কীভাবে গাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধে AI ব্যবহার করল ইজরায়েল?

AI in Gaza War: ইজরায়েলি বাহিনীকে 'টার্গেট' নির্ধারণ করতে গাজা জুড়ে অজস্র ফিলিস্তিনিদের মুখ স্ক্যান করতে গুগল ফটো ফেসিয়াল রিকগনিশন পরিষেবা ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছে গুগল।

প্রেমে এবং যুদ্ধে সবকিছু 'জায়েজ'। বহুকালের চেনাজানা কথাটি ইজরায়েল নতুন করে চোখে আঙুল গুঁজে দেখিয়ে দিয়েছে বিশ্বকে। যুদ্ধের যে আসলে কোনও নীতি হয় না, যুদ্ধে যে কেবল প্রতিশোধ আর প্রতিহিংসাই শেষ কথা বলে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী বিশ্বকে তা ঠারে ঠারে বুঝিয়ে দিয়েছেন ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। খুব সম্প্রতি, মাইক্রোসফট এবং ইজরায়েলের প্রযুক্তিগত সম্পর্কের কথা প্রকাশ্যে এসেছে। জানা গেছে, গাজা আক্রমণ করতে মাইক্রোসফটের প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করেছে ইজরায়েল। প্রতিবাদে মাইক্রোসফটের দুই প্রযুক্তিবিদ, বানিয়া আগরওয়াল এবং ইবতেহাল আবউসসাদ ইস্তফা দিয়েছেন। তবে একটি বিষয় তাঁরা স্পষ্ট করে দিয়ে গেছেন। যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে এত আলোচনা-বিতর্ক, তা চরমতম উপায়ে মানুষ নিধনের কাজে লাগাছে মানুষই! অথচ গাজায় হামলা করতে ইজরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) যে পদ্ধতিগুলি ব্যবহার করছে, কীভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে ব্যবহার করা হচ্ছে এই নিয়ে তর্ক জিবলি আর্টের বিতর্কের চেয়েও নগণ্য।

আইডিএফ দীর্ঘকাল ধরে প্রযুক্তিগত দক্ষতার জন্য বিখ্যাত (বা কুখ্যাত)। অনেক অসমর্থিত সূত্রে হামেশাই খবরে শোনা গেছে যে, নিত্য নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে চলেছে ইজরায়েলি এই বাহিনী। পরবর্তীতে ইজরায়েল স্বীকারও করেছে যে তারা মেশিন লার্নিং এবং উন্নত কম্পিউটিং ব্যবহার করে 'এআই যুদ্ধ' লড়েছে। ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধে আইডিএফ 'গসপেল' এবং 'ল্যাভেন্ডার' নামে লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণের একটি AI সৃষ্ট প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে। ইজরায়েলের গোয়েন্দা বিভাগের খবর বলছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে বছরে ৫০ টি টার্গেট থেকে দিনে ১০০ টি টার্গেটে হামলার অভীষ্ট লক্ষ্যপূরণ করেছে সেই দেশ। আইডিএফ-এর ওয়েবসাইটে একটি সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, ইজরায়েলি সেনাবাহিনী হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে হাবসোরা (ইংরেজিতে দ্য গসপেল) নামে একটি এআই-ভিত্তিক সিস্টেম ব্যবহার করছে যা দ্রুত গতিতে টার্গেট চিহ্নিত করতে কাজ করে। আইডিএফ-এর টার্গেটিং প্রক্রিয়ার সঙ্গে পরিচিত একাধিক সূত্র দ্য গসপেলের অস্তিত্ব নিশ্চিত করে জানিয়েছে যে, এটি হামাস বা ইসলামিক জিহাদ অপারেটিভ বলে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের বাড়ির মতো নানা লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণের জন্য স্বয়ংক্রিয় সুপারিশ বা কমান্ড তৈরিতে ব্যবহৃত হয়েছিল।

