অটল সরকারের পতন তাঁর হাত ধরেই! চেনেন এই প্রবীণ নেতাকে?
Giridhar Gamang: তৎকালীন এনডিএ জমানার পতনের নেপথ্যে ছিলেন একটি মাত্র ব্যক্তি। তিনি গিরিধর গামাং। প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা, ওড়িশার দিবিরিসিঙ্গি কেন্দ্রের ৯ বারের সাংসদ।
রাজনীতির ময়দান বড় কঠিন ঠাঁই। কখন কার কোন চালে যে পাশা পাল্টে যায়, বলা শক্ত। ঠিক যেমনটা হয়েছিল ১৯৯৯ সালে। তৎকালীন এনডিএ জমানার পতনের নেপথ্যে ছিলেন একটি মাত্র ব্যক্তি। তিনি গিরিধর গামাং। প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা, ওড়িশার দিবিরিসিঙ্গি কেন্দ্রের ৯ বারের সাংসদ। মুখ্যমন্ত্রীও ছিলেন ওড়িশার। একসময়ে সামলেছেন কেন্দ্রীয় যোগাযোগ মন্ত্রীর পদ। কেন্দ্রীয় খাদ্যপ্রক্রিয়াকরণ, খনি— অনেক দফতরের দায়িত্বই ছিল তাঁর কাঁধে। সেই গিরিধরই কিন্তু একসময়ে বদলে দিয়েছেন ভারতবর্ষের রাজনৈতিক রূপরেখা।
আট বছর আগে দল ছেড়েছিলেন এই আদিবাসী নেতা। তবে পুরনো মান-অভিমান ভুলে সম্প্রতি অশীতিপর গিরিধর ফের ফিরেছেন কংগ্রেসে। স্বাভাবিক ভাবেই ফের চর্চায় এসেছে তাঁর সেই কীর্তির কথা, যা এককালে আস্ত একটা সরকার ফেলে দিয়েছিল। ১৯৯৮ সালে ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী হন গিরিধর কামাং। কোরাপুট কেন্দ্র থেকে লোকসভা ভোটে জিতেছিলেন তিনি। মজার ব্যাপার মুখ্যমন্ত্রীর পদে অভিষিক্ত হওয়ার পরেও সাংসদপদটি ছাড়েননি গিরিধর। আর তার জেরেই ঘটে গিয়েছিল সেই ঐতিহাসিক ঘটনাটি।
আরও পড়ুন: পাথর ছোঁড়া হয়েছিল অটল বিহারীকে! দেশকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল এই বীভৎস খুন…
তখন দিল্লির মসনদে এনডিএ সরকার। প্রধানমন্ত্রী পদে অটল বিহারী বাজেপেয়ী। গিরিধর ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই অনাস্থা প্রস্তাবের মুখোমুখি হল অটলবিহারী সরকার। আর সেই অনাস্থা প্রস্তাবে নির্ণায়ক হয়ে উঠেছিল একটি মাত্র ভোট। সেই অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে পড়েছিল ২৭০টি ভোট আর বিপক্ষে ২৬৯টি ভোট। ওই নির্ণায়ক একটি ভোট ছিল গিরিধরের। প্রথা মেনে যার সাংসদপদ ছেড়ে দেওয়াই ছিল দস্তুর। কিন্তু কংগ্রেস আসবে বলেই বোধহয় সেই নিয়মখানি পালনে কিঞ্চিত দেরি হয়ে গিয়েছিল। এর ফলে যেটা ঘটে, তা হল পদত্যাগ করলেন অটলবিহারী বাজেপেয়ী। আর সেই বছরের লোকসভা ভোটেই পতন হল এনডিএ সরকারের। মসনদে এল কংগ্রেস।
স্বাভাবিক ভাবেই গিরধরের ভোটটি নিয়ে বহু প্রশ্নই করেছিল বিরোধীরা। বিষয়টি নিয়ে প্রচুর বিতর্কও হয়। মুখ্য়মন্ত্রী পদে থাকাকালীন সাংসদ হিসেবে ভোট দেওয়াটা কতটা নৈতিক, প্রশ্ন ওঠে তা নিয়েও। যদিও এ ব্যাপারে গিরিধর কোনও ভুল দেখেননি কোনওদিনই। বরং AIADMK ও ন্যাশনাল কনফারেন্সকেই দায়ী করেছেন বরাবর। শেষ মুহূর্তে তারা এনডিএ সরকারের উপর থেকে সমর্থন সরিয়ে নেওয়ার কারণেই বিজেপি সরকারের পতন হয়েছে বলে দাবি। ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ও কংগ্রেস নেতা প্রণব মুখোপাধ্যায় তাঁর 'কোয়ালিশন ইয়ারস' বইতে জানান, কংগ্রেসের নির্দেশেই এই কাজটি করেছিলেন গিরিধর। যার ফল হয়েছিল ইতিহাস বদলানো।
তবে গিরিধর যে শুধুই একজন তুখোড় রাজনীতিক ছিলেন, তা নয়। যথেষ্ট প্রশিক্ষিত একজন সঙ্গীতশিল্পীও ছিলেন তিনি। ২০১৫ নাগাদ কংগ্রেস ছাড়েন তিনি। দলের সঙ্গে ছিন্ন হয় ৪৩ বছরের সম্পর্ক। এর পর অবশ্য বিজেপি-তেও যোগ দেন গিরিধর। তবে সেই সম্পর্ক বেশিদিব টিকল না। গত বছর বিজেপি ত্যাগ করে কেসিআরের নেতৃত্বে ভারত রাষ্ট্র সমিতিতে যোগ দেন প্রবীণ এই রাজনীতিক। সম্প্রতি স্ত্রী ও পুত্রের হাত ধরে ফের কংগ্রেসে ফিরেছেন ওড়িশার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। কংগ্রেস নেতা অজয় মাকেন তাঁকে দলে বরণ করে নেন।
আরও পড়ুন:মোদি নন, বাজপেয়ীই প্রকৃত বিজেপি! অটল বিহারীর স্মৃতিসৌধে গিয়ে কোন বার্তা দিলেন রাহুল?
এতগুলো বছর পর দলে ফিরলেন গিরিধর গামাং। আর সামনেই লোকসভা ভোট। বিজেপি বিরোধিতায় দেশে তৈরি হয়েছে বিরাট জোট। কে নেই তাতে। সেই ইন্ডিয়া জোটের হয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ ঘোষণাও সারা। ১৯৯৫ সালের মতো তেমনই কোনও আশ্চর্য ঘটতে চলেছে কি এ বছরেও গিরধরের হাত ধরে। উস্কে উঠেছে জল্পনা।