কার কত টাকা খসবে ট্যুইটার চালাতে? খরচ তুলতে শুরুতেই যে পরিকল্পনা করছেন এলন মাস্ক
ট্যুইটার কিনে নেওয়ার পর দু'সপ্তাহও কাটেনি। তারই মধ্যে প্রথম চমক দিলেন এলন মাস্ক। উনি ইঙ্গিত দিলেন যে এবার হয়তো টুইট করতে আপনাকে টাকা গুনতে হবে। তবে হ্যাঁ, সাধারণ ব্যবহারকারীরা নন, এই নতুন ব্যবস্থা চালু হতে পারে শুধু মাত্র ব্যবসায়িক এবং সরকারী টুইটার অ্যাকাউন্টের জন্যে।
মাস্ক টুইটার কেনার পর থেকেই গোটা বিশ্বে জল্পনা শুরু হয়ে যায় তার পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে। কিন্তু কারোর কাছে স্পষ্ট কোনো ধারণা ছিল না। কারো মনে হয়েছিলো মাস্ক আগে সংস্থার নতুন সিইও এর নাম ঘোষণা করবেন। কেউ আবার ভাবছিলেন যে প্রথম পদক্ষেপ হবে সংস্থাকে প্রাইভেট ঘোষণা করা। কিন্তু সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে তিনি জানালেন, সরকারি এবং বাণিজ্যিক স্তরে এই সমাজমাধ্যম ব্যবহার করতে কিঞ্চিৎ মুল্য ধার্য হবে। তাঁর দাবি, সব স্তরের মানুষের মধ্যে টুইটারের ব্যবহার বাড়াতে এই পদক্ষেপ সাহায্য করবে। যদিও সরকারি ভাবে এই বিষয়ে ট্যুইটার সংস্থার কোনো বিবৃতি আসেনি, বরং তারা এই বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকারই করে। কিন্তু মাস্ক তাঁর মনের ভাব রাখঢাক না রেখেই জানিয়েছেন।
এপ্রিলেই এই মাইক্রোব্লগিং সংস্থাটি কেনেন মাস্ক। তাঁর বক্তব্য, তিনি এই সংস্থায় অনেক সম্ভাবনা দেখতে পান, কিন্তু যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে টুইটার সেই উচ্চতায় পৌঁছাতে পারছেনা।তিনি আরও বলেছিলেন যে, তিনি সমস্ত মানুষের বাক-স্বাধীনতা রক্ষা করতে চান, সেই কারণই ৪৪ বিলিয়ন ডলার দিয়ে তিনি সমাজমাধ্যমটি কিনে নেন। শুরু থেকেই উদ্দেশ্য তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, এই সংস্থার খোলনলচে তিনি পাল্টে ফেলতে চান, সেই সাথে আনতে চান বহু নতুন ফিচার, যার মধ্যে অন্যতম হল এডিট করার সুযোগ।
আরও পড়ুন-ট্যুইটারের মালিকানা আরও শক্তিশালী করবে এলন মাস্ককে?
এছাড়াও ট্যুইটারের অ্যালগোরিদম তিনি ওপেন সোর্স করে দিতে চান। তিনি মনে করছেন, এই সব পদক্ষেপ টুইটারের ওপর ব্যবহারকারীদের বিশ্বাস আরো দৃঢ় হবে। আরো একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর এলন আলোকপাত করতে চান, তা হলো, স্প্যাম বট বা কম্পিউটার চালিত নকল অ্যাকাউন্টের সমস্যা। মাস্কের দাবি, এই সমস্ত পরিকল্পনা স্প্যাম বটের সমস্যা মেটাতে সাহায্য করবে।
এখানে বলে রাখা প্রয়োজন যে, মূল্য দিয়ে ট্যুইটার ব্যবহার করার বিষয়টি কিছু নতুন নয়। ইতিমধ্যেই ট্যুইটার প্লাস বলে ট্যুইটারের একটি শাখা আছে, যেখানে অর্থের বিনিময়ে টুইটারের বিশেষ সমস্ত ফিচার ব্যবহার করার সুযোগ পান ব্যবহারকারীরা। খুবই কম সংখ্যক দেশে এই সুবিধা আছে। আরো একটি ফিচার গত বছর চালু করার কথা ভেবেছিল ট্যুইটার। সেটা হল ট্যুইটার সুপার ফলোস। এর বৈশিষ্ট্য হল, আপনি আপনার ফলোয়ারদের থেকে নির্দিষ্ট অর্থ দাবি করবেন আপনার সমস্ত টুইট পড়ার বা দেখার বিনিময়ে। যদিও সেই পরিকল্পনা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। তবে এই বিষয়টি নতুন কিছু নয়, ফেসবুক, ইউটিউবে ব্যবহারকারীরা তাদের পছন্দের অ্যাকাউন্টকে সরাসরি অর্থ পাঠাতে পারেন। এছাড়া, মার্কিন মুলুকে এখন মাসে ২.৯৯ ডলার দিয়ে গ্রাহকরা ট্যুইটারের প্রিমিয়াম ভার্সান ব্যবহার করতে পারেন যেখানে গ্রাহকরা ট্যুইট 'আনডু' করা বা বুকমার্ক করার সুবিধে পান। কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডেও এই পরিষেবা ব্যবহার করা যায়। এর পোষাকি নাম ট্যুইটার ব্লু। মাস্ক চান এই পরিষেবার খরচ কমাতে, অ্যাড ব্যানের মতো পরিষেবা আনতে। তাছাড়া সামগ্রিক ট্যুইটারেই মেসেজিং পরিষেবার ক্ষেত্রে এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন নিয়ে আসতে চান মাস্ক।
সাংবাদিক বা এনজিও-গুলিরও কি ট্যুইটার ব্যবহার করতে আলাদা করে অর্থ দিতে হবে? এই নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। আবার একাংশ বলছে, মাস্ক শেয়ার বাজারে ট্যুইটারকে হাজির করতে পারেন। এবার দেখার বিষয় হলো বিশ্বের ধনীতম মানুষ কিভাবে টুইটারকে ফেসবুক, ইউটিউবের মত জনপ্রিয় বা গ্রহণযোগ্য করে তুলতে পারেন। তিনি আবার মূল্যও ধার্য করতে চান। দুটি একসাথে সম্ভব কি করে করবেন তিনি? সময়েই বলবে।