যেতে হবে না বৃদ্ধাশ্রম, নিঃসঙ্গতা কাটবে বাড়িতেই, ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে এই অভিনব পেশা

বৃদ্ধদের পরিচর্যা ও নিরাপত্তার বিষয়টি শহর তথা দেশের জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিশেষত অতিমারী-পরবর্তীকালে। এক্ষেত্রে বহু স্টার্ট আপ সংস্থা এগিয়ে এসেছে প্রবীণদের সহায়তার জন্য।

 

দোতলা বাড়িতে থাকেন মাত্র দু'জন, তাও আবার বয়স্ক। বৃদ্ধ দম্পতির একমাত্র ছেলে কর্মসূত্রে থাকেন বিদেশে। অসুস্থ বয়স্ক মানুষগুলোর দেখভাল নিয়ে তাই ছেলের চিন্তা ভীষণ। এমন চিত্র কিন্তু আজ খুব অচেনা নয়। বরং বলাই যায়, এটাই নিউ নর্মাল। শহরের বুকে বহু বৃদ্ধ মানুষ আজ নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করেন। পরিসংখ্যানও বলছে, গত এক শতাব্দীতে মানুষের গড় আয়ু দ্বিগুণ বেড়েছে। আর আয়ু বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দেশের প্রবীণ নাগরিকের সংখ্যা। এই মুহূর্তে ভারতের মোট প্রবীণ নাগরিকের সংখ্যা প্রায় ১৩৪ মিলিয়ন। দেখা গেছে, দেশের প্রতি পাঁচ জন প্রাপ্তবয়স্কর মধ্যে একজন প্রবীণ নাগরিক। দ্রুত হারে বেড়েই চলছে ষাটোর্ধ্ব নাগরিকদের সংখ্যা।

ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিকাল অফিসের দ্বারা প্রকাশিত ২০২১ প্রবীণ নাগরিক-সংক্রান্ত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ভারতে প্রবীণ নাগরিকদের (৬০ বছর বা তার বেশি বয়সি) জনসংখ্যা ২০৩১ সালের মধ্যে ১৯৪ মিলিয়ন পৌঁছবে বলে আশা করা যায়। ২০২১ সালে এঁদের সংখ্যা ছিল ১৩৮ মিলিয়ন, যা এক দশকে প্রায় ৪১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

ফলস্বরূপ বৃদ্ধদের পরিচর্যা ও নিরাপত্তার বিষয়টি শহর তথা দেশের জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিশেষত অতিমারী-পরবর্তীকালে। এক্ষেত্রে বহু স্টার্ট আপ সংস্থা এগিয়ে এসেছে প্রবীণদের সহায়তার জন্য। নানাভাবে জীবনের শেষ দিনগুলি কাটাতে সাহায্য করে এই সংস্থাগুলি। চলুন জেনে নেওয়া যাক এমন কিছু সংস্থার কথা, যা বৃদ্ধদের ভরসা হয়ে উঠতে পারে।

আরও পড়ুন: উচ্চ রক্তচাপ মানেই মৃত্যুর হাতছানি, ভারতে হু হু করে বাড়ছে হৃদরোগের ঝুঁকি

সিনিয়র ওয়ার্ল্ড
রাহুল গুপ্তা এবং এমপি দীপুর তৈরি এই সংস্থার মূল লক্ষ্য হলো, প্রবীণ নাগরিকদের জীবনযাত্রায় বদল ঘটিয়ে তাদের আরও বেশি স্বাবলম্বী এবং সক্রিয় করে তোলা। সঙ্গে থাকছে বৃদ্ধদের ঘুরতে যাওয়ার সুযোগ এবং সহজে মোবাইল ব্যবহারের মাধ্যমে তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। বাঁধাধরা জীবন থেকে বেরিয়ে প্রবীণদের অবসরকে অন্যভাবে কাটানোর সুযোগ করতে উদ্যোগী সিনিয়র ওয়ার্ল্ড।

