ফের টালমাটাল বাংলাদেশ! কেন তিন উপদেষ্টার অপসারণ চায় বিএনপি?

BNP Bangladesh: অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও মাহফুজ আলম এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানকে অব্যাহতি দেওয়ার দাবিও জানিয়েছে বিএনপি।

প্রায় এক বছর হতে চলল। হাসিনা সরকারের ক্ষমতাচ্যুতি এবং নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাংলাদেশ পরিচালনার দায়িত্ব সামলানোর এই পর্বের মধ্যে একাধিক বদল ঘটেছে খোদ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অন্দরেই। ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দলও গঠিত হয়েছে। তবু স্থায়ী সরকার নির্বাচনের লক্ষ্যে কবে বাংলাদেশে নির্বাচন হবে তার কোনও সুস্পষ্ট অভিমুখ ইউনূসের সরকার দিতে পারেনি। ফলে দলের শরিক সদস্যদের মধ্যে বাড়ছে ক্ষোভ। এমতাবস্থায় ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন না হলে বিএনপি যে অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করবে না তা স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিয়েছে দলটি। পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও মাহফুজ আলম এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানকে অব্যাহতি দেওয়ার দাবিও জানিয়েছে বিএনপি।

কেন এই তিনজনের অপসারণ দাবি করছে বিএনপি? দলীয় নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলছেন, গত জুলাইয়ে ক্ষুব্ধ মানুষের গণ অভ্যুত্থান ঘটে গেছে। মানুষের হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার, মানবাধিকারসহ ভোটাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করাই এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। এটিই বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানতম কর্মসূচি হওয়া উচিত। আর অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা রক্ষার জন্যই এই তিন উপদেষ্টাদের সরাতে হবে। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার বক্তব্যের ফলে আবার দেশে নতুন বিতর্কের জন্ম হয়েছে। তাই অন্তর্বর্তী সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষা করতেই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানকে অব্যাহতি দিতে হবে। খন্দকার মোশাররফ হোসেনের অভিযোগ, "ফ্যাসিবাদের দোসর কয়েকজন উপদেষ্টাকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি আমরা এর আগে অনেকবার উত্থাপন করেছি। যেহেতু একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করাই এ সরকারের প্রধান কাজ, তাই মাথাভারী উপদেষ্টা পরিষদ না রেখে শুধু রুটিন ওয়ার্ক পরিচালনার জন্য ছোট আকারের উপদেষ্টা পরিষদ রাখাই বাঞ্ছনীয়।"

আরও পড়ুন- ভারত-পাকিস্তান উভয়ের অধীনতাই অস্বীকার করে নতুন বাংলাদেশ : মাহফুজ আলম

তাঁর আরও অভিযোগ, দেশের ঐক্যের স্বার্থে সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে অন্তর্বর্তী সরকার ব্যর্থ হয়েছে। গত সাড়ে ৯ মাসে জনপ্রত্যাশা বা গণ অভ্যুত্থানের আকাঙ্খা পূরণ হয়নি। তবে এরই মধ্যে ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যে ফাটল ধরতে শুরু করেছে। বিএনপি নেতার প্রশ্ন, মানবিক করিডর এবং চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে সরকারের বিভিন্ন বক্তব্য ও কর্মকাণ্ডে জাতীয় স্বার্থ আদৌ রক্ষিত হচ্ছে কি?

বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী বলছেন, "তারেক রহমানকে নিয়ে ড. খলিলের বক্তব্য গণতন্ত্রের স্থায়ী নিরাপত্তা ও ঐতিহাসিক সার্থকতার প্রতি বিদ্বেষপ্রসূত।" ওই বক্তব্য প্রত্যাহার করার আহ্বান জানিয়ে তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ইউনূসকে সম্বোধন করে বলেন, "এই ধরনের বিতর্কিত ব্যক্তিদের উপদেষ্টা পরিষদে রাখলে তা সরকারের জন্য কল্যাণকর হবে না। অবিলম্বে তাঁর পদত্যাগ দাবি করছি।" রিজভী বলছেন, "ড. খলিলুর রহমান বলেছেন, "কেবলমাত্র আমেরিকায় থাকি বলে যদি আমাকে বিদেশি নাগরিক বলা হয়, তাহলে কালকে তারেক রহমানকেও একই কথা বলতে হবে। আমাকে ঢিল নিক্ষেপ করলে, সেই ঢিল কিন্তু অন্যদের ওপর গিয়েও পড়তে পারে।"

উল্লেখ্য, তারেক রহমান হলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল অর্থাৎ বিএনপি-র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন। রিজভীর প্রশ্ন, অপ্রাসঙ্গিকভাবে তাঁকে এই আলোচনায় টেনে আনার অর্থ কী? তাঁর অভিযোগ, "কিছু কিছু উপদেষ্টা মনে হচ্ছে নিরপেক্ষতার আড়ালে কোনও নির্দিষ্ট এযাজেন্ডা নিয়ে কাজ করছেন।" তারেক রহমান বর্তমানে যুক্তরাজ্যে আছেন। রিজভী জানিয়েছেন, ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে এক নির্মম হত্যা চেষ্টা ও গুরুতর আহত অবস্থায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তারেক রহমান যুক্তরাজ্যে যান এবং বর্তমানে পরিবারসহ সেখানে বসবাস করছেন। ২০০৪ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত তারেক রহমানের বিরুদ্ধে নানা মিথ্যা মামলা সাজানো হয়েছে, যার মধ্যে অর্থ তছরুপ, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট, ঘোষিত-অঘোষিত সম্পদ ও ২১ অগাস্টের গ্রেনেড হামলা মামলা উল্লেখযোগ্য। এসব মামলায় তাঁকে দণ্ডিত করা হয়েছে, তবে ৫ অগাস্ট হাসিনার দেশত্যাগের পর বেশিরভাগ সাজাই বাতিল হয়েছে।

আরও পড়ুন- ভোট হলে ক্ষমতায় আসবে কে? যা উঠে এল বাংলাদেশের সমীক্ষায়

রিজভীর যুক্তি, "তারেক রহমান জীবনের নিরাপত্তাহীনতার কারণে দেশে ফিরতে পারেননি। ১৯৫১ সালের শরণার্থী কনভেনশনের অধীনে পর্যটক, কর্মক্ষেত্র, ছাত্র, বিনিয়োগকারী এবং পরিবার বা শরণার্থী ভিসাসহ ভিসা বিভাগের অধীনে একজন বিদেশি নাগরিকের জন্য যুক্তরাজ্যে স্বল্প সময়ের (ছয় মাস), বর্ধিত সময়ের জন্য বা অনির্দিষ্টকালের জন্য বসবাস করা আইনত বৈধ।”

বিএনপি আরও বলছে, মানবিক করিডর নিয়ে গত এক মাসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এক একজন উপদেষ্টা এক একরকম বক্তব্য পেশ করেছেন। তাই মনে হওয়া স্বাভাবিক যে এই সরকার পথ হারিয়ে ফেলেছে। উপরন্তু, এসব করার দায়িত্বও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নয়। এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব জনগণের ভোটে নির্বাচিত, জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক একটি সরকারের। এই সরকারের নিরপেক্ষতা এবং শাসনক্ষমতা নিয়ে জনগণের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বলে দাবি বিএনপির।

More Articles