কেন ডুরান্ড কোয়ার্টার ফাইনালে ৭৪ নম্বর জার্সি নিয়ে ছবি তুললেন খেলোয়াড়রা?

Durand Cup 2025 quarterfinal: বাবার মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে মিডফিল্ডার রশিদকে চলে যেতে হয়েছিল প্যালেস্টাইনে। তাঁকেই সম্মান জানাতে পুরো দল রশিদের ইস্টবেঙ্গল জার্সি নিয়ে একসঙ্গে ছবি তোলে।

১৭ অগাস্ট ডুরান্ড কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছে মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গল। দিমান্তাকসে মোহনবাগানকে ২-১ এ হারিয়ে, জিতে নেয় হাজার হাজার মানুষের মন। তবে, শুধুমাত্র ভালো খেলেই সুনাম পাননি ইস্টবেঙ্গলের খেলোয়াড়রা, ম্যাচ শেষে তাঁরা তুলে ধরেন প্যালেস্টাইনের খেলোয়াড় মোহম্মদ রশিদের ৭৪ নম্বর জার্সি। বাবার মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে মিডফিল্ডার রশিদকে চলে যেতে হয়েছিল প্যালেস্টাইনে। তাঁকেই সম্মান জানাতে পুরো দল রশিদের ইস্টবেঙ্গল জার্সি নিয়ে একসঙ্গে ছবি তোলে।

প্যালেস্টাইনের গাজায় টানা ২২ মাস ধরে ইজরায়েলি বাহিনী নির্বিচার হামলা চালাচ্ছে। সংঘর্ষে প্রায় ৬২ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। গাজার সরকারি গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, তার মধ্যে অন্তত ১৮ হাজার ৮৮৫ জনই শিশু। এই পরিস্থিতিতে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে গাজায় ইজরায়েলের হামলার প্রতিবাদ করা হচ্ছে। কলকাতার একটি লাল-হলুদে মোড়া ফুটবল ক্লাবও সহমর্মিতা ও শ্রদ্ধার বার্তা পাঠাল ক্ষতিগ্রস্ত নাগরিকদের প্রতি।

চলতি বছরের ১৮ জুলাই রশিদ ইস্টবেঙ্গলে যুক্ত হন। যদিও ইস্টবেঙ্গলের হয়ে এখনও খেলেননি, তবে ১৭ তারিখের বড় খেলায় তাঁর নামার কথা ছিল বলে জানিয়েছিলেন হেড কোচ অস্কার ব্রুজোন।

উল্লেখ্য, সংঘাতপ্রবণ রামাল্লা-তে বেড়ে ওঠা রশিদের। সেখানে ফুটবল তো দূরের কথা, বেঁচে থাকাই একটা লড়াই। তরুণ বয়সেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে চলে যান তিনি। 

আরও পড়ুন- আগুন-ধোঁয়ার কুণ্ডলী ও দুই ফুটবলার! কীভাবে জন্ম নিল পৃথিবী বিখ্যাত এই ছবি?

প্রথমে ফর্কলিফট চালক হিসাবে কাজ করেতেন শিকাগোর গুদামে। কলেজে পড়তে পড়তেই সুযোগ পান কলেজের সকার টিমে আর সেখান থেকেই শুরু হয় তাঁর ফুটবল যাত্রা। কলেজের ফুটবল টিম সেন্ট ফ্রান্সিস ফাইটিং সেন্টস থেকে বিদায় নিয়ে ২০১৭ সালে যোগ দেন ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের ঘরোয়া লিগে। হিলাল আল -কুদস ও শাবাব আল-বিরেহ-র হয়ে দুটি সিজন খেলে পেশাদারি খেলোয়াড় হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর সৌদি আরবের 'আল জীল', ইন্দোনেশিয়ার 'পেরসিব বান্দুং', মিশরের 'স্মুহা'-সহ আরও বেশ কিছু বিদেশি ক্লাবে ফুটবল খেলেছেন রশিদ।

২০১৮-র পর থেকেই প্যালেস্টাইনের জাতীয় দলে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসাবে তিনি নিজের জায়গা পাকা করে নিয়েছেন। যুদ্ধাবস্থার মধ্যেও ২০২৩-২৪ সালে প্রথমবারের জন্য বিশ্বকাপের তৃতীয় রাউন্ডে ওঠে প্যালেস্টাইন। রশিদ ছিলেন ওই দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। যুদ্ধ সঙ্কট ও নিরাপত্তা জনিত কারণে ২০১৯ সাল থেকেই প্যালেস্টাইনের সমস্ত খেলা কুয়েত এবং কাতারে খেলা হচ্ছে। দেশের মাটিতে দেশবাসীর সামনে খেলতে না পারার কষ্ট প্রকাশ করে রশিদ বলেন, "আমরা খেলার মাধ্যমে দেশকে উপরে তুলতে লড়াই করি, দেশের মাটিতে খেলতে না পারা মানসিক ভাবে কষ্টের"।

ইজরায়েলি আক্রমণে গাজায় স্টেডিয়াম, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র কিছুই আর নেই। অনিশ্চয়তায় ভুগছে দেশের ফুটবলের ভবিষ্যৎ। তবে, এই সংঘাত ও সঙ্কটের মাঝেও বিশ্বকাপের তৃতীয় রাউন্ডে উঠেছিল তাঁরা। প্যালেস্টাইন বাঁচিয়ে রেখেছে তাদের ফুটবল আবেগ। এখনও খেলতে চান লক্ষ লক্ষ রশিদরা।

তবে প্রশ্ন থাকছেই, কবে নিজের মাটিতে খেলতে পারবে প্যালেস্টাইনবাসী? কবে  অন্ধকারমুক্ত হবে প্যালেস্টাইন?

More Articles