক্সারসাইজ। সিমোন শুরু করেছিলেন ভল্ট দিয়ে। সেখানে তিনি মোট ১৫.৭৬৬ স্কোর করেন। আনইভেনে বারসে সিমোন স্কোর করেন ১৩.৭৩৩। ব্যালান্স বিমে ১৪.৪৬৬ স্কোর করেন তিনি। তিনটি রাউন্ড শেষে শীর্ষে ছিলেন তিনি। ফ্লোর এক্সারসাইজের পর সোনা নিশ্চিত করেন সিমোন। শেষ রাউন্ডে বাইলসকে লড়াইয়ের মুখে ফেলে দিতে পারতেন আমেরিকার লি সুনিসা। তাঁকে সঙ্গে নিয়েই দলগত বিভাগে সোনা জিতেছিলেন সিমোন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সুনিসা শেষ করেন তিন নম্বরে। ফ্লোর এক্সারসাইজে ১৫.০৬৬ স্কোর করেন সিমোন। যা সকলের থেকে বেশি। দ্বিতীয় স্থানে শেষ করেন ব্রাজিলের রেবেকা আনদ্রাদে। তাঁর থেকে সিমোন এগিয়ে ১.১৯৯ স্কোরে। তৃতীয় স্থানে থাকা সতীর্থ সুনিসার থেকে ২.৬৬৬ স্কোরে এগিয়ে শেষ করেন তিনি। যার সঙ্গে সঙ্গে প্যারিস অলিম্পিক থেকে দ্বিতীয় সোনাটাও ব্যাগস্থ করলেন সিমোন।

বহু দিন পর এমন এক জিমন্যাস্টকে পেয়েছে বিশ্ব। সর্বকালের সেনা কিনা বলা কঠিন, তবে তিনি যে আলাদা, ব্যতিক্রমী, তা প্রমাণ করে দিয়েছেন বারংবার। অলিম্পিকসে তাঁর ঝুলিতে রয়েছে সাত-সাতটি পদক। তার মধ্যে চারটি সোনা। পাঁচ বার বিশ্ব জিমন্যাস্টিক্স প্রতিযোগিতায় নেমে প্রতিবারই অলরাউন্ড সোনা জিতেছেন। কার্যত জিমন্যাস্টিকে কৃষ্ণাঙ্গদের মুখ হয়ে উঠেছেন সিমোন। পদে পদে ছিল বাধা, সমালোচনার ঝড়। তবে সেই সমস্ত কিছুর জবাব দিয়েছেন তিনি পদকে। প্রায় আট বছর পর ফের অলিম্পিক্সের আসর সেই আত্মবিশ্বাসটাই যেন ফের দেখল সোনার মেয়ের।

২০১৬ সালে ব্রাজিলের রিয়ো ডি জেনেইরোর অলিম্পিকসে প্রথম বার বিশ্বের পরিচয় সিমোন বাইলসের সঙ্গে। তখন তিনি আমেরিকার মহিলা জিমন্যাস্টিক্সের দলের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য। সেই বাইলস খেলতে নেমে উড়লেন। এমন সব রুটিন করলেন, যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো শব্দ খুঁজে পাচ্ছিলেন না ধারাভাষ্যকারেরা। তখন তাঁর বয়স মাত্র ১৯ বছর। সেই সময়ই সেরার সেরা হওয়ার ঝলক দেখিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। রিয়ো অলিম্পিক শেষ হতে না হতেই জিমন্যাস্টিক্সের দুনিয়ায় সবচেয়ে চর্চিত নাম হয়ে উঠলেন সিমোন। একের পর এক পত্রিকার প্রচ্ছদে তাঁর ছবি। সিমোনের প্রতি বিশ্বের প্রত্যাশা বাড়তেই লাগল। ১৯-র রিওকে ছাপিয়ে যাবেন সিমোন বাইশের টোকিওয়। আরও অভাবনীয় একগুচ্ছ দৃশ্যের সাক্ষী থাকবে বিশ্ব।