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, টার্গেট ডিভিশন আইডিএফকে ৩০,০০০ থেকে ৪০,০০০ সন্দেহভাজন জঙ্গিদের তথ্যভাণ্ডার তৈরি করতে সাহায্য করেছে। গত জানুয়ারি অবধি আইডিএফ-এর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন আভিভ কোচাভি। তিনি স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, সেনার টার্গেট বিভাগটি 'এআই চালিত' এবং এতে শত শত অফিসার এবং সৈন্য কাজ করছেন। যুদ্ধের আগে প্রকাশিত একটি সাক্ষাৎকারে, তিনি বলেছিলেন, দ্য গসপেল "এমন একটি মেশিন যা যে কোনও মানুষের চেয়ে বেশি কার্যকরভাবে বিপুল পরিমাণ তথ্য তৈরি করে এবং সেই তথ্যকে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে"।

গসপেলে কী ধরনের তথ্য প্রবেশ করানো হয় তা অবশ্য জানা যায়নি। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, লক্ষ্য নির্ধারণ করার জন্য AI সিস্টেম সাধারণত ড্রোন ফুটেজ, কোনও বাধাপ্রাপ্ত যোগাযোগ, নজরদারিমূলক তথ্য এবং ব্যক্তি তথা বৃহৎ গোষ্ঠীর গতিবিধি, আচরণের ধরণ পর্যবেক্ষণ করে পাওয়া তথ্যের মতো বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত নানা তথ্যের এক বিশাল ভাণ্ডার নিয়ে কাজ করে।

আরও পড়ুন- মাইক্রোসফট পরিষেবা ব্যবহার করে গাজা ধ্বংস! প্রতিবাদে যা করলেন দুই প্রযুক্তিবিদ

টার্গেট ডিভিশনটি আইডিএফ-এর এক দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা মোকাবিলার জন্যই তৈরি করা হয়েছিল। গাজায় এর আগেকার অভিযানে বিমান বাহিনী বারবার লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানাতে গিয়ে ভুল করেছে। ২০২৩ সালের যুদ্ধের শুরুতে হামাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নানা সুড়ঙ্গের মধ্যে লুকিয়েছিলেন। আইডিএফ সূত্র জানাচ্ছে, গসপেলের মতো সিস্টেম আইডিএফকে সেখানেও আক্রমণ করতে সুযোগ করে দিয়েছে। উল্লেখ্য, এর আগের অভিযানে কিন্তু আইডিএফ হামাসের নতুন সদস্যদের বাড়ি লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালায়নি। এবারের যুদ্ধে সন্দেহভাজন হামাস সদস্যদের বাড়িগুলিই এখন বিশেষ লক্ষ্যবস্তু।

ইজরায়েলি গণমাধ্যমের একাধিক প্রতিবেদনে ‘AI টার্গেট ব্যাঙ্ক'-এর সুপারিশ করা হামলা যে কতটা নির্ভুল তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ইয়েদিওথ আহরোনোথ দৈনিক সংবাদপত্র জানিয়েছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে নিশ্চিত করা হয় যাতে বেসামরিক নাগরিকদের কোনও ক্ষতি না হয়। সেনার প্রাক্তন এক সামরিক সূত্র দ্য গার্ডিয়ানকে জানিয়েছেন, "আমরা কতজন বেসামরিক নাগরিক সেখানে আছেন তা মূল্যায়ন করতে একটি অ্যালগরিদম ব্যবহার করি। এটি খানিকটা আমাদের ট্রাফিক সিগন্যালের মতো। সবুজ, হলুদ, লাল আলোতে সিস্টেম আমাদের নির্ভুল তথ্য দিয়ে দেয়।" অথচ বাস্তব তো বলছে অন্য কথা! হামাসকে নিকেশ করতে গিয়ে হাজারে হাজারে সাধারণ মানুষ হত্যা করে চলেছে ইজরায়েলি সেনা। শুধু হামাসের সদস্যদের বাড়ি তো নয়, স্কুল, শরণার্থী শিবির, সাধারণ বাড়ি ঘরে, হাসপাতাল সবেতেই বোমা ফেলেছে ইজরায়েল।