গেটসেটআপ
১৬০টি দেশে তিন মিলিয়নেরও বেশি প্রবীণ নাগরিককে নিয়ে তৈরি একটি অনলাইন কমিউনিটি হলো গেটসেটআপ। এদের মূল উদ্দেশ্য হলো প্রবীণদের সক্রিয় রাখা এবং সংযোগ রক্ষা করার পাঠ দেওয়া। স্টার্ট আপ এই সংস্থাটি বয়স্কদের মানসিক এবং শারীরিক সুস্থতাও বজায় রাখতে সাহায্য করে। এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বৃদ্ধদের পছন্দমতো বিষয়গুলো নিয়ে লাইভ ক্লাসের আয়োজন করা হয় এবং বৃদ্ধদের জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা দেওয়া হয়।

৬০প্লাস ইন্ডিয়া
আরসি অরুল, ওলি অরুল এবং বিবেক রাজা প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থায় বয়স্কদের জন্য চিকিৎসক, নার্স ও ফিজিওথেরাপির মতো একাধিক স্বাস্থ্য পরিষেবা দেয়া হয়। সহজ অ্যাপ বা ফোনের মাধ্যমে প্রবীণদের যে কোনও অসুবিধার সঙ্গী হয়ে ওঠে এই সংস্থা। বৃদ্ধদের শারীরিক অসুস্থতার দিকটি সর্বতোভাবে দেখাশোনা করাই এই সংস্থার মূল কাজ।

আলসার্ভ
যে সকল প্রবীণরা বাড়িতে একাই থাকেন তাদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় এই সংস্থা। ২০২০ সালে কাজ শুরু করে এই কোম্পানি। নিঃসঙ্গ প্রবীণ নাগরিকদের প্রয়োজনীয় সার্ভিস প্রদান করে আলসার্ভ এবং দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন সুবিধা-অসুবিধাতেও পাশে পাওয়া যায় এই সংস্থাকে। বৃদ্ধ নাগরিকদের কাছে খাবার পৌঁছে দেওয়া, তাঁদের চিকিৎসা, নিরাপত্তা, গৃহস্থালি এবং রক্ষণাবেক্ষণের দিকগুলি দেখাশোনা করেন তাঁরা। এমনকী, রাঁধুনি ঠিক করা এবং মুদির দোকানের প্রয়োজনীয় অর্ডারও বৃদ্ধদের কাছে পৌঁছে দেয় এই সংস্থা।

এল্ডারএইড ওয়েলনেস
২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থার সদর দফতর বেঙ্গালুরুতে। এই সংস্থার মাধ্যমে প্রবীণদের সামগ্রিক পরিষেবা প্রদান করা হয়। বেঙ্গালুরুর আশেপাশে বসবাসকারী প্রবীণদের জন্য বিভিন্ন ইভেন্টও পরিচালনা করে এল্ডারএইড ওয়েলনেস। আনন্দময় জীবনযাপনের মাধ্যমে জীবনের শেষ দিনগুলি কাটাতে সাহায্য করেন এই সংস্থার কর্মচারীরা, 'প্রক্সি চাইল্ড' হিসেবেও কাজ করেন তাঁরা। তাই বৃদ্ধ মানুষদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে তাঁদের পরিবারের কাজ- সবই করেন কোম্পানির কর্মচারীরা।

বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের শেষ গন্তব্য বৃদ্ধাশ্রম, এই ধারণা পাল্টে যাচ্ছে এভাবেই। বৃদ্ধাশ্রমে না গিয়েও নিঃসঙ্গ বয়স্কদের জীবন কাটবে নিশ্চিন্তে, এই ব্যবস্থাই করছে এই পরিষেবাগুলি। আর ক্রমে এই স্টার্ট আপের পেশায় যোগ দেওয়ার প্রবণতাও বাড়ছে। এই স্টার্ট আপগুলির হাত ধরে সমাজের ছবিটা কি তাহলে অবশেষে পাল্টাবে? উত্তর দেবে সময়।

 

 

More Articles