‘তুই বাঁচবি না'! জয়ন্ত গ্রেফতার হতেই সৌগত-মদনকে হুমকি! আমজনতা আদৌ নিরাপদ?
Jayant Singh Madan Mitra: মদন মিত্রের দাবি, রাতের বেলায় তাঁর মোবাইলে একটি অচেনা নম্বর থেকে ফোন আসে।
জয়ন্ত সিং আড়িয়াদহের ত্রাস। মা ছেলেকে ফেলে পেটানোর ঘটনায় অবশেষে 'জায়ান্ট' সিংকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। অভিযোগ ছিল শাসকদলের নেতাদের ছায়াতে থেকেই এই বাড়বাড়ন্ত তাঁর। সেই জয়ন্ত সিং জেলে যেতেই হুমকি ফোন পেতে শুরু করলেন তৃণমূলের নেতারা। অভিযোগ, কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্রের হাত ধরেই এলাকায় প্রতিপত্তি বাড়িয়েছিল জয়ন্ত। জয়ন্ত জেলে জেতেই সেই মদন মিত্রের অভিযোগ, মাঝরাতে তাঁকে হুমকি দিতে ফোন করা হয়েছিল। জনৈক ব্যক্তি তাঁকে ফোন করে বলেন, ‘‘তুই বাঁচবি না। কামারহাটিকাণ্ড নিয়ে মুখ খুলেছিস। তোকে গুলি করে দেব। গুলি খাওয়ার জন্য প্রস্তুত হ।’’
মদন মিত্রের দাবি, রাতের বেলায় তাঁর মোবাইলে একটি অচেনা নম্বর থেকে ফোন আসে। ফোনের ওপার থেকে তাঁকে স্পষ্ট বাংলা ভাষায় হুমকি দেওয়া হয়। ফোন করে ওই ব্যক্তি মদন মিত্রকে খুনের হুমকি দেয়। মদন মিত্র বলছেন, ৪৬ সেকেন্ড কথা হয় তাঁর। অজানা ওই ব্যক্তি তাঁকে খুনের হুমকি দিলেও তিনি ভদ্র ভাষাতেই কথা বলেছেন তাঁর সঙ্গে। মদন বলছেন, তিনি তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘‘কে আপনি? এ ভাবে কেন কথা বলছেন?’’ তবে এই প্রশ্নের সদুত্তর তিনি দেননি। মদন মিত্র জানাচ্ছেন, দু’বার ওই ফোন এসেছিল। দ্বিতীয়বার ফোনটি আসে বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা ৩৮ মিনিটে। তবে মদন মিত্রের সঙ্গে ওই ব্যক্তির রাতেই একবার কথা হয়েছিল।
আরও পড়ুন- ‘আড়িয়াদহের ঘটনা পুরনো!’ শাসকদলের নাম জড়াতেই তড়িঘড়ি সাফাই প্রশাসনের?
হুমকি পেয়েও কেন ফোন রেকর্ড করলেন না মদন মিত্র? মদন মিত্র বলছেন, তিনি ফোন রেকর্ড কীভাবে করতে হয় তা জানেন না। তবে ওই ব্যক্তির সঙ্গে কী কী কথা হয়েছে, তা মনে রেখেই বলেছেন তিনি। মদন মিত্রের দাবি, ‘‘পরিষ্কার বাংলা ভাষায় আমার সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। কোনও বিহারের জেল, কোনও সুবোধ সিং বা অর্জুন সিং ফোন করেননি। স্থানীয় কেউ ফোন করেছেন। যদিও অর্জুনের মতো কেউ বা কারা যে ফোনের পিছনে দাঁড়িয়ে আছেন, তা আমি ভালোই বুঝতে পেরেছি।’’
কে ফোন করেছেন বা কারা ফোন করিয়েছেন বলে ইঙ্গিত দিচ্ছেন মদন? মদন মিত্র বলেছেন, ‘‘আমার কাছে খবর আছে, কামারহাটিতে বহু জায়গায় অর্জুন এবং শুভেন্দু অধিকারী যোগাযোগ করছেন। তাঁরাই এই ফোন করিয়েছিলেন।’’
