India-US trade: ট্রাম্পের বাণিজ্য চুক্তি! কেন সমস্যায় ভারত?
Trump's Trade Deal: ট্রাম্প আগেও একাধিকবার এ কথা বলেছেন। আবার স্পষ্ট করে বলেছেন, ভারত তাদের অভ্যন্তরীণ বাজারে ঢুকতে দিলেই এই চুক্তি করা হবে।
নতুন শুল্ক নীতি আনতে চলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিছু মাস ধরেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে। সেই আলোচনা এখনো চলছেই। ভারত এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি। কেন ট্রাম্পের বাণিজ্য চুক্তিতে ভারতের সমস্যা?
সম্প্রতি আবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ''আমার মনে হয়, আমরা ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করতে চলেছি। এটা এমন এক চুক্তি হবে, যেখানে আমরা (বাণিজ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ের) ভিতরে ঢুকতে পারব। ভারত সাধারণত কাউকে ভিতরে ঢুকতে দেয় না। আমার মনে হয়, এবার হয়তো তারা দেবে। ভারত যদি এমনটা করতে দেয়, তাহলে আমরা অনেক কম শুল্কে চুক্তি করতে পারব।''
ট্রাম্প আগেও একাধিকবার এ কথা বলেছেন। আবার স্পষ্ট করে বলেছেন, ভারত তাদের অভ্যন্তরীণ বাজারে ঢুকতে দিলেই এই চুক্তি করা হবে। ট্রাম্প দাবি করেন, ভারত দেশের বিভিন্ন সংস্থা, কৃষক ও ব্যবসায়ীদের সুরক্ষা দিতে অনেকটাই শুল্ক নেয়। তাঁর কথায়, আমরা চাইছি, ভারত এই শুল্ক কমাক এবং কৃষি, ডেয়ারির ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য ও সংস্থার বাজার আরও খুলে দিক। আর তা না হলে ভারতীয় পণ্যে চড়া শুল্ক বসানো হবে যাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তাদের পণ্য ঢোকার পথ বন্ধ করে দেওয়া যায়।
আরও পড়ুন-ট্রাম্প-নেতানিয়াহু যৌথ হামলা! পরমাণু প্রকল্প বন্ধ রাখবে ইরান?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের মধ্যে এখন যে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে সেখানে ভারতের তরফে প্রতিনিধিদলের নেতা হলেন রাজেশ আগরওয়াল। এর মধ্যেই তাঁর ভারতে ফিরে আসার কথা থাকলেও তা হয়নি কারণ, মার্কিন প্রতিনিধিদের সঙ্গে এখনও আলোচনা শেষ হয়নি।
নিউজউইক-কে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকর বলেছেন, ''খুবই জটিল বাণিজ্য সংক্রান্ত আলোচনা চলছে। আমরা আশা করছি, আলোচনা সফলতা পাবে। কিছু গিভ অ্যান্ড টেক (দেওয়া-নেওয়ার বিষয়) থাকবে।''
ওয়াশিংটন সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের রিচার্ড রসো বিবিসি-কে বলেছেন, "মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চাইছে ভারতের কৃষিক্ষেত্রে যেন তাদের ঢুকতে দেওয়া হয়। কিন্তু ভারত আর্থিক ও রাজনৈতিক কারণে তাঁদের কৃষকদের রক্ষা করতে চায়।''
ওয়াশিংটন চাইছে আপেল, বাদাম, জেনেটিক্যৈালি মডিফায়েড(জিএম) শস্যের উপর ভারত শুল্ক কমিয়ে দিক। এতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের দেশে সব কৃষিপণ্য রপ্তানি করতে পারবে। যুক্তরাষ্ট্র দুধ ও দুধজাত পণ্যের উপরেও শুল্ক কমাতে চাইছে।
ডিডাব্লিউ লিখেছে, তাদের সূত্র জানাচ্ছে, ভারত চায় এখন চুক্তি হোক কিন্তু তাতে দুধ ও দুধজাত পণ্য ও জিএম শস্য বাদ থাক। অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চায়, ভারত শুল্ক কমিয়ে শস্য ঢোকার সুযোগ করে দিক। এর বিনিময়ে দেশটি ভারতীয় পণ্য যাতে আরও বেশি বাণিজ্য করতে পারে তার জন্য শুল্ক কমাবে। ট্রাম্পের বাণিজ্য চুক্তির মূল উদ্দেশ্য এটাই।
ইন্ডিয়ান রেভিনিউ সার্ভিসের প্রাক্তন কর্মকর্তা এবং কাস্টমস অ্যান্ড এক্সাইজ বোর্ডের প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুমিত দত্ত মজুমদার ডিডাব্লিউ-কে বলেছেন, ''কৃষি ক্ষেত্রে শুল্ক কম করা হলে ভারতের কৃষকরা তো অসুবিধেতে পড়বেনই।''
আরও পড়ুন-যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা থেকে মুনাফা লুটছে মাইক্রোসফট, অ্যালফাবেট?
