আমিষ নয়, অতিথিদের কেন নিরামিষ খাওয়াল ভারত?
G20 Summit Veg Food: দেবদেবীদের পুজোয় মাংস অর্পণ করা হত, বৌদ্ধদের মধ্যেও মাংস খাওয়ার প্রচলন ছিল।
জি২০ সামিট উপলক্ষে সেজে উঠেছিল রাজধানী দিল্লি। দেশ-বিদেশ থেকে আগত প্রতিনিধিদের জন্য নৈশভোজের আয়োজনও ছিল এলাহি। কিন্তু নিরামিষ খাবার কেন? ভারতের খাদ্যাভ্যাস কি নিতান্তই নিরামিষাশী? প্রশ্ন উঠছে সামাজিক মাধ্যম থেকে চায়ের ঠেকে। চলছে বিতর্ক। নৈশভোজের খাদ্যতালিকা যে আসল ভারতের সংস্কৃতির পরিচায়ক তা কে না জানে! প্রথমে দেখে নেওয়া যাক কী ছিল খাদ্য তালিকায়।
খাদ্য তালিকা:
বাজরার উপস্থিতি জি২০-এর খাদ্যতালিকায় বিশেষভাবে নজর কেড়েছে। চলতি ২০২৩ বর্ষটিকে বাজরা বর্ষ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের। তাই কি বাজরার আধিক্য দেখা গেল প্রতিনিধিদের পাতে? প্রতিটি খাদ্যেরই নামকরণ করা হয়েছিল ভারতীয় কায়দায়। যেমন কোনওটার নাম ছিল 'পাত্রম' তো কোনওটার নাম 'মধুরিমা'। পানীয়ের তালিকায় ছিল দার্জিলিং চা, কফি এবং কাশ্মীরি কাহওয়া। এছাড়া ছিল, বাজরার রুটি, মুম্বইয়ের পাওভাজি, টক দই, কাঁঠাল এবং মাশরুম সহযোগে নির্মিত ভাত ইত্যাদি। জানা গেছে, বাংলার রসগোল্লা, বিভিন্ন চাট,এমনকি ফুচকাও জায়গা করে নিয়েছে জি২০ সম্মেলনে।
আরও পড়ুন- জি২০: লাভের গুড় ঘরে তুলতে পারল ভারত?
খাদ্যগুণ:
আমিষ খাবার মূলত প্রোটিন সর্বস্ব। নিরামিষ খাবার খেয়ে প্রোটিনের সেই চাহিদা পূরণ করা সম্ভব? উত্তর হচ্ছে, হ্যাঁ সম্ভব। কিন্তু তা সম্ভব জি২০ -এর নৈশভোজে। মিড ডে মিলের পাতে নয়। কারণ তার দ্রব্যমূল্য বেশি, এবং বাজারে মেলে কম। আসা যাক জি২০ -এর বিশেষ আকর্ষণ বাজরা প্রসঙ্গে। বাজরা চাষ করা সহজ। যেকোনও ধরনের মাটিতে বাজরা চাষ করা যায়। বাজরা প্রোটিন, তন্তু, খনিজ এবং ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার। যা এশিয়া এবং আফ্রিকার জনজাতির মধ্যে খুবই জনপ্রিয়। মিলেটের খাবারকে সারা বিশ্বের সামনে তুলে ধরে ভারত নিজস্ব ঘরানার খাদ্যদ্রব্যকেই পরিচিতি এনে দিতে চেয়েছে।
প্রাচীন ভারতের খাদ্যাভ্যাস:
ভারতের খাদ্যাভ্যাস প্রায় ৮০০০ বছর ধরে চলে আসা ইতিহাসের অঙ্গ হয়ে উঠেছে। এই খাদ্যাভ্যাসে যেমন ধর্মের প্রভাব রয়েছে, একইভাবে রয়েছে সংস্কৃতির প্রভাব, ভৌগলিক প্রভাব। নদীমাতৃক অঞ্চলে মাছ খাওয়ার অভ্যাস বেশি গড়ে উঠেছে। এছাড়াও চাষাবাদের রীতি অনুযায়ী অঞ্চলভেদে খাদ্যাভ্যাস নির্ভর করেছে। প্রাচীন ভারতে যদিও নিরামিষ ভোজনের কোনও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ নিয়ম দেখা যায়নি। বরং, দেবদেবীদের পুজোয় মাংস অর্পণ করা হত, বৌদ্ধদের মধ্যেও মাংস খাওয়ার প্রচলন ছিল। আবার অনেকেই ছিলেন যাঁরা নিরামিষভোজী। কিন্তু ভারতের সংবিধান গড়ে ওঠার পর, ক্রমশ সমন্বয়ের বার্তার মধ্যে দিয়ে সমস্ত সংস্কৃতিই ঐক্যের পথে হেঁটেছে।
আরও পড়ুন- ইন্ডিয়া নয়, ভারতেই জোর মোদির! জি-২০ তে স্পষ্ট হচ্ছে যেসব ইশারা
কেন নিরামিষ খাবার:
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজে নিরামিষভোজী। তাঁর পছন্দেই কি খাদ্যতালিকায় নিরামিষ খাবারের ছড়াছড়ি? উঠছে প্রশ্ন। কিন্তু ভারতের সংস্কৃতি ঐক্যের বার্তা দেয়। এই ভারতে দক্ষিণ ভারতীয় ধোসা,ইডলি যেমন প্রচলিত, তেমনই প্রচলিত লক্ষ্ণৌ- এর কাবাব, বাংলার মাছ। যদিও, বর্তমান কেন্দ্র সরকার বহুদিন থেকেই নিরামিষ খাওয়ার প্রচলনকে কিছুটা জোর করেই চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে এসেছে। যার প্রমাণ গান্ধিজির জন্মদিনকে 'নিরামিষ দিবস' ঘোষণা, নবরাত্রিতে হরিয়ানা,উত্তরপ্রদেশে মাংস বিক্রি নিষিদ্ধ করা, এমনকি একাধিক রাজ্যের মিড-ডে মিলে আমিষ বন্ধ করা। এই ভারতেই গো-মাংস খাওয়ার 'অপরাধে' খুন হতে হয়েছে মহম্মদ আখলাককে। প্রশ্ন জাগে এই নিরামিষ আগ্রাসনের পেছনে আসলে কোন রাজনীতি?
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে শুক্রবার রাতেই পৌঁছোতে দেখা যায় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে। উল্লেখ্য, তাঁর নৈশভোজেও নিরামিষ ছোঁয়াই দেখা গেল। সোনা-রুপোর তৈরি থালায় তাঁকে খেতে দেখা গেছে বাংলা বিহারের নানা ধরনের পদ। সব বিতর্কের পরে এই কথা উল্লেখ করতেই হয়, নিঃসন্দেহে খাদ্যতালিকা নির্বাচনে ভারত কূটনৈতিক বুদ্ধির পরিচয় দেখিয়েছে। বর্তমানে শাসকদল এক দেশ,এক নাম, এক নির্বাচনের পথে হাঁটছে। জি-২০-র খাদ্যশস্য নির্ভর খাদ্যতালিকাও বহুত্বকে নস্যাৎ করে একের পুজোই করল না কি?