রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ হাজার হাজার মানুষের, কেন ফুঁসছে ইন্দোনেশিয়া?

Indonesia Protest: পাঁচ দিনের সংঘর্ষে শুধু জাকার্তাতেই ১,২৪০ জনকে আটক করেছে পুলিশ। অন্তত সাতজন নিহত এবং আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৭০০ মানুষ।

গত এক সপ্তাহ ধরে অগ্নিগর্ভ ইন্দোনেশিয়া। দেশজুড়ে বিক্ষোভ, অগ্নিসংযোগ ও সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত সাতজন, আহত হয়েছেন শত শত মানুষ। সরকারি দফতর, পুলিশ সদর দফতর ও অবকাঠামোতে লুটপাট ও আগুন লাগানোর ঘটনায় তীব্র সংকটে পড়েছে দেশটির আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি।

কেন এই বিক্ষোভ?

২৫ অগাস্ট পার্লামেন্ট ভবনের সামনে হাজার হাজার মানুষের জমায়েতের মাধ্যমে বিক্ষোভ শুরু হয়। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ আগেই চরমে ছিল। এর মধ্যে সংসদ সদস্যদের আবাসন ভাতা জাকার্তার ন্যূনতম মজুরির প্রায় দশ গুণ বেশি হওয়ায় ক্ষোভ আরও বিস্ফোরিত হয়।

indonesia

ছাত্র সংগঠন 'গেজায়ান মেমাঙ্গগিল' অভিযোগ করেছে, সরকার দুর্নীতিগ্রস্ত অভিজাতদের সুবিধা দিচ্ছে এবং সেনাবাহিনীকে ক্রমশ বেসামরিক জীবনে হস্তক্ষেপের সুযোগ করে দিচ্ছে। সংগঠনের বিবৃতিতে স্পষ্টভাবে প্রাবোও সরকারের অধীনে সামরিক বাহিনীর ক্রমবর্ধমান প্রভাবের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন- মোদীর মণিপুর সফর, শান্তি ফেরানোর প্রয়াস নাকি রাজনৈতিক কৌশল?

প্রথমে রাজধানী জাকার্তায় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে। পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয় ২৮ অগাস্ট রাতে, যখন পুলিশের একটি সাঁজোয়া গাড়ি বিক্ষোভকারীদের ভিড়ের মধ্যে ঢুকে ২১ বছর বয়সি এক ডেলিভারি কর্মীকে চাপা দেয়। ওই তরুণের মৃত্যুর পরই বিক্ষোভ সহিংস আকার ধারণ করে। 

এরপর দেশজুড়ে সরকারি দফতর ও পুলিশ সদর দফতরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। মাকাসারে কাউন্সিল ভবনে অগ্নিকাণ্ডে অন্তত তিনজন নিহত হন। একই শহরে আরেকজনকে জনতা ভুল করে গোয়েন্দা ভেবে পিটিয়ে হত্যা করে। এছাড়া যোগ্যাকার্তায় ছাত্র আন্দোলনকারী পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হন। সলো শহরে টিয়ারগ্যাসে অসুস্থ হয়ে পড়া এক ষাট বছরের রিকশাচালক হাসপাতালে মারা যান। সপ্তাহান্তে অর্থমন্ত্রী শ্রী মূলিয়ানি ইন্দ্রাওয়াতির বাড়ি ও কয়েকজন সংসদ সদস্যের বাড়িতে লুটপাট হয়। 

আরও পড়ুন- বারবার জেগেছে বাংলাদেশ! অবাক করবে সে দেশের গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস

সরকারি প্রতিক্রিয়া

পাঁচ দিনের সংঘর্ষে শুধু জাকার্তাতেই ১,২৪০ জনকে আটক করেছে পুলিশ। শহরের গভর্নর প্রামোনো আনুং জানান, আগুন লাগানো ও ভাঙচুরে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫৫ বিলিয়ন রুপিয়াহ (৩.৩ মিলিয়ন ডলার)। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৭০০ মানুষ।

প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তো রবিবার চিন সফর বাতিল করে নিরাপত্তা বাহিনীকে কঠোর পদক্ষেপের নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, “অবৈধ কর্মকাণ্ড চলছে, যা দেশদ্রোহ ও সন্ত্রাসবাদের দিকে যাচ্ছে।” তবে একই সঙ্গে তিনি সংসদ সদস্যদের আবাসন ভাতা ও বিদেশ ভ্রমণ সুবিধা কমানোর ঘোষণা দেন এবং নিহত ডেলিভারি কর্মীর পরিবারকে আর্থিক সহায়তার আশ্বাস দেন। ওই ঘটনায় জড়িত সাতজন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্তও শুরু হয়েছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

জাতিসংঘ সোমবার সাধারণ মানুষের বিক্ষোভে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের অভিযোগে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সরকারের কড়া সমালোচনা করে বলেছে, বিক্ষোভকে ‘দেশদ্রোহ’ বা ‘সন্ত্রাসবাদ’ হিসেবে দেখা দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ।

More Articles