এক কথায় বীভৎস! কী রয়েছে বাংলাদেশের গুম সংক্রান্ত কমিশনের রিপোর্টে?

Bangladesh Disappearance Commission Report: দ্বিতীয় ইন্টেরিম রিপোর্ট পড়ে ইউনূস বলেছেন, "কী ভয়াবহ এক একটি ঘটনা! আমাদের সমাজের “ভদ্রলোকেরা”, আমাদেরই আত্মীয়-পরিজনরা এই ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে।"

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে দ্বিতীয় ইন্টেরিম রিপোর্ট জমা দিয়েছে গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন। যে প্রতিবেদন জমার পর প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, "প্রতিবেদনটি ওয়েবসাইট ও বই আকারে প্রকাশের ব্যবস্থা করতে হবে। এটি ঘিরে শুধু বাংলাদেশ নয়, বৈশ্বিকভাবেও আগ্রহ রয়েছে।" গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন কী? কী রয়েছে ওই প্রতিবেদনে?

অভিযোগ ছিল, হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় মদতে অজস্র গুমের ঘটনা ঘটেছে। স্বাধীনতার পর সেই প্রথম, গত ২৭ অগাস্টে অন্তর্বর্তী সরকার একটি তদন্ত কমিশন গঠন করে। গত ১৪ বছরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গুমের শিকার ব্যক্তিদের সন্ধানে পাঁচ সদস্যের এই তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। কমিশনের কাজ, ২০১০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট পর্যন্ত গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান করা, তাদের শনাক্ত করা এবং কোন পরিস্থিতিতে গুম হয়েছিলেন তা নির্ধারণ করা। জোর করে তুলে নিয়ে গিয়ে গুম করার বিবরণ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিল করা এবং এ ব্যাপারে সুপারিশ দেওয়া, গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান পাওয়া গেলে আত্মীয় স্বজনকে অবহিত করাও ছিল কমিশনের কাজ। 

আরও পড়ুন- হাসিনার দেশে কাদের গুম করে রাখা হতো কুঠুরিতে! কী এই রহস্যময় আয়নাঘর?

বাংলাদেশে গুম হওয়া বিভিন্ন মানুষের পরিবারের স্বজনদের অভিযোগ ছিল, আওয়ামী লীগের শাসনামলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে অসংখ্য ব্যক্তিকে গুম, বিনা বিচারে ক্রসফায়ার করা হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী সরকার বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। গত ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর কয়েকজন ব্যক্তি ‘আয়নাঘর’ থেকে বেরিয়ে আসতে থাকেন।

এঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর নেতা মীর কাশেম আলির ছেলে ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আহমেদ বিন কাশেম আরমান, জামায়াতের প্রাক্তন আমীর গোলাম আযমের ছেলে আব্দুল্লাহিল আমান আযমীও। এছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রাম কেন্দ্রিক রাজনৈতিক দল ইউপিডিএফ-এর সংগঠক মাইকেল চাকমাও পাঁচ বছরের বেশি সময় পর ফিরে আসেন।  অভিযোগ, এই বাংলাদেশ জুড়ে ছড়িয়ে থাকা অজস্র আয়নাঘরেই গুম করা সরকারবিরোধী ব্যক্তিদের রাখা হতো। মুহাম্মদ ইউনূস নিয়ে এমন আয়নাঘর পরিদর্শনও করেন। 

দ্বিতীয় ইন্টেরিম রিপোর্ট পড়ে ইউনূস বলেছেন, "কী ভয়াবহ এক একটি ঘটনা! আমাদের সমাজের “ভদ্রলোকেরা”, আমাদেরই আত্মীয়-পরিজনরা এই ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে। আপনারা যা যা কিছু পেয়েছেন তার ভিত্তিতে একটি হরর মিউজিয়াম হওয়া উচিত। গা শিউরে ওঠার মতো ঘটনা। এই ধরনের বন্দিশালা কেমন হয়, তিন ফিট বাই তিন ফিট খুপড়ির মধ্যে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস আটকে থাকার যে নির্মমতা, নিষ্ঠুরতার চিত্র মানুষের কাছে তুলে ধরা উচিত।"

আরও পড়ুন- বাংলাদেশের আয়নাঘর আসলে কেমন? ছবি, ভিডিও ইনস্ক্রিপ্টের হাতে

গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের সদস‍্যরা জানান, কমিশনের কাছে এখনও পর্যন্ত ১ হাজার ৮৫০টি অভিযোগ এসেছে এবং তার মধ্যে ১ হাজার ৩৫০টি অভিযোগ যাচাই ও বাছাই করা শেষ হয়েছে। তাঁদের আশঙ্কা, অভিযোগের সংখ্যা সাড়ে ৩ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে।গুমের হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে এখনও ৩০০-রও বেশি মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন বলেও জানান তাঁরা।

নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবার যাতে অন্তত ব‍্যাঙ্কে টাকা পয়সা  লেনদেন করতে পারে সে বিষয়ে উদ্যোগ নিতে প্রধান উপদেষ্টাকে অনুরোধ জানিয়ে কমিশনের প্রধানের আর্জি, বর্তমান আইনে কেউ ৭ বছর নিখোঁজ থাকলে তাঁকে মৃত বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে। আইন সংশোধন করে এটিকে পাঁচ বছর করার সুপারিশ করেন তিনি।

কমিশনের প্রতিবেদনের পর আশু কর্তব্যগুলি চিহ্নিত করে কোনটি কোন মন্ত্রকের আওতায় পড়ছে তা সুনির্দিষ্ট করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ইউনূস যাতে সরকার তড়িঘড়িই কাজ শুরু করতে পারে। কমিশন প্রধান উপদেষ্টাকে আরও জানিয়েছেন, ‘ঘটনাগুলো এতটাই ভয়াবহ যে জড়িত অনেক কর্মকর্তা ও অন্যান্যরাও অনুশোচনায় ভোগেন। তাঁরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন আত্মশুদ্ধির একটা প্রচেষ্টা হিসেবে। দু'জন অফিসার লিখিতভাবে এর থেকে পরিত্রাণ চেয়ে চিঠিও লিখেছিলেন। চিঠিগুলো গণভবনে পাওয়া গেছে। তৎকালীন সেনাপ্রধান জনসম্মুখে এই চিঠির কথা স্বীকারও করেছেন।"

More Articles