রাজার মুকুট রাজার সাজ, রাঁচিতে রাজাই পরলেন আজ

Virat Kohli’s Comeback in Ranchi: পরিসংখ্যান বলছে, এটি বিরাটের ৫২তম ওয়ান ডে শতরান। ওয়ান ডে ক্রিকেটে শতরানের বিচারে তিনিই সর্বোচ্চ স্থানে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন সচিন তেন্ডুলকার (৪৯)।

SS

মার্কো জানসেনের রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে আসা গুড লেংথের বল থার্ড ম্যান অঞ্চলে ড্যাব করে সেই কাঙ্খিত চার রান পেতেই উচ্ছসিত হয়ে উঠল রাঁচির জনতা। এই মাঠ এই মুহূর্তের সাক্ষী হয়েছে আরও অনেকবার। তথ্য এবং পরিসংখ্যান বলছে এর আগে আরও চারবার এই মাঠে ওয়ান ডে ক্রিকেটে ব্যাট হাতে নেমেছেন বিরাট কোহলি। ২০১৪ সালে শ্রীলংকার বিরুদ্ধে এবং ২০১৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দু'বার তাঁকে তিন অঙ্কের স্কোরে পৌঁছে ব্যাট তুলতে দেখেছে মহেন্দ্র সিং ধোনির শহর। সাম্প্রতিক দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচ নিয়ে এটি তৃতীয়বার। সহজে বললে রাঁচির দর্শককে কখনও খালি হাতে ফেরাননি তাদের ‘কিং'। রাঁচির দর্শকও তাঁদের রাজাকে ভালোবাসা ফিরিয়ে দিয়েছে দরাজহস্তে। উন্মত্ত ভক্তের ভালোবাসার জানান পাওয়া গিয়েছিল যখন শতরান পূর্ণ হওয়ার পরেই যখন এক দর্শক স্ট্যান্ড থেকে লাফিয়ে মাঠে চলে আসেন একবার তাকে ছুঁয়ে দেখার জন্য। এটা যদি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশের চূড়ান্ত নিদর্শন হয় তবে শতরানের পর সম্মিলিত উচ্ছ্বাস এবং গর্জনও সেই বহিঃপ্রকাশের কিছু কম প্রমাণ নয়।

তবে এই বছর এবং এই ইনিংসের পরিপ্রেক্ষিত অনেকটাই আলাদা। ২০২৩ সালে একটা স্বপ্নের ফর্মে থেকে বিশ্বকাপ খেলেছেন, ২০২৫ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও পাকিস্তান ম্যাচে শতরান এবং অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে ৮৪ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেছেন। তারপরেও যখন পারথ এবং অ্যাডিলেডে দু'টো শূন্য রানের ইনিংস এল তখন রীতিমতো সংশয় ছিল তাঁর ২০২৭ বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ নিয়ে। অনেক বিশেষজ্ঞ এমনও মতামত দিয়েছিলেন যে যেহেতু এখন মাত্র একটাই ফরম্যাট খেলেন বিরাট, তাই ম্যাচ প্র্যাকটিস রাখতে তাঁকে খেলতে হবে ভারতের ঘরোয়া ওয়ান ডে টুর্নামেন্ট বিজয় হাজারে ট্রফি। তাতে আরও অন্য মাত্রা যোগ করেছে টেস্ট ক্রিকেটের ব্যর্থতা এবং অবসর। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে একটা শতরান ছাড়া নিজের টেস্ট সিরিজে তেমন ছাপ ফেলতে পারেননি বিরাট। নিজের প্রাইম ফর্মের ছায়াতে না থাকা বিরাট, মাথার উপর মাঠ এবং মাঠের বাইরের চাপ থাকা বিরাট যে চাপের মুখে নতিস্বীকার করতে অভ্যস্ত নন এবং সেটা তাঁর সিলেবাসে নেই তা তিনি আবার জানান দিলেন রাঁচির ইনিংস দিয়ে।