গত নভেম্বরে আইডিএফ প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুসারে, যুদ্ধের প্রথম ৩৫ দিনের মধ্যে ইজরায়েল গাজায় ১৫,০০০ লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ করেছিল, যা ঘনবসতিপূর্ণ উপকূলীয় অঞ্চলে এর আগেকার সামরিক অভিযানের তুলনায় যথেষ্ট বেশি। ২০১৪ সালে ৫১ দিন ধরে চলা যুদ্ধে, আইডিএফ ৫,০০০ থেকে ৬,০০০ লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেছিল।

মনে রাখতে হবে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইজরায়েলে হামাসের হামলার কিছু পরে গুগলের সিইও সুন্দর পিচাই ফিলিস্তিনিদের উল্লেখ না করেই ইজরায়েলিদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি বিবৃতি জারি করেন। মেটা, অ্যামাজন, মাইক্রোসফট এবং আইবিএম সহ অন্যান্যরাও ইজরায়েলকে সমর্থন করে। তবে ইজরায়েল পাল্টা হামলা শুরু করে যখন ৫০ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি, যার মধ্যে ১৫,০০০-এরও বেশি শিশু রয়েছে, হত্যা করে, শত শত স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল, বাড়িঘর সব ধ্বংস করে দেয় দেড় বছর ধরে — তখন কিন্তু এই প্রযুক্তি সংস্থার মাথারা চুপ থেকেছেন অধিকাংশই৷ আসলে এই তাবড় সংস্থাগুলিই উন্নত কম্পিউটার চিপস, সফটওয়্যার এবং ক্লাউড কম্পিউটিং দিয়ে এআই হামলার ভিত প্রস্তুত করে দিয়েছে ইজরায়েলকে।

উল্লেখ্য, ইন্টেল ইজরায়েলে অবস্থিত একটি চিপ প্ল্যান্টে ২৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা করেছিল যুদ্ধ চলাকালীন। মাইক্রোসফট ইজরায়েলে একটি নতুন Azure ক্লাউড স্পেস চালু করে। ফিলিস্তিন দখল করতে প্রয়োজনীয় সমস্ত উন্নত প্রযুক্তি এবং বিনিয়োগ সরবরাহ করছে ইজরায়েলকে। আর ইজরায়েল এআই ব্যবহার করে যথেচ্ছ গণহত্যা চালিয়েছে, চালাচ্ছে, চালাবে।

আরও পড়ুন- কেন ক্রমেই ইজরায়েলপন্থী হচ্ছে ভারত?

এই যুদ্ধের বহু আগেই, ২০২১ সালের মার্চ মাসে, গুগল, অ্যামাজনের সঙ্গে ইজরায়েলি সরকার এবং প্রতিরক্ষা সংস্থার ক্লাউড কম্পিউটিং পরিষেবার জন্য ১.২ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি হয়েছিল। দু'টি কোম্পানি ইজরায়েলে ফেসিয়াল রিকগনিশন, ইমোশন রিকগনিশন, বায়োমেট্রিকস এবং জনসংখ্যা সংক্রান্ত তথ্য সঞ্চয়, প্রক্রিয়াকরণ এবং বিশ্লেষণ করার উদ্দেশ্যে প্রজেক্ট নিম্বাস শুরু করে। তবে গুগল এবং অ্যামাজন কর্মীরা বর্ণবাদের সমর্থনে কাজ না করার আন্দোলন শুরু করেন। বিষয়টি আগেই আঁচ করেছিলেন সংস্থার মাথারা। গুগল এবং অ্যামাজন ইজরায়েলের সঙ্গে একটি চুক্তি করে নিশ্চিত করে যে, বয়কটের দাবির মধ্যেও পরিষেবা অব্যাহত থাকবে৷ এখনও ইজরায়েলকে ক্লাউড কম্পিউটিং পরিষেবা সরবরাহ করে চলেছে এই দুই টেক জায়ান্ট।