কিন্তু এত সব প্রত্যাশার চাপ কোথাও কি টলিয়ে দিল সিমোনকে? ভয় দেখাল ব্যর্থতার? তত দিনে এনএফএল তারকা জোনাথন ওয়েনসের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক হয়েছে তাঁর। অনলাইনে আলাপ। তার পরে প্রেম। জোনাথন যেন বুঝতে পারছিলেন, এই ভয়ঙ্কর প্রত্যাশার চাপ যেন কোথাও কোনও ভাবে বিপন্ন করছে তরুণ এই জিমন্যাস্টকে। তার উপর সময়টা কোভিড। যা গোটা বিশ্বকেই এক তীব্র বিপন্নতার মধ্যে ফেলে দিয়েছিল। বাদ যাননি সিমোন। দর্শক ছাড়া অলিম্পিকের মঞ্চ, সেখানে অনুমতি ছিল না পরিবারেরও। চিৎকার নেই, চারপাশে ভিড় করে আসা জনতার মাঝখানে সিমোনের নামের উল্লাস নেই, কেমন যেন লাগত সিমোনের। সারা দিন প্রশিক্ষণ, প্র্যাকটিস, তার পর যে যার ঘরে ঢুকে পড়া, সারাদিন মাস্কের চোখরাঙানি, নিয়ম করে কোভিড পরীক্ষা- বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিল সিমোনকে। যে মানসিক ব্যধি নিয়ে গোটা বিশ্বের অজস্র ট্যাবু, সেই মানসিক ব্যধি, ডিপ্রেশনের শিকার হচ্ছিলেন সিমোন ক্রমশ। লক্ষ্যভ্রষ্ট হচ্ছিলেন সিমোন, ল্যান্ডিং করতে গিয়ে বারবার ব্যর্থ হচ্ছিলেন। সেই মানসিক অবস্থার প্রভাব পড়ল অলিম্পিকের মঞ্চে। ভালো করে পারফর্ম করতে পারলেন না সিমোন। শূন্যে আড়াই পাক ঘোরার বদলে দেড় পাক ঘুরলেন তিনি। ভল্ট শেষে প্যাভেলিয়নে ফিরলেন এক অদ্ভুত শূন্যতা নিয়ে। মাঝপথেই খেলা ছাড়লেন সিমোন। সেই অলিম্পিক অসম্পূর্ণ রেখে ফিরে গেলে দুর্দান্ত এই প্রতিভা, সরে দাঁড়ালেন ব্যক্তিগত ইভেন্ট থেকেও। তাঁর এই সিদ্ধান্তে স্তম্ভিত বিশ্ব। কোথায় গেল সিমোনের সেই আত্মবিশ্বাস?

ছোট থেকে পারিবারিক হিংসা দেখে বড় হয়েছেন সিমোন। চার ভাইবোনের সংসারে মা-বাবার পারষ্পরিক সম্পর্ক সুখের ছিল না। আমেরিকার আইন অনুযায়ী, চার ভাই-বোনের ঠাঁই হয় ফ্রস্টার হোমে। সেখান থেকে তাঁকে আর বোন আদ্রিয়াকে দত্তক নেন সিমোনের দিদা। দাদু-দিদাই হয়ে উঠলেন তাঁর নতুন মা-বাবা। বাকি দুই ভাইবোন গেল সিমোনের পিসির দায়িত্বে। কিন্তু বরাবর বড্ড যত্নে সিমোনকে আগলে রেখেছিলেন নেলি-রন। এমনকী তাঁর খেলার প্রতিটি পদেই সঙ্গে ছিলেন তাঁরা। যেতে পারেননি শুধু টোকিও অলিম্পিকে। টিভিতে দেখেছিলেন, ভাঙাচোরা মেয়েকে। তাঁর খেলা থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তে পাশে ছিলেন নেলি। যে সিমোন কুড়ি বছরে কখনও ল্যান্ডিংয়ে পড়ে যায়নি, তেমনটাই হয়েছিল সেদিন। লজ্জায়, নিজের প্রতি অপরাধবোধে কুঁকড়ে বাড়ি ফিরে এসেছিলেন সেদিন সিমোন।

জিমন্যাস্টিক্সের পরিভাষায় সিমোনের এই সমস্যাকে বলা হয় ‘টুইস্টিস’। এই সমস্যা হলে হাওয়ায় থাকাকালীন জিমন্যাস্টেরা নিজেদের অবস্থান বুঝতে পারেন না। এক কথায় বলা যায়, মাথার সঙ্গে শরীরের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। হয়তো মাথা বলছে, আড়াই পাক ঘুরবেন। কিন্তু শরীর দেড় পাক ঘুরছে। ল্যান্ডিংয়ের সময় পা কোথায় পড়ছে তার হদিস থাকে না। এই সমস্যা হলে খেলা বন্ধ করে দেওয়ার পরামর্শ দেন কোচেরা। কারণ, জোর করে করতে গেলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বেকায়দায় পড়ে গেলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তবে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে যে ঘুরে দাঁড়াতে হয় তা সময় তাঁকে শিখিয়ে দিয়েছিল। টোকিয়োয় নাম তুলে নেওয়ার পরে একের পর এক সমালোচনার তির এসে বিঁধেছিল সিমোনকে। সোশ্যাল মিডিয়ায় যেন একটা খোরাক হয়ে দাঁড়ান তিনি। সেই সমস্ত কিছু আরও বড় মাপে প্রভাব ফেলেছিল সিমোনের মানসিক স্বাস্থ্যে। অলিম্পিকসের নাম, ছবি সব কিছু তাঁকে আতঙ্কের দিকে ঠেলে দিত যেন।

