ডিজিটাল কন্ডোম! অনলাইনে বিপদ থেকে বাঁচার কী এই নয়া অস্ত্র?
Digital Condom: বিভিন্ন গবেষণায় জানা গেছে, ৪০% এরও বেশি ব্যক্তি সম্মতিহীন রেকর্ডিংয়ের অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছে।
ডিজিটাল কন্ডোম। নিরাপদ যৌনতা নিশ্চিত করা ও অবাঞ্ছিত যৌন রোগ এবং গর্ভধারণ থেকে কন্ডোম কিছুটা নিরাপত্তা জোগায় ঠিকই। কিন্তু ডিজিটাল কন্ডোম? ডিজিটাল গোপনীয়তা নিয়ে ক্রমেই বিশ্বে উদ্বেগ বাড়ছে। এবার সাধারণ মানুষদের নিরাপত্তা জোগাতে ডিজিটাল কন্ডোমের আবির্ভাব! আসলে এটি একটি নতুন অ্যাপ। ধরা যাক, কারও সঙ্গে কথা বলছেন আপনি। সে আপনার অনুমতি ছাড়াই আপনার সেই কথোপকথন রেকর্ড করে রাখল। এমন অসম্মতিমূলক রেকর্ডিং থেকে ব্যবহারকারীদের সুরক্ষিত করাই এই 'ডিজিটাল কন্ডোম'-এর লক্ষ্য।
জার্মানির একটি যৌন স্বাস্থ্য বিষয়ক ব্র্যান্ড এই অ্যাপ তৈরি করেছে। মানুষের অন্তরঙ্গ মুহূর্তগুলিকে নিরাপদে রাখতে চায় এই অ্যাপ। অ্যাপটি ব্লুটুথ প্রযুক্তি ব্যবহার করে কাছাকাছি থাকা অন্য ডিভাইসগুলিতে রেকর্ডিং ফাংশনগুলিকে ব্লক করে দেয়, আপনার গোপনীয়তা রক্ষা করে৷ এই অ্যাপের ডেভেলপাররা বলছেন, "এটি আপনার ফোনে ক্যামেরা এবং মাইক্রোফোন ব্লক করে দেয়। ফলে আপনার সম্মতি ছাড়াই ফটো, ফিল্ম বা রেকর্ডিং করা সম্ভব হয় না।" এই অ্যাপে সামান্য সোয়াইপ করলে এই 'ব্যারিয়ার'-টি সক্রিয় হয়ে যায়। ফলে আপনার ব্যক্তিগত মুহূর্তগুলি নিরাপদ থাকে।
আরও পড়ুন- এআই প্রয়োগে বাড়ছে সাইবার ক্রাইম: কতটা বিপদের মুখে আপনি?
কিন্তু পৃথিবীতে এত তালা সত্ত্বেও চুরি তো কমেনি। তাই যদি অ্যাপ ব্যবহার করে রেকর্ডিং ব্লক করানো যায়, অন্য অ্যাপ দিয়ে সেই শেকল ভাঙা যাবে না এমন নিশ্চয়তা আছে কি? নির্মাতারা জানাচ্ছেন, এই অ্যাপটিতে একটি বিশেষ নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যদি কেউ বিষয়টিকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে বা ডিভাইসগুলির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করে, তবে ব্যবহারকারীদের সতর্ক করে দিয়ে একটি অ্যালার্ম বাজবে। যা অ্যাপের গোপনীয়তা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করে তুলবে। অ্যাপ নির্মাতারা বলছেন, বিশেষ করে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে সম্মতিহীন ডিজিটাল রেকর্ডিংয়ের প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে। এই ভয়াবহ সমস্যা মোকাবিলার লক্ষ্যে কাজ করছে এই অ্যাপ। গোপন কোনও কথা বা মুহূর্ত অজান্তে রেকর্ড করে নিয়ে পরে সেই মুহূর্তের ভিডিও বা অডিও প্রকাশ করে হেনস্থা করা নতুন ঘটনা নয়। এই ঘটনাগুলির ফলে যে তীব্র মানসিক আঘাত তৈরি হচ্ছে তাতে ডিপ্রেশনের মতো সমস্যা তো বাড়ছেই, বিচার হওয়ার আগেই চাকরি হারাচ্ছেন মানুষ, এমনকী আত্মহত্যার চিন্তাভাবনাও করছেন। এই সঙ্কটের আবহে এই অ্যাপ্লিকেশনটি ব্যক্তিগত নিরাপত্তার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলেই মনে করছেন অ্যাপ নির্মাতারা।