আলজাজিরা, অ্যাক্সেস নাও, দ্য গার্ডিয়ানের বেশ কিছু প্রতিবেদনে জানা গেছে, গণহত্যা চলাকালীনও গুগল সরাসরি ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সঙ্গে কাজ করেছে এবং ইজরায়েলি বাহিনীকে 'টার্গেট' নির্ধারণ করতে গাজা জুড়ে অজস্র ফিলিস্তিনিদের মুখ স্ক্যান করতে গুগল ফটো ফেসিয়াল রিকগনিশন পরিষেবা ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছে।

উল্লেখ্য, আরেক টেক সংস্থা আইবিএম ইজরায়েলি জনসংখ্যা, অভিবাসন এবং সীমান্ত কর্তৃপক্ষ (PIBA) নামে একটি বিষয় পরিচালনা করে যেখানে দখলকৃত ফিলিস্তিনি এবং সিরিয়ার জনগণের থেকে সংগৃহীত ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণ করা হয়। PIBA ইজরায়েলের ছাড়পত্র ব্যবস্থার একটি অংশ যার জন্য ১৬ বছরের বেশি বয়সি ফিলিস্তিনিদের নিজেদের ছবি, ঠিকানা, আঙুলের ছাপ এবং অন্যান্য বায়োমেট্রিক চিহ্ন শনাক্ত করার 'স্মার্ট কার্ড' রাখতে হবে। পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গেলে, ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা বিদেশ ভ্রমণ সহ যে কোনও উদ্দেশ্যে ইজরায়েলি চেকপয়েন্ট পেরোতে ফিলিস্তিনিদের এই কার্ড দেখিয়েই ছাড়পত্র মেলে। মাইক্রোসফট ইজরায়েলি সেনাবাহিনীর 'আলমুনাসেক' অ্যাপের জন্য ক্লাউড কম্পিউটিং স্পেস জোগায়। এই অ্যাপ অধিকৃত অঞ্চলে ফিলিস্তিনিদের অনুমতি দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়।

প্রযুক্তি যুদ্ধ বললে এখনও অনেকেই ভাবেন, রোবটে রোবটে যুদ্ধের কথা। ইজরায়েল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে যুদ্ধের নতুন পথ খুঁজে আরও অনেক যুদ্ধবাজদের সুপ্ত ইচ্ছাকে যেভাবে নাড়িয়ে দিয়েছে, তা আমাদের যাবতীয় সৃজনশীল কল্পবিজ্ঞানী চেতনায় জল ঢেলে দেয় না শুধু, ধুয়ে মুছে দেয়। যুদ্ধে ইজরায়েলের এআই ব্যবহার নতুন নয়। কয়েক দশক ধরে, ইজরায়েল গাজা স্ট্রিপকে নতুন প্রযুক্তি এবং অস্ত্রশস্ত্রের পরীক্ষার ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে। ২০২১ সালের মে মাসে গাজায় ১১ দিন ধরে যে সামরিক বোমাবর্ষণ করেছিল ইজরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী সেটিকেই তারা 'প্রথম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যুদ্ধ' বলেছিল। তবে গত দেড় বছর ধরে গাজায় যে আক্রমণ চলছে, তাতে মূলত তিনটি শ্রেণির AI ব্যবহৃত হয়েছে।

আরও পড়ুন- দুর্নীতি ঢাকতেই যুদ্ধবিরতি ভেঙে আবার গাজায় আক্রমণ নেতানিয়াহুর?

