দেশের সবচেয়ে গরিব মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়! জেনে নিন তাঁর 'সামান্য' সম্পত্তির পরিমাণ
CM Mamata Banerjee : মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরও তাঁর সততা ও দারিদ্র্যের রূপ কখনও চলে যায়নি, এমন দাবিই করেছেন তৃণমূলের কর্মী, সমর্থকেরা।
কালীঘাটে বাড়ি তাঁর। টালির ছাদের ঘরে কষ্ট করে বড়ো হওয়া। প্রবল জীবন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে রাজনীতির মঞ্চে আসা। সেখান থেকে নিজের দল প্রতিষ্ঠা, তারপর পশ্চিমবঙ্গের মসনদে বসা। খুব ছোট্ট করে বললে, এটাই হল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবন। তাঁর দল তৃণমূল কংগ্রেসের তরফ থেকে এমন ছবিই বারবার তুলে ধরা হয়েছে। তিনি ঠিক কতটা ‘গরীব’, সেই কথাটি বোঝানোর জন্য নানা উদাহরণ তুলে ধরেছেন বিভিন্ন সময়। ঘাসফুলের পাশাপাশি তাঁতের শাড়ি, হাওয়াই চটিও তাঁর ‘প্রতীক’ হয়ে গিয়েছে এখন। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরও তাঁর এই সততা ও দারিদ্র্যের রূপ কখনও চলে যায়নি, এমন দাবিই বারবার করে এসেছেন তৃণমূলের দলীয় কর্মী, সমর্থকেরা।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই ইমেজে বারবার দাগ বসাতে চেয়েছে বিরোধী দলগুলি। তাদের দোসর হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের আমলে উঠে আসা বিভিন্ন দুর্নীতি। কয়লা পাচার, গরু পাচার, শিক্ষক দুর্নীতি, নারদা কেলেঙ্কারি, সারদা চিটফান্ড – বিরোধীদের ত্রিশূলের ফলা বারবার ধেয়ে এসেছে শাসকদলের দিকে। সেখানেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্যতম রাজনৈতিক হাতিয়ার ছিল তাঁর সততার ইমেজ। বিধানসভা ভোটের সময় ঘোষণাও করেছিলেন, সমস্ত কেন্দ্রে আসলে প্রার্থী তিনিই।
আরও পড়ুন : এবার অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের মুখেও মমতা-স্তুতি!পালটে গেলেন বিচারপতি?
কিন্তু দেশের সমস্ত মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই যে দরিদ্রতম, সেই প্রমাণই দিল নির্বাচন কমিশনের তথ্য। উল্লেখ্য, যে কোনও নির্বাচনের আগে প্রার্থীদের নিজেদের মোট সম্পত্তির হিসেব দিতে হয়। সেই সমস্ত তথ্য রাখা থাকে নির্বাচন কমিশনের কাছে। কেন নেওয়া হয়? যিনি প্রার্থী হিসেবে দাঁড়াচ্ছেন, তিনি একজন জন প্রতিনিধি। কয়েক হাজার বা কয়েক লাখ মানুষের হয়ে তিনি কথা বলবেন। সেই ব্যক্তির কত টাকা, কোনও অপরাধ করেছেন কিনা, শিক্ষাগত যোগ্যতা কী সেটা জানার সমস্ত অধিকার মানুষের আছে। ভারতের মতো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সেটাই দস্তুর।
সেই পরিসংখ্যানের ভিত্তিতেই দেখা যাচ্ছে, দেশের অন্যান্য মুখ্যমন্ত্রীদের তুলনায় সবচেয়ে ‘গরীব’ হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেবল তাই নয়, অন্যান্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা প্রত্যেকেরই সম্পত্তির পরিমাণ কোটির অঙ্ক ছাড়িয়েছে। সেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ১৭ লক্ষ টাকা। সবচেয়ে ধনী মুখ্যমন্ত্রী অন্ধ্রপ্রদেশের জগনমোহন রেড্ডি, যার সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ৫১০ কোটি টাকা!
আরও পড়ুন : মমতা-মন্তব্যে ফের বিতর্কিত সিঙ্গুর! এক নজরে ফিরে দেখা সেই ইতিহাস
অরুণাচল, আসাম, মরাস্ত্র, গোয়া, ত্রিপুরা প্রত্যেকটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সম্পত্তিই কোটির অঙ্ক ছাড়িয়েছে। উত্তর প্রদেশের যোগী আদিত্যনাথ প্রায় দেড় কোটি, দিল্লির অরবিন্দ কেজরিওয়াল প্রায় সাড়ে তিন কোটি, কেরালার পিনারাই বিজয়ন প্রায় ১.২০ কোটিতে দাঁড়িয়ে আছেন। সম্প্রতি নির্বাচনে জয়লাভ করা গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেলের সম্পত্তি প্রায় ৮.২২ কোটি টাকা।
অবশ্য এটাই প্রথম নয়। ২০১৮ সালে অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মসের (ADR) রিপোর্ট অনুযায়ী, ওই বছরও দেশের দরিদ্রতম মুখ্যমন্ত্রীর তকমা পেয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিরোধীদের অবশ্য দাবি, আসল তথ্য লুকিয়ে রাখা হয়েছে। কেঁচো খুঁড়লেই বেরিয়ে পড়বে কেউটে। সে সব অবশ্য পরের কথা। আপাতত এই তথ্যকে আঁকড়ে ধরেই দুর্নীতির বাজারে একটু অক্সিজেন পাওয়ার আশায় তৃণমূল কংগ্রেস।