স্কুলশিক্ষিকার নিশানায় 'সংখ্যালঘু' ছাত্র! সাম্প্রদায়িকতার যে ভয়ঙ্কর ছবি তুলে ধরল উত্তরপ্রদেশ...

UP school case: ভাইরাল হওয়া ভিডিওয় ওই শিক্ষিকাকে বেশ কিছু মুসলিম বিরোধী কথাবার্তা বলতে শোনা গিয়েছে বলে অভিযোগ। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। ঘটনাটি নিয়ে তৎপর হয়েছে চাইল্ড রাইটস কমিশনও।

দিন কয়েক আগেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া স্বপ্নদীপের মৃত্যুতে উত্তাল হয়ে উঠেছিল শহর। অভিযোগ উঠেছিল ব়্যাগিংয়ের। তবে এবার ব়্যাগিংয়ের ভয়ঙ্কর রূপ দেখল উত্তরপ্রদেশ। ক্যামেরার সামনে এক স্কুলপড়ুয়াকে মারার নির্দেশ দিলেন এক শিক্ষিকা। কাদের দিলেন সেই নির্দেশ, না তার সহপাঠীদেরই। উত্তরপ্রদেশের মুজফফরনগরের একটি বেসরকারি স্কুলে ঘটল এমনই ঘটনা।

আরও পড়ুন: কেউ পড়ুয়া কেউ প্রাক্তনী! স্বপ্নদীপ কাণ্ডে ধৃতদের পরিচয়…

না, শুধু শিক্ষক মারলেন, পড়ুয়া মার খেল, এত জলবৎ তরল নয় এই সমীকরণ। জানা গিয়েছে ওই পড়ুয়া মুসলিম। ক্লাসে নামতা মুখস্থ বলতে পারেনি ওই পড়ুয়া। তার শাস্তি হিসেবে কান ধরে দাঁড় করিয়ে দেওয়া নয়, বকা নয়, বরং ক্লাসের অন্যান্য পড়ুয়াদেক তাকে আঘাত করার নির্দেশ দিলেন পড়ুয়া। এ-ও যদি ব়্যাগিং না হয়, তাহলে ব়্যাগিং কাকে বলবেন।

স্বাভাবিক ভাবেই সংখ্যালঘুকে কোণঠাসা করার বিষয়টি গড়িয়েছে সাম্প্রদায়িক হিংসার দিকে। রীতিমতো ভিডিও করে ক্লাসের হিন্দু পড়ুয়াদের উদ্দেশে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে ওই মুসলিম পড়ুয়াকে ধরে মারধর করে তারা। দেখা গিয়েছে, ওই পড়ুয়ার উদ্দেশে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষমূলক শব্দ ব্যবহার করেছেন ওই শিক্ষিকা। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই অভিযোগ দায়ের হয়েছে পুলিশ।

ভাইরাল হওয়া ভিডিওয় ওই শিক্ষিকাকে বেশ কিছু মুসলিম বিরোধী কথাবার্তা বলতে শোনা গিয়েছে বলে অভিযোগ। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। ঘটনাটি নিয়ে তৎপর হয়েছে চাইল্ড রাইটস কমিশনও। ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। যদিও স্কুলের বিরুদ্ধে তেমন কোনও অভিযোগ জানাননি ছেলেটির পরিবার। স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে তাঁদের কথা হয়েছে বলেই দাবি।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে আর বাড়ি ফেরা হয়নি প্রথমবর্ষের পড়ুয়া স্বপ্নদীপকে। তবে এই পড়ুয়ার ভবিষ্যৎ যাতে তেমন না হয়, তার জন্য একটি চরম সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিশুটির পরিবার। তাঁরা জানিয়েছেন, ছেলেটিকে আর ওই স্কুলে পাঠাবেন না তাঁরা। তাঁদের মতে, যেভাবে নিষ্পাপ শিশুর মনে বিদ্বেষ-বিষ রোপণ করেছেন ওই শিক্ষিকা, তার ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো পবিত্র জায়গা আদতে কলুষিত হয়েছে। দেশের পক্ষে এর চেয়ে খারাপ বোধহয় আর কিছুই হতে পারে না।

ঘটনার ভিডিওটি ভাইরাল হতেই ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন বিরোধীরা। তাঁদের মতে বিজেপি দেশ জুড়ে যে বিদ্বেষ বিষ ছড়িয়ে চলেছে ক্রমাগত, তারই ফল এই ঘটনা। রাহুল গান্ধী টুইটার তথা অধুনা এক্স-এ জানান, শিশুরা দেশের ভবিষ্যৎ। তাদের আমাদের সকলে নিয়ে চলতে শেখাতে হবে, ভালোবাসার মন্ত্র কানে দিতে হবে। তার বদলে হিন্দুরাষ্ট্রে যা শিখছে শিশুরা, তা বোধহয় কাঙ্ক্ষিত নয় কোনও মতেই।

আরও পড়ুন:দলিত নির্যাতন: প্রেমিকের ‘সাহসী’ সিদ্ধান্ত, যে ভাবে মাশুল দিল প্রেমিকের বোন

এই ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়াতে পারে, এমন আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছে না স্থানীয় প্রশাসন। সে ব্যাপারে গোড়া থেকেই সতর্ক রয়েছে তারা। আদতে সংখ্যালঘু, দুর্বলকে কোণঠাসা করার যে দীর্ঘকালীন সংস্কৃতি চলে আসছে পৃথিবী জুড়ে, তার নিশানায় কখনও মুসলিম, কখনও দলিত, কখনও কৃষ্ণাঙ্গ তো কখনও মফসসল থেকে আসা প্রথম বর্ষের পড়ুয়া। সামগ্রিক এই ব়্যাগিংয়ের শিকড়কে আদৌ কোনওদিন সংস্কৃতি থেকে উপড়ে ফেলা যাবে কি! প্রশ্নগুলো সহজ আর উত্তরও জানা।

 

 

More Articles