ফেসবুক থেকে টার্গেট সংসদ! দেবাংশু ভট্টাচার্যের উত্থানের গতি অবাক করবে...
Debangshu Bhattacharya Tamluk Lok Sabha: ২০১১ সালে প্রথম দেবাংশু একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থনে সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখতে শুরু করেন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় কনটেন্ট ক্রিয়েশন এখন খানিক কর্মসংস্থানের পর্যায়েই চলে গেছে। প্রতিমুহূর্তে চটকদার কিছু দিয়ে মানুষের মনোরঞ্জন, নিজের 'ফলোয়ার' বৃদ্ধি। মাঝেসাঝেই নিজের ফলোয়ার সংখ্যা লিখে পোস্টার দিয়ে জানান দেওয়া। এসবটাই করেছেন দেবাংশু ভট্টাচার্য, তৃণমূলের তরুণ নেতা। এ যাবৎ তাঁর সেরা কৃতিত্ব দেখতে গেলে তৃণমূলের হয়ে গত বিধানসভা কাঁপানো স্লোগান লেখা- ‘খেলা হবে'! রাজনীতির ময়দানে সেভাবে সামনের সারিতে তিনি নেই, কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ারে তাঁর দাপট চরম। সেই দেবাংশু ভট্টচার্যকেই তৃণমূল কংগ্রেস তমলুক লোকসভা আসন থেকে প্রার্থী করেছে। পৌরসভা নয়, বিধানসভা নয়, সোজা লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে নির্বাচনী অভিষেক ঘটাতে চলেছেন বছর আঠাশের দেবাংশু।
গত কয়েক বছর ধরেই তৃণমূলের হয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারে কোনও কসুর করেননি দেবাংশু। নিজেকে দলের বিশ্বস্ত প্রমাণ করেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যেয়র স্নেহধন্য হতে সতত সচেষ্ট থেকেছেন। দেবাংশুর জন্ম ১৯৯৬ সালে। হাওড়ার বালি নিশ্চিন্দ চিত্তরঞ্জন বিদ্যালয়ে স্কুলের পাট চুকিয়ে কলকাতার এলিট ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করেন দেবাংশু। এই পর্বেই ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন, তৃণমূলের ছাত্র সংগঠন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সক্রিয় সদস্য হন। ২০২২ সালে তৃণমূলের সোশ্যাল মিডিয়া এবং আইটি সেলের প্রধান হিসেবে কাজ শুরু করেন দেবাংশু। তবে, তৃণমূলের প্রতি দেবাংশুর ভালোবাসার শুরু নাকি ২০০৮ নাগাদ। তখন তিনি অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। দেবাংশু এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, “তখন আইপিএল শুরু হয়েছিল, আমার বন্ধুদের ঘরে ক্রিকেটারদের বিশাল পোস্টার ছিল। কিন্তু আমি শুধুমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি সংগ্রহ করেছি।”
দেবাংশু বলেছেন তাঁর পরিবার সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক। ২০১১ সালে প্রথম দেবাংশু একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থনে সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখতে শুরু করেন। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগেও বেশ কয়েকটি স্লোগান তৈরি করেছিলেন দেবাংশু — ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর একবার’ এবং ‘দিল্লি যাবে হাওয়াই চটি — ভাইরাল হয়েছিল। তারপরেই টিভি চ্যানেলগুলি তাঁকে তৃণমূলের সমর্থক হিসাবে কথা বলার জন্য ডাকাডাকি শুরু করে, যদিও তখন তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না।
আরও পড়ুন- অভিজিৎ, দেবাংশু বনাম সায়ন, তমলুকে কতটা কঠিন হতে চলেছে বামেদের লড়াই?
ফেসবুক এবং এক্সে লক্ষ লক্ষ ফলোয়ার তাঁর। তৃণমূলের প্রচারে সোশ্যাল মিডিয়াকে চরম ব্যবহার করেছেন দেবাংশু। বিশেষ করে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের সময় তৃণমূল কংগ্রেসের সোশ্যাল মিডিয়া প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি। সেই সময়েই 'খেলা হবে' স্লোগান ও গানটি লেখেন দেবাংশু। চরম জনপ্রিয় হয় এই নির্বাচনী গান। বিজেপির 'জয় শ্রী রাম' স্লোগানের মোকাবিলা করতে পাল্টা 'খেলা হবে' স্লোগান শুরু করে তৃণমূল।
২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির ১৮ টি আসন জেতার পরেই পশ্চিমবঙ্গে বহু নেতাই শিবির বদলাতে শুরু করেন। ঘাসফুল ছেড়ে পদ্মফুলে ঠাঁই খোঁজেন অনেকেই। সেই সময় দেবাংশু ভট্টাচার্য বলেছিলেন, ‘গদ্দারেরা ফিরলে আমি তৃণমূল ভবনের সামনে শুয়ে থাকব। চৌকাঠে শুয়ে পথ আটকাব।' তারপর কতজনই তো এলেন গেলেন, রইলেন, আবার গেলেন! রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রবীর ঘোষাল, মুকুল রায় থেকে অর্জুন সিং- তৃণমূলত্যাগীদের 'ঘর ওয়াপসি' দেখে দেবাংশুর চৌকাঠ আগলানো নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
দেবাংশু তৃণমূলের রাজ্য মুখপাত্র এবং দলের হয়ে টেলিভিশন শোয়ের বিতর্ক বা টক শো-তে তিনিই বিশ্বস্ত প্রতিনিধি। এর আগে তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। তবে এবার দায়িত্ব আরও কঠিন। তমলুক লোকসভা আসন অধিকারী পরিবারের শক্ত ঘাঁটি। প্রাক্তন তৃণমূল নেতা এবং বর্তমানে বিজেপির নেতা শুভেন্দু অধিকারীই এই আসনে সাংসদ ছিলেন। কিন্তু ২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পরে আসনটি খালি হয়ে যায়। তারপর লোকসভা উপনির্বাচনে তাঁর ভাই দিব্যেন্দু অধিকারী সাংসদ হন।
এই আসনে এবার বিজেপির প্রার্থী প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তৃণমূলকে নাস্তানাবুদ করেছিল তাঁর একের পর এক রায়। তাঁর মোকাবিলা করতে দেবাংশু কতটা প্রস্তুত? সোশ্যাল মিডিয়ার জনপ্রিয়তা দিয়ে তমলুকের মতো আসন দখল সম্ভব? নাকি ইচ্ছাকৃতভাবেই দুর্বল প্রার্থী দিয়ে তৃণমূল বিজেপির সঙ্গে সেটিং তত্ত্বই প্রমাণ করছে?