পৃথিবীর উচ্চতম সেতুর উপর দিয়ে বন্দে ভারত! মেঘের উপর দিয়ে এবার যে গন্তব্যে যাবে ট্রেন
Jammu-Srinagar Vande Bharat Train: ১,৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি এই খিলান সেতুটি প্যারিসের আইফেল টাওয়ারের চেয়েও ৩৫ মিটার লম্বা।
কাশ্মীর আর ভয়ের ডাকনাম নয়। কাশ্মীর আর সন্ত্রাসের আখড়া নয়। অন্তত এমনটাই প্রচার করতে চাইছে কেন্দ্র। সেই ৩৭০ ধারা বাতিলের সময় থেকেই কাশ্মীরকে বাকি রাজ্যের মতোই উন্নয়নে মুড়ে দেওয়ার তোড়জোড় শুরু। এবার দেশের সাম্প্রতিকতম আধুনিক রেল পরিষেবাও পৌঁছে যাচ্ছে কাশ্মীরে! কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব রবিবারই ঘোষণা করেছেন, বন্দে ভারত ট্রেন চলবে জম্মু কাশ্মীরের মধ্যে দিয়ে। উধমপুর-শ্রীনগর-বারামুল্লা রেল লিঙ্ক প্রকল্প (ইউএসবিআরএল) সম্পূর্ণরূপে চালু হয়ে গেলেই জম্মু ও শ্রীনগরের মধ্যে একটি বন্দে ভারত মেট্রো ট্রেন চলবে। এখানেই শেষ না, চলতি বছরের ডিসেম্বর বা ২০২৪ সালের জানুয়ারির মধ্যে রেললাইনের কাজ শেষ হয়ে গেলেই বুদগামে একটি বন্দে ভারত রক্ষণাবেক্ষণ কেন্দ্রও স্থাপন করা হবে।
রিয়াসি জেলায় চেনাব নদীর উপর পৃথিবীর উচ্চতম রেলসেতুর কাজ চলছে। এই রেললাইনটির কাজ সম্পূর্ণ হয়ে গেলে জম্মু এবং শ্রীনগরের মধ্যে ভ্রমণের সময় কমে দাঁড়াবে ৩.৩০ ঘণ্টা। বন্দে মেট্রো ট্রেনটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের দু'টি রাজধানী শহরের মধ্যেও চলবে। অর্থাৎ একজন সকালে শ্রীনগর থেকে জম্মুর উদ্দেশ্যে রওনা হলে সন্ধ্যার মধ্যে বাড়িতে ফিরবেন এবং উল্টোপথেও তাই। সাধারণ মানুষ তো বটেই পর্যটকদের কাছে বিশেষ আকর্ষণ হতে চলেছে এই ট্রেন, এর একমাত্র কারণ পৃথিবীর উচ্চতম রেলসেতুটি। এই প্রথম মেঘের উপর দিয়ে ছুটবে বন্দে ভারত ট্রেন!
বানিহাল-বারামুল্লা রেল পথে চারটি কার্গো টার্মিনাল নির্মাণের ঘোষণাও করা হয়েছে। তিনটি টার্মিনালের জন্য জমিও ইতিমধ্যে ঠিক করা হয়েছে। এই কার্গো টার্মিনালগুলির সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে, কাশ্মীর থেকে দেশের অন্যত্র আপেল এবং অন্যান্য পণ্য পরিবহনের কাজটি অনেকাংশে সহজ হয়ে যাবে। রেলমন্ত্রীর দাবি, এই টার্মিনালে মালাপত্র আনা হবে, প্যাক করা হবে এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কোচে অল্প সময়ের মধ্যে আর কম খরচে সেই মাল গন্তব্যে নিয়েও যাওয়া যাবে।
আরও পড়ুন- মাত্র ৪ ঘণ্টায় দেশের জনপ্রিয়তম সৈকতে পাড়ি! বন্দে ভারত ট্রেন ছুটবে এবার যে গন্তব্যে
অত্যন্ত দুর্গম পার্বত্য ভূখণ্ডে নির্মিত এই রেলপথ এবং অন্যান্য পরিকাঠামোর আর পাঁচটা রেলপথের মতো সহজে রক্ষণাবেক্ষণ করা সম্ভব নয়। সেই কারণে এমন পাহাড়ি এলাকায় সুষ্ঠুভাবে রেলপথের রক্ষণাবেক্ষণ করতে জম্মুতে রেল কর্মীদের জন্য একটি বিশেষ প্রশিক্ষণ আকাদেমিও স্থাপন করা হচ্ছে। চেনাবের সর্বোচ্চ রেলসেতুতে রেল লাইন স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। এখন বিদ্যুতায়নের কাজ শুরু হতে চলেছে। কেন্দ্রের লক্ষ্য, জম্মু-শ্রীনগর রেল সংযোগটি ডিসেম্বর ২০২৩ সালের ডিসেম্বর বা ২০২৪ সালের জানুয়ারির মধ্যেই শেষ করা হবে।
রিয়াসি জেলার বাক্কাল এবং কৌরির মধ্যে চেনাব নদীর ওপরে নদীর তল থেকে ৩৫৯ মিটার (১,১৭৮ ফুট) উচ্চতায় নির্মিত হয়েছে এই রেলসেতু। ১,৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি এই খিলান সেতুটি প্যারিসের আইফেল টাওয়ারের চেয়েও ৩৫ মিটার লম্বা। কাটরা এবং বানিহাল রেললাইনের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ এই সেতুটি। ৩৫,০০০ কোটি টাকার উধমপুর-শ্রীনগর-বারামুল্লা রেল লিঙ্ক প্রকল্প বা USBRL প্রকল্পের অংশই এই সেতুটি।
মোটর ট্রলি এবং বোলেরো কাস্টমাইজড রেল অপারেশনের আরও দু'টি পরীক্ষা চলবে এই সেতুতে। এখনও পর্যন্ত, প্রচণ্ড গতিবেগের বায়ু, অত্যধিক তাপ, ভূমিকম্প-প্রবণ এলাকা এবং ক্রমবর্ধমান জলের স্তরের হাইড্রোলজিক্যাল প্রভাবের পরীক্ষা করা হয়েছে।
নদীর একপাশে এই সেতুর ভিতটি প্রায় একটি ফুটবল মাঠের অর্ধেকের সমান এবং এটি নির্মাণে প্রায় ২৮ হাজার টন স্টিল ব্যবহার করা হয়েছে। এই সেতু ৮ রিখটার স্কেলে ভূমিকম্প সহ্য করার পক্ষে যথেষ্ট শক্তিশালী। ১৮,০০০টি বিশেষ অ্যাঙ্করিং ডিভিয়েট বার যুক্ত একটি বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে যা উপরের কাঠামো থেকে ভিতকে বিচ্ছিন্ন করছে। ফলত, কোনও ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে, সম্পূর্ণ চাপই পড়বে ভিতের উপর। সেতুর কোনও ক্ষতি হবে না।