আসলে গোটা বিশ্ব জুড়েই মানসিক স্বাস্থ্যের মতো বিষয় এতটাই অবহেলিত যে একটা সময় পর্যন্ত কেউ মানতেই চাইত না, সেই সমস্যার কথাটা। ৮০-৯০ এর দশকেও জিমন্যাস্টিক্সে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কোনও কথা হত না। তখন জিমন্যাস্টিক্সে নামা মানে পদক জিততে হবে। তার জন্য যদি বড় চোট লাগে তা-ও পিছপা হতেন না কোচেরা। ১৯৯৬-এর অলিম্পিক্সে কেরি স্ট্রাগ চোট নিয়েই লড়েছিলেন। ১৯৯৬ অলিম্পিক্সের পদকজয়ী ডোমিনিক ডসনের কথায়, “কোচেরা যা বলত তা-ই শুনতে হত। আমাদের শরীর নিয়ে ছেলেখেলা হত। সিমোন তার প্রতিবাদ করেছিল। প্রথম মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলেছিল।” সিমোন দেখালেন, মানসিক স্বাস্থ্য আসলে উদ্বেগের বিষয়। শুরু হল তা নিয়ে কথাবার্তা। টোকিয়ো থেকে নাম তুলে নেওয়ার পরে সিমোন একটি ভিডিয়োবার্তা ও পরে সাংবাদিক বৈঠক করে নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের কথা বলেছিলেন। কোন পরিস্থিতিতে তিনি নাম তুলে নিয়েছিলেন তা জানাতে ভয় পাননি। তার পর থেকে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। না, শুধু মানসিক স্বাস্থ্য নয়, সিমোনকে লড়তে হয়েছে বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধেও। ৮০-৯০-এর দশকে জিমন্যাস্টের দক্ষতার থেকে তাঁর চেহারা ছিল বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সুন্দরী, সোনালি চুলের মেয়েদের আধিক্য ছিল। কৃষ্ণাঙ্গ মেয়েদের দেখাই যেত না। বিচারকেরাও নাকি গায়ের রং দেখে নম্বরের হেরফের করতেন। আমেরিকার ইতিহাসে প্রথম দুই কৃষ্ণাঙ্গ জিমন্যাস্ট হিসাবে অলিম্পিক্সে অংশ নিয়েছিলেন বেটি ও ডোমিনিক। তাঁরা পদক জিতলেও বাকিদের ছায়ায় থেকে গিয়েছেন। আমেরিকাকে প্রথম ধাক্কা দেন গ্যাবি ডগলাস। ২০১২ লন্ডন অলিম্পিক্সে অলরাউন্ড সোনা জেতেন তিনি। ১৬ বছরের গ্যাবির সাফল্য উৎসাহ দিয়েছিল সিমোনকে। ক্রমশ কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতিনিধি হিসেবে জিমন্যাস্টিকের মঞ্চে নিজেকে তুলে ধরলেন সিমোন। ভাঙলেন আরও একটা ট্যাবু।

আরও পড়ুন:নেই স্পেশাল চশমা, পকেটে হাত ভরেই যেভাবে অলিম্পিকে রুপো জিতলেন ৫১-র যুবক

এরই মধ্যে আমেরিকার মহিলা জিমন্যাস্ট দলের চিকিৎসকের দায়িত্বে থাকা ল্যারি নাসেরের বিরুদ্ধে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ করেন দুই জিমন্যাস্ট। তাঁদের সমর্থনে এগিয়ে আসেন আরও অনেকে। নাসেরের বিরুদ্ধে সাক্ষী দেন ২৬৫ জন অ্যাথলিট। তাঁদের মধ্যে ছিলেন সিমোন। সেই ঘটনাও মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত করেছিল তাঁকে। নিয়মের আড়ালে তাঁদের উপর যে লাগাতার নির্যাতন চলছে, তা যে এতদিন বুঝতেই পারেননি তাঁরা। তবে আন্দোলনের ফল মিলেছিল। অভিযুক্ত নাসেরকে ৪০ থেকে ১৭৫ বছরের জেলের সাজা শোনানো হয়। আমেরিকার জিমন্যাস্টের ইতিহাসে আরও একটা বদলের কান্ডারি হয়ে ওঠেন সিমোন। তবে টোকিওর সেই ব্যর্থতার পরেও যে ফের ছাই থেকে জেগে উঠতে পারেন সিমোন, তা বোধহয় কেউ কল্পনা করেননি। বিশ্ব যখন সিমোনের অবসরের পরিকল্পনা করছে, তখনই জেগে উঠলেন সিমোন বাইলস। নিজেও কি সে কথা ভাবেননি একবারও সিমোন, আলবাত ভেবেছিলেন। কিন্তু পাশে দাঁড়ান জোনাথন। সিমোনের সেই প্রেমিক। ২০২৩ সালে জোনাথনের সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। হিউস্টনে নিজেদের বাড়ি সাজিয়ে তোলেন তাঁরা। সেখান থেকে ফের সাজিয়ে তোলেন নিজের কেরিয়ারও। ফের মঞ্চে ফেরেন সিমোন। শূন্য থেকে শুরু করেন ফের, এবং সেই শূন্য বিন্দু বিন্দু করে পৌঁছে গিয়েছে সেখানে, যেখানে আজ দাঁড়িয়ে রয়েছেন সিমোন। ফের তিনি ক্যারিশমা দেখিয়েছেন অলিম্পিকের মঞ্চে। কার্যত প্রমাণ করে দিয়েছেন, বারবার ছাই থেকে জেগে উঠতে পারেন যিনি, তাঁরই অন্য নাম আসলে সিমোন বাইলস।

 

More Articles