প্রাণঘাতী স্বায়ত্তশাসিত অস্ত্র ব্যবস্থা বা (Lethal autonomous weapon systems/LAWS) এবং অর্ধ-স্বায়ত্তশাসিত অস্ত্র (semi-autonomous weapons/semi-LAWS): ইজরায়েলি সেনাবাহিনী তাঁবু, স্কুল, হাসপাতাল এবং আশ্রয় শিবিরে ঠাঁই নেওয়া নিরস্ত্র নাগরিকদের উপর নজরদারি চালাতে এবং হত্যা করতে মেশিনগান এবং ক্ষেপণাস্ত্র সজ্জিত রিমোটচালিত কোয়াডকপ্টার ব্যবহারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। গাজার নুসিরাত শরণার্থী শিবিরের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, কিছু ড্রোন ফিলিস্তিনিদের প্রলুব্ধ করতে এবং তারপর নিশানা করতে শিশু এবং মহিলাদের কান্নার শব্দ চালিয়ে দিত। বহু বছর ধরে, ইজরায়েল গাজা সীমান্তে 'অটোমেটেড কিল-জোন' তৈরি করতে 'আত্মঘাতী ড্রোন’, স্বয়ংক্রিয় 'রোবো-স্নাইপার' এবং এআই-চালিত ছোট টাওয়ার ব্যবহার করছে। ২০২১ সালে ইজরায়েল 'জাগুয়ার' নামে একটি অর্ধ-স্বায়ত্তশাসিত সামরিক রোবটও মোতায়েন করে। সামরিক সীমান্তে প্রথম রোবট সৈন্যদের মধ্যে অন্যতম ছিল এই জাগুয়ার।

জাগুয়ার

ফেসিয়াল রিকগনিশন ব্যবস্থা এবং বায়োমেট্রিক নজরদারি: নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটি প্রতিবেদন বলছে, ইজরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজায় ফেসিয়াল রিকগনিকশ ব্যবস্থা ব্যবহার করেই ব্যাপক নজরদারি চালিয়েছে। ফিলিস্তিনিদের কোনওরকম সম্মতি ছাড়াই, তাঁদের অজান্তেই মুখের ছবি সংগ্রহ ও নথিভুক্ত করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইজরায়েলি সংস্থা করসাইট এবং গুগল ফটোর প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভিড়ের মধ্যে থেকে এমনকী খারাপ মানের ড্রোন ফুটেজ থেকেও মুখ বাছাই করতে পেরেছে সেনা।

স্বয়ংক্রিয় টার্গেট জেনারেশন সিস্টেম: এটিই হচ্ছে গসপেল এবং ল্যাভেন্ডার এবং হোয়ার ইজ ড্যাডি। পরিকাঠামোগত টার্গেট তৈরি করতে সাহায্য করে গসপেল এবং ল্যাভেন্ডার মানুষকে নিশানা করতে সাহায্য করে। হোয়ার ইজ ড্যাডি হচ্ছে এমন একটি সিস্টেম যা সন্দেহভাজন জঙ্গিরা যখন পরিবারের সঙ্গে থাকছে, তখন তাঁদের গতিবিধি লক্ষ্য করতে ও নিশানা করতে তৈরি করা হয়েছে।

মজার বিষয় হলো, এগুলি অধিকাংশই মানবতাবিরোধী এবং বেআইনি। তবে ওই যে, যুদ্ধে আর প্রেমে সব জায়েজ। প্রেমে না হোক, যুদ্ধে তো নিশ্চিত! জাতিসংঘ বলেছে, এই LAWS বা semi-LAWS "রাজনৈতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য এবং নৈতিকতার বিরোধী"। এসব ব্যবহার নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। সেই আহ্বানের মুখে ঝামা ঘষে দিয়েছে ইজরায়েল। তথ্য বলছে, ইজরায়েলে বিশ্বের তাবড় প্রযুক্তি সংস্থা বিনিয়োগ করতে চায়। ইজরায়েলের ১৪ শতাংশ চাকরি এই খাতেই, দেশের জিডিপির প্রায় ২০ শতাংশ প্রযুক্তি ক্ষেত্রের অবদান। ২০১৯ সাল থেকে ইজরায়েলি কোম্পানিগুলিতে ৩২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে, যার ৫১ শতাংশই মার্কিন বিনিয়োগকারীদের অবদান। এমন আবাদী জমিতে কেই না ফসল ফলাতে চায়। যুদ্ধ এবং ব্যবসা হাত ধরাধরি করে চলে মানবতার মুখ মাড়িয়ে, দেহ মাড়িয়ে।

More Articles