বস্ত্রে ৫০ শতাংশ শুল্ক! ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে মাথায় হাত লাখো কারিগরের

50 percent tariff on textiles: মার্কিন কূটনীতিকরা বলছেন, রাশিয়া থেকে ভারতের তেল আমদানির প্রতিক্রিয়া হিসেবে এই শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। আর ভারত এই মুহূর্তে রুশ নীতি বদলাতে চায় না।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে ভারতীয় বস্ত্রের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। ২৭ অগাস্ট থেকে কার্যকর হয়েছে এই নীতি। এই অভূতপূর্ব পদক্ষেপের ফলে বিরাট সংকটে ভারতীয় বস্ত্র উৎপাদক গোষ্ঠীগুলি। অনেকেই উৎপাদন বন্ধ রেখেছেন। মার্কিন কূটনীতিকরা বলছেন, রাশিয়া থেকে ভারতের তেল আমদানির প্রতিক্রিয়া হিসেবে এই শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। আর ভারত এই মুহূর্তে রুশ নীতি বদলাতে চায় না। ফলে যা ভারত-আমেরিকা বাণিজ্য সম্পর্ক আগামীদিনে কতটা খারাপ হবে তা অনুমান করতে পারছে না কেউই।

ভারতের বস্ত্রশিল্প দেশের রপ্তানি অর্থনীতির একটি প্রধান স্তম্ভ। ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে এই খাত থেকে মোট রপ্তানি হয়েছে ৩৬.৬১ বিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে শুধু মার্কিন মুলুকেই রপ্তানি হয়েছে প্রায় ২৮ থেকে ৩৩ শতাংশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের টেক্সটাইল পণ্যের সবচেয়ে বড় বাজার, যেখানে বছরে প্রায় ১০.৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। এই নতুন শুল্কের ফলে রপ্তানির পরিমাণ ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ কমে যেতে পারে, যা আয়ের ক্ষতি হিসেবে ২.৫ থেকে ৩ বিলিয়ন ডলারের সমান।

আরও পড়ুন- ১ কোটি মানুষকে তাড়াতে চান ট্রাম্প! পুশব্যাকই বিশ্ৱ জুড়ে ট্রেন্ড?

তামিলনাড়ুর তিরুপুরে ২০,০০০-এরও বেশি উৎপাদন ইউনিট রয়েছে। এখানকার রপ্তানিকারকরা জানিয়েছেন যে আমেরিকার বড় ক্রেতা যেমন অ্যামাজন, ওয়ালমার্ট, টার্গেট এবং গ্যাপ ইনকর্পোরেটেড অর্ডার বাতিল করেছে। একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিরুপুরের রপ্তানিকারক বলেন, “আমার মার্কিন ক্রেতা ৮০,০০০ ডলারের কটন টি-শার্ট এবং ড্রেসের চালান বাতিল করতে বলছে। তারা অতিরিক্ত খরচ ক্রেতাদের উপর চাপাতে চান না, তাই আমাদের দাম কমাতে বলছে।”

অ্যাপারেল এক্সপোর্ট প্রমোশন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান সুধীর শেখরি জানান, প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য প্রস্তুত বা পাইপলাইনে রয়েছে, কিন্তু ২৭ আগস্টের মধ্যে পৌঁছাতে পারবে না। ক্রেতারা ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ ছাড় দাবি করছে। ক্লোথিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়ার চিফ মেন্টর রাহুল মেহতা বলেন, “এই ৫০ শতাংশ শুল্ক ভারতীয় অ্যাপারেলের দাম বাংলাদেশ বা ভিয়েতনামের তুলনায় ৩০-৩৫ শতাংশ বাড়িয়ে দেবে। কেন কেউ এত দাম দেবে? এটি চরম চাপের পরিস্থিতি। উৎপাদন বন্ধ, কারখানা বন্ধ এবং বেকারত্ব সুনিশ্চিত।”

ট্রাম্প সরকার হাতেবোনা পোশাকের উপর ৬৩.৯ শতাংশ এবং তাঁতের বস্ত্রের উপর ৬০.৩ শতাংশ ধার্য করেছে। উল্লেখ্য ভারতের টেক্সটাইল শিল্প দেশের মোট রপ্তানির ৮.২ শতাংশ এবং বিশ্ব বাণিজ্যে ৩.৯ শতাংশ।

আরও পড়ুন-  ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধ! কীভাবে সংকট কাটাবে ভারত?

এই পরিস্থিতিতে শিল্প সংগঠনগুলি সরকারের দ্বারস্থ হচ্ছে। ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানাইজেশনসের ডিরেক্টর জেনারেল অজয় সাহা বলেন, “সমুদ্রপথে পণ্য পৌঁছাতে ৪০-৪৫ দিন লাগে। শুধুমাত্র এয়ার ফ্রেইটে সময়মতো পৌঁছানো যায়, কিন্তু তাতে খরচ বাড়বে।” কিছু রপ্তানিকারক ছাড় দিয়ে পণ্য খালি করার চেষ্টা করছেন, কিন্তু এই পরিকল্পনা দীর্ঘমেয়াদি নয়।

এই সংকটের ফলে ভারতীয় কোম্পানিগুলির শেয়ার দামও পড়েছে। বর্ধমান টেক্সটাইলসের শেয়ার ১৮ শতাংশ, নীতিন স্পিনার্স ১৬.৭ শতাংশ, পার্ল গ্লোবাল ১২.৬ শতাংশ, অরবিন্দ ফ্যাশনস ৬.৭ শতাংশ এবং ওয়েলস্পান ইন্ডিয়া ৫.৫ শতাংশ কমেছে।

ভারত সরকার এখনও এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি, কিন্তু শিল্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবিলম্বে নতুন বাজার খোঁজায় নজর দিতে হবে। কোনঠাসা বস্ত্রশিল্প, এই অবস্থায় কারিগরদের জীবন জীবিকার সংকট কীভাবে মোকাবিলা করা হবে, সন্দিহান সব পক্ষই।

More Articles