APEC-এর মঞ্চে ট্রাম্প-শি'র সাময়িক চুক্তি! লাভবান হতে পারে ভারত?
Trump–Xi APEC Deal 2025: ভারত এই জোটের সদস্য না হওয়ার প্রধান কারণ দুটি: ভৌগোলিক অবস্থান এবং অর্থনৈতিক নীতি। এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন একটি ‘প্যাসিফিক রিম’ ফোরাম, সেখানে ভারত, মূলত ভারত মহাসাগরের সঙ্গে যুক্ত।
প্রশান্ত মহাসাগরের নিরক্ষীয় অঞ্চলে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যাচ্ছে— এটা জানান দিচ্ছে ‘লা নিনা’ আসছে। এরকম শীতলতার সময়ে (৩১ অক্টোবর–১ নভেম্বর) দক্ষিণ কোরিয়ার গেয়ংজুতে এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন বা APEC-এর ২১টি সদস্য দেশ ‘APEC–2025’ সম্মেলনে মিলিত হয়েছিল। এই জোটের দুই স্তম্ভ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চিনের মধ্যে চলতে থাকা তীব্র বাণিজ্যিক ও ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে, সম্মেলনের বাইরের উষ্ণতা কম থাকলেও, ভিতরকার পরিবেশ কিন্তু বেশ উত্তপ্ত ছিল। সম্মেলন শেষে প্রকাশিত 'গেয়ংজু ঘোষণাপত্র' (Gyeongju Declaration)-এ মুক্ত বাণিজ্যের কথা বলা হলেও, প্রধান দুই শক্তির মধ্যেকার সমঝোতা শুধুমাত্র সাময়িক স্বস্তি দিতে পারল, স্থায়ী সমাধানের বার্তা দিতে পারল না।
এ বছরের শুরু থেকেই ট্রাম্প প্রশাসন ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতিতে ভর করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পণ্যের উপর অতিরিক্ত আমদানি শুল্ক চাপিয়েছে। বাকি দেশগুলিও নিজেদের শক্তি অনুযায়ী মার্কিন পণ্যের উপর পাল্টা আমদানি শুল্ক আরোপ করেছে। বিশ্ব জুড়ে বাণিজ্যের কাঠামোতেও বদল এসেছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে হাতিয়ার করে মার্কিন প্রশাসন বিভিন্ন দেশে অর্থনৈতিক আগ্রাসন বাড়াতে চাইছে। চিনও ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমানে সমানে টক্কর দিচ্ছে।
এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন-এর মূল লক্ষ্য ‘অবাধ ও মুক্ত বাণিজ্য’ হলেও, অর্থনৈতিক যুদ্ধের বাতাবরণে এবারের সম্মেলনের থিম ছিল— “Building a Sustainable Tomorrow: Connect, Innovate, Prosper”। অর্থাৎ ডিজিটাল রূপান্তর, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) বিপ্লব, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা এবং সাপ্লাই চেইনকে স্থিতিস্থাপক করার মতো বিষয়গুলিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে চলতে থাকা সংঘাত এই লক্ষ্য পূরণে এক গভীর সংকট তৈরি করেছে।
চিন-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শীর্ষ বৈঠকের নাটকীয়তা ও ফল
সম্মেলনের ঠিক আগে দুই দেশের মধ্যে নতুন করে শুরু হওয়া ‘শুল্ক যুদ্ধ ২.০’ পরিস্থিতিকে নাটকীয়ভাবে জটিল করে তুলেছিল।চিন সম্প্রতি বিরল খনিজ (যেমন নিওডিমিয়াম, ল্যান্থানাম, ও ডিসপ্রোসিয়াম) রফতানিতে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করার পর, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে চিনের সমস্ত আমদানির উপর অতিরিক্ত ১০০% শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছিলেন। এই চরম উত্তেজনার ফলে ট্রাম্প সরাসরি শি জিনপিংয়ের সঙ্গে তাঁর প্রত্যাশিত বৈঠক বাতিলের হুমকি দিলেও, শেষ পর্যন্ত সম্মেলনের পার্শ্বে দুই নেতার মধ্যে প্রায় পৌনে দুই ঘণ্টা ধরে একটি ফলপ্রসূ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা অবশ্য মনে করছেন, এই আক্রমণাত্মক কৌশল আসলে আলোচনার টেবিলে নিজেদের দর কষাকষির ক্ষমতা বাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা ছিল। এই বৈঠকে, চিন বিরল খনিজ রফতানির উপর নতুন বিধিনিষেধগুলি অন্তত এক বছরের জন্য স্থগিত করতে রাজি হয় এবং বিনিময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চিনের উপর আরোপিত ফেন্টানিল-সংক্রান্ত শুল্ক ২০% থেকে কমিয়ে ১০% করে। এছাড়া চিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন কেনার পরিমাণ বাড়ানোরও প্রতিশ্রুতি দেয়।
আরও পড়ুন
ট্রাম্প-পুতিন-আম্বানি, ত্রয়ীর মধ্যে মিলটা কোথায়?
এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন, তা হলো, চিন সম্প্রতি বিরল খনিজ রফতানিতে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করার পর, এই উপাদানগুলির বিশ্বব্যাপী সরবরাহে গুরুতর অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। উচ্চপ্রযুক্তিযুক্ত পণ্য, বৈদ্যুতিক গাড়ির মোটর, স্মার্টফোন এবং অত্যাধুনিক সামরিক সরঞ্জাম নির্মাণে এই বিরল খনিজগুলি অপরিহার্য। আশ্চর্যের বিষয় হলো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরল খনিজ পদার্থের যে চাহিদা, তার বেশিরভাগটাই এতদিন মেটাত চিন। তাই চিন বিরল খনিজ রফতানি নিয়ন্ত্রণ করায় কঠিন বিপাকে পড়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও। এই জটিলতা থেকে বেরিয়ে আসতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের দিকে সাহায্যের হাত বাড়াতে বাধ্য হয়েছে। এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ওই দেশের অর্থ সচিব বেসেন্ট বলেছেন, “আমরা মিত্র দেশগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। আশা করি, ইউরোপের পাশাপাশি ভারত ও এশিয়ার গণতান্ত্রিক দেশগুলির কাছ থেকে এ ব্যাপারে সহযোগিতা পাব।" APEC সম্মেলনের পরও এই সহযোগিতা বৃদ্ধির কূটনৈতিক তৎপরতা বজায় থাকবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
আঞ্চলিক ও বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রভাব
এই কূটনৈতিক উত্তাপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিন ছাড়া এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশনের বাকি সদস্যদের জন্য বড় আশঙ্কা তৈরি করেছে। দুই পরাশক্তিধর দেশের শুল্ক-পাল্টা শুল্ক ও বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার কারণে ইলেকট্রনিক্স, সেমিকন্ডাক্টর এবং পরিচ্ছন্ন জ্বালানি প্রযুক্তির বিশ্বব্যাপী সরবরাহ ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হতে পারে, যা এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের উৎপাদন এবং রফতানি নির্ভর দেশগুলিতে সরাসরি আঘাত হানবে। সম্মেলনের পর প্রকাশিত 'গেয়ংজু ঘোষণাপত্র'-এ মুক্ত বাণিজ্য এবং বহুপাক্ষিকতার গুরুত্বের কথা বলা হলেও, বিরল খনিজ চুক্তির সাময়িক প্রকৃতি এবং মূল বাণিজ্য সংঘাত নিরসনে কোনো স্থায়ী পদক্ষেপ না আসার ফলে বহুপাক্ষিক ফোরামের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই গেল। এর ফলে, সদস্য দেশগুলি চিন-কেন্দ্রিক বা মার্কিন-নেতৃত্বাধীন— এই দুটি ব্লকে বিভক্ত হয়ে পড়ার আশঙ্কা আরও বেড়েছে। এটি আঞ্চলিক সংহতির পক্ষে ক্ষতিকর।
চিন-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই শুল্ক বৃদ্ধির প্রবণতা বিশ্বের পুঁজিবাজারে তীব্র অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে, যার ফলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমছে এবং দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হতে চলেছে। সরবরাহ শৃঙ্খল বিঘ্নিত হওয়ার কারণে বিশ্বব্যাপী পণ্য উৎপাদনের খরচ বাড়ছে, যার চূড়ান্ত বোঝা এসে পড়ছে সাধারণ ভোক্তাদের উপর। আর এই টানাটানিতে, বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য ব্যবস্থা যদি দুটি প্রধান ব্লকে বিভক্ত হয়ে যায় তাহলে বিশ্বায়নের গতি মারাত্মকভাবে রুদ্ধ হতে পারে, যা নতুন করে নিয়ন্ত্রিত বাণিজ্যের দিন ফিরিয়ে আনবে।
এই পরিস্থিতিতে, ভিয়েতনাম ও চিলির মতো ছোট দেশগুলির জন্য গুরুতর ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও চিনের মতো বড় শক্তিধর রাষ্ট্রগুলি নিজেদের স্বার্থে বহুপাক্ষিকতাকে (Multilateralism) দুর্বল করে দিলে, ছোট দেশগুলির আর্থিক প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হবে, সেইসঙ্গে বিশ্ব বাণিজ্যের নিয়ম নির্ধারণে অংশ নেওয়ার সুযোগ সীমিত হয়ে যেতে পারে।