এখানে বলে রাখা দরকার, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষকদের সঙ্গে ভারতের কৃষকদের কোনো ভাবেই তুলনা করা যায় না। কারণ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১ কোটি ৮০ লক্ষ কৃষক এবং ভারতের প্রায় ১৫ কোটি কৃষক। তাঁদের ৮৯ শতাংশ শুধু ছোট ও মাঝারি কৃষক। ফলে তাদের সুরক্ষার কথা ভাবতেই হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সরকার তাদের দেশের কৃষকদের ভর্তুকি দেয়। তার পরিমাণও ভারতের কৃষকদের তুলনায় অনেকটাই বেশি। ফলত ভারতীয় কৃষকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।
দ্য সেক্রেটারিয়েট-এর সম্পাদক এবং দীর্ঘদিন ধরে অর্থনৈতিক সাংবাদিকতা করা জয়ন্ত রায়চৌধুরী ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে ভারত শুল্ক কমাবে। কিন্তু চাল-গমের মতো খাদ্যশস্যের উপর নয়। তেমনই ডেয়ারির ক্ষেত্রে স্পেশালাইজড চিজের মতো কিছু পণ্যে শুল্ক কমবে। কিন্তু বাকি পণ্যে কমার সম্ভাবনা কম।''
কৃষি ও ডেয়ারিতে শুল্ক কমালে, সরকারকে কৃষক-বিরোধী বলে মনে করবেন অনেকেই। কারণ, ভারতে ডেয়ারির সঙ্গে প্রায় আট কোটি মানুষ জড়িত। পেস্তা, হ্যাজেলনাট, অ্যামন্ড-এর মতো পণ্য ভারত অনেকটাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করে। দেশটি দাবি করছে, আপেলের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক কমাতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র সোয়াবিন ও কর্ন-এর মতো পণ্য এ দেশে রপ্তানি করতে চায়। এ ক্ষেত্রে দেশটির ভারতের বাজার দরকার। ওয়াকিবহাল মহল বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের এ সব অন্যায্য দাবি মেনে নিলে ভারতের ক্ষমতাসীন সরকার রাজনৈতিকভাবে সমস্যায় পড়বে। আর সরকার তা চাইছে না। অন্যদিকে আবার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যর সম্পর্ক থাকাটাও জরুরি। এই পরিস্থিতিতে কিছু ক্ষেত্রে শুল্ক কমিয়ে, কিছু ক্ষেত্রে নিজেদের দাবি চাপিয়ে চুক্তি করতে চাইছে ভারত।
উল্লেখ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কনীতি আপাতত ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রেখেছেন ট্রাম্প। সেই সময়সীমা শেষ হবে আগামী ৯ জুলাই। এর মধ্যেই দুই দেশের বাণিজ্যচুক্তি চূড়ান্ত হবে কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। এখন এটাই দেখার শেষ অবধি এই চুক্তি হয় কিনা, হলেও কোনো দাবি মেনে হচ্ছে তাও গুরুত্বপূর্ণ।