শুধু মদন মিত্র নন, এর আগে খুনের হুমকি পেয়েছেন বলে দাবি করেন দমদমের তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ও। জয়ন্ত সিংয়ের গ্রেফতারির পর সৌগত রায় অভিযোগ করেন, জয়ন্তকে পুলিশের হাত থেকে ছাড়াতে হবে, এই হুঁশিয়ারি দিয়ে কেউ বা কারা ফোন করেছিলেন তাঁকে। দমদমের সাংসদ সৌগত রায়ের অভিযোগ, মঙ্গলবার রাত তিনটে নাগাদ ফোন করে বাংলা ও হিন্দিতে প্রথমে তাঁকে গালাগালি করা হয়। বলা হয়, "জয়ন্ত সিংকে ছাড়ানো না হলে তোকে গুলি করব! তুই আড়িয়াদহে আয়।" মিনিট সাতেক পর নাকি অন্য আরেকটি নম্বর থেকে ফোন করে একই কথা বলা হয়। সৌগত জানিয়েছেন, বুধবার ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার অলোক রাজোরিয়াকে ঘটনাটি ফোনে জানিয়েছেন তিনি। সিপি অলোক রাজোরিয়া তদন্তও শুরু করেছেন। মদন মিত্র বলছেন, ‘‘সৌগত রায়কে যেখান থেকে ফোন করে হুমকি দেওয়া হয়েছে, সেই ফোনের লোকেশন খুঁজে বার করলেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে। কারণ ওঁকে ফোন করার পরের দিনই আমার কাছে ফোন এল।’’
আরও পড়ুন- শেখ শাহজাহান, জেসিবি, জয়ন্ত: পাড়ায় পাড়ায় বাহুবলী এটাই তৃণমূলের সংস্কৃতি?
কিন্তু প্রশ্ন হলো, জয়ন্তর ঘটনা নতুন নয়। বছরের পর বছর জয়ন্ত বাহিনী এই এলাকায় অত্যাচার চালিয়েছে। সবটাই সকলের জানা থাকলে ব্যারাকপুর কমিশনারেটের পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করেনি। হ্যাঁ, জয়ন্ত একাধিকবার গ্রেফতার হয়েছে, একাধিকবার মুক্তিও পেয়েছে আর এলাকায় যথেচ্ছ গুন্ডাগিরি চালিয়েছে। অভিযোগ ছিল শাসকদলের নেতাদের হাত রয়েছে তার মাথায়। মদন মিত্রের সঙ্গে একই মঞ্চে বহুবারই দেখা গেছে জয়ন্তকে। সেই মদন মিত্রকেই ফোনে খুনের হুমকি দেওয়া হচ্ছে? যদি মদন মিত্রের অভিযোগ সত্য হয় তাহলে এই ঘটনার অভিঘাত যে কী মারাত্মক তা সহজেই অনুমেয়। শাসকের ছায়াতে বেড়ে ওঠা দুষ্কৃতী এতই ক্ষমতা ধরে যে সেই শাসককেই হুমকি দেওয়ার ক্ষমতা রাখে! এই যদি বিধায়ক সাংসদের অবস্থা হয় তাহলে আম জনতা এতদিন কোন ত্রাস শিয়রে নিয়ে ঘুমোতে যেতেন? সাধারণ মানুষ কোন আতঙ্কে প্রাণ হাতে নিয়ে আড়িয়াদহে রোজ জীবন কাটান? পুলিশ এই মুহূর্তে যতটা সচেষ্ট দীর্ঘদিন ধরে সেই একই তৎপরতা দেখায়নি কেন?
জয়ন্ত সিং, সৈকত মান্না ওরফে জঙ্ঘা এবং সুদীপ সাহা ওরফে গুড্ডুকে আগেই আড়িয়াদহে মা ও ছেলেকে রাস্তায় ফেলে পেটানোর ঘটনায় পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। জেল হেফাজতেই ছিল তারা। শুক্রবার নতুন মামলায় তাদের ফের গ্রেফতার করা হয়। পরে গ্রেপ্তার করা হয়েছে অভিষেক বর্মন ওরফে ছোটু, সুভাষ বেরা এবং সুমন দে-কেও। আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, এর আগেও পাঁচবার জয়ন্ত গ্রেফতার হয়েছে। তারপরেও আড়িয়াদহে মা ছেলেকে ফেলে পেটানোর সাহস যে রাখে, সে যে গ্রেফতারিতে ডরায় না তা প্রমাণ হয়েই গেছে। মদন মিত্র এর আগে তাঁর সঙ্গে জয়ন্তর সম্পর্ক অস্বীকার করেছিলেন। যদি কোনও সম্পর্ক না থাকে, তাহলে জয়ন্তর গ্রেফতারির পরে কেন খামোখা তাঁকে প্রাণের হুমকি দেওয়া হলো? প্রশ্নগুলো সহজ, আর উত্তরও তো...