কেন ইরানের ১৪ জন বিজ্ঞানীকে টার্গেট করল ইজরায়েল?
Iranian Scientists: ইজরায়েল হামলার শুরুতেই সামরিক ঘাঁটিগুলির থেকেও বেশি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বাড়ি বা অফিস টার্গেট করেছিল। কারণ, ইরানের কমান্ড সিস্টেম ভাঙার এবং 'চেন অফ কমান্ড'-কে দুর্বল করতে চেয়েছিল ইজরায়েল।
ইরান-ইজরায়েলের ১২ দিনের যুদ্ধে ইরানের অন্তত ১৪ জন বিজ্ঞানীকে হত্যা করেছে ইজরায়েল। ফ্রান্সের ইজরায়েলি রাষ্ট্রদূত জোশুয়া জারকা অ্যাসোসিয়েট প্রেসে এমনটাই দাবি করেছেন। তিনি এও জানিয়েছেন যে কেন এই বিজ্ঞানীদের হত্যা করা হয়েছিল।
ইজরায়েল হামলার শুরুতেই সামরিক ঘাঁটিগুলির থেকেও বেশি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বাড়ি বা অফিস টার্গেট করেছিল। কারণ, ইরানের কমান্ড সিস্টেম ভাঙার এবং 'চেন অফ কমান্ড'-কে দুর্বল করতে চেয়েছিল ইজরায়েল। হামলার পুরো ঘটনায় ইজরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের হাত কতটা তা এখনই জানা যায়নি। তাছাড়া ইজরায়েল সাধারণত গোয়েন্দাদের কার্যক্রম নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলে না। তবে বিশেষজ্ঞদের দাবি, এই ধরনের পরিকল্পিত এবং নিখুঁত হামলা দেশের ভেতরে সক্রিয় গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমেই সম্ভব।
ইজরায়েলের রাষ্ট্রদূতের দাবি, "শুধুমাত্র পরমাণু বিজ্ঞানী বলেই তাঁদের হত্যা করা হয়নি, তাঁরা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করে যাচ্ছিলেন," এটিও তাঁদের হত্যা করার অন্যতম কারণ। তিনি আরও বলেন, পদার্থবিদ্যা শেখা, পরমাণু কীভাবে কাজ করে এবং ইউরেনিয়াম কী তা জানা সহজ হলেও ইউরেনিয়ামকে অস্ত্রে রূপান্তরিত করা "এত সহজ নয়"। তাঁর কথায়, "হত্যা করা বিজ্ঞানীদের সেই ক্ষমতা ছিল এবং তাঁরা পদ্ধতিকে আরও উন্নত করতে এই নিয়ে জ্ঞান বাড়িয়েছিলেন। এটাই তাঁদের হত্যা করার কারণ।"
আরও পড়ুন-দেশে দেশে যেভাবে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে
পারমাণবিক অস্ত্রতে উন্নতি আনতে প্রায় কয়েক দশক সময় লেগে যায়। শুধু তাই নয় এই নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকাও অত্যন্ত জরুরি। হত্যা করা পরমাণু বিজ্ঞানীদের দীর্ঘদিনের কাজের অভিজ্ঞতা ছিল বলেই জানান ইজরায়েলি রাষ্ট্রদূত জোশুয়া।
ইজরায়েল কি ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে দুর্বল করতে সক্ষম হয়েছে?
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসে-র একটি সাক্ষাৎকারে ইজরায়েলের রাষ্ট্রদূত দাবি করেছেন, এই হামলার পর যদি কোনো ঘাঁটির তেমন ক্ষতি নাও হয়ে থাকে তবুও ইরানের পক্ষে এখন অস্ত্র তৈরি করা প্রায় অসম্ভব। তিনি বলেন, ইরানের বিজ্ঞানীদের পুরো টিমকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে অনেকটা পিছিয়ে দেওয়া গিয়েছে।
অন্যদিকে পারমাণবিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানের আরও অন্যান্য বিজ্ঞানীরা আছেন যাঁরা নিহত বিজ্ঞানীদের জায়গা নিতে পারবেন। এপির মতে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই হামলা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে পিছিয়ে দিতে পারে, কিন্তু থামাতে পারবে না।
আরও পড়ুন-ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধ! কোন পক্ষের কতটা লাভ, ক্ষতির খতিয়ান কত?
সমাধান কী?
ইউরোপীয় সরকারগুলি জানিয়েছে, শুধুমাত্র হামলা ইরানের পারমাণবিক জ্ঞানকে দুর্বল করতে পারবে না, তাই তারা আলোচনার মাধ্যমে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যে উদ্বেগ তার সমাধান চায়। মার্কিন যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি হাউস অফ কমন্সে আইন প্রণেতাদের বলেন, "ইজরায়েলের হামলা ইরানের কয়েক দশকের অর্জিত জ্ঞান ধ্বংস করতে পারবে না এবং পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির শাসকগোষ্ঠীর উচ্চাকাঙ্ক্ষাও ধ্বংস করতে পারে না,"
উল্লেখ্য, ইজরায়েল ১৩ জুন ইরানে হামলা শুরুর সময় দাবি করেছিল, ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি ঠেকাতেই দেশটিতে হামলা চালাচ্ছে ইজরায়েল। ওই দিনের হামলায় ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি, রেভ্যুলেশনারি গার্ড-এর কমান্ডার হোসেইন সালামি-সহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা এবং অন্তত ৯ জন পরমাণু বিজ্ঞানীর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে ইরান। মঙ্গলবার(২৪ জুন), ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভিতে আরেক ইরানের পরমাণু বিজ্ঞানী মোহাম্মদ রেজা সেদিঘি সাবেরের মৃত্যুর খবর জানায়। ১৩ জুন তাঁর ১৭ বছর বয়সি ছেলের মৃত্যু হয়েছে। সেদিনের হামলায় বেঁচে গিয়েছিলেন তিনি। ইজরায়েলের হামলায় ইরানের পরমাণু ঘাঁটিগুলি কতটা ধ্বংস করা গেছে তা এখনও স্পষ্ট জানা যায়নি। এও জানানো জরুরি যে, ইজরায়েল কখনই স্পষ্ট করে জানায়নি তাদের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র আছে কিনা।