ভারতের সুযোগ ও বিপদ
চিন-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যে তীব্র বাণিজ্য সংঘাত শুরু হয়েছে তার ঢেউ ইতিমধ্যেই ভারতীয় অর্থনীতিতে আছড়ে পড়েছে। প্রথমত, এই বাণিজ্য যুদ্ধ ভারতের জন্য অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হতে পারে। এ ক্ষেত্রে ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে চিনের বিকল্প উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে উঠে আসতে পারে। ভারত যদি দ্রুত আমলাতান্ত্রিক বাধা দূর করে এবং উন্নত পরিকাঠামো দেয়, তাহলে বহু মার্কিন ও বহুজাতিক সংস্থা তাদের কারখানা ভারতে স্থানান্তরিত করতে পারে, যা সরকারের ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগের জন্য একটি বিশাল সুযোগ। তবে এই সুযোগ কাজে লাগাতে গেলে দেশীয় শিল্পের প্রতিযোগিতা এবং বহুজাতিক সংস্থাগুলির নীতিগত প্রভাব মোকাবিলার প্রস্তুতি রাখতে হবে। দ্বিতীয়ত, ট্রাম্প প্রশাসন চিনের পণ্যের উপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করায় চিনের পণ্য মার্কিন বাজারে অবিশ্বাস্যভাবে ব্যয়বহুল হয়ে উঠবে। এর ফলে, ভারতীয় পণ্য তুলনামূলকভাবে কম শুল্কের কারণে মার্কিন বাজারে অনেক বেশি সস্তা দামে বিক্রির সুযোগ পাবে। কূটনৈতিক স্তরেও ভারত উভয় দেশের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদার হিসেবে বিবেচিত হবে, যা ভারতকে আন্তর্জাতিক ফোরামগুলিতে (যেমন জি 20) আরও শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যাবে। তৃতীয়ত, চিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিরল খনিজ রফতানিকে নিয়ন্ত্রণ করার ফলে তাদের অনেকটা খনিজ পদার্থ উদ্বৃত্ত হবে, যা বিক্রির জন্য চিনকে বিকল্প বাজার খুঁজতে হবে। সেই বাজার ধরতে গিয়ে চিন বিশ্বব্যাপী এই খনিজের দাম সাময়িকভাবে কমাতে পারে। এই সুযোগে ভারতের মতো আমদানিকারক দেশগুলি কম দামে বিরল খনিজ ক্রয় করতে পারলে, সামরিক উৎপাদন-সহ অন্যান্য শিল্পের উৎপাদন ব্যয় অনেকটা কমতে পারে। অন্যদিকে, বিরল খনিজের সরবরাহ চেইন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই সংকট ভারতকে একটি কৌশলগত সুবিধা এনে দিয়েছে। ভারত-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যচুক্তি এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছনোর মুখে, ঠিক তখনই কূটনৈতিক সংঘাতের এই পরিস্থিতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ সচিব বেসেন্টের বন্ধুত্বপূর্ণ বার্তা ভারতের প্রতি কৌশলগত অংশীদারিত্বের গুরুত্বকেই তুলে ধরে।
তবে, এই সংঘাত ভারতের অর্থনীতির জন্য বেশ কিছু গুরুতর ঝুঁকিও বয়ে আনবে। চিন থেকে আমদানি করা ইলেকট্রনিক্স, সেমিকন্ডাক্টর যন্ত্রাংশ, এবং ভারী যন্ত্রপাতির যদি দাম বাড়ে, তখন কিন্তু ভারতের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে, কারণ ভারত এখনও বহু গুরুত্বপূর্ণ শিল্প উপাদান ও যন্ত্রাংশের জন্য চিনের উপর নির্ভরশীল। সর্বোপরি, যদি চিন-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সংঘাত আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতিতে তীব্র হয়, তবে ভূ-রাজনৈতিক ‘স্পিলওভার’ হিসেবে ভারতের সঙ্গে চিনের সীমান্ত উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে, যা ভারতের প্রতিরক্ষা এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
আরও পড়ুন
‘নো কিংস’ বিক্ষোভ! কেন ট্রাম্প বিরোধী আন্দোলনে নেমেছেন লাখ লাখ মানুষ?
