২৮৬ দিন পর পৃথিবীতে! যে শারীরিক সমস্যায় জেরবার হতে হবে সুনীতা উইলিয়ামসদের
Sunita Williams Returns: সুনীতা উইলিয়ামস এবং বুচ উইলমোর নিরাপদে ফিরে এলেও পৃথিবীতে এখন মাধ্যাকর্ষণ শক্তির 'শাস্তি' সহ্য করতে হবে তাঁদের।
মহাকাশে ২৮৬ দিন কাটিয়ে, এই গ্রহকে ৪৫৭৭বার প্রদক্ষিণ করে, ১৯৫.২ মিলিয়ন কিলোমিটার দূরত্ব পাড়ি দিয়ে অবশেষে দেশে ফিরলেন নাসার মহাকাশচারী সুনিতা উইলিয়ামস, সম্পূর্ণ নিরাপদে প্রত্যাবর্তন! সুনীতারা আর কোনওদিন মহাকাশ থেকে পৃথিবীতে ফিরতে পারবেন কিনা এই নিয়ে চূড়ান্ত উৎকণ্ঠায় ছিল বিশ্ব। আশঙ্কা ছিল, জীবনের বাকি সময়টা হয়তো শূন্যেই কাটাতে হতে পারে। তাঁদের নিরাপদে বাড়ি ফেরানো নিয়ে দিন রাত চলেছে আলোচনা, উপায় খুঁজেছেন বিজ্ঞানীরা। অবশেষে, দেশের মাটি ছুঁলেন সুনীতা। সহকর্মী নভোচারী বুচ উইলমোরের সঙ্গে মহাকাশে আট দিনের অভিযানে গিয়েছিলেন তিনি। স্টারলাইনার যে মহাকাশযানটি তিনি মহাকাশে নিয়ে গেছিলেন তাতে একাধিক প্রযুক্তিগত ত্রুটি তৈরি হওয়ায় নয় মাস মহাকাশে মাধ্যাকর্ষণহীন অবস্থায় থাকতে বাধ্য হন সুনীতারা।
স্টারলাইনের ওই মহাকাশযান নিয়ে শূন্যে যাওয়া আসলে এমন কোনও বিষয়ই ছিল না। মার্কিন নৌবাহিনীতে কাজের সময় এমন পরীক্ষার সঙ্গে পরিচিতই ছিলেন সুনীতা। তবে মাঝ আকাশে মহাকাশযানে সমস্যা হওয়াতে উদ্বেগ পৌঁছয় চরমে। প্রতিকূল অবস্থায় দিন কাটানো, রেকর্ড গড়ার পাশাপাশি রাজনৈতিক তরজার কেন্দ্রও হয়ে ওঠেন সুনীতারা।
২০২৪ সালের ৫ জুন আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে বোয়িং সিএসটি-১০০ স্টারলাইনার। সফলভাবে তা পৌঁছেও যায়। ফেরার কথা ছিল ২৬ জুন। কিন্তু বিপদ ঘটে। নাসা জানায়, আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের কাছেই বিস্ফোরণ হয়েছে 'রিসার্স' নামে রাশিয়ার একটি কৃ্ত্রিম উপগ্রহের। যা টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে মহাকাশ স্টেশনের চারপাশে। শুধু তাই নয়! দেখা যায় স্টারলাইন মহাকাশযানে হিলিয়াম গ্যাস লিক-সহ অজস্র ত্রুটি ধরা পড়ছে। ফলে মহাকাশ স্টেশনেই বন্দি হয়ে যান সুনীতারা। কবে ফিরতে পারবেন তাঁরা, আদৌ পারবেন কিনা, সঙ্কট দেখা দেয়। অন্যদিকে, স্পেস স্টেশনে ক্রমশই খারাপ হতে থাকে সুনীতাদের স্বাস্থ্য। এত দীর্ঘসময় মহাকাশে কাটানোর ফলে ক্রমশ দুর্বল হতে থাকে মহাকাশচারীদের হাড়, পেশিও শিথিল হতে শুরু করে।
আরও পড়ুন-মহাকাশ দখলের লড়াইয়ে বিপদ পৃথিবীরই? পরিবেশের যে ক্ষতি ডেকে আনছে রাশি রাশি উৎক্ষেপণ
কী শারীরিক সমস্যায় পড়বেন সুনীতারা?
