নেই স্পেশাল চশমা, পকেটে হাত ভরেই যেভাবে অলিম্পিকে রুপো জিতলেন ৫১-র যুবক

Yusuf Dikec Paris Olympics 2024: যেন রোজ এভাবেই পিস্তলের সঙ্গে সখ্য করেন। পকেটে হাত, লক্ষ্য স্থির, মুখে চোখে উত্তেজনার ছাপও নেই। সোজা লক্ষ্যভেদ!

বয়স ৫১। কারও কারও রিটায়ারমেন্টের ফাইল গোছানোর বয়স, কারও কাছে বিশ্বজয়ের বয়স! অলিম্পিকের মঞ্চে যে ছাপোষা ভদ্রলোকের ছবি সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়েছে হু হু করে, হাতে পিস্তল, লক্ষ্য স্থির, এই জমানার ভাষায় 'সল্ট অ্যান্ড পিপার' চুল, তিনি ওই দ্বিতীয় গোত্রের মানুষ। বিশ্বজয় করেছেন তিনি। অলিম্পিক এয়ার পিস্তল শ্যুটিংয়ে রুপো জিতেছেন তুরস্কের এই শ্যুটার। শ্যুট করেছেন কীভাবে? যেন রোজ এভাবেই পিস্তলের সঙ্গে সখ্য করেন। পকেটে হাত, লক্ষ্য স্থির, মুখে চোখে উত্তেজনার ছাপও নেই। সোজা লক্ষ্যভেদ! এমনকী শ্যুটিংয়ে শ্যুটাররা নির্ভুল হওয়ার জন্য যে বিশেষ চশমা সহ প্রচুর জিনিসপত্র পরেন, শব্দ থেকে বাঁচতে কান ঢাকেন সেসবও কিস্যু নেই। আক্ষরিক অর্থেই তিনি এলেন, শ্যুট করলেন, জয় করলেন! তিনি ইউসুফ ডিকেচ। প্যারিস অলিম্পিক গেমসে রুপো তাঁর পকেটে।

৫১ বছর বয়সি এই 'যুবক' তাঁর সঙ্গী সেভাল ইলায়দা টারহানের সঙ্গে ১০-মিটার এয়ার পিস্তল মিক্সড টিম ইভেন্টে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। রোজ যে চশমা পরেন সাধারণ মানুষ, সেরকমই চশমা পরেছিলেন ইউসুফ। ইয়ারপ্লাগও ছিল সাধারণ মানের, হালকা ভুঁড়িও চোখ এড়ায় না। সেই দিয়েই লক্ষ্যে অবিচল থেকে জয়! ডান হাতের পিস্তল, আঙুল ট্রিগারে। অন্য হাত পকেটে। পিস্তলে গুলি ভরে নিচের দিকে লক্ষ্য করে রাখলেন কিছুক্ষণ। তারপর সোজা লক্ষ্যে! সেভাল ইলায়দা তারহান আর ইউসুফ ডিকেচ জিতলেন রুপো।

 

অলিম্পিক শ্যুটিংয়ে এবার সার্বিয়া সোনা জিতেছে। জোরানা অরুনোভিচ এবং দামির মাইকেক ইউসুফ ডিকেক এবং টারহানকে হারিয়ে সোনা জেতেন। এই একই ম্যাচে ভারতের মনু ভাকের এবং সরবজোৎ সিং ব্রোঞ্জ পদক জিতেছেন।

আরও পড়ুন- জন্ম কলকাতাতেই! জানেন কে ছিলেন অলিম্পিকে ভারতের প্রথম মহিলা প্রতিদ্বন্দ্বী?

তুরস্কের এই শ্যুটার এই নিয়ে পঞ্চম অলিম্পিক গেমসে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেন। ২০০৮ সালে বেইজিং অলিম্পিকে প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ইউসুফ ডিকেচ। এই প্রথম অলিম্পিকে পদক জিতলেন তিনি। তাঁর এই 'কুল' মেজাজ দেখেই মাত হয়ে গেছে বিশ্ব!

 

১৯৭৩ সালে তুরস্কের কাহরামানমারাস প্রদেশের গোকসুন জেলার তাসোলুক গ্রামে জন্ম ইউসুফ ডিকেচের। তুরস্কের আঙ্কারার গাজী ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ ফিজিক্যাল ট্রেনিং অ্যান্ড এডুকেশনে পড়াশোনা ইউসুফের। পরে কোনিয়ার সেলকুক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোচিংয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। ২০১১ সালে শ্যুটিং কেরিয়ার শুরু করেন তিনি। তুর্কি গেন্ডারমেরির অবসরপ্রাপ্ত নন-কমিশন অফিসার ইউসুফ ২০০৬ সালে সিআইএসএম মিলিটারি ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে ২৫ মিটার সেন্টার-ফায়ার পিস্তল ইভেন্টে নতুন বিশ্ব রেকর্ড গড়েন। ইংরেজি এবং তুর্কি দুই ভাষায় সাবলীল ইউসুফ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ২৫ মিটার স্ট্যান্ডার্ড পিস্তল এবং ২৫ মিটার সেন্টার ফায়ার পিস্তল দুই ইভেন্টেই জয়ী হয়ে ২০১৪ সালে জোড়া বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হন। ইউরোপিয় চ্যাম্পিয়নশিপে ২০০৪ সালে এয়ার পিস্তল ট্রায়ো ইভেন্টে জয় সহ সাতটি পদক জেতেন তিনি। ইউসুফ ডিকেক অবসর কাটাতে ভালোবাসেন নেচে।

More Articles