ভারত কেন এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশনের সদস্য নয়?
এতো কিছুর পরেও, একটা প্রশ্ন থেকে যায়, তা হলো ভারত বিশ্বের এক শক্তিশালী দেশ হয়েও এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশনে জায়গা পায়নি কেন? এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন গঠিত হয়েছিল মূলত প্রশান্ত মহাসাগরের তীরে অবস্থিত অর্থনীতির (প্যাসিফিক রিম) মধ্যে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করার জন্য। এর মূল লক্ষ্য ছিল সদস্য দেশগুলির মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ উদারীকরণকে উৎসাহিত করা। এছাড়াও সংরক্ষণবাদী নীতিগুলিকে প্রতিরোধ করা। এবং এই অঞ্চলের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক শক্তিকে সুসংহত করা।
ভারত এই জোটের সদস্য না হওয়ার প্রধান কারণ দুটি: ভৌগোলিক অবস্থান এবং অর্থনৈতিক নীতি। এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন একটি ‘প্যাসিফিক রিম’ ফোরাম, সেখানে ভারত, মূলত ভারত মহাসাগরের সঙ্গে যুক্ত। তাই তার অবস্থানকে ‘অতিরিক্ত-আঞ্চলিক’ (Extra-regional) হিসাবে দেখা হয়। পাশাপাশি, ১৯৮৯ সালে এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন গঠনের সময় ভারতের অর্থনীতি উচ্চ শুল্ক ও বিধিনিষেধ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিল। ভারতের তখনকার ‘সংরক্ষণবাদী প্রবণতা’ এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন-এর মুক্ত বাণিজ্য নীতির পরিপন্থী ছিল।
যাই হোক, চিন-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য লড়াই ভারতের জন্য ‘মিশ্র প্রভাব’ নিয়ে আসবে। ভারত এই সংঘাত থেকে লাভবান হবে কি না, তা নির্ভর করছে ভারত সরকার কতটা দ্রুততার সাথে অভ্যন্তরীণ শিল্প নীতি সংস্কার, পরিকাঠামোর উন্নতি এবং বাণিজ্য সহজ করার মাধ্যমে বহুজাতিক সংস্থাগুলিকে আকৃষ্ট করতে পারে তার উপর। অন্যথায়, বিশ্বব্যাপী মন্দা এবং আমদানি খরচের বোঝা ভারতের অর্থনীতিকে চাপে রাখবে।
সব মিলিয়ে, এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন ২০২৫ সম্মেলন এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের অর্থনৈতিক ভাগ্যের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ নির্ণায়ক হয়ে রইল। নেতাদের সামনে এখন দুটি পথ খোলা— হয় কূটনৈতিক প্রজ্ঞা ব্যবহার করে সংঘাত কমানো এবং বিশ্ব অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করার বার্তা দেওয়া, নয়ত বিশ্ব অর্থনীতিকে আরও গভীর সংকটের দিকে ঠেলে দেওয়া। এই মঞ্চে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলিই নির্ধারণ করবে, সামনের দিনগুলিতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মুক্ত বহুপাক্ষিকতার (Free Multilateralism) পথে চলবে, নাকি বিভাজিত বাণিজ্য ব্লকের দিকে মোড় নেবে।
Whatsapp