স্মার্টফোনের রেকর্ডিং বিষয়টি ব্লক করতে ব্লুটুথ ব্যবহার করে গোপনীয়তা রক্ষা কতটা কার্যকর? Neurix.ai-এর প্রতিষ্ঠাতা পোরাস প্রতাপ সিং বলছেন, "ডিজিটাল কন্ডোমের মতো ব্লুটুথ-বেসড প্রাইভেসি টুল নিরাপদ ব্লুটুথ সংযোগ স্থাপন করে স্মার্টফোন ক্যামেরা এবং মাইক্রোফোনগুলিকে ব্লক করে দেয়৷ এই পদ্ধতিতে চাইলেই অননুমোদিত রেকর্ডিং করা যায় না কিন্তু হ্যাঁ, এরও কিছু সীমাবদ্ধতা আছেই। ব্লুটুথ হ্যাকিং এবং নানা ডিভাইসে সেই ব্লুটুথের সংযোগের সামঞ্জস্যের সমস্যাগুলি বাস্তব এক্ষেত্রেও।"
তিনি আরও জানিয়েছেন, "সাইবারসিকিউরিটি জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় ব্লুটুথ সিস্টেমের 'ম্যান-ইন-দ্য-মিডল' আক্রমণের দুর্বলতা তুলে ধরা হয়েছে। এই পদ্ধতিতে হ্যাকাররা ডেটা আটকায়। তাই যতই প্রতিশ্রুতি দিক না কেন, নিরাপত্তার এই সমাধানগুলি ১০০% গ্যারান্টি দিতে পারে না। কার্যকরী থাকার জন্য ঘন ঘন আপডেটের প্রয়োজন হতে পারে।"
আরও পড়ুন- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা: যন্ত্রের যন্ত্রণা নাকি আধুনিক যুগের শাণিত হাতিয়ার?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সম্মতিহীন রেকর্ডিং, বিশেষ করে অন্তরঙ্গ বা ব্যক্তিগত কোনও মুহূর্তের কথা ও ভিডিও ফাঁস করে দেওয়া গোপনীয়তার বিধির গুরুতর লঙ্ঘন। মানসিক যন্ত্রণা, ব্ল্যাকমেল এবং দুর্নামের মতো নানা জটিলতায় পড়ে কোনও ব্যক্তির স্থায়ী মানসিক ও সামাজিক ক্ষতি হতে যেতে পারে। এই ডিজিটাল কন্ডোমের মতো অ্যাপ ব্যবহার করে ক্যামেরা এবং মাইক্রোফোনের অ্যাক্সেস ব্লক করা হয়, অর্থাৎ এই জাতীয় আক্রমণগুলির সম্ভাবনাকে হ্রাস করে দেওয়া হয়। ডিজিটাল গোপনীয়তা আইন নিয়ে হওয়া বিভিন্ন গবেষণায় জানা গেছে, ৪০% এরও বেশি ব্যক্তি সম্মতিহীন রেকর্ডিংয়ের অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছে। তারা দীর্ঘমেয়াদি মানসিক চাপে ভুগেছেন।
মনোবিদরা বলছেন, এই ধরনের অ্যাপ যদি মানসিক সুস্থতা আর সামাজিক নিরাপত্তা বজ্য রাখতে পারে তাহলে তা বেশ প্রয়োজনীয় হয়ে উঠতে পারে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মানুষরা ঘন ঘন অনলাইন হেনস্থার শিকার হচ্ছেন। কীভাবে ডিজিটালি নিজেকে সুরক্ষিত রাখা যায় সেই বিষয়ে যদি প্রযুক্তিই মানুষকে সাহায্য করতে পারে তাহলে ক্ষতি কী! জার্নাল অফ অ্যাডোলসেন্ট হেলথ-এর একটি গবেষণায় দেখা গেছে ৬০% তরুণ, যারা অনলাইনে হেনস্থার শিকার হয়েছেন তারা জানিয়েছেন, প্রবল মানসিক চাপে ভুগেছেন তারা। কোণঠাসা হয়ে গেছেন, বাড়ি থেকে না বেরিয়ে নিজেকে নিজেরাই একঘরে করে নিয়েছেন। ফলে ডিজিটাল কন্ডোমের মতো গোপনীয়তা রক্ষকারী অ্যাপের গুরুত্ব অস্বীকার করা যাচ্ছে না।