এসএসসি দুর্নীতি: প্রকাশ্যে ঘুষদাতারা, টাকা নিল কারা?

SSC SCAM: অযোগ্য হয়েও যাঁরা অবৈধভাবে শিক্ষক পদে নিয়োগ পেয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে রাজনৈতিক যোগাযোগ থাকা অনেকেই রয়েছেন।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ‘দাগি প্রার্থীদের’ তালিকা প্রকাশ করেছে পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)। শনিবার প্রকাশিত এই তালিকায় ১৮০৬ জনের নাম উঠে এসেছে, যার মধ্যে রয়েছেন শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিরোধী দল বিজেপি-ঘনিষ্ঠ একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তি ও তাঁদের আত্মীয়রা।

প্রথমে ১৮০৪ জনের নাম প্রকাশ করা হয়। পরে সেই তালিকায় আরও দু’জনকে যুক্ত করে মোট সংখ্যা দাঁড়ায় ১৮০৬। তালিকায় স্পষ্ট হয়েছে অযোগ্য হয়েও যাঁরা অবৈধভাবে শিক্ষক পদে নিয়োগ পেয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে রাজনৈতিক যোগাযোগ থাকা অনেকেই রয়েছেন।

আরও পড়ুন- শিক্ষার মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়া আঘাত! বিচারক থেকে মন্ত্রী— দায় কার?

তৃণমূল নেতাদের নাম তালিকায়

তালিকার ১২৬৯ নম্বরে রয়েছেন উত্তর ২৪ পরগনার পানিহাটির তৃণমূল বিধায়ক নির্মল ঘোষের পুত্রবধূ শম্পা ঘোষ। ১৩৬০ নম্বরে নাম রয়েছে নিউ ব্যারাকপুর পুরসভার উপ পুরপ্রধান স্বপ্না বিশ্বাসের মেয়ে শতাব্দী বিশ্বাসের। শতাব্দী মাসুন্দা বয়েজ হাইস্কুলের শিক্ষিকা ছিলেন, যেখানে পরিচালন সমিতির সভাপতি তাঁর মা স্বপ্না।

এছাড়াও উত্তর দিনাজপুরের এক দাপুটে তৃণমূল বিধায়কের মেয়ে, তপনের এক অঞ্চল সভাপতির স্ত্রী, দক্ষিণ দিনাজপুরের এক পুরপ্রতিনিধি, ও মালদহের কালিয়াচকের এক জেলা পরিষদ সদস্যের স্বামী সবাই রয়েছেন এই বিতর্কিত তালিকায়।

আরও পড়ুন- শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতিই নীতি! এক দশকে ধ্বংস হল সরকারি চাকরির স্বপ্ন

বিজেপি-ঘনিষ্ঠরাও আছেন

দলবদলের রাজনীতিতে জড়িয়ে থাকা একাধিক নেতার নামও এই তালিকায়। উত্তর দিনাজপুর জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি কবিতা বর্মণ (তালিকায় ৫৮৯ নম্বরে) বর্তমানে বিজেপি ঘনিষ্ঠ হলেও ২০১৮-২০২৩ পর্যন্ত ছিলেন উত্তর দিনাজপুর তৃণমূল জেলা পরিষদের সভাধিপতি। মেখলিগঞ্জের এক প্রাক্তন যুব তৃণমূল নেতা, বর্তমানে বিজেপির সঙ্গে যুক্ত, তাঁর নামও রয়েছে তালিকায়।

এই তালিকায় কলকাতার উপকণ্ঠ রাজারহাট থেকে শুরু করে মুর্শিদাবাদ, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, মালদহ, উত্তর দিনাজপুর একাধিক জেলা থেকে উঠে এসেছে ‘অযোগ্য প্রার্থী’র নাম।

আরও পড়ুন- সরকারি দুর্নীতিই যোগ্য প্রার্থীদের বঞ্চিত হওয়ার একমাত্র কারণ

প্রথম ধাক্কা: অঙ্কিতা অধিকারী

এই দুর্নীতির সামনে আসার পর প্রথম যে চাকরি বাতিল হয়, তিনি হলেন প্রাক্তন তৃণমূল মন্ত্রী পরেশচন্দ্র অধিকারীর মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারী। বর্তমানে তিনিও দলে গুরুত্বপূর্ণ পদে, তৃণমূলের জেলা সম্পাদিকা। তাঁর নামও রয়েছে এসএসসি-র প্রকাশিত 'দাগি' তালিকায়।

তালিকা অসম্পূর্ণ, দাবি বিরোধীদের

তবে এখানেই থেমে নেই বিতর্ক। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি অধীর চৌধুরী উভয়েই দাবি করেছেন, এই তালিকা সম্পূর্ণ নয়। অধীর চৌধুরীর মতে, ‘‘এটা কেবল টিপ অফ দ্য আইসবার্গ।’’ অন্যদিকে শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগ, ‘‘অযোগ্যর সংখ্যা ২১০০-র বেশি।’’ অর্থাৎ, তালিকার বাইরেও অনেক অযোগ্য প্রার্থী রয়ে গেছেন বলেই দাবি বিরোধীদের।

আরও পড়ুন- চাকরি গেছে লাখ লাখ শিক্ষকের! কেন এমন বেহাল দশা ভারতের শিক্ষাব‍্যবস্থার

‘যোগ্য’দের ক্ষোভ: কেন ফের পরীক্ষা?

একদিকে যখন অযোগ্যদের নাম তালিকায় উঠে এসেছে, অন্যদিকে ‘যোগ্য শিক্ষক শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ’ প্রশ্ন তুলছে ‘‘যখন কারা অযোগ্য পরিষ্কার হয়ে গেছে, তাহলে যোগ্যদের কেন আবার পরীক্ষায় বসতে হবে?’’ সংগঠনের তরফে মুখ্যমন্ত্রী, বিরোধী দলনেতা ও বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকিসহ একাধিক জনপ্রতিনিধিকে চিঠি দিয়ে এই বিষয়ে হস্তক্ষেপের আহ্বান জানানো হয়েছে।

তাঁদের দাবি, বিধানসভায় ‘গুরুত্ব’ দিয়ে তাঁদের সমস্যার সমাধান করা হোক এবং চাকরি ফিরিয়ে দেওয়া হোক।

ঘুষ নিলেন যারা, তাঁদের নাম কবে প্রকাশ হবে?

এই তালিকা ঘিরে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠছে যাঁরা টাকা দিয়ে চাকরি পেয়েছেন, তাঁদের নাম প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু তাঁরা কাকে ঘুষ দিয়েছেন? রাজ্য সরকারের কোনো আধিকারিক? কোনো এসএসসি কর্মকর্তা? নাকি কোনো রাজনৈতিক নেতাকে? সেইসমস্ত মধ্যস্থতাকারীদের নাম কবে প্রকাশ পাবে?

More Articles