সুনীতা উইলিয়ামস এবং বুচ উইলমোর নিরাপদে ফিরে এলেও পৃথিবীতে এখন মাধ্যাকর্ষণ শক্তির 'শাস্তি' সহ্য করতে হবে তাঁদের। পৃথিবীতে মাধ্যাকর্ষণের প্রভাব শরীরের রক্তকে নীচে ঠেলে দিতে চাইবে। মহাকাশে, দেহজ তরলগুলি উপরের দিকে থাকত, যার ফলে মুখে ফোলাভাব দেখা যায় এবং পা সরু হয়ে যায়। পৃথিবীতে ফিরে আসার পরে ঠিক বিপরীত হয়, যার ফলে শরীরের ভারসাম্যে অস্বস্তি দেখা দেয়। পৃথিবীতে যতটা ব্যবহার করা হয় পেশির ততটা ব্যবহার মহাকাশে হয় না, যার ফলে পেশি দুর্বল এবং সঙ্কুচিত হয়ে যায়।
সুনীতা উইলিয়ামস বেশ কিছুটা সময় দুর্বল থাকবেন, হাঁটতে অসুবিধা হতে পারে তাঁর। মহাকাশে মহাকাশচারীদের প্রতি মাসে ১-২% হাড়ের ভর কমে যায়, অর্থাৎ ভঙ্গুর হাড় সহজেই ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকিও আছে। ব্যায়াম করে এই সমস্যার মোকাবিলা সম্ভব, তবে হাড়ের শক্তি ফিরে পেতে সময় লাগতে পারে।
হৃদপিণ্ডকেও পৃথিবীতে যতটা কাজ করতে হয়, মহাকাশে তার অত কাজ নেই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা আকারে কিছুটা হ্রাসও পেতে পারে। কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের সামঞ্জস্য ফেরাতে সময় লাগে। শরীরের ভারসাম্য বদলানোর ফলে বমি বমি ভাব, মাথা ঘোরা এবং বিভ্রান্তি দেখা দিতে পারে।
আরও পড়ুন- স্টারলাইনে আস্থা হারাচ্ছেন না! স্পেস স্টেশন থেকে যে বার্তা দিলেন সুনীতা উইলিয়ামস
কীভাবে ফিরলেন সুনীতারা?
আটলান্টিকের বুকে ‘স্প্ল্যাশডাউন’ হয়েছে। কী এই স্প্ল্যাশডাউন? ফ্লোরিডার টালাহাসি উপকূল ববাবর এই স্প্ল্যাশডাউন হয়েছে। নাসার নভোশ্চর নিক হেগ এবং রাশিয়ার মহাকাশ সংস্থার সদস্য আলেক্সজান্ডার গর্বুনোভের সঙ্গে স্পেসএক্সের ড্রাগন মহাকাশযানে (স্পেসএক্স ক্রিউ-৯ মিশন) চাপেন সুনীতা এবং বুচ। মঙ্গলবার রাত ১ টা ৫ মিনিটে আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পৃথিবীর উদ্দেশে রওনা দেন স্পেসএক্সের মহাকাশযান ‘ফ্রিডম’। ‘ফ্রিডম’ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে মঙ্গলবার বিকেল ৫ টা ৫১ মিনিট নাগাদ। গতি কমিয়ে প্রথম দফায় প্যারাশ্যুট খুলে যায় বিকেল ৫ টা ৫৩ মিনিটে। এক মিনিট পরেই দ্বিতীয় দফার প্যারাশুট খোলে। ৫ টা ৫৭ মিনিটে প্যারাশ্যুটে ভাসতে ভাসতে ধীরগতিতে আটলান্টিকের বুকে নেমে আসে ড্রাগন ‘ফ্রিডম’ মহাকাশযান। এটিকেই বলা হচ্ছে ‘স্প্ল্যাশডাউন’।
আটলান্টিক থেকে উদ্ধারকারী জাহাজে তুলে নেওয়া হয় মহাকাশযানটিকে। তারপর মহাকাশযানের দরজা খোলে। প্রথমেই বের করে আনা হয় হেগকে। তারপর রাশিয়ার আলেক্সজান্ডারকে। তারপরে বেরিয়ে আসেন সুনীতা। সবশেষে বুচকে বের করে আনা হয়। মহাকাশচারীদের হেলিকপ্টারে নিয়ে যাওয়া হয় হিউস্টনে। আপাতত নাসার বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে থাকবেন তাঁরা।