আরও পড়ুন

খেলিছ এ বিশ্ব লয়ে বিরাট শিশু আনমনে

দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক মার্করাম যখন ইনিংসের শুরুতে বিরাটের সিঙ্গেল আটকে দেওয়ার লক্ষ্যে মিড-অফ, মিড-অন এবং কভার সামনে নিয়ে এসেছেন তখন বিরাট নিলেন 'এরিয়াল রুট'। প্রথম বলেই নান্দ্রে বার্গারকে মারা বাউন্ডারি ছাড়াও নিজের ইনিংসের প্রথম ২৫ বলে বিরাট মেরেছেন দু'টি ছক্কা। বার্গার এবং ওটিনেল বার্টম্যানকে মারা দু'টি ছক্কা ছিল লং অফের উপর দিয়ে। অর্থাৎ ইনিংসের শুরুতে রান করার জন্য সোজা ব্যাটে খেলেছেন তিনি।

এছাড়াও যখন রোহিত শর্মার সঙ্গে তার পার্টনারশিপ ভেঙেছে এবং কম রানে ফিরে গিয়েছেন রুতুরাজ গায়কোয়াড় এবং ওয়াশিংটন সুন্দর, সেই সময় বিরাট অতিরিক্ত আগ্রাসন দেখাতে না গিয়ে সংযতভাবে পার্টনারশশিপ করেন লোকেশ রাহুলের সঙ্গে। এরপরে শতরান পার করতেই প্রেনেলেন সুব্রয়েনের বিপক্ষে আগ্রাসী ভঙ্গিমায় ব্যাট করেন সেঞ্চুরির পর।

পরিসংখ্যান বলছে, এটি বিরাটের ৫২তম ওয়ান ডে শতরান। ওয়ান ডে ক্রিকেটে শতরানের বিচারে তিনিই সর্বোচ্চ স্থানে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন সচিন তেন্ডুলকার (৪৯)। তিন ফরম্যাট মিলিয়ে আপাতত শতরানের বিচারে মাস্টার ব্লাস্টারের থেকে বিরাট পিছিয়ে ১৭টি শতরানে। তবে এইসব পরিসংখ্যানের কচকচানির বাইরে গিয়েও যেটা গুরুত্বপূর্ণ, একটা সিমিং পরিস্থিতিতে ওয়ান ডে খেলার আদর্শ পর্যায়ে যে বিরাট রয়েছেন তার প্রমাণ পাওয়া।

আরও পড়ুন

বিরাট কোহলি: খুঁজে ফেরা এক অনন্য লড়াইক্ষ্যাপাকে

২০২৭ বিশ্বকাপের আগে গৌতম গম্ভীরের ভারতীয় দল অবশ্যই স্বস্তিতে থাকবে এই শতরানের পর। প্রধানত অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বাউন্সি উইকেটে নিজের শেষ ইনিংসে ৭৪ এবং সম্প্রতি রাঁচির এই শতরানে অন্তত তিন নম্বর স্থানের জায়গা নিয়ে আর সংশয় থাকল না। গম্ভীর এবার নিঃসন্দেহে ভাবতে পারেন চার নম্বর জায়গা নিয়ে। শ্রেয়স আইয়ার সুস্থ থাকলে অবশ্যই তিনি প্রথম পছন্দ হবেন। তিনি না থাকলে কে? রুতুরাজ? ঋষভ পন্থ না তিলক ভার্মা? কাকে তৈরি করবেন এই ব্যাকআপ হিসেবে? এটিই একমাত্র চিন্তার ভাঁজ ফেলতে পারে গম্ভীরের কপালে।

আর বিরাট? তিনি থাকবেন স্বমহিমায়। যেমনটা ছিলেন বিগত সতেরো বছর। সেইভাবেই থাকবেন আরও একটা বিশ্বকাপে। হয়ত আরও একটা ২০২৩-এর মতো পারফরমেন্স এবার ট্রফি এবং ঠোঁটের দূরত্ব ঘোচাতে পারবে। উত্তর দেবে একমাত্র সময